রোহিঙ্গা সমস্যা – জাতিসংঘের অসম্পূর্ণ প্রস্তাব ও বাংলাদেশের অবস্থান
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি না করতে জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে যে প্রস্তাব ১৯ জুন সাধারণ পরিষদে পাস হয়, তা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখেছি, ওই প্রস্তাবের পক্ষে ১১৯টি এবং বিপক্ষে একটি ভোট পড়ে।
বাংলাদেশ, রাশিয়া, চীন, ভারত, নেপাল, ভুটান, লাওস, থাইল্যান্ডসহ ৩৬টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। নিরপেক্ষ অবস্থানের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থানও অস্পষ্ট নয়। বিশেষত, মিয়ানমারের পরিস্থিতির ওপর এমন একটি প্রস্তাব পাস হওয়ার পরও সেখানে রোহিঙ্গা বিষয়টি উপেক্ষিত থাকাটা বিস্ময়কর।
স্বাভাবিকভাবেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ যে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, তা বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। এর আগে গত মাসে আসিয়ান সম্মেলনেও আমরা দেখেছি, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওপর যে ধরনের চাপ প্রয়োগ করার দরকার ছিল, তা হয়নি।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
অথচ আসিয়ান সম্মেলনে খোদ মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হদ্মাইংও উপস্থিত ছিলেন। আসিয়ান জোটভুক্ত দেশের নেতারা সর্বসম্মতভাবে মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধ করা, আলোচনা শুরু করা, ত্রাণ সরবরাহ, বিশেষ দূত নিয়োগ, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য মিয়ানমারে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর পাঁচ দফা প্রস্তাব গ্রহণ করে। এ প্রস্তাব নিয়ে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন।
অথচ ওই সম্মেলনের আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ান থেকে মিয়ানমারের সামরিক নেতার বৈধতা ও আঞ্চলিক সংস্থাটি থেকে দেশটির সদস্যপদ বাতিলের বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছিল কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। জাতিসংঘের এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করে লিচেনস্টাইন। প্রস্তাবে দেশটিতে অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তাছাড়া প্রস্তাবটিতে দেশটির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তার প্রতি নিন্দা জানানো হয়।
অং সান সু চিসহ সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি দাবির পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমাতে সহিংসতা না চালানোর আহ্বানও জানায় জাতিসংঘ। আমরা জানি, অভ্যুত্থানের পর জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ নিষ্ঠুরভাবে দমন করে চলেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
ইতোমধ্যে গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারী, কর্মী ও সাংবাদিকদের আটক করা হয়েছে। পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারের (এএপিপি) তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর এ পর্যন্ত পাঁচ হাজারজনকে আটক করা হয়েছে এবং বিক্ষোভ দমন অভিযানে হত্যা করা হয়েছে ৮৬০ জনেরও বেশি মানুষকে।
বলাবাহুল্য, মিয়ানমারের এ অবস্থা নতুন নয়। অতীতেও দেশটি এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। কিংবা বলা চলে সেখানকার সেনা শাসকরা বিষয়গুলো সেভাবে গুরুত্ব দেননি। তারপরও জাতিসংঘের এ প্রস্তাবে যারাই নীরব ছিল তাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে বিবৃতি দিয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশেষ করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা সাধারণ পরিষদে যথার্থই বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের মূল যে কারণ, তা স্বীকার করে না নিলে এবং তার সমাধানে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা না হলে মিয়ানমার বিষয়ে যে কোনো প্রস্তাব ‘অসম্পূর্ণ’ থেকে যাবে।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
তিনি বলেছেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর যে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানো হলো, তারপরও সংকটের মূল কারণগুলো স্বীকার করে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতায় মিয়ানমারে এক ধরনের দায়মুক্তির সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে; এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, অন্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে।
আমরা দেখছি, ওই প্রস্তাব আলোচনায় কেবল বাংলাদেশই নয় ইরান, মিসর, তুরস্কও রোহিঙ্গাদের বিষয়টি তুলে ধরেছিল। জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্ব যারা ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় তাদেরও যে রোহিঙ্গাদের প্রতি ‘সফট কর্নার’ রয়েছে সেটাও অজানা নয়।
এরপরও প্রস্তাবটিতে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি উপেক্ষিত থাকা দুঃখজনক। মিয়ানমারের বর্তমান সংকটের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যু উপেক্ষা করার অবকাশ নেই। সেখানকার জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের পক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রহীন হয়ে বিভিন্ন দেশে বাস করছে।
এমনকি রাখাইনেও এক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকত্বহীন অবস্থায় বাস করছে। রোহিঙ্গাদের যেভাবে জাতিগতভাবে নিধনের চেষ্টা করা হয়েছে, যেভাবে তারা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তাদের পক্ষে অধিকারের জন্য বিশ্বজনমত অত্যন্ত জরুরি।
জাতিসংঘের প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি যুক্ত করা এজন্যই জরুরি ছিল। তাছাড়া, মিয়ানমারের সংকট আলোচনায় রোহিঙ্গা যেখানে অবধারিত বিষয় সেখানে তাদের উপেক্ষা করা মানে আলোচনাটিও অসম্পূর্ণ থাকা। রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করে জাতিসংঘ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পেশ করতে পারত।
বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করার অবকাশ নেই। এ প্রস্তাবের মাধ্যমে এটা বোঝা যায়, বিশ্ব সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের বিষয়টি উপেক্ষা করছে এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশ যেভাবে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে সেদিক থেকে অন্যরা তার দায়িত্ব এড়াতে চাইছে।
আমরা জানি, অনেক দেশই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে চায়নি। উল্টো অনেকেই রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার চেষ্টা করেছে। অথচ বাংলাদেশ তাদের কেবল আশ্রয়ই দেয়নি, ভাসানচরে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত আন্তর্জাতিক মানের আবাসও গড়ে তুলেছে।
রোহিঙ্গারা আমাদের দেশের ভেতরে পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করছে। তাদের কারণে স্থানীয়রা নানাভাবে চাপের মধ্যে রয়েছে। তারপরও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গা সংকট একটি আন্তর্জাতিক বিষয়।
এর দায় একা বাংলাদেশের নয়। তারপরও বাংলাদেশ যেভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে, সেভাবে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর এগিয়ে না আসা হতাশাজনক। দায়বদ্ধতার দিক থেকেও জাতিসংঘের আলোচ্য প্রস্তাবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি যুক্ত করা জরুরি ছিল।
ভারত ও চীন যে কারণে প্রস্তাবটিতে ভোট দিতে বিরত ছিল বাংলাদেশের অবস্থান সেদিক থেকে ব্যাখ্যা করা ভুল হবে। ভারত-চীন তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে সর্বদা মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকে। কিন্তু যারা প্রস্তাবটির পক্ষে তথা মিয়ানমারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে তারাও কিন্তু মানবতার দিক থেকে রোহিঙ্গা বিষয়টির সমাধান চায়।
সে অর্থে জাতিসংঘের প্রস্তাবে তাদেরও প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বলাবাহুল্য, প্রস্তাবের মাধ্যমে জাতিসংঘের অগ্রগতি প্রশংসনীয়। এ উদ্যোগ এ অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি নিঃসন্দেহে। রোহিঙ্গাদের বিষয়টি এ প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করলেই এটি সম্পূর্ণ ও অসাধারণ কাজ হতে পারত।
যেটা রোহিঙ্গা সংকট কাটাতে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখত। এক কথায়, রোহিঙ্গাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পাশ কাটিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবটি প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
আসিয়ান সম্মেলন ও জাতিসংঘের প্রস্তাবে যেভাবে রোহিঙ্গাদের উপেক্ষা করা হয়েছে, এর ভয়ংকর দিক হলো- ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা বিষয়টি আরও গুরুত্বহীন হয়ে পড়া।
অথচ এটি কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রোহিঙ্গাদের মতো নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতেই হবে। মিয়ানমারের যে কর্মকাণ্ড গণহত্যার ‘টেক্সটবুক’ উদাহরণ; যে অপরাধ দেশটিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পর্যন্ত নিয়ে গেছে;
সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে সে বিষয়টি কীভাবে এড়ানো যায়? বস্তুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান ছাড়া মিয়ানমার সংকটও সমাধানের পথে এগোতে পারে না। বিশ্ব সম্প্রদায় এ বিষয়টি যত দ্রুত বুঝবে ততই মঙ্গল।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
এখানে সকল প্রকাশ শিক্ষা বিষয় তথ্য ও সাজেশন পেতে আমাদের সাথে থাকুন ।
- কাস্টম হাউস পানগাঁও (bch) এর সিপাহী পদের লিখিত পরীক্ষার full প্রশ্ন সমাধানের pdf ২০২৩,bch Sepoy post question solution pdf 2023,কাস্টম হাউস পানগাঁও প্রশ্ন সমাধান ২০২৩
- ৩০তম বিসিএস প্রশ্ন সমাধান, ৩০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান, ৩০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রশ্ন সল্যুশন, ৩০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি (BCS) সকল সেট প্রশ্ন সমাধান
- 29th BCS Preliminary Question Solution, 29th BCS Question Answers PDF Download,29th BCS MCQ Questions Solution,29th BCS Question Solution
- 28th BCS Preliminary Question Solution, 28th BCS Question Answers PDF Download,28th BCS MCQ Questions Solution,28th BCS Question Solution
- 26th BCS Preliminary Question Solution, 26th BCS Question Answers PDF Download,26th BCS MCQ Questions Solution
- ২৭তম বিসিএস প্রশ্ন সমাধান, ২৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান