বৈদেশিক বিনিময় পদ্ধতি,বিনিময় নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে?,বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য,বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণের মুখ্য উদ্দেশ্যাবলি, বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গুলো কি কি, বিনিময় নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আলোচনা করো

প্রশ্ন সমাধান: বৈদেশিক বিনিময় পদ্ধতি,বিনিময় নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে?,বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য,বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণের মুখ্য উদ্দেশ্যাবলি, বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গুলো কি কি, বিনিময় নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আলোচনা করো

কোন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাকে বিনিময় নিয়ন্ত্রণ বলে। বৈদেশিক বিনিময় সংক্রান্ত লেনদেনসমূহ সম্পূর্ণরূপে সরকারি বা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীনে আনার নামই বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ। বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে বিনিময় হারে সাময়িক স্থিতিশীলতা আনা বিনিময় নিয়ন্ত্রণের তৃতীয় উদ্দেশ্য। কাম্য পর্যায়ে বিনিময় হার উন্নীত বা হ্রাস করার উদ্দেশ্যে সরকার বিনিময় বাজারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে এবং স্বয়ং বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় বা বিক্রয় করে। সরকার যেকোন পরিমাণ দেশীয় মুদ্রা বাজার হতে ক্রয় করার জন্য প্রস্তুত থাকবে এবং এর বিনিময়ে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রয় করবে। ফলে কৃত্রিম উপায়ে কর্তৃপক্ষ বৈদেশিক মুদ্রার বর্তমান চাহিদা ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

বিনিময় নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে?

কোন দেশের বৈদেশিক মুদ্রাসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাকে বিনিময় নিয়ন্ত্রণ বলে। বৈদেশিক বিনিময় সংক্রান্ত লেনদেনসমূহ সম্পূর্ণরূপে সরকারি বা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীনে আনার নামই বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ। রাষ্ট্রীয় স্বার্থে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কারণ বৈদেশিক বিনিময়ে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ না করলে দেশের সাধারণ নাগরিকগণ বৈদেশিক মুদ্রা স্বাধীনভাবে বেচাকেনা করতে পারে। বিনিময় নিয়ন্ত্রণ করা হলে জনসাধারণ খোলাখুলিভাবে বৈদেশিক মুদ্রার কারবার করতে পারে না। বৈদেশিক মুদ্রার সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের উদ্দেশ্যে বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চালু করা হয়।


আরো ও সাজেশন:-

বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য

বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণের মুখ্য উদ্দেশ্যাবলি নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. অধিকাংশ দেশেই বিনিময় নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো রপ্তানী উৎসাহিত করা এবং আমদানী নিরুৎসাহিত করা। দেশীয় মুদ্রার বিনিময় মূল্য কম রাখা হলে বিশ্ব বাজারে দেশজ পণ্যের মূল্য হ্রাস পায় এবং একই সঙ্গে আমদানীকৃত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। ফলে রপ্তানী বাণিজ্যে উৎসাহ বৃদ্ধি পায় এবং আমদানী বাণিজ্যে নিরুৎসাহের সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে একটি পণ্যের দাম ৩০০ টাকা। বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যে বিনিময় হার ১ পাউন্ড=৩০ টাকা। সুতরাং পাউন্ড-স্টালিং হিসাবে পণ্যটির মূল্য ১০ পাউন্ড। যদি বিনিময় হার ১ পাউন্ড=৪০ টাকা করা হয় তবে একই পণ্যের মূল্য হবে ৭.৫০ পাউন্ড অথচ আভ্যন্তরীণ মূল্য ৩০০ টাকাই থেকে যাবে। একই সময়ে ১০ পাউন্ড মূল্যের একটি পণ্যের দাম ৪০০ টাকায় বৃদ্ধি পাবে। ফলে ইংল্যান্ডবাসীদের দৃষ্টিকোণ হতে মূল্য হ্রাস পেল এবং বাংলাদেশীদের দৃষ্টিকোণ হতে মূল্য বৃদ্ধি পেল।

২. মূলধন রপ্তানী প্রতিহত করা বিনিময় নিয়ন্ত্রণের আরও একটি উদ্দেশ্য। মূলধন রপ্তানী সংক্রান্ত কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার জন্য নাগরিকদের অনুমতি দেয়া হয় না। বিদেশীদেরকেও তাদের সম্পদ প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য সুযোগ দেয়া হয় না। স্বর্ণের পাচার নিয়ন্ত্রণ ও দেশের স্বর্ণ-সম্পদ সংরক্ষণ করাও বিনিময় নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য।

৩. বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে বিনিময় হারে সাময়িক স্থিতিশীলতা আনা বিনিময় নিয়ন্ত্রণের তৃতীয় উদ্দেশ্য। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের দৃষ্টিকোণ হতে বিচার করলে বিনিময় হারের স্বল্পমেয়াদী স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য বিভিন্ন দেশ সাময়িকভাবে বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

৪. কতিপয় বৈদেশিক মুদ্রার সাথে স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখার জন্যও বিনিময় নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কোন দেশের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকলে বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ,

স্টালিং-এর সাথে বাংলাদেশী টাকার সম্পর্ক খুব শক্তিশালী হলে কোন কারণে স্টালিং-এর অবমূল্যায়ন ঘটলে টাকার অবমূল্যায়নও অনিবার্য হয়ে পড়বে।

৫. বিনিময় নিয়ন্ত্রণের আরও একটি উদ্দেশ্য হলো দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষিত রাখা এবং তা আন্তর্জাতিক দেনা পরিশোধের জন্য ব্যবহার করা। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে বর্তমানে যে অর্থনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছে তাতে এটি অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, মূলধন জাতীয় পণ্য যথা মেশিনারী আমদানী করার জন্য বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করা অবশ্য প্রয়োজনীয়। যেসব দেশ হতে ঋণ গ্রহণ করা হয় সেসব দেশের ঋণের আসল টাকা সুদ সমেত পরিশোধ করার জন্যও বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করা দরকার।

৬. যুদ্ধের সময় শত্রু দেশ ও এর অনুগত অন্যান্য জাতির ক্রয় ক্ষমতার ব্যবহার সীমিত করার জন্যও বিনিময় নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। উদাহরণ হিসাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিভিন্ন দেশ কর্তৃক গৃহীত বিনিময় নিয়ন্ত্রণ কলা- কৌশলসমূহের উল্লেখ করা যায়।

৭. আমদানী ও রপ্তানীর মধ্যে সঠিক সংহতি বিধানের মাধ্যমে প্রতিকূল আন্তর্জাতিক লেনদেনের উদ্বৃত্ত অনুকূলে আনয়ন করা বিনিময় নিয়ন্ত্রণের আরও একটি অন্যতম উদ্দেশ্য।

৮. দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রকার উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করার জন্যও বিনিময় নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

৯. বৈদেশিক বিনিময়ের আরও একটি উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক বাজারে দর কষাকষির শক্তি বৃদ্ধি করা।

বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

১. সরকারি হস্তক্ষেপ ঃ কাম্য পর্যায়ে বিনিময় হার উন্নীত বা হ্রাস করার উদ্দেশ্যে সরকার বিনিময় বাজারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে এবং স্বয়ং বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় বা বিক্রয় করে। সরকার যে কোন পরিমাণ দেশীয় মুদ্রা বাজার হতে ক্রয় করার জন্য প্রস্তুত থাকবে এবং এর বিনিময়ে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রয় করবে। ফলে কৃত্রিম উপায়ে কর্তৃপক্ষ বৈদেশিক মুদ্রার বর্তমান চাহিদা ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মুদ্রাস্ফীতির দরুন দেশীয় মুদ্রার অভ্যন্তরীণ মূল্যের অবচয় হলো। আন্তর্জাতিক লেনদেন অবিঘ্নিত রাখার উদ্দেশ্যে সরকার মুদ্রার বাহ্যিক মূল্য উচ্চ রাখবার জন্য মনস্থ করল। বিনিময় বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বৃদ্ধি করে তা করা যায়। বিনিময় বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে বহুল পরিমাণে দেশীয় মুদ্রা ক্রয় করলেও দেশীয় মুদ্রার সরবরাহ হ্রাস পাবে। পক্ষান্তরে, কোন দেশ মুদ্রার বিনিময় মূল্য নির্দিষ্ট করতে চাইলে বিনিময় বাজারে দেশীয় মুদ্রার সরবরাহ বৃদ্ধি করে তা করতে পারে।

২. বিনিময় সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ আরোপ: ঃ যে বৈদেশিক মুদ্রায় সরকারের স্বার্থ বিশেষভাবে জড়িত, সরকার বিবিধ প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ করে সে মুদ্রার বর্তমান চাহিদা ও সরবরাহ প্রভাবান্বিত করে। এসব বিধি-নিষেধের পদ্ধতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে।

৩. পরিশোধ চুক্তি ঃ পরিশোধ চুক্তি অনুসারে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে পারস্পরিক দেনা পরিশোধ করা হয়। দুই দেশের মধ্যে যে ব্যবসায় চলে তা হতে উদ্ভূত দেনা পরিশোধ করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজের হাতে তুলে নেয়। ব্যবসায়ীরা সরকারি আর্থিক নিয়ন্ত্রণাধীনে ব্যবসা করতে পারে কিন্তু বৈদেশিক দেনা প্রত্যক্ষভাবে পরিশোধ করতে পারে না।

৪. লেনদেন চুক্তি ঃ যে দুই দেশের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্য হয় তাদের মধ্যে কোনরূপ লেনদেন চুক্তি থাকলে এক দেশের নিকট প্রাপ্য উদ্বৃত্ত অন্য দেশে স্বর্ণ বা গ্রহণযোগ্য তৃতীয় মুদ্রায় পরিশোধ করা হয়।


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক

৫. ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ ঃ সরকার আমদানী রপ্তানী ক্ষেত্রে লাইসেন্স ব্যবস্থার প্রবর্তন করে বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এরূপ ব্যবস্থার অধীনে শুধুমাত্র লাইসেন্সধারী ডিলারগণ বিদেশে মাল রপ্তানী করতে পারবে এবং উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সরকারি তহবিলে জমা হবে। রপ্তানীকারকদেরকে তাদের দ্রব্যের মূল্য দেশী মুদ্রায় প্রদান করা হবে।

অনুরূপভাবে লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা সরকারের অনুমতিক্রমে নির্দিষ্ট কতগুলো দ্রব্য বিদেশ হতে আমদানী করতে পারবে। এভাবে বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ সম্ভবপর।

৬. স্থবির চুক্তি ঃ এরূপ চুক্তি মোতাবেক সাধারণতঃ স্বল্প মেয়াদী ঋণকে দীর্ঘ-মেয়াদী ঋণে রূপান্তরিত করা হয় অথবা স্বল্পমেয়াদী ঋণ পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে পরিশোধ করার ব্যবস্থা করা হয়।

৭. আবদ্ধ হিসাব ঃ বিদেশীদেরকে তাদের প্রাপ্য অর্থ মরেটরিয়াম পিরিয়ড শেষ হওয়ার পূর্বে অথবা মরেটরিয়াম প্রত্যাহার করার পূর্বে নিজ দেশে হস্তান্তর করার জন্য অনুমতি দেয়া হয় না। একটি আবদ্ধ হিসাবে (সাধারণতঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে) তাদের প্রাপ্য অর্থ জমা রাখা হয়। এ হিসাব হতে বিদেশীরা অর্থ তুলে নিতে পারে না। এ পদ্ধতির প্রধান উদ্দেশ্য হলো, দেশের বাইরে অর্থ স্থানান্তরের ফলে উদ্ভূত বিনিময় হারের উপর অনাকাঙ্খিত প্রতিক্রিয়া দূরীভূত করা এবং বৈদেশিক দেনার উপর সুদের ভার লাঘব করা।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment