মাদক ও তরুণপ্রজন্মের ভবিষ্যৎ

মাদক ও তরুণপ্রজন্মের ভবিষ্যৎ

গতকাল উৎযাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। এ উপলক্ষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এ বছরের মাদকবিরোধী আহবান ছিলÑ ‘মাদক বিষয়ে হই সচেতেন, বাঁচাই প্রজন্ম, বাঁচাই জীবন’।

মাদক একটি ভয়ংকর মরণব্যাধি। মাদকের ছয়লাভে ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। যা একটি অনাকাঙ্খিত জীবন বিনাশকারী ঘাতক। প্রাচীন যুগে মদ বা নেশা উদ্রেককারী বিভিন্ন ফল যেমন- আঙুর খেজুর কিসমিস দ্বারা এক প্রকারের নেশা জাতীয় উপকরণ তৈরি করা হতো।

এগুলো বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল তখন। বর্তমানে ইয়াবা, বাবা, ফেনসিডিলসহ আরও অনেক দেশি-বিদেশি নামে এ মাদক বা নেশা জাতীয় দ্রব্যের বিস্তার ঘটেছে আমাদের সমাজে। মাদক সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধক। কেননা বলা হয়ে থাকে যে, যুবশক্তি হলো একটি দেশের চালিকাশক্তি।

যাদের হাতেই গড়ে উঠবে আমাদের আগামী পৃথিবী। যাদের নেতৃত্বেই চালিত হবে গোটা বিশ^। আর সেখানে আমাদের যুব তরুণদের অধিকাংশই আজ এই মরণব্যাধি মাদকে আসক্ত। এমনকি নারীরাও আজ মাদক আসক্ত। দৈনিক ইত্তেফাকের একটি প্রতিবেদন বলছেÑ বাংলাদেশের প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মরণব্যাধি মাদকে আসক্ত। যার ৮০ শতাংশই যুবক। Ñদৈনিক ইত্তেফাক ০২.০২.১৮

বর্তমানে এ সংখ্যা আরও কত ছাড়িয়ে গেছে জানা নেই। কারণ বৈশি^ক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। অনলাইনক্লাস শিক্ষার্থীদেরকে কাছে টানতে পারছে না। তারা এখানে ওখানে বসে কেউ ফ্রি ফায়ার-পাবজি খেলায় ব্যস্ত। কেউবা মাদকের বিষাক্ত ছোবলে মাতাল নেশাগ্রস্ত।

এমনকি আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো যে, ১০ হাজার নারী শিক্ষার্থীসহ বিশ^বিদ্যালয়ের প্রায় নব্বই হাজার শিক্ষার্থী ইয়াবা সেবনে আসক্ত, যার ৪০ শতাংশ বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ প্রতিদিন ১৬.০৩.১৭

নিঃসন্দেহে এ সংখ্যা বর্তমানে আরও অনেক বেড়েছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের ৭৬ মিলিয়ন মানুষ মদপানের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন কঠিন রোগে ভুগছে। তারা আরও বলছে- বিশ্বের সব রোগ-ব্যাধির ৩.৫ শতাংশ এই মদপান জনিত কারণেই হয়ে থাকে।

মদ, মাদক ও নেশাজাত দ্রব্য- এসব হলো ভয়াবহ সমাজ বিধ্বংসী উপকরণ। ব্যক্তি থেকে পরিবার এবং একটি পরিবার থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রে ছড়িয়ে যাচ্ছে এই মাদক। দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়- শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের ২৭ শতাংশ এইচ আই ভি আক্রান্ত। -দৈনিক প্রথম আলো ০১.১২.১৮

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন তারা আপনার কাছে মদ ও জুয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলুন, উভয়টিতেই রয়েছে মহা পাপ। -সুরা বাকারা; আয়াত ২১৯

বুখারির বর্ণনায় এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কিছু শরাব বা মদ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে- তিনি বলেন, সকল নেশা উৎপাদক বস্তুই হারাম। কুরআন এবং হাদিসের আলোকে আমরা জানতে পারলাম যে, মদ বা নেশা জাতীয় বস্তু হারাম। ইসলাম এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে। তাই মাদকের কুফল সম্পর্কে আমাদেরকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। আমাদের উঠতি কিশোর-তরুণ যুবসমাজকে এর ভয়াবহ ক্ষতি থেকে বাঁচাতে হবে। মনে রাখতে হবে মাদকের বিষাক্ত ছোবল যেন তরুণদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে না পারে। তাই ছেলে মেয়েরা কোথায় যায়? কখন কার সঙ্গে মেশে? এ ব্যাপারে আমাদেরকে এখনই আরও বেশি সজাগ হতে হবে! আসুন আমরা অভিভাবকরা আরও সচেতন হই।

লেখক: মীযান মুহাম্মদ হাসান

Leave a Comment