প্রশ্ন সমাধান: মানব স্বাস্থ্যের ‘সবচেয়ে বড়’ হুমকির অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী মানব স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা মানব স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড়ো হুমকি, অ্যান্টিবায়োটিক যেসব কারণে রোগ সারাতে পারছেনা, খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার
বিশ্বখ্যাত সায়েন্টিফিক জার্নাল দ্য ল্যানসেট-এর তথ্য মতে ২০১৯ সালেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাক্টেরিয়ার কারণে পৃথিবীব্যাপী প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষ মারা গেছে (The Lancet, vol 399, issue10325, p629-655, 2022)। ওই সমীক্ষায় দেখা যায় ছয়টি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাক্টেরিয়া (Escherichia coli, Staphylococcus aureus, Klebsiella pneumoniae, Streptococcus pneumoniae, Acinetobacter baumannii এবং Pseudomonas aeruginosa) মূলত এসব মৃত্যুর জন্য দায়ী। যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতি বছর কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ২৩,০০০ মানুষ মারা যায় । অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাক্টেরিয়াগুলোর যদি সঠিকভাবে চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করা না যায় এবং একই সাথে কার্যকর নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করা সম্ভব না হয় তাহলে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যাক্টেরিয়া কিংবা ছত্রাক থেকে উৎপন্ন জৈব-রাসায়নিক ঔষধ যা সাধারণত ব্যাক্টেরিয়াকে বিনাশ বা তাদের বৃদ্ধিসহ বংশ-বিস্তার রোধ করে। তবে, এটা জেনে রাখা দরকার যে অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না।
বিজ্ঞানী স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ১৯২৭ সালে পেনিসিলিয়াম (Penicillium rubens) ছত্রাক থেকে প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক ‘পেনিসিলিন’ আবিষ্কার করেন। বর্তমানে. পেনিসিলিন বলতে শুধুমাত্র একটি অ্যান্টিবায়োটিক-কে বুঝায় না, পেনিসিলিন হলো অ্যান্টিবায়োটিকের একটি গ্রুপ। আরও একটি বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক হলো স্ট্রেপ্টোমাইসিন (Streptomycin), যা ব্যাকটেরিয়া Streptomyces griseus থেকে উৎপন্ন। অ্যাজিথ্রোমাইসিন, তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিন, অথবা ন্যারো-স্পেকট্রাম জাতীয় কোন কোন অ্যান্টিবায়োটিক একই সাথে অনেক ধরণের ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে বিস্তৃত পরিসরে কাজ করে।
এই প্রবন্ধে অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যাক্টেরিয়ার উপর যে প্রক্রিয়ায় কাজ করে তাদের বিনাশ ঘটাতে পারে এবং ব্যাক্টেরিয়াগুলো যে কৌশলে অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে প্রকৃতিতে অভিযোজিত হয়, সে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এখানে বলাই বাহুল্য যে, মাল্টি ড্রাগ-প্রতিরোধী ব্যাক্টেরিয়া এখন শুধু হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকগুলোতে সীমাবদ্ধ নেই বরং অণুজীবগুলোর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা আমাদের স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য উৎপাদসহ জীবনের উপর হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং বিশ্বায়নের এই যুগে তা দেশের সীমানা ছড়াচ্ছে অতিদ্রুত! বাংলাদেশেও রয়েছে সুপারবাগ কিংবা মাল্টিড্রাগ-প্রতিরোধী ব্যাক্টেরিয়ার বিপুল আধার, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীলদেশগুলোর জন্য অশনি সংকেত।
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতার জিনগত ভিত্তি
লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ব্যাকটেরিয়াগুলো তাদের জিনের (বংশগতির ধারক ও বাহক) পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিকুল পরিবেশ মোকাবেলা করছে। ব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিক-উৎপাদনকারী অনুজীবগুলো (যেমন ছত্রাক) একই পরিবেশে বাস করে, ফলে অ্যান্টিবায়োটিক অণুর প্রভাব প্রতিহত করার জন্য ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতার নানান কৌশল অনেক বছর ধরে গড়ে তুলেছে। এই প্রতিরোধ্যতা তাদের প্রাকৃতিক অর্জন। ‘অ্যান্টিবায়োটিকের-আক্রমণ’থেকে মুক্তি পাবার জন্য ব্যাকটেরিয়া প্রধানত দুটি জিনগত কৌশল ব্যবহার করে: যেমন ১) জিনের মিউটেশন।
উদাহরণস্বরুপ— অ্যান্টিবায়োটিক ‘ফ্লুরোকুইনোলোন (FQ)’ টার্গেট করে ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ গাইরেজ (টোপাইসোমেরেজ II) ও টোপাইসোমেরেজ IV এনজাইমকে। কিন্তু তাদের জিনগুলোতে মিউটেশন হওয়ায় FQ তাদের টার্গেট করতে ব্যর্থ হয়; ২) একই জাতীয় ব্যাক্টেরিয়াগুলোর মধ্যে মিউটেটেড জিনগুলোর আদান-প্রদানের মাধ্যমে প্রতিরোধক জিনগুলো এক ব্যাক্টেরিয়া থেকে অন্য ব্যাক্টেরিয়ায় স্থানান্তর ও বিকাশ ঘটায়। এ ধরণের জিন স্থানান্তরকে বলা হয় অনুভূমিক বা সমস্থ জিন স্থানান্তর (horizontal gene transfer)। ব্যাকটেরিয়া সাধারণত তিন পদ্ধতিতে বহিরাগত ডিএনএ অর্জন করতে পারে,
যেমন ট্রান্সফরমেশন, ব্যাক্টেরিও-ফাজ (ব্যাকটেরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাস)-মধ্যস্থতায় ট্রান্সডাকশন ও দুটি ব্যাকটেরিয়া কোষের সরাসরি সংযোজন বা কনজুগেশন। শেষোক্ত পদ্ধতিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কনজুগেশন পদ্ধতিতে ব্যাকটেরিয়া নিজেদের মধ্যে জিনের আদান প্রদান করে, এই পদ্ধতির মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয় প্লাজমিড ডিএনএ ও ট্রান্সপোজন (যার মধ্যে অন্তর্নিহিত আন্টিবায়োটিক ও জেনোবায়োটিক প্রতিরোধক এক বা একাধিক জিন)।
সাধারণভাবে, মিউটেটেড জিনগুলো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতায় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কাজ করে, যেমন ১) ওষুধগুলোর লক্ষ্যবস্তুর পরিবর্তন করে; ২) ওষুধগুলোর কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশে বাধা প্রদান করে; ৩) অ্যান্টিবায়োটিক অণুগুলোকে কোষ থেকে বহিঃগমনের জন্য ইফ্লাক্স (efflux) সিস্টেমকে সক্রিয়করণ ঘটায় (ইফ্লাক্স পাম্প বা সিস্টেম হচ্ছে কোষঝিল্লিতে অবস্থিত ৩টি প্রোটিনের সমন্বয়ে একটি সক্রিয় পরিবহন ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে ওষুধগুলোকে কোষ থেকে বের করে দেয়া হয়)।
এরকম একটি পরিবহন ব্যবস্থা পরিচালিত হয় ATP-সংযুক্তকারী ক্যাসেট প্রোটিন-পরিবার (ATP-dedpendent efflux protein) দ্বারা, যা কোষঝিল্লির মাধ্যমে কোনো পদার্থকে কোষের ভিতরে বা বাইরে স্থানান্তরিত করে। গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ায় প্রতিরোধের একটি মূল প্রক্রিয়াই হচ্ছে ড্রাগ বহিঃপ্রবাহ বা ইফ্লাক্স) অথবা ৪) সামঞ্জস্যতাসাধনের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ও নিয়ন্ত্রণকারী বিপাকীয় পথগুলোর পরিবর্তন করে।
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতার নানা কৌশল
একটি বিষয় লক্ষণীয় যে অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ভিন্ন ভিন্ন কৌশল উদ্ভাবন করেছে। এটি তাদের লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনীয় ফলাফল। এমনকি, একই ব্যাকটেরিয়া একাধিক জৈব রাসায়নিক কৌশল অর্জন করার সক্ষমতা অর্জন করেছে, যাতে করে তারা অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব থেকে বাঁচতে সক্ষম হয়। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধগুলো ব্যাকটেরিয়াকে সম্ভাব্য যে সমস্ত প্রক্রিয়ায় নিধন করতে পারে তার ওপর ভিত্তি করে অ্যান্টিবায়োটিককে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে, যেমন ১) কোষপ্রাচীর সংশ্লেষণকে বাধা দেয়া, উদাহরণ- β-ল্যাক্টাম (সেফালোস্পোরিন, কার্বাপিনিম, পেনিসিলিন) ও গ্লাইকোপেপ্টাইড (ভ্যাঙ্কোমাইসিন); ২) কোষঝিল্লিতে বৈদ্যুতিক চার্জের পরিবর্তন বা ডিপোলারাইজ করার মাধ্যমে, উদাহরণ- লাইপোপেপ্টাইড (ড্যাপ্টোমাইসিন); ৩) প্রোটিন সংশ্লেষণকে বাধা দেয়া: 30S রাইবোজোমীয় ইউনিটকে বাধা দেয়া– যেমন অ্যামিনোগ্লাইকোসাইড, টেট্রাসাইক্লিন; অথবা, 50S রাইবোজোমীয় ইউনিটকে বাধা দেয়া- যেমন ক্লোরামফেনিকল, ম্যাক্রোলিড, স্ট্রেপ্টোগ্রামিন; ৪) নিউক্লিক অ্যাসিড সংশ্লেষণকে বাধা প্রদান করা- যেমন কুইনোলোন, ফ্লুরোকুইনোলোন; এবং ৫) বিপাকীয় পথকে নিষ্ক্রিয় করা, যেমন ট্রাইমেথোপ্রিম।
প্রাণঘাতী অণুজীবদের নিধনের জন্য বেশ কয়েক দশক ধরে উদ্ভাবিত বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রাথমিকভাবে কার্যকর হলেও তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়েছে ব্যাকটেরিয়াগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধ্যতা গড়ে ওঠার কারণে। বিভিন্ন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর কার্যকারিতা ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের সাথে জড়িত বিভিন্ন জৈবরাসায়নিক কৌশল বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এই প্রবন্ধে:
আরো ও সাজেশন:-
বিটা-ল্যাক্টাম (β-lactam) গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক অধিক ব্যবহৃত একটি অ্যান্টিবায়োটিক গ্রুপ, যা গ্রাম-পজিটিভ ও গ্রাম-নেগেটিভ উভয় ব্যাক্টেরিয়াতেই কাজ করে। এসব ব্যাকটেরিয়া-ধ্বংসকারী (bacteriocidal) অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরের জৈব সংশ্লেষণকে বাধা দেয়।
বিটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিক (ট্যাবটক্সিনিন বিটা-ল্যাকটাম বাদে) ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরে আবদ্ধ পেনিসিলিন-বাইন্ডিং প্রোটিন (পিবিপি) এর সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করে। ‘পিবিপি’ পেনিসিলিনের সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে কোষ প্রাচীরের একটি অপরিহার্য উপাদান পেপ্টিডোগ্লাইক্যান সংশ্লেষণে অংশগ্রহণ করতে পারে না, ফলে কোষটির কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কোষটি মারা যায়। ‘পিবিপি’ একটি ট্রান্সপেপ্টিডেজ ঘরানার এনজাইম, যার বিটা-ল্যাক্টামেজ এনজাইমের সাথে কাঠামোগত অনেক মিল রয়েছে।
বিটা-ল্যাকটাম-প্রতিরোধী বিটা-ল্যাকটামেজ (β-lactamase) এনজাইমের উৎপাদন ও ‘পিবিপি’ প্রোটিনের কাঠামোগত পরিবর্তন ক’রে গ্রাম-পজিটিভ ও গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাক্টেরিয়া বিটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিক গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ্যতা গড়ে তোলে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা সফল কৌশলগুলোর মধ্যে একটি হলো বিটা-ল্যাকটামেজ এনজাইমের আবির্ভাব, যা বিটা-ল্যাকটাম জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিকগুলির অবকাঠামো বিটা ল্যাক্টাম রিং-কে ভেঙে তার কার্যক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে।
এই গ্রুপের একটি এনজাইম ‘পেনিসিলিনেজ’ প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল গ্রাম-নেগেটিভ ই. কোলাই থেকে। প্রসঙ্গতঃ বিবর্তনের ইতিহাসে বিটা-ল্যাক্টামেজ এনজাইমটির আবির্ভাব অনেক প্রাচীন। বিজ্ঞানীদের মতে, সেরিন-বিটা-ল্যাক্টামেজ আবির্ভুত হয়েছিল প্রায় দুই বিলিয়ন বছর আগে। কালক্রমে, বিটা-ল্যাক্টামেজ এনজাইমটির পরিবর্তিত বিভিন্ন রূপ আমরা দেখেছি। অদ্যাবধি, কার্বাপিনিমেজ-সহ ১০০০টিরও বেশি বিভিন্ন ধরণের বিটা-ল্যাক্টামেজ এনজাইম শনাক্ত হয়েছে।
এমনকি তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিন (সেফটাক্সিম, সেফট্রিয়াক্সোন, সেফটাজিডিম)গুলির বিরুদ্ধেও এরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এক্ষেত্রে, বিটা-ল্যাকটামেজ জিন থেকে সংশ্লেষিত হয় বিটা-ল্যাকটামেজ এনজাইম, যা ‘সেফালোস্পোরিনেজ’ নামেও পরিচিত। এরকম একটি ক্রোমোজোমীয় AmpC বিটা-ল্যাকটামেজ জিন দেখা যায় অনেক গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ায় (যেমন, ই. কোলাই)। এছাড়াও, ক্রোমোজোম বা প্লাসমিড ডিএনএ -তে অবস্থিত ‘bla’ জিন, যা সংশ্লেষ করে TEM ও SHV গ্রুপের বিটা-ল্যাকটামেজ-সহ অনেক ধরণের বিটা-ল্যাকটামেজ এবং OXA গ্রুপের জিন সমূহ দেখা যায় K. pneumonia ও A. baumannii ব্যাকটেরিয়ায়।
গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরের পেপ্টিডোগ্লাইক্যান সংশ্লেষণের জন্য পিবিপি প্রোটিনগুলো বিশেষভাবে অপরিহার্য। মিউটেটেড পিবিপি (পেনিসিনিল-বাইন্ডিং প্রোটিন) প্রোটিনগুলি সুকৌশলে দুকূলই বজায় রেখেছে- সে যেমন বিটা-ল্যাক্টামের সাথে বন্ধন তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তেমন অক্ষুণ্ণ রেখেছে পেপ্টিডোগ্লাইকানের সংশ্লেষণ। প্রাকৃতিকভাবেই পিবিপি সংশ্লেষকারী জিনগুলি স্বকীয়ভাবে ব্যাকটেরিয়ার ক্রোমোজোমে বিদ্যমান। কোনো কোনো ব্যাকটেরিয়ায় (যেমন, মেথিসিলিন-প্রতিরোধী স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস [S. aureus]) পিবিপি জিন তাদের প্লাসমিড ডিএনএ-তে অবস্থান করে।
যেমন, mecA হলো মেথিসিলিন, পেনিসিলিন এবং অন্যান্য পেনিসিলিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী একটি জিন, যা সংশ্লেষ করে পিবিপি-2A (PBP2A)। জিনটির মিউটেশনের ফলে পেনিসিলিন বাইন্ডিং প্রোটিনের কাঠামোগত পরিবর্তন আসে, যার ফলে বিটা-ল্যাক্টাম অ্যান্টিবায়োটিক পরিবর্তিত পিবিপি প্রোটিনের সংগে যুক্ত হতে পারে না, এমতাবস্থায় ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর অটুট থাকে।
যে সকল ব্যাক্টেরিয়ায় (যেমন, মাইকোপ্লাজমা) কোষপ্রাচীর নেই, তাদের উপর এই জাতীয় আন্টিবায়োটিক কাজ করতে পারে না। অধিকন্তু, উপরোক্ত দুটি পদ্ধতি ছাড়াও দক্ষ ইফ্লাক্স পাম্পের মাধমে বিটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে বলপূর্বক কোষ থেকে বের করে দেয়ার মতো তথ্যও রয়েছে।
লাইপোপেপ্টাইড গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন, ড্যাপ্টোমাইসিন) ভিন্নকৌশলে কাজ করে। মেথিসিলিন-প্রতিরোধী S. aureus সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী একটি গুরুতর ক্লিনিক্যাল সমস্যা। বিটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিক-সহ অ্যামিনোগ্লাইকোসাইড, টেট্রাসাইক্লিন বা ফ্লুওরোকুইনোলোন এর মতো অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধেও S. aureus প্রতিরোধী। ভ্যানকোমাইসিন পেপ্টিডোগ্লাইক্যানের ‘ডি-অ্যালা-ডি-অ্যালা (D-alanine-D-alanine)’ ক্রমের সাথে আবদ্ধ হয়ে ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর সংশ্লেষণকে বাধা দেয়।
ড্যাপ্টোমাইসিন এই কাজটি করে কোষঝিল্লিতে আবদ্ধ হয়ে এবং ক্যালসিয়ামের উপস্থিতিতে, কেননা ক্যালসিয়ামের উপস্থিতিতেই শুধুমাত্র নিষ্ক্রিয় অ্যান-আয়নিক ড্যাপ্টোমাইসিন সক্রিয় ক্যাট-আয়নিক পেপটাইডে পরিণত হয়। এর ফলে কোষ থেকে পটাশিয়াম নির্গত হয় এবং ব্যাকটেরিয়ার কোষঝিল্লিকে ডিপোলারাইজ মেরুকরণের দিকে নিয়ে যায়। ফলে কোষের ভিতরে কম ঋণাত্মক চার্জের সৃষ্টি হয় যা প্রোটিন, ডিএনএ ও আরএনএ সংশ্লেষণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে, এবং শেষপর্যন্ত কোষের মৃত্যু ঘটায়। তবে, সুচতুরতার সাথে ব্যাকটেরিয়া MprF জিনে মিউটেশন ঘটিয়ে লাইসিল-ফসফ্যাটিডিলগ্লিসারল (lysyl-phosphatidylglycerol, L-PG) এর উৎপাদন বৃদ্ধি ও ক্যালসিয়ামের বন্ধনকে বাধা দিয়ে ব্যাকটেরিয়া কোষপৃষ্ঠের চার্জ বৃদ্ধিসহ সক্রিয়ভাবে পেপ্টিডোগ্লাইক্যান সংশ্লেষণের মাধ্যমে কোষ প্রাচীরকে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী করে তোলে ।
গ্লাইকোপেপ্টাইড গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন, ভ্যানকোমাইসিন) অনেকটা লাইপোপেপ্টাইড গ্রুপের মতোই কোষ প্রাচীর সংশ্লেণে বাধা প্রদান করে। ভ্যানকোমাইসিন-প্রতিরোধী এন্টারোকক্কাস ও S. aureus জাতীয় ব্যাকটেরিয়া বর্তমান সময়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। প্লাজমিড ডিএনএ অণুতে এক গুচ্ছ ‘ভ্যান’ জিন (VanA, VanX, VanR) অধিগ্রহণের মাধ্যমে পেপ্টিডোগ্লাইকানের পূর্বসূরির রাসায়নিক গঠনে, অর্থ্যাৎ ‘ডি-অ্যালা-ডি-অ্যালা’ ক্রমের পরিবর্তন আনয়নে ভ্যানকোমাইসিনের বাঁধন ক্ষমতা হ্রাস করে ফেলে, প্রতিরোধী হয়ে ওঠে ভ্যানকোমাইসিনের বিপরীতে। এই জিনগুলো ট্রান্সপোজনে (transposon- চলিষ্ণু জেনেটিক এলিমেন্ট) অবস্থান করায় খুব সহজেই এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়াতে কনজুগেশনের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হতে পারে।
রাইবোজোম প্রতিরোধক অ্যান্টিবায়োটিক প্রোটিন সংশ্লেষণকে বাধা দিয়ে তাদের কর্মদক্ষতা প্রয়োগ করে। প্রসঙ্গতঃ ব্যাকটেরিয়ার রাইবোজোম (যে অঙ্গাণুতে প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়) ৬৫% রাইবোজোমীয় আরএনএ (rRNA) ও ৩৫% রাইবোজোমীয় প্রোটিন নিয়ে গঠিত, যা দুটি সাব-ইউনিটে (50S ও 30S) বিভক্ত। রাইবোজোমকে প্রোটিন সংশ্লেষনের মেশিন হিসেবে উল্লেখ করলেও অত্যুক্তি হয় না। প্রোটিন সংশ্লেষণে আরও একটি সহযোগী অণু হচ্ছে ট্রান্সফার আরএনএ (tRNA)। উদাহরণস্বরূপ, অ্যামিনোগ্লাইকোসাইড ও টেট্রাসাইক্লিন 30S সাব-ইউনিটকে বাধা দেয়, যখন অক্সাজোলিডিনোন, ম্যাক্রোলিড ও স্ট্রেপ্টোগ্রামিন 50S রাইবোজোমীয় সাব-ইউনিটকে বাধাদান করে। অনেক জনপ্রিয় ও সফল একটি অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাজিথ্রোমাইসিন 50S সাব-ইউনিটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রোটিন সংশ্লেষণে বাধা দেয়। তবে অতিরিক্ত অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রয়োগে ইতিমধ্যেই S. pneumonia ব্যাকটেরিয়ায় গড়ে উঠেছে প্রতিরোধ্যতা।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
অ্যান্টিবায়োটিক-বিরোধী সফলতার আরও একটি বড়ো কৌশল হলো যে, ব্যাকটেরিয়ার নির্দিষ্ট কিছু এনজাইম অ্যান্টিবায়োটিগুলোর রাসায়নিক কাঠামোতে কিছু রাসায়নিক গ্রুপ সংযোগ করে, যা অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।
ফলে, অ্যান্টিবায়োটিক তার লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছতে পারে না। এ ধরণের কিছু রাসায়নিক-গঠন-পরিবর্তনকারী প্রক্রিয়া হচ্ছে: ১) অ্যাসিটিলেশন বা ‘CH3CO’ গ্রুপের সংযোজন (ক্ষতিগ্রস্থ অ্যান্টিবায়োটিক: অ্যামিনোগ্লাইকোসাইড, ক্লোরামফেনিকল, স্ট্রেপ্টোগ্রামিন); ২) ফসফোরিলেশন বা ফসফোরিল ‘PO3‘ গ্রুপের সংযোজন (অ্যামিনোগ্লাইকোসাইড, ক্লোরামফেনিকল); এবং ৩) অ্যাডিনাইলেশন বা ‘AMP’ গ্রুপের সংযোজন (অ্যামিনোগ্লাইকোসাইড, ক্লোরামফেনিকল)।
শনাক্ত হয়েছে বিপুল সংখ্যক ট্রান্সফেরেজ (transferases) গ্রুপের এনজাইম, যারা সংযোগ করে অ্যাসিটিল, ফসফোরিল বা অ্যাডিনিল গ্রুপ। ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত প্রক্রিয়া হলো অ্যাসিটিলেশন, যা অ্যামিনোগ্লাইকোসাইড, ক্লোরামফেনিকল, স্ট্রেপ্টোগ্রামিন এবং ফ্লুওরোকুইনোলোনের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। ফসফোরিলেশন ও অ্যাডিনাইলেশন প্রাথমিকভাবে অ্যামিনোগ্লাইকোসাইডের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয় বলে জানা গিয়েছে।
অ্যান্টিবায়োটিকগুলোতে এই ধরণের রাসায়নিক গ্রুপের সংযোজন ঘটলে তা রাইবোজোমের সাথে অ্যান্টিবায়োটিকের আবদ্ধ হওয়ার ক্ষমতা লোপ পায়। এছাড়া, Erm (erythromycin ribosome methylase) জিনগুলো রাইবোজোমের আরএনএ-য়ের বিভিন্ন স্থানে মিথিলেশন (মিথাইল ‘CH3’ গ্রুপের সংযোগ)র মাধ্যমে প্রতিরোধের সৃষ্টি করে- ফলে, ম্যাক্রোলিড, লিঙ্কোসামাইড ও স্ট্রেপ্টোগ্রামিন-বি অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর রাইবোজোমের সাথে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়। 50S সাবইউনিট এর সাথে আবদ্ধ হয়ে ইরিথ্রোমাইসিন (ম্যাক্রোলিড) অ্যামিনোঅ্যাসিল-tRNA স্থানান্তরে হস্তক্ষেপ করে, rRNA কমপ্লেক্সের A সাইটে আবদ্ধ tRNA-কে কমপ্লেক্সের P সাইটে স্থানান্তর করতে বাধা দেয়।
ডিএনএ সংশ্লেষণ প্রতিরোধক কুইনোলোন/ফ্লুওরোকুইনোলোন অ্যান্টিবায়োটিক গ্রাম-নেগেটিভ ও গ্রাম-পজিটিভ উভয় ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর। বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ব্যবহৃত কুইনোলোন অ্যান্টিবায়োটিকগুলির মধ্যে একটি হলো সিপ্রোফ্লক্সাসিন। ফ্লুওরোকুইনোলোন ব্যাকটেরিয়ায় টোপাইসোমারেজ II/ডিএনএ গাইরেজ (গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া) ও টোপাইসোমারেজ IV (গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া) এনজাইমকে বাধা দিয়ে ডিএনএ সংশ্লেষণ বা অনুলিপি তৈরিতে হস্তক্ষেপ করে।
ডিএনএ টোপাইসোমেরেজ এনজাইমটি দ্বিসূত্রক ডিএনএ-য়ের সুপারকয়েল, গিট বা জট পাকানো অবস্থা থেকে ডিএনএ-কে মুক্ত করে, শিথিল করে অতিরিক্ত কুন্ডলি-পাকানো ডিএনএ অণু, যা ডিএনএ অনুলিপনের জন্য আবশ্যক।
কুইনোলোন প্রতিরোধের তিনটি প্রক্রিয়া বর্তমানে স্বীকৃত: ডিএনএ গাইরেজ ও টোপাইসোমারেজ IV এর জিনগুলোতে মিউটেশনঘটিত পরিবর্তন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের লক্ষ্যকে পরিবর্তন করে, যা ব্যাকটেরিয়াকে কুইনোলোন অ্যান্টিবায়োটিকের মারাত্মক প্রভাব থেকে রক্ষা করে। প্লাজমিড-মধ্যস্থ কুইনোলোন প্রতিরোধক জিন (qnr) পরিবার যেসব Qnr-প্রোটিন সংশ্লেষ করে তা কুইনোলোন যৌগের বিরুদ্ধে ডিএনএ গাইরেজ এবং টোপাইসোমারেজ IV কে রক্ষা করে। ই.কোলাই, স্যালমোনেলা ও ক্লেবসিয়েলা প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ায় তিন ধরণের qnr জিন পাওয়া যায় –qnrA, qnrB ও qnrS।
একই প্লাজমিডে অবস্থান করতে পারে এসিটিলট্রান্সফেরেজ জিন এবং ইফ্ল্যাক্স ট্রান্সপোর্টার OqxAB ও QepA জিন। এসিটিলট্রান্সফেরেজ এনজাইম কুইনোলোন যৌগকে ভেঙে ফেলে এবং OqxAB/QepA ইফ্ল্যাক্স-পাম্পগুলি কুইনোলোন ড্রাগটিকে খুব তাড়াতাড়ি কোষ থেকে নিষ্ক্রমিত করে। এছাড়াও, ক্লোরামফেনিকল অ্যাসিটিল ট্রান্সফেরেজ সংশ্লেষণের জন্য একাধিক ‘Cat’-জিন গ্রাম-পজিটিভ এবং গ্রাম-নেগেটিভ উভয় ব্যাকটেরিয়ার প্লাজমিড ও ট্রান্সপোজন এলিমেন্টে শনাক্ত হয়েছে।
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
বিপাকীয় পথে বাধাদানকারী অ্যান্টিবায়োটিক গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক গ্রাম-পজিটিভ ও গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিপাকীয় জৈব-রাসায়নিক পথকে বাধা দিয়ে কাজ করে, যেমন সালফোনামাইড ও ট্রাইমেথোপ্রিম। মূত্রনালী সংক্রমণের সাথে জড়িত ই.কোলাই, প্রোটিয়াস, ক্লেবসিয়েলা, এন্টারোব্যাক্টর ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়াগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয় ট্রাইমেথোপ্রিম। সালফোনামাইড ও ট্রাইমেথোপ্রিমের মূল লক্ষ্য হলো ফোলেট বা ভিটামিন B9 জৈব সংশ্লেষণকে বাধা দেয়া। ডিএনএ ও আরএনএ সংশ্লেষণে এবং কোষ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড বিপাক করার জন্য ফোলেট অপরিহার্য একটি উপাদান। সালফোনামাইড ডাইহাইড্রোপ্টেরোয়েট সিন্থেজ (DHPS) নামক এনজাইম ফোলেট সংশ্লেষণের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। অপরপক্ষে, ট্রাইমেথোপ্রিম আবদ্ধ হয় ডাইহাইড্রোফোলেট রিডাক্টেজ (DHFR) এনজাইমের সাথে এবং ডাইহাইড্রোফলিক অ্যাসিড (DHF) থেকে টেট্রাহাইড্রোফলিক অ্যাসিড (THF) রূপান্তরকে বাধা দেয়। থাইমিডিন সংশ্লেষণের জন্য THF একটি অপরিহার্য পূর্বসূরি। এই পথে হস্তক্ষেপ ক’রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ সংশ্লেষণকে বাধা দেয়। ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে এসব এনজাইমগুলোর অ্যাকটিভ সাইটে মিউটেশনের মাধ্যমে, যা এনজাইমগুলোর গঠনের পরিবর্তন আনে। এছাড়া, DHPS ও DHFR এনজাইমগুলোর অতিরিক্ত উৎপাদন কোষের ভিতর যথাক্রমে সালফোনামাইড ও ট্রাইমেথোপ্রিম ওষুধের সাথে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়ে ওঠে- ফলে, কোষাভ্যন্তরে অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।
উপসংহার
পৃথিবীতে ব্যাকটেরিয়ার আবির্ভাব ও অবস্থানের তুলনায় চিকিৎসা বিজ্ঞানে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার একটি সাম্প্রতিক ঘটনা মাত্র। প্রকৃতিগতভাবেই লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ব্যাকটেরিয়াগুলো অ্যান্টিবায়োটিক-সহ পরিবেশের নানা অণুজীব-বিরোধী পদার্থের বিপরীতে তাদের প্রতিরোধ্যতা গড়ে তুলেছে এবং সফলতার সাথে টিকে আছে। যুদ্ধ করে টিকে থাকার সেই সৃজনশীল কৌশল প্রকৃতি-ই তাদের শিখিয়েছে। তাই, অনেক বিজ্ঞানী ব্যাকটেরিয়াগুলোর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের এই কৌশলকে একটি স্বাভাবিক ‘অভিযোজিত প্রক্রিয়া’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তবে, সমস্ত বিতর্কের উর্ধ্বে উঠে আমাদের এটা মেনে নিতে হয় যে, চিকিৎসা ব্যবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপির বাস্তবায়ন আধুনিক ওষুধের একটি অন্যতম সফল অগ্রগতি, যা বিশ্বজুড়ে মানুষসহ প্রাণিকুলের জীবনকালকে উল্লেখযোগ্যভাবে দীর্ঘায়িত করেছে। যদিও, সংক্রামিত অণুজীবগুলোর মাল্টিড্রাগ প্রতিরোধের কারণে চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন বেশ জটিলতায় পড়েছে। তাছাড়া, বিশেষকরে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের সহজলভ্যতা, নিম্নমানের কাঁচামালের সাহায্যে ওষুধ কোম্পানিগুলোর অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন, আন্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, রোগীদের এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব, এসব কিছুর কারণেই অণুজীববিরোধী প্রতিরোধ্যতার প্রকোপ ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে স্ট্যান্ডার্ড নীতিমালা ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনা রয়েছে কার্যকরভাবে তার বাস্তবায়ন এখনই হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতার কৌশলগুলো নিয়ে ও নতুন প্রজন্মের অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষকরে, দেশের পরিবেশগত প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, দেশের সরকার, ইউজিসি এবং উচ্চতর মেডিক্যাল ও সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে আমরা আশাবাদী। এছাড়াও প্রয়োজন জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি। তাই বরাবরের মত চলতি বছর ১৮-২৪ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী ‘সচেতনতা সপ্তাহ’ পালিত হতে যাচ্ছে। ২০২২ সালের থিম বা স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘Preventing Antimicrobial Resistance Together’ -অর্থাৎ ‘চলুন, আমরা একত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা দমন করি”।
প্রফেসর ড. রাশিদুল হক, সাবেক উপ-উপাচার্য, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, এবং সাবেক অধ্যাপক, এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়, আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র, ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ। ড. সুলতানা রাজিয়া, সহকারী অধ্যাপক, সেন্টার ফর ইন্টারডিসিপ্লিনারি রিসার্চ (CIR), বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, বাংলাদেশ।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization
- সমাজদর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের সম্পর্ক, সমাজদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শনের সম্পর্ক, Relation between Social Philosophy & Political Philosophy
- দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?, দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে অধিবিদ্যা আলোচনা করুন।
- দর্শনের প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা কর