মুজিব বর্ষের গুরুত্ব, মুজিব বর্ষ- কি এবং কেন!,মুজিব-বর্ষের-কার্যক্রম,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কিছু সাধারণ জ্ঞান,মুজিব বর্ষ লোগো ডিজাইনার কে

আজকের বিষয়: মুজিব বর্ষের গুরুত্ব, মুজিব বর্ষ- কি এবং কেন!,মুজিব-বর্ষের-কার্যক্রম,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কিছু সাধারণ জ্ঞান,মুজিব বর্ষ লোগো ডিজাইনার কে

মুজিব বর্ষ কি

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৭ মার্চ ২০২০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ পর্যন্ত ২০২০-২০২১ খ্রিস্টাব্দকে মুজিব বর্ষ হিসাবে জাতীয়ভাবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের রূপকার, কিংবদন্তি এই নেতা ১৭ মার্চ ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার ছোট্ট একটি গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ২৬ মার্চ ২০২১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবে। জাতিসংঘের অন্যতম একটি অঙ্গ সংগঠন ইউনেস্কো। মুজিব বর্ষ উদযাপনের জন্য ইউনেস্কোর ৪০তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে মুজিব বর্ষ পালন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তাছাড়া ২০১৯ সালের১২ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর অধিবেশনে ইউনেস্কোর সকল সদস্যের উপস্থিতিতে ২৫ নভেম্বর মুজিব বর্ষ পালনের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। শেখ মুজিব ও বাংলাদেশ – এরা একে অপরের পরিপূরক অর্থাৎ, একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটিকে চিন্তা করা যায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা, শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব বর্ষ – এসবই একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই মুজিব বর্ষ উদযাপন এত তাৎপর্যপূর্ণ।


ক্ষণগণনা

পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান ভূখণ্ড থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের করাচির জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়ে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এর একটি বিমানে করে লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে পাকিস্তান থেকে স্বদেশের ভূখন্ডে ফিরেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ অবতরণের পর বঙ্গবন্ধু উড়োজাহাজ থেকে নামার পর সেদিন বিকেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরিপূর্ণতা লাভ করে। ১০ জানুয়ারির সেই ঐতিহাসিক দিনটিকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিন হিসেবে পালন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক ঐ দিনটিকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। আর ক্ষণগণনা শেষ হলেই মুজিব বর্ষ শুরু হবে। মুজিবনগর অস্থায়ী সরকার প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী, বিভিন্ন স্তরের ছাত্র-শিক্ষক তথা বিভিন্ন পেশার লাখো লাখো মানুষ ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির ঐতিহাসিক ঐ দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে বরণ করে নিয়েছিলেন। তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উড়োজাহাজ থেকে আলোক প্রক্ষেপণ ও তোপধ্বনি, বঙ্গবন্ধুর প্রতীকী আবহ এবং প্রতীকী গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। তাছাড়া ঐ দিন মুজিব বর্ষ লোগো উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ক্ষণগণনা অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পর বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা এবং আপামর সমাজের সর্বস্তরে ক্ষণগণনা শুরু হয়। ক্ষণগণনার জন্য বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট, জাতীয় সংসদ ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাতিরঝিল, মেহেরপুরের মুজিবনগর, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াসহ দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে কাউন্টডাউন ঘড়ি বসানো হয়েছে। ২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সভার সকল সদস্যের উপস্থিতিতে ১৭ মার্চ ২০২০ সাল থেকে ১৭ মার্চ ২০২১ সাল পর্যন্ত ২০২০-২০২১ সালকে মুজিব বর্ষ হিসেবে পালনের জন্য সর্বসম্মতভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কেবল দেশের অভ্যন্তরেই নয়, বিদেশি মিশনসহ দেশের বাইরেও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিব বর্ষ আনন্দের সাথে উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।


জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটি

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী জাতীয় পর্যায়ে সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দুটি পৃথক কমিটি গঠন করেছে। কমিটি দুইটি নিম্নরূপঃ

  • জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি
  • জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি

জাতীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা ১০২ যার সভাপতি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতার কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাও জাতীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত আছেন। আবার আমাদের জাতীয় সংসদের স্পিকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী জাতীয় কমিটির একজন অন্যতম সদস্য। এছাড়াও কমিটির আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলেন – প্রধান বিচারপতি সৈয়দ আহমুদ হোসেন, জাতির পিতার দৌহিত্র প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ। সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদও জাতীয় কমিটির একজন সদস্য যিনি ইতোমধ্যে প্রয়াত হয়েছেন। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে জাতীয় কমিটির সদস্য- সচিব করা হয়েছে।

তাছাড়া মুজিব বর্ষ সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯খ্রি. এক প্রজ্ঞাপনমূলে “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি”তে আরও ১৭ জন সদস্যকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সংখ্যা ৬১ জন যার সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। শিক্ষা মন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি এবং আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বকে এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এই কমিটির প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

বাস্তবায়ন কমিটি জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য বাজেট প্রণয়ন ও সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে জাতীয় কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে তা বাস্তবায়ন করতে পারবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি অনুমোদন নিয়ে তাঁরা তাঁদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন এবং পরে তা ভূতাপেক্ষ অনুমোদন নিয়ে নিতে পারবেন। তাছাড়া প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এই কমিটি বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠন করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে এবং সেইসব উপ-কমিটির সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার এখতিয়ার রাখে।


জন্মশতবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান

২০২০ সালের ১৭ মার্চ যেদিন বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ পূর্ণ হবে সেইদিনই জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকারের জন্মশতবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠানটি হবে। আমাদের দেশের অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ছাড়াও আরো কিছু আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তাদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং আরও অনেক উল্লেখযোগ্য বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। জন্মশতবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠানে জাতির পিতার ব্যক্তিগত জীবন এবং কর্মজীবন নিয়ে হলোগ্রাফিক উপস্থাপন এবং থিম সং পরিবেশন করা হবে। ঐদিন মূল অনুষ্ঠানটি শেষ হওয়ার পর আতশবাজি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।


পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মসূচি

পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যেসব দেশে বাংলাদেশের হাইকমিশন বা মিশন রয়েছে সেসব দেশেই মুজিব বর্ষ আনন্দের সাথে উদযাপন করা হবে। মুজিব বর্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন ব্র্যান্ডিং করা হবে। বাংলাদেশ যে একটি সম্ভাবনাপূর্ণ দেশ তা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে। আর বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগ ও বিশালতা।


বাংলাদেশ হাইকমিশনে জন্মশতবার্ষিকী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী বাস্তবায়ন কমিটি বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ হাইকমিশনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনের পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এই কমিটি। তাছাড়া সমগ্র মুজিব বর্ষ ব্যাপী দেশে যে সমস্ত অনুষ্ঠান হবে, তাতে দেশের বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ করা হবে। আবার বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত কিছু ভাষণ সমগ্র মুজিব বর্ষ জুড়ে প্রচার করা হবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর যে সমস্ত বিদেশ ভ্রমণ রয়েছে তার ওপর প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে তা প্রকাশ করা হবে। অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে সমুদ্র বিজয় এর উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি ও আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।


নানা ধরণের অনুষ্ঠান

দেশে বিদেশে মুজিব বর্ষ উদযাপনের অংশ হিসাবে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো আমাদের জাতীয় সংসদে জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান উদযাপন এবং জুলিও কুরি পদকপ্রাপ্তি দিবস উদযাপন করা হবে। তাছাড়া ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর উপর বড় কলেবরে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অন্যদিকে ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ভারতীয় যেসব বীরযোদ্ধারা বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন সেইসব বীরযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদলকে ঢাকায় আমন্ত্রণ করারও পরিকল্পনা করা হয়েছে।

অন্যদিকে যেসব দেশ আমাদের মুক্তিসংগ্রামকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি। এ কারণে কলকাতা, দিল্লি, ওয়াশিংটন, মস্কোসহ ১২টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন ধরনের চিত্র প্রদর্শনী করা হবে। আবার যুক্তরাজ্যের সংসদে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ ও তার প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


আন্তর্জাতিক অতিথি ব্যক্তিত্ব

মুজিব বর্ষ পালিত হবে বছরব্যাপী। আর বছরব্যাপী আয়োজিত মুজিববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব অংশ নিতে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন – সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ জায়েদ আল নাহিয়ান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, ভুটানের রাজা জিগমে খেশার ন্যামগেল ওয়াংচুক, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভারতের কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন প্রমুখ। আবার কেনেডি পরিবারের কোন সদস্যও মুজিববর্ষের কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।


বঙ্গবন্ধু পুরস্কার

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক একটি অঙ্গসংগঠন হল ইউনেস্কো। বাংলাদেশ ইউনেস্কোকে বঙ্গবন্ধু পুরস্কার নামে একটি পুরস্কার ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছিল। আশার আলো হলো ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রস্তাবটি ইউনেস্কো গ্রহণ করেছে। তবে পুরস্কার প্রবর্তনের যে প্রক্রিয়াটি রয়েছে তা সুসম্পন্ন করতে প্রায় দুই বছর সময় লাগবে। বঙ্গবন্ধু পুরস্কারটি ইউনেস্কো যাতে এক বছরের মধ্যেই চালু করে – এ বিষয়ে বাংলাদেশ জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।


বঙ্গবন্ধু চেয়ার

দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষকই বঙ্গবন্ধুর উপর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিষয়ে গবেষণার জন্য ইতোমধ্যে পোল্যান্ড, থাইল্যান্ড ও ভারতে বঙ্গবন্ধু চেয়ার চালু রয়েছে। তাছাড়া যুক্তরাজ্যের জগৎ বিখ্যাত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কানাডার আরেকটি বিশ্ববিখ্যাত ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে “বঙ্গবন্ধু সেন্টার” স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ তাদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

“শতবর্ষের সাক্ষী তুমি হে মহান
জন্ম তোমার ইতিহাস হবে
দেশ হবে মহীয়ান
তুমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান….”

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি ঘাতকের নিষ্ঠুর বুলেটে প্রাণ না হারাতেন তবে আজ তাঁর বয়স হতো ৯৯ বছর ১০মাস ১৬ দিন এবং ২০২০ সালের ১৭ মার্চ তিনি শতায়ু হতেন। আবার কাকতালীয়ভাবে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে বাংলাদেশ তাঁর স্বাধীনতার অর্ধ-শত বার্ষিকীতে পদার্পণ করবে।

কি আশ্চর্য এক মিলের সেতু বন্ধন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর তাঁর স্বপ্নের গড়ে ওঠা বাংলাদেশের। কিন্তু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালিকে জাতি হিসেবে আমরা মাত্র ৫৫ বছর ৪ মাস বাঁচতে দিয়েছি। স্বাভাবিক মৃত্যু হলে শতায়ু তিনি হতেন না, তা কে বলতে পারে! যদি তিনি তাঁর অতি প্রিয় বাংলার মাটিতে শতবর্ষ বেঁচে থাকতেন তবে এই দিনটি জাতি তখন কীভাবে পালন করত, তা ভাবলে মনেপ্রাণে শিহরণ জাগে।

সেই উপলব্ধি থেকেই হয়তো বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার সে দেশের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলেক্ষ্য ২০২০-২০২১ খ্রীস্টাব্দকে মুজিব বর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে। এই হলো পটভূমি। যে দেশটির জন্য তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন, যে দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের কথা নিয়েই যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আত্মনিয়োজিত ছিলেন, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঘোষিত “মুজিব বর্ষ”টি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

জয় বাংলা- এ শ্লোগান আমাদের স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাইতো গত ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা দেন মহামান্য হাইকোর্ট। আর এই স্লোগান যার মুখে মুখরিত ছিলো সে আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয়সংগ্রামী বাঙালীর প্রিয় নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

যাঁর নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ অভিজাত এক বংশে শেখ লুৎফর রহমান ও শেখ সায়েরা খাতুনের ঘরে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে শিশু।বাবা-মা আদর করে নাম রাখলেন ‘খোকা’। টুঙ্গিপাড়ার একটি বনেদী পরিবারের নাম শেখ পরিবার। এই পরিবারের উত্তরসূরী শেখ পরিবারের সুপরিচিত ব্যক্তি শেখ হামিদ গড়ে তোলেন একটি টিনের ঘর। শেখ হামিদের একমাত্র পুত্র শেখ লুৎফর রহমান একজন সজ্জন ব্যক্তি।

এখনো মনে পড়ে ১৯৭৪ সালের কথা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৫৪তম জন্মদিন পালিত হলো বাংলার আকাশে দুর্যোগের এক গভীর ঘনঘটার মধ্যে। তিনি তখন ছিলেন গুরুতর অসুস্থ। মাত্র ২ দিন পর চিকিৎসার জন্য মস্কো যাবেন, এই খবরটা মানুষ তখন জেনে গেছে। এই নিয়ে গভীর শঙ্কা মানুষের মনে। বঙ্গবন্ধুর সুস্থতা কামনা করে বয়স্ক মানুষ বিশেষত মা-দাদিরা রোজা রাখছেন, এই খবর তখন পত্রপত্রিকাসহ নানাভাবে জানা যাচ্ছিল।

বঙ্গবন্ধুর শৈশব:


বঙ্গবন্ধুর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সুষমামণ্ডিত টুঙ্গিপাড়ায়। টুঙ্গীপাড়া গ্রামেই শেখ মুজিবুর রহমান ধনধান্যে পুষ্প ভরা শস্য শ্যামলা রূপসী বাংলাকে দেখেছেন। তিনি আবহমান বাংলার আলো-বাতাসে লালিত ও বর্ধিত হয়েছেন।তিনি দোয়েল ও বাবুই পাখি ভীষণ ভালোবাসতেন। বাড়িতে শালিক ও ময়না পুষতেন। আবার নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটতেন। বানর ও কুকুর পুষতেন বোনদের নিয়ে। পাখি আর জীবজন্তুর প্রতি ছিল গভীর মমতা। মাছরাঙা ডুব দিয়ে কীভাবে মাছ ধরে তাও তিনি খেয়াল করতেন খালের পাড়ে বসে বসে। ফুটবল ছিল তার প্রিয় খেলা। এভাবে তার শৈশব কেটেছে মেঠো পথের ধুলোবালি মেখে আর বর্ষার কাদা পানিতে ভিজে। গ্রামের মাটি আর মানুষ তাঁকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করতো।

বঙ্গবন্ধুর পড়াশোনা:


বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান আদালতে চাকরি করতেন । তার মাতা সায়েরা খাতুন ছিলেন গৃহিনী। পিতা-মাতার স্বপ্ন ছিলবড় হয়ে তিনি একজন বিজ্ঞ আইনজীবী হবেন। টুঙ্গিপাড়ার সেই শেখ বাড়ির দক্ষিণে ছিল কাছারি ঘর। এখানেই মাস্টার, পন্ডিতও মৌলভী সাহেবদের কাছে ছোট্ট মুজিবের হাতেখড়ি। একটু বড় হলে তাদের পূর্ব পুররুষদের গড়া গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়েতার লেখাপড়া শুরু হয়। এরপর পিতার কর্মস্থল মাদারীপুরের ইসলামিয়া হাইস্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে কিছুদিন লেখাপড়া করেন।

পরবর্তীতে তার পিতা বদলি হয়ে গোপালগঞ্জে যোগদান করলে তিনি গোপালগঞ্জ মিশন হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন। বিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতেন তিনি। পছন্দ করতেন ইতিহাসের বই।এসব কারণে প্রধান শিক্ষক গিরিশ চন্দ্রসহ সকল শিক্ষকের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন শেখ মুজিব। শিশুকাল থেকেই শেখ মুজিবছিলেন পরোপকারী এবং অন্যায়ের প্রতিবাদী। মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় যেমন সহযোগিতার হাত বাড়াতেন-তেমনি কারো প্রতিঅন্যায় আচরণ দেখলে প্রতিবাদ করতেন। মাত্র তের বছর বয়সে প্রতিবাদের এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর নৈতিকতাবোধ:


বঙ্গবন্ধু শাশ্বত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ছেলেবেলা থেকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। শৈশব থেকে তত্কালীনসমাজ জীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজা নিপীড়ন দেখেছেন। গ্রামের হিন্দু, মুসলমানদের সম্মিলিত সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িকতার। আর পড়শি দরিদ্র মানুষের দুঃখ, কষ্ট তাঁকেসারাজীবন সাধারণ দুঃখী মানুষের প্রতি অগাধ ভালবাসায় সিক্ত করে তোলে।

বস্তুতপক্ষে সমাজ ও পরিবেশ তাঁকে অন্যায়েরবিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে। তাই পরবর্তী জীবনে তিনি কোনো শক্তির কাছে— সে যত বড়ই হোক, আত্মসমর্পনকরেননি; মাথানত করেননি। অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক একবার তাঁদের স্কুল পরিদর্শনেএসেছিলেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আর সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের স্কুল মেরামতের জন্য অর্থবরাদ্দ করেন।

বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা:


বঙ্গবন্ধু ছোটদেরকে ভীষণ ভালোবাসতেন। কচিকাঁচার মেলা ও খেলাঘর ছিল তাঁর প্রিয় সংগঠন। কৈশোরে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কচিকাঁচার আসরে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর জীবনের শেষ দিনটি তিনি কাটিয়েছেন এই সংগঠনের ভাই-বোনদের মাঝে। তাঁর জন্মদিনটিকে এখন আমরা জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করি। শিশুদের কাছে দিনটি আনন্দ-খুশির।

এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনটি তার ১০০তম জন্মবার্ষিকী। এবছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পূর্ণ হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আমাদের জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। দিনটিকে সামনে রেখে শিশুদের তৈরি করার বিষয়টি আমাদের সামনে এসে যায়।বঙ্গবন্ধু যেভাবে শৈশব-কৈশোরে নানা ধরনের মানবিক চেতনাবোধে বড় হয়েছেন, আমাদের শিশুদের মাঝে এ চেতনা বিস্তার লাভ করুক- এটাই এ সময়ের প্রত্যাশা।

তিনি যেভাবে বন্ধুদের সঙ্গে আন্তরিক সহমর্মিতায় নিজের কিশোর বেলা পার করেছেন, সেটা আমাদের কিশোর-কিশোরীদের জন্য একটি বড় দিগন্ত। ওরা যদি এভাবে বড় হয় তাহলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ মানবিক দর্শনে রূপান্তরের শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র হবে। এখন প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি সব উদ্যোগের মধ্যে বিষয়গুলো শিশুদের শেখানো।

সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরে এসে বঙ্গবন্ধুকে অভিহিত করেছেন “বিশ্ব নেতা” হিসেবে, যা অনুসরণীয় হতে পারে অন্যান্য দেশের। নিজেস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ একটি প্রকল্প। বাস্তবায়িত হচ্ছে নদীগর্ভে ৩.৬৬ কি.মিরমতো টানেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ ১০টি মেগা প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর কক্ষপথে।

আর এসব যার সুনিপুণ হাত ধরে বাস্তবায়িত হচ্ছে তিনি আর কেউ নন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা আমাদের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এও ইতিহাসের এক অমোঘ সত্য যে, জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ তথা “মুজিব বর্ষ” উদযাপিত হতে যাচ্ছে তাঁরই কন্যার হাত ধরে। এবারের এই বর্ষকে ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় করতে, জাতির জনকের প্রজ্জ্বলিত দীপ্ত শিখা তথা সমুজ্জ্বল আলো বাংলার ঘরে ঘরে ছড়াতে বাঙালীর এবারের অঙ্গিকার ছড়িয়ে যাক বাংলার মাঠ-ঘাট প্রান্তর, আকাশে-বাতাসে এই আমাদের প্রত্যাশা। জয় বাংলা।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment