বিনিময় হার ওঠানামার কারণসমূহ বর্ণনা কর

বিনিময় হার ওঠানামার কারণসমূহ বর্ণনা কর।

বৈদেশিক বিনিময় হার মুদ্রার চাহিদা ও যোগান দ্বারা নির্ধারিত হয়। মুদ্রার চাহিদা ও যোগান পরিবর্তন হলে বিনিময় হারের পরিবর্তন সাধিত হয়। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বিভিন্ন কারণে পরিবর্তন হয়ে থাকে। নিম্নে বিনিময় হার হ্রাস বৃদ্ধির কারণসমূহ বর্ণনা করা হলো :

১. বাণিজ্যিক ভারসাম্য : আমদানি-রপ্তানির তারতম্যের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পরিবর্তিত হয়ে থাকে। রপ্তানির পরিমাণ আমদানির চেয়ে বেশি হলে লেনদেন অনুকূল হবে, ফলে বিনিময় হার বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে, রপ্তানির পরিমাণ আমদানির চেয়ে কম হলে লেনদেন প্রতিকূল হবে, ফলে বিনিময় হার কমে যাবে ।

২. শেয়ার বাজারের প্রভাব : শেয়ার বাজারে শেয়ার ক্রয়- বিক্রয়ের উপর বিনিময় হার নির্ভর করে। বিদেশি ক্রেতাগণ অধিক হারে শেয়ার, সিকিউরিটি ক্রয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগ করলে বিদেশি মুদ্রার যোগান বেড়ে বিনিময় হার দেশের অনুকূলে পরিবর্তিত হবে। অন্যদিকে, বিদেশি ক্রেতাগণ শেয়ার, সিকিউরিটি ক্রয়ে অনাগ্রহী হলে মুদ্রার যোগান কমে বিনিময় হার প্রতিকূল পরিবর্তিত হবে ।

৩. ফটকা ব্যবসায় : যখন মুদ্রা বাজারে ফটকা ব্যবসায় সংক্রান্ত কার্যক্রম বেড়ে যায় তখন বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পরিবর্তিত হয়ে থাকে। ভবিষ্যতে দেশীয় মুদ্রার চেয়ে বিদেশি মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধি পাবে, এই আশায় মুদ্রা ব্যবসায়ীগণ অধিক পরিমাণে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করে থাকে। এতে বিদেশি মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফলে বিনিময় হার প্রভাবান্বিত হয়ে থাকে ।

৪. ব্যাংকের প্রভাব : ব্যাংকের কার্যাবলিও বিনিময় হারকে প্রভাবিত করে । যদি কোনো ব্যাংক বিদেশি অবস্থানকারী শাখাসমূহের উপর অধিক পরিমাণে ঋণপত্র, আজ্ঞাপত্র ইত্যাদি প্রদান করে তাহলে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে বিনিময় হার সেই দেশের প্রতিকূলে যায়। ব্যাংক হারের পরিবর্তনেও বিনিময় হারের পরিবর্তন ঘটে।

ব্যাংক হার বৃদ্ধি পেলে বিদেশিরা অধিক লাভের আশায় সেই দেশে অধিক মূলধন পাঠায় এবং মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং বিনিময় হার সেই দেশের অনুকূলে যায় । ব্যাংক হার কমে গেলে মূলধন দেশের বাইরে চলে যায় এবং বিদেশি মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং বিনিময় হার সেই দেশের প্রতিকূলে যায় ।

৫. মুদ্রা পরিস্থিতি : মুদ্রা পরিস্থিতি উপরও বিনিময় হার নির্ভর করে। দেশের মুদ্রা মূল্য স্থিতিশীল হলে বিনিময় হারও স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু কোনো কারণে মুদ্রার অবমূল্যায়ন বা অধিমূল্যায়ন হলে বিনিময় হারের পরিবর্তন ঘটে ।

৬. অর্থনৈতিক পরিস্থিতি : বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের উপর দেশ বিদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। দেশে শিল্পকারখানা তৈরি, উৎপাদন বৃদ্ধি, অধিক বিনিয়োগ, ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হলে বিনিময় হার অনুকূলে এবং উৎপাদন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান হ্রাস পেলে বিনিময় হার প্রতিকূলে পরিবর্তিত হয়ে থাকে ৷

৭. রাজনৈতিক পরিস্থিতি : দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপরও বিনিময় হার নির্ভর করে । কোনো দেশে অনিশ্চিত রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজমান থাকলে বিনিময় হার ঐ দেশের প্রতিকূলে যাবে ।

৮. প্রাকৃতিক কারণ : প্রকৃতিক কারণেও অনেক সময় কোনো দেশের বিনিময় হার পরিবর্তন হতে পারে। যেমন- প্রাকৃতিক দুর্যোগের দরুন অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে বিনিময় হারের প্রতিকূল পরিবর্তন পরিদৃষ্ট হয় ।

৯. টেকনিক্যাল বিষয়াদি : বিভিন্ন ধরনের টেকনিক্যাল কারণের প্রেক্ষিতেও মুদ্রার বিনিময় হার হ্রাস বৃদ্ধি হয়ে থাকে । ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়, যে সমস্ত মুদ্রার মূল্য অবমূল্যায়নের সম্ভাবনা রয়েছে সে সমস্ত মুদ্রার বিষয়ে অনেকেই সংরক্ষণ নীতি অবলম্বন করে থাকে। অন্যদিকে, যে সমস্ত মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সে থেকে ঋণাত্মক বা Positive সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। টেকনিক্যাল বিষয়াদি সংক্রান্ত কার্যক্রম ও বিনিময় হারকে প্রভাবিত করে থাকে ।

১০. প্রাকৃতিক কারণ : অনেক সময় প্রাকৃতিক কারণেও কোনো দেশের বিনিময় হারের পরিবর্তন হতে পারে। যেমন- প্রাকৃতিক দুর্যোগের দরুন অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে বিনিময় হারের প্রতিকূল পরিবর্তন পরিদৃষ্ট হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, বৈদেশিক বিমিনয় হার বিভিন্ন কারণে পরিবর্তন হয়ে থাকে । উপরিউক্ত কারণগুলো ছাড়া অভ্যন্তরীণ, আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক নানাবিধ কারণেও বিনিময় হারের পরিবর্তন হতে পারে ।

একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।

আর্টিকেলের শেষ কথাঃ বিনিময় হার ওঠানামার কারণসমূহ বর্ণনা কর,বৈদেশিক বিনিময় হার উঠা-নামার কারনগুলো উল্লেখ কর, কিভাবে বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়,কোন কোন বিষয় বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারকে প্রভাবিত করে?,যে পাঁচটি কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন

Leave a Comment