মাত্র ২ সপ্তাহেই প্রিলি প্রস্তুতি গুছিয়ে নিবেন যেভাবে

৪১/৪২/৪৩/৪৪ তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা । হাতে সময় কম। এই সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি শতভাগ পুরো করতে দরকার যথাযথ কৌশল ও পরিকল্পনা। আগামী দুই সপ্তাহে পাঠ পরিকল্পনা ঠিক করে জোরালো প্রস্তুতি নিতে কী কী করণীয়, জানাচ্ছেন ৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তা রবিউল আলম লুইপা

১. বিসিএস ক্যাডার হতে হলে সব বিষয়ে অলরাউন্ডার হতে হয়; কিন্তু প্রিলিতে টিকতে অলরাউন্ডার না হলেও চলে। কেউ যদি ইংরেজি আর গণিতে ৩৫+৩০ = ৬৫-এর মধ্যে শূন্যও পায়, তবু ২০০-৬৫ = ১৩৫ পেয়েও সেই প্রার্থী প্রিলিতে টিকতে পারে। তাই আপনার দুর্বলতাকে ভয় না পেয়ে শক্তিকে কাজে লাগান।

২. বিগত বছরের বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতিবছর সাধারণত ৬০ শতাংশ (সেই হিসাবে ২০০টি প্রশ্নের মধ্যে ১২০টি) প্রশ্ন কমন পাওয়া যায়, বাকি ৪০ শতাংশ প্রশ্ন নতুন হতে পারে। তাই যাঁদের প্রস্তুতি খুব একটা ভালো নয়, পরীক্ষার আগের দুই সপ্তাহ বিসিএস প্রশ্নব্যাংক ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিশেষ সংখ্যা থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক নিয়োগ প্রশ্নগুলো পড়ে উপকার পেতে পারেন।

৩. আগামী দুই সপ্তাহে যতটুকু পড়বেন, বাসায় নমুনা পরীক্ষা দেবেন তার চেয়েও বেশি। সময় ধরে বেশি বেশি মডেল টেস্ট দিলে পরীক্ষার হলের সময় ব্যবস্থাপনা যেমন আপনার আয়ত্তে আসবে, সিক্সথ সেন্স প্রয়োগ করে আন্দাজে করা প্রশ্নোত্তরের কয়টার মধ্যে কয়টা সঠিক হয়, সে ধারণাও আপনি পাবেন।

৪. এত দিন যা পড়েছেন, সেগুলোই গুছিয়ে নিন, বারবার রিভিশন দিন। খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না হলে নতুন করে কিছু পড়তে যাবেন না। এতে শুধু মানসিক দুশ্চিন্তাই বাড়বে। প্রিলি পরীক্ষায় আপনাকে ২০০-তে ২০০ নম্বর পাওয়ার প্রয়োজন নেই। মোটামুটি নিরাপদ এমন একটি নম্বর নিশ্চিত করতে পারলেই হলো (আনুমানিক ১২০+ নম্বর)। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নম্বর ক্যাডার নির্ধারণে বিবেচনা করা হয় না। এই পরীক্ষা শুধু লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ‘ইয়েস কার্ড’ মাত্র।

৫. পরীক্ষার দিন পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকুন। এটিই আপনার আসল প্রস্তুতি। অনেক প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষার আগে অসুস্থ হলে আপনার এত দিনের প্রস্তুতি ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। পরীক্ষার আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাবেন। পরীক্ষার কারণে অনিদ্রা বা ‘সব ভুলে গেছি’ এরকমটা মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। এটিকে স্বাভাবিকভাবে নিন।

বিষয়ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়
– বাংলা : ব্যাকরণ অংশে ধ্বনি ও বর্ণ, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, শব্দ, বাক্য ও পরিভাষা প্রভৃতি অধ্যায় থেকে প্রতি বিসিএসেই প্রশ্ন পাওয়া যায়। সাহিত্য অংশে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের পদাবলি ও লোকসাহিত্য এবং আধুনিক যুগের পিএসসির পুরনো লিখিত সিলেবাসে বর্ণিত ১১ জন সাহিত্যিকের জীবন ও কর্ম গুরুত্ব দিয়ে পড়ুন।

– ইংরেজি : ইংরেজি ব্যাকরণ অংশে Idioms and Phrases, Synonym ও Preposition-এ জোর দিন। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা করবেন না। সাহিত্য অংশ মোটামুটি পড়লেই ৮-১০ পাবেন, আর সামনের দুই সপ্তাহ টানা পড়লেও ১৫-তে ১৫ পাবেন না। তাই কৌশলী হন, কিছু নম্বর ছেড়ে দেওয়ার মানসিকতা রাখুন।

– গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা : গাণিতিক যুক্তি অংশে শতভাগ নম্বর তোলার চেষ্টা করুন। এই অংশ আপনাকে টিকে থাকার দৌড়ে এগিয়ে রাখবে। বীজগাণিতিক সূত্রাবলি, সূচক ও লগারিদম, বিন্যাস-সমাবেশ অধ্যায়গুলো ভালো করে দেখুন। মানসিক দক্ষতা অংশও ইংরেজি সাহিত্যের মতো মোটামুটি পড়লেই ১০-১২ পাবেন, অনেক পড়লেও ১৫ নিশ্চিত করা কঠিন।

– সাধারণ বিজ্ঞান এবং কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি : এই দুই সাবজেক্টে বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে সাধারণত প্রচুর প্রশ্ন কমন পাওয়া যায়। তাই এই অংশে ভালো প্রস্তুতির জন্য বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন বারবার পড়ুন।

– বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক : ৩৪তম বিসিএস পর্যন্ত এই দুই সাবজেক্টে বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন থেকে প্রচুর রিপিট হলেও ৩৫তম বিসিএস থেকে সাম্প্রতিক ঘটনা ও আনকমন প্রশ্ন বেশি আসে।

বাংলাদেশ বিষয়াবলি থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, জনসংখ্যা, কৃষি, সাম্প্রতিক অর্জন এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি থেকে জাতিসংঘ, এশিয়া মহাদেশ, চুক্তিসমূহ, সাম্প্রতিক তথ্য ভালো করে পড়ে যাবেন।

– ভূগোল ও নৈতিকতা : ভূগোল অংশে যে প্রশ্নগুলো আসে, সেগুলো সাধারণত বাংলাদেশ-আন্তর্জাতিক অংশ থেকেই কমন পাওয়া যায়। এর পরও বাংলাদেশের অবস্থান, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ অধ্যায়গুলো একটু চোখ বুলিয়ে নেবেন।

নৈতিকতা অংশের প্রশ্নগুলো অনেক দ্ব্যর্থবোধক, প্রতিটি উত্তরই সঠিক মনে হতে পারে। তাই শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে এই অংশের উত্তর না করাই উত্তম।

নিয়োগ পরিক্ষা