বিনিময় হার কিভাবে নির্ধারণ করা হয়, বিনিময় হারের উঠানামার কারণসমূহ, বিনিময় হার কিভাবে এবং কার দ্বারা বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়?, বৈদেশিক মুদ্রার হার কিভাবে নির্ধারণ করা হয়, বৈদেশিক বিনিময় হার উঠা-নামার কারনগুলো উল্লেখ কর, বিনিময় হারের ওঠা-নামার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের আপৎকালীন

প্রশ্ন সমাধান: বিনিময় হার কিভাবে নির্ধারণ করা হয়, বিনিময় হারের উঠানামার কারণসমূহ, বিনিময় হার কিভাবে এবং কার দ্বারা বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়?, বৈদেশিক মুদ্রার হার কিভাবে নির্ধারণ করা হয়, বৈদেশিক বিনিময় হার উঠা-নামার কারনগুলো উল্লেখ কর, বিনিময় হারের ওঠা-নামার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের আপৎকালীন

বিনিময় হার কিভাবে নির্ধারণ করা হয়:-

বিনিময় হার অনুসারে দুই দেশের মধ্যে মুদ্রা বিনিময় হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশের মুদ্রার বৈদেশিক মূল্য বিভিন্ন রকম হয়। তাই মুদ্রার মান অনুযায়ী বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পন্থায় বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়। বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ব্যবস্থার পার্থক্য অনুযায়ী বিনিময় হার নির্ধারণেও তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। ‘স্বর্ণমান ব্যবস্থায়’ যেভাবে বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়, ‘কাগজী মুদ্রা ব্যবস্থায়’ ঠিক সেভাবে বিনিময় হার নির্ধারিত হয় না।

নিম্নে উভয় প্রকার ব্যবস্থায় বিনিময় হার নির্ধারণের পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করা হলো:

১. স্বর্ণমান ব্যবস্থায় বিনিময় হার নির্ধারণ ঃ স্বর্ণমান ব্যবস্থায় যে পদ্ধতিতে বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয় তা ‘মিন্ট প্যারিটি তত্ত্ব’ নামে পরিচিত। স্বর্ণমান ব্যবস্থা অনুসরণকারী দেশগুলো তাদের মুদ্রা নির্দিষ্ট স্বর্ণমানের সাথে সম্পর্কযুক্ত রাখে। এ দেশগুলোর স্বর্ণমানের উপর ভিত্তি করে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি রাশিয়ায় এক আউন্স স্বর্ণের মূল্য ১০০ রুবল এবং বৃটেনে এক আউন্স স্বর্ণের মূল ২৫ পাউণ্ড হয়, তাহলে ১০০ রুবল=২৫ পাউণ্ড হবে। অর্থাৎ রুবল ও পাউণ্ডের বিনিময় হার ১০০ঃ২৫। স্বর্ণমান ব্যবস্থায় একটি ‘নির্দিষ্ট পরিধির’ মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহ দ্বারা বিনিময় হার নির্ধারিত হয়। উক্ত ‘পরিধি’ স্বর্ণের রপ্তানী ও আমদানীর পরিমাণ দ্বারা স্থির করা হয়। স্বর্ণের রপ্তানী বিন্দু ও আমদানী বিন্দুর দ্বারা স্থিরকৃত সীমার মধ্যে বিনিময় হার উঠা-নামা করে।

২. অপরিবর্তনীয় কাগজী মুদ্রণ ব্যবস্থা ঃ যে সমস্ত দেশে কাগজী মুদ্রা প্রচলিত সেই সকল দেশে বিনিময় হার নির্ধারণ করার জন্য দুটি প্রখ্যাত তত্ত্ব ব্যবহার করা হয়। নিম্নে এই তত্ত্ব দু’টি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:


আরো ও সাজেশন:-

(ক) সুইডেনের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক গুস্টাভ ক্যাসেল ক্রয় ক্ষমতার সমতা তত্ত্বের জনক। অপরিবর্তনযোগ্য কাগজী মুদ্রা ব্যবস্থায় বিনিময় হার নির্ধারণ করার কলা-কৌশল সম্পর্কে তিনি এই তত্ত্বে আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে সংশ্লিষ্ট দেশের মূল্যস্তরের উপর বিনিময় হার নির্ভরশীল।

এই তত্ত্ব বা মতবাদ অনুসারে দুই দেশের মুদ্রার ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে বিনিময় হার ঠিক করা হয়। মুদ্রার অভ্যন্তরীণ ক্রয় ক্ষমতা বাহ্যিক ক্রয় ক্ষমতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। মুদ্রার অভ্যন্তরীণ ক্রয় ক্ষমতা দ্রব্যমূল্য দ্বারা নির্ণয় করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, মনে করি, ‘ক’ নামক একটি দ্রব্যের ৫ কেজি পরিমাণ জিনিস আমরা ৭০ টাকা দিয়ে ক্রয় করতে পারি এবং ঠিক একই দ্রব্যের একই পরিমাণ জিনিস আমেরিকায় ১ ডলারে ক্রয় করা যায়। এমতাবস্থায় ডলার ও টাকার বিনিময় হার হবে ১ ডলার=৭০ টাকা। কারণ ১ ডলারের ক্রয় ক্ষমতা ৭০ টাকার ক্রয় ক্ষমতার সমান।

এ তত্ত্ব অনুযায়ী মুদ্রার ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে বিনিময় হার বৃদ্ধি পায় এবং মুদ্রার ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেলে (অর্থাৎ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে) বিনিময় হারও হ্রাস পায়। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, মুদ্রার ক্রয় ক্ষমতার হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে সাথে বিনিময় হারের হ্রাস-বৃদ্ধি এ তত্ত্বের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়। অনেকে এই মতবাদের অনেক রকম সমালোচনা করেছেন। কিন্তু স্বীকার করতেই হবে যে, বিনিময় হারের উপর ক্রয়-ক্ষমতার সুনির্দিষ্ট প্রভাব রয়েছে।

(খ) বাণিজ্য উদ্বৃত্ত তত্ত্ব ঃ বাণিজ্য-উদ্বৃত্ত তত্ত্ব অনুসারে দুই দেশের মুদ্রার বিনিময় হার তাদের পারস্পরিক চাহিদা ও যোগান অনুযায়ী স্থির করা হয়। এক দেশের মুদ্রার মূল্যের সাথে আরেক দেশের মুদ্রার মূল্যের তুলনা করা হয় এবং তদনুযায়ী বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়।

তাই অন্যান্য জিনিসের মূল্যের মত মুদ্রার মূল্যও চাহিদা এবং যোগানের পারস্পরিক ক্রিয়ার ভিত্তিতে ঠিক করা হয়। কোন দেশের মুদ্রার চাহিদা সে দেশের দ্রব্য ও সেবার রপ্তানী এবং বিদেশ থেকে প্রাপ্ত ঋণ ও অগ্রিমের উপর নির্ভর করে। তেমনি দ্রব্য ও সেবার আমদানী এবং অন্য দেশ কর্তৃক মঞ্জুরীকৃত ঋণের উপর মুদ্রার সরবরাহ নির্ভরশীল।

উপরের আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি যে, যে হারে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে দেশীয় মুদ্রা দ্বারা বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় বা বিক্রয় করা হয়, তাকেই বৈদেশিক বিনিময় হার বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, দেশীয় মুদ্রার সাথে বৈদেশিক মুদ্রার মূল্যানুপাতই হলো বৈদেশিক বিনিময় হার। বৈদেশিক বিনিময় হার নির্ধারণ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করা যায় না।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

বিনিময় হারের উঠানামার কারণসমূহ:-

বৈদেশিক বিনিময় হারের উঠানামা বা পরিবর্তনের জন্য নিম্নলিখিত কারণগুলো দায়ী:

১. ব্যবসায়িক অবস্থার পরিবর্তন ঃ আমদানী রপ্তানীর পরিমাণের সাথে বিনিময় হারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। আমদানী অপেক্ষা রপ্তানীর পরিমাণ বেশি হলে মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং বিনিময় হারও সে দেশের অনুকূলে পরিবর্তিত হয়। আর আমদানীর পরিমাণ রপ্তানীর পরিমাণ অপেক্ষা বেশি হলে বিপরীত ফল ঘটে থাকে। অর্থাৎ মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি পায় এবং চাহিদা অপরিবর্তিত থাকলে বিনিময় হার সেদেশের প্রতিকূলে পরিবর্তিত হয়।

২. মুলধনের গতিবিধি ঃ সম্পদশালী জাতিসমূহ গরীব দেশসমূহকে আর্থিক সাহায্য ও সুবিধাদি প্রদান করে থাকে যা সর্বজনবিদিত। ঋণ ও খয়রাতি সাহায্যের মারফত এক জাতি আরেক জাতিকে সাহায্য করে থাকে। এরূপ সাহায্যের মাধ্যমে মূলধন স্থানান্তরিত হয়। মূলধনের এরূপ স্থানান্তরের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহের পরিবর্তন হয়। যে দেশ ঋণ ও খয়রাতি সাহায্য পায়, বিনিময় হার সে দেশের অনুকূলে এবং সাহায্যকারী দেশের প্রতিকূলে যায়।

৩. শেয়ার বাজারের প্রভাব ঃ বিদেশী ঋণ ও তার সুদ পরিশোধকালে এবং বিদেশী সিকিউরিটি খরিদ করার সময় বিনিময় হারের উপর এর প্রভাব পড়ে। সে সময় বিদেশী মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফলে বিনিময় হারও বিদেশের অনুকূলে যায়।

৪. ব্যাংক নীতি ঃ ব্যাংক-হার বৃদ্ধির করা হলে রপ্তানী বৃদ্ধি পায়। ফলে বিদেশ হতে মূলধনের আগমন ঘটে। যে দেশের ব্যাংক-হার বৃদ্ধি পায় সে দেশের মুদ্রার চাহিদাও বিদেশে বৃদ্ধি পায়। ব্যাংক-হার কম হলে আমদানী বৃদ্ধি পায় এবং দেশের ভেতর হতে বিদেশে মূলধন চলে যায়। এর পরিণতিস্বরূপ দেশে মুদ্রার চাহিদা কমে যায় এবং বিনিময় হার প্রতিকূলে পরিবর্তিত হয়।

ব্যাংক ড্রাফ্ট ক্রয়-বিক্রয় এবং পর্যটক চেক ইস্যুর ফলেও বিনিময় হারের পরিবর্তন ঘটে। কারণ বিদেশে ড্রাফ্ট বা পর্যটক চেক ভাঙ্গানো না হলে বিদেশী মুদ্রার চাহিদা তদনুপাতে বৃদ্ধি পায়। ফলে বিনিময় হার বিদেশের অনুকূলে এবং নিজ দেশের প্রতিকূলে যায়। নিজের দেশে বিদেশ থেকে ইস্যুকৃত ড্রাফ্ট বা পর্যটক চেক ভাঙ্গানো হলে বিপরীত অবস্থা ঘটে।

৫. মুদ্রার অবস্থা ঃ মুদ্রার অপচয় ঘটলে তা দেশের বাইরে চলে যেতে পারে এবং এমতাবস্থায় বিদেশ হতে দেশের ভেতরে মূলধনের আগমন ঘটে না। তাই বিনিময় হারের অবনতি ঘটে। মুদ্রার মূল্যের উন্নতি হলে বিপরীত ফল পাওয়া যায়।

৬. আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ঃ দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হলে তা বিনিময় হারের উপর প্রতিকূল প্রভাব বিস্তার করে। কারণ রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব দেখা দিলে বিদেশ হতে পুঁজির আমদানী হ্রাস পায়। উপরন্তু দেশ হতে বিদেশে মূলধন পাচার হয়ে যায়।

৭. সরকারি নীতি ঃ কোন দেশের সরকার প্রয়োজন মনে করলে অন্যান্য দেশের মুদ্রার সাথে নিজ দেশের মুদ্রার বিনিময় হার পরিবর্তন করতে পারে। সরকারি নীতি অনুযায়ী বিনিময় হার বাড়তেও পারে, কমতেও পারে।


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক

৮. বৈদেশিক মুদ্রার ফটকা ব্যবসায় ঃ দেশের অভ্যন্তরে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক মুদ্রার অবাঞ্ছিত ফটকা ব্যবসায়ে নিয়োজিত হলে, তাদের এরূপ কার্যকলাপ বৈদেশিক বিনিময় হারের উপর প্রভাব বিস্তার করে। ফটকা ব্যবসায়ের গতি-প্রকৃতির ভিত্তিতে বিনিময় হারের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটতে পারে।

৯. মূল্যস্তরের তারতম্য ঃ দুটি দেশের অভ্যন্তরীণ মূল্যস্তরে পার্থক্য বিরাজ করলে কিংবা হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটলে উভয় দেশেরই বিনিময় হার প্রভাবিত হয়। মূল্যস্তরের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিনিময় হারেরও পরিবর্তন ঘটে।

১০. শিল্পোন্নয়নের পরিবেশ ঃ কোন দেশে শিল্প-কারখানার বৈদেশিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা উজ্জ্বল থাকলে বিদেশী পুঁজিপতিরা সেখানে শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসে। ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সমাগম হয়। ফলশ্রুতিস্বরূপ, বিনিময় হার দেশের অনুকূলে যায়।

১১. প্রাকৃতিক অবস্থা ঃ অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াও অনেক দৈব-সৃষ্ট কারণ রয়েছে যার দরুন বিনিময় হার উঠানামা করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বা বন্যা-মহামারীর কারণে দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে বিনিময় হার দেশের প্রতিকূলে চলে যায়।

১২. আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ ঃ এক দেশের সাথে অন্য দেশের যুদ্ধ বাধলে কিংবা দু’ দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটলে উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তার ফলে বৈদেশিক বিনিময় হারের উপর প্রতিকূল প্রভাব পড়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ঘোলাটে আবহাওয়ার সৃষ্টি হলেও এরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

১৩. অন্যান্য কারণ ঃ উপরে উল্লিখিত কারণগুলো ছাড়াও আরও অনেক আর্থিক কিংবা অনার্থিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে যাকে বিনিময় হারের উঠানামার জন্য দায়ী করা যায়।

বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিময় হার অধিক হওয়ার কারণসমূহের মধ্যে মুদ্রা সরবরাহের মারাত্মক আধিক্য, বিদেশে রপ্তানীর পরিমাণ হ্রাস ও আমদানী বৃদ্ধি, বাংলাদেশী মুদ্রার চাহিদায় ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক গোলযোগ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব অন্যতম।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment