বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা প্রসঙ্গে

ড. নিয়াজ আহম্মেদ
কোমলমতি এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার সাময়িক অবসান হলেও নতুন করে তাদের ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। কেননা পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো সমন্বিত উদ্যোগ এখনো আলোর মুখ দেখছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এ মাসেই এইচএসসি পরীক্ষার কার্যত ফল প্রকাশ করতে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা প্রথমে ইউজিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে এবং পরে তাঁদের নিজেদের নিয়ে গঠিত পরিষদে আলোচনা করলেও কোনো একক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি। প্রথমে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও পরে তাঁরা সেই জায়গা থেকে সরে আসেন।

কেননা এ পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা অনেক। যদি সহজ হতো তাহলে আমরা চলমান সেমিস্টারগুলোর পরীক্ষা আগেই নিতে পারতাম। একক সিদ্ধান্তের অভাবে এরই মধ্যে বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অতীতের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সবাই আগের অবস্থানে অর্থাৎ সশরীরে ভর্তি পরীক্ষার কথা বলছে।

কেউ কেউ পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার কথাও বলছেন। যেমন—ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক মানবণ্টন ও বিভিন্ন প্রশাসনিক বিভাগে পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপনের কথা উল্লেখ করেছেন। অন্যরা এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি।

অতীতের মতো বহুল আলোচিত সমন্বিত কিংবা গুচ্ছ পদ্ধতির বাইরে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একক সিদ্ধান্তের ফলাফল আগের মতো শিক্ষার্থীদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটে যাওয়া।

করোনার এই সময়ে আপাতত এমন সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে কাজ করছে যথেষ্ট উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। গত দু-তিন মাসের পরিসংখ্যান এবং বর্তমান সময়ে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বিশ্লেষণ আমাদের জানান দেয় করোনা এখন বেশ বেড়েছে। মাত্র শীত শুরু, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনার ঢেউ আরো বাড়বে।

সরকারের কঠোর সিদ্ধান্ত ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায়ের বিধান থাকার পরও বেশির ভাগ মানুষ কিছুই মানছে না। আবার বিদেশ থেকে আসা মানুষ করোনার সার্টিফিকেট নিয়ে আসছে না।

তাদের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থাও পত্রিকায় প্রকাশ পর্যাপ্ত নয়। সার্বিক ব্যবস্থা এমন—আমরা করোনা থেকে যেমন মুক্ত নই, তেমনি মুক্ত থাকার জন্য ব্যবস্থাগুলোর প্রতি আমাদের সম্মান প্রদর্শন এবং মান্য করার কোনো চেষ্টা নেই। একমাত্র কওমি মাদরাসা ছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ।

বিকল্প ব্যবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা এবং পরবর্তী শ্রেণিতে ওঠানোর ব্যবস্থা আমরা করছি। যে যা-ই বলুক না কেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার ফলে কোনো ধরনের পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণের সুবিধাজনক অবস্থানে এখনো আমরা নেই। তাই আমরা এইচএসসি পরীক্ষা নিইনি। সাতটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হলেও আবার তা বাতিল করা হয়।

বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরির পরীক্ষা এই মুহূর্তে নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করছে না।

আগামী বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানোর মৌখিক ঘোষণা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এরই মধ্যে দিয়েছেন। সরকার যখন বিভিন্ন পরীক্ষার বিষয়ে এমন সিদ্ধান্তে তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক তা দেখার বিষয়।

আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিদ্ধান্তহীনতা শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে দারুণ সমস্যায় ফেলছে।

প্রতিবছর এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রাক্কালে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়। ফল প্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যে ভর্তির যাবতীয় কাজ সম্পন্ন ও জানুয়ারি মাসে ক্লাস শুরু হয়। যেহেতু এ মাসেই ফল প্রকাশিত হবে এবং আগামী জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ভর্তির যাবতীয় কার্যক্রম শেষ হওয়া উচিত;

কিন্তু সরকার যেখানে চাকরির পরীক্ষাগুলো নিতে পারছে না, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিভাবে সশরীরে পরীক্ষা নেবে। তা-ও যদি গুচ্ছ কিংবা সমন্বিত পদ্ধতিতে একটি পরীক্ষা হতো তাহলে কথা ছিল। যদি বড় চারটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে পরীক্ষা নেয় এবং অন্যরা গুচ্ছ পদ্ধতি বেছে নেয় তাতে শিক্ষার্থীদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে। তাদের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ছুটতে হবে না। শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছ কিংবা সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।

কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, করোনার এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নীতিনির্ধারকদের মন একটুও গলছে না। ঝুঁকির কথা মনে রেখে আমরা শুধু এ বছরের জন্য গুচ্ছ কিংবা সমন্বিত পরীক্ষার কথা ভাবতে পারি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যখন আক্রান্তের হার টেস্টের বিপরীতে ৫ শতাংশের নিচে থাকবে, তখন সহনীয় বলে ধরা হবে; কিন্তু আমরা এখনো তার চেয়ে অনেক ওপরে আছি। এ অবস্থায় আমরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করি এবং পরীক্ষা না নিতে পারি কিংবা নিলেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়, তখন কী হবে! আমরা দেখেছি আমেরিকায় এক দিনের নির্বাচনে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ।

বাস্তবতার নিরিখে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা আছে। যদি আমরা মনে করি পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তি করানো ঠিক নয়, তাহলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতে পারি। শিক্ষার্থীদের একটি গুচ্ছে পরীক্ষা দিলেই চলবে। তাতে করোনাঝুঁকি কিছুটা হলেও কম থাকবে। এ রকম সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের হয়তো পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে হবে। আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে মার্চ কিংবা এপ্রিল পর্যন্ত। এমনও হতে পারে, আমাদের পক্ষে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হলো না।

তাহলে কি আমরা বসে থাকব? সে ক্ষেত্রে পাবলিক পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলমান সেমিস্টারের পরীক্ষা নিতে পারছে না, তবে ক্লাস চালিয়ে নিচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আর দ্রুত পরীক্ষা নিতে পারলে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে তেমন পড়বে না। কিন্তু আমরা যদি নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে না পারি,

তাহলে নতুনরা পিছিয়ে পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বশাসিত বলে এখানে কোনো সিদ্ধান্ত চাপানোর সুযোগ নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় রেখে ওপরের কোনো একটি পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো উচিত এবং তা ত্বরিত দরকার। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান হবে।

ঢাবির বিভাগীয় ভর্তি পরীক্ষায় …

বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি …

বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা প্রসঙ্গে

সমন্বিত-ভর্তি-পরীক্ষা-এখন …

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা …

Leave a Comment