“ভালোবাসা প্রেম নয়”

“ভালোবাসা প্রেম নয়”

ভালো থেকো নয়না! ভালোবাসা”শব্দটি পবিত্র।পবিত্রতা নষ্ট হয়ে গেলে ভালোবাসা হারিয়ে যায় ময়লা আবর্জনায়।ঠিক পচা বাসী খাবার যেমন আমরা ফেলে দেই কোনো ডাস্টবিনে তেমনি ভাবে ভালোবাসার পবিত্রতা যখনই নষ্ট হয়ে যায় তখন ভালোবাসার কোনো মর্যাদা অথবা মূল্য থাকেনা কারো জীবনে।

সবকিছু বিবেচনা করে কখনও ভালোবাসা হয়না, ভালোবাসা তখনই হয় যখন অচেনা দুটি মুখ দুজনের কাছে চেনা জানা হয়ে যায় এবং একে অপরকে যখন খুব কাছ থেকে গভীর ভাবে চিনতে পারে।কোনো ধরণের মাপকাঠি দিয়ে ভালোবাসার ওজন করা যায় না কিংবা অনেক অর্থ দিয়ে কখনও ভালোবাসা কেনা যায় না।ভালোবাসা তখনই প্রকাশ পেয়ে থাকে যখন একজনের মনের কথা অন্য একজন সহজে মুখের দিকে কিংবা চোখের দিকে তাকিয়ে সহজে বুঝতে পারে তখনই ভালোবাসার জন্ম হয় দুজনের মনের মধ্যে।

আমার জীবনে ও একদিন ভালোবাসা এসেছিল। কষ্টের জীবনে ভালোবাসা যখনই আসে তখন মনে মনে ভয় হয় যদি ভালোবাসা হারিয়ে যায় আমার কষ্টের জীবন থেকে?তবুও সবসময় ভালোবাসার প্রতি আমার এক ধরণের বিশ্বাস ছিল যে আমার ভালোবাসা কখনও হারিয়ে যাবেনা,কখনও আমাকে কষ্ট দিবেনা কিন্তু ভাবনার সঙ্গে বাস্তবতার খুবই পার্থক্য।কখনও বুজতে পারিনি বিগত ১২ বছরের পবিত্র ভালোবাসা শুধুমাত্র টাকার জন্য হারিয়ে যাবে তিল তিল করে জন্ম নেওয়া ভালোবাসা অর্থের কাছে হার মানবে?আমি সবসময় ভালোবাসার প্রতি অটুট বিশ্বাস রাখতাম কখনও বুঝতে চাইতাম না যে গরীবের ভালোবাসা টিকে থাকে না হারিয়ে যায় কোটি পতির টাকার কাছে???

হঠাৎই নয়না একদিন ফোন করে বললো আমাকে’ জীবন আগামী শুক্রবার দেখতে আসবেন মা,বাবা তাদের পরিচিত ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ের কথা ভাবছেন ছেলের বাড়ি,গাড়ি আছে এছাড়াও বড় ব‍্যাবসা আছে।তুমি কিছু একটা করো?আমি নয়নাকে বললাম তুমি যদি আমাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে পৃথিবীর কোনো শক্তি আমাদের ভালোবাসা বিছিন্ন করতে পারবেনা।তুমি কিছু দিন অপেক্ষা করো কেননা আমি চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছি হয়তোবা খুব তাড়াতাড়ি
একটি ভালো চাকরি হয়ে যাবে আমার।

নয়না আস্তে আস্তে বললো তাহলে আমি কি বলবো মা,বাবাকে?আমার মাথায় কোনো কাজ করছে না।ভাবতে ভাবতে ঠিক শুক্রবার বাবা মায়ের পরিচিত সেই বিদেশ ফেরত ছেলে তামিম তার মা,বাবা ও ছোট বোন রিনি কে নিয়ে হাজির হলো আমাদের বাসায়।আমার মা বাবা আমার খুব কাছের দুজন বান্ধবী আগে থেকেই বলে রেখেছেন আমাকে এসে সময় মতো সাজাতে?কিন্তু আমি শুধু জীবনের কথা ভাবছি যাকে সেই ক্লাস নাইন থেকে ভালোবেসে আসছি তাকে ছাড়া কিভাবে অন্য জনকে জীবন সঙ্গী করবো?

    সন্ধ্যা হয়ে গেলো আমি বহু বার জীবনকে ফোন করেছি কিন্তু জীবনের ফোন বন্ধ পেয়েছি তাই জীবনের সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারিনি।
    আমার বান্ধবীরা আমাকে সাজিয়ে নিয়ে আসলো তামিমের বাবা,মায়ের কাছে তামিম চুপচাপ বসে ছিলো।আমি শুধুমাত্র একবার তামিমের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম এবং দেখলাম তামিমকে।কিন্তু তামিম এক নজরে আমাকে দেখতে ছিলো একটি বারের জন্য চোখের পলক ফেলেনি।কোনো কথা বলছিলাম না আমরা কেউ কিন্তু আমি হঠাৎ দেখলাম তামিমের মা হিরের আংটি বের করে আমার আঙুলে পরিয়ে দিলো এবং বললো বেঁচে থাকো মা তুমি আমার একমাত্র ছেলের ব‍উ হবে তুমি সুখী হবে দোয়া করি সবসময়।তখনই তামিমের ছোট বোন রিনি বলে উঠলো বাহ্ আমার হুবু ভাবিকে অনেক সুন্দর লাগছে।ভাইয়া যাওনা ঐ ঘরে গিয়ে দুজনে একটি কথা বলে আসো।তামিম বললো কিভাবে?রিনি বরলো আমি ব‍্যবস্থা করে দিচ্ছি।এই যে লক্ষী ভাবি চলোতো একটু ঐ ঘরে গিয়ে বসি।রিনি এর ফাকে ইশারা করে তার ভাইকে উঠে আসতে বললো যখনই দুজনে একটি আলাদা ঘরে ঢুকলো তখনই রিনি বাহির থেকে দরজা আটকিয়ে দিলো।

    তামিম এবং নয়না খুবই লজ্জায় পেলো কেউ কোনো কথা বলতে পারছিল না।এর মধ্যে তামিম বলে উঠলো তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে‌।আমি কখনোই এতো সুন্দর মেয়ে দেখিনি তোমাকে প্রথম দেখাতেই অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।তুমি কি আমাকে পছন্দ করো?নয়না যেনো তার ১২ বছরের ভালোবাসা হঠাৎ করে ভুলে গেলো ভুলে গেলো তার জীবনকে।নয়না তামিমের কথা শুনে
    কিছু বলতে গিয়ে ও বলতে পারেনি।শুধুমাত্র নিরবে তামিমের কথা শুনে যাচ্ছিল।তামিম ভাবলো মেয়েরা একটু বেশি লজ্জা পেয়ে থাকে হয়তোবা লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না।

    তামিম নয়নাকে বললো আমি খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে আপন করে নিতে চাই।আমি তোমাকে বিয়ে করে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাবো হানিমুন করতে।নয়না এই কথা শুনে খুবই খুশি হলো মনে মনে।কেননা গরীবের মেয়ে কখনও ভাবতে পারেনি এতো বড়লোক ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে হবে।পুরণো ভালোবাসা যেনো এক মূহুর্তে ভুলে গেলো।পরের দিন সকালে জীবন নয়নাকে ফোন করলো নয়না ফোন ধরে বললো তোমাকে গতকাল অনেক বার ফোন করেছি কিন্তু তুমি মোবাইল বন্ধ করে রেখেছো আমি বুঝতে পেরেছি তুমি এতো বছর আমাকে ভালোবাসোনি শুধুমাত্র অভিনয় করেছো।জীবন যেনো নয়নার এই কথা শুনে মাটির নিচে ঢুকে গেলো কোনো কথাই বলতে পারলোনা জীবন।

    এক সপ্তাহ পর নয়নার বিয়ে ঠিক হলো ৫ টি গাড়ি সাজিয়ে আসলো তামিম।ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেলো নয়নার ও তামিমের।জীবন সবকিছু জেনে চুপচাপ থেকো গেলো এবং বুঝতে পারলো গরীবের ভালোবাসা কখনও টিকে থাকেনা
    চুরমার হয়ে ভেঙ্গে গেলো জীবনের কষ্টের জীবন।
    নয়না এবং তামিম গেলো সিঙ্গাপুর হানিমুনে।এদিকে জীবন নিজেকে হারিয়ে না ফেলে একটি ভালো চাকুরী খুঁজে ছিলো একসময় একটি চাকুরী পেলো যে চাকুরীর জন্য জীবনকে সপ্তাহে একবার দেশের বাহিরে যেতে হতো মিটিং সেমিনারে যোগদান করতে।তামিম অফিসের মিটিং শেষ করে সিঙ্গাপুর সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গেলো আর মনে মনে নয়নাকে ভাবছিল ঠিক ভাবতে ভাবতে দেখা হয়ে গেল নয়নার সঙ্গে জীবনের।

    জীবন নয়নার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো নিরবে। তখন তামিম তাদের দুজনের মাঝখানে এসে বললো নয়না তুমি এই ছেলেকে চেনো নাকি?নয়না বললো হ‍্যা আমাদের গ্ৰামের ছেলে খুবই গরীব ছিলো ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারেনি কিন্তু অবাক লাগছে সুট টাই পরে কিভাবে সিঙ্গাপুরে ঘুরছে?জীবন নয়নার কথা শুনে রাগ না করে বললো নয়না তুমি কেমন আছো?কিন্তু নয়না কিছু বললোনা।তখন জীবন বলতে থাকলো তুমি ভালো থেকো তুমি সুখে থেকো এতেই আমি সুখে থাকবো।ভালো থেকো নয়না আমি সবসময় তোমাকে দুর থেকে ভালোবেসে যাবো যতদিন এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবো ততদিন আমার ভালোবাসা বেঁচে থাকবে।কখনও কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে বলো আমি সবসময় তোমার বিপদে তোমার পাশাপাশি থেকে তোমাকে সাহায্য করবো কোনো কিছু পেতে নয় শুধুমাত্র ভালোবাসার জন্য।

    আমার ভালোবাসা চিরকাল বেঁচে থাকবে তোমার জন্য তোমার সুন্দর মুখের জন্য।আমি তোমাকে ভালোবেসে এভাবেই বেঁচে থাকতে চাই জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত।

    নবীন লেখক মোঃ ফিরোজ খান

    Leave a Comment