বিতর নামাজে দোয়ায়ে কুনুত না জানলে কি পড়তে হবে?, দোয়া কুনুত, দোয়া কুনুত উচ্চারণ, বাংলা অর্থ ও ব্যবহার, দোয়া কুনুতের বাংলা অর্থ ও উচ্চারণ

বিষয়: বিতরে দোয়ায় কুনুত না পড়লে সালাত হবে কি?, বেতের নামাজে দোয়ায়ে কুনুত না জানলে কি পড়বে?,দোয়ায়ে কুনুতের পরিবর্তে ৩ বার সুরা ইখলাস পড়া যাবে?

এশারের পর বিতর নামাজ পড়তে হয়। বিতরের নামাজের তৃতীয় রাকাতে মুসল্লি সুরা ফাতিহা পড়বে। এরপর অন্য কোনো সুরা বা আয়াত মিলাবে। কিরাত (সুরা বা অন্য আয়াত মিলানোর পর) শেষ করার পর তাকবির বলে দুহাত কান পর্যন্ত উঠাবে এবং তাকবিরে তাহরিমার মতো হাত বাঁধবে। তারপর নিঃশব্দে (অনুচ্চ স্বরে) দোয়া কুনুত পড়বে।

দোয়া কুনুত পড়ে আগের মতো রুকু-সিজদা করবে। তারপর শেষ তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে। বিতরের নামাজের এই পদ্ধতি বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে এবং সাহাবিদের আমলের মাধ্যমে সুপ্রমাণিত।

দোয়া কুনুত বিতরের নামাযে পড়তে হয়

দোয়া কুনুত আরবি :

اَللَّمُمَّ اِنَّ نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ

দোয়া কুনুতের বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্‌তাঈ’নুকা, ওয়া নাস্‌তাগ্‌ফিরুকা, ওয়া নু’’মিনু বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়া নুছনী আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশ কুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ’, ওয়া নাতরুকু মাঁই ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকানুসল্লি, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ, – ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা – আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্‌ফারি মুলহিক্ব।

দোয়া কুনুতের অর্থ

হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।

কেউ কেউ দোয়া কুনুত মুখস্থ পড়তে পারেন না। তাই বিতর নামাজের তৃতীয় রাকাতে কোন দোয়া পড়বেন কিংবা কী পড়া যায়— এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। এখন প্রশ্ন হলো- তারা কী পড়তে পারেন?

এই প্রশ্নের উত্তর হলো- বিতর নামাজে দোয়া কুনুত পড়া ওয়াজিব। তৃতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহার সঙ্গে সুরা মিলিয়ে তাকবির বলে হাত বেঁধে পড়তে হয়। তবে দোয়ায়ে কুনুত হুবহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত শব্দে হওয়া ওয়াজিব নয়। বরং মুসল্লি অন্য কোনো দোয়াও করতে পারেন। হাদিসের শব্দের বাইরে কিছু বাড়াতেও পারেন। এমনকি যদি কোরআনের যেসব আয়াতে দোয়া আছে, এমন কিছু আয়াত পড়েন— সেটাও জায়েজ আছে।

ইমাম নববি বলেন, জেনে রাখুন- অগ্রগণ্য মাজহাব মতে, কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। তাই যেকোনো দোয়া পড়লে— এর দ্বারা কুনুত হয়ে যাবে; এমনকি দোয়া সম্বলিত এক বা একাধিক কোরআনের আয়াত পড়লেও কুনুতের উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাবে। তবে হাদিসে যে দোয়া এসেছে সেটা পড়া উত্তম। (আল-আজাকার, পৃষ্ঠা : ৫০)

দোয়া কুনুত না জানলে যা পড়বেন

সুতরাং আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দোয়া কুনুত মুখস্থ করে নেওয়া চাই। কারণ, এটা পড়া রাসুল (সা.)-এর ‍সুন্নত। তবে দোয়া মুখস্ত করার আগ পর্যন্ত আপাতত পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এই দোয়াটি পড়া যাবে।

কোরআনের দোয়া :

رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا حَسَنَةً وَّ فِی الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আখিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া কিনা আজাবান নার।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন; আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন। এবং আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২০১)

অথবা আপনি কয়েকবার করে নিম্নোক্ত দুইটি দোয়া বা ইসতিগফারও পড়তে পারেন— 

أَللّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا 

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগ ফির লানা। অর্থ : হে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।

أَسْتَغْفِرُ اللهَ 

উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহ। অর্থ : হে আল্লহ, আমাকে ক্ষমা করুন।

তথ্যসূত্র : ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৭০; আল-মুহিতুল বুরহানি : ২/২৭০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ২/৩৪৪; আল-বাহরুর রায়িক : ২/৪২-৪৩; রাদ্দুল মুহতার : ২/৭)

দোয়ায়ে কুনুতের পরিবর্তে ৩ বার সুরা ইখলাস পড়া যাবে?

বিতর নামাজে দোয়া কুনুতের পরিবর্তে তিনবার সুরা ইখলাস পড়া গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সুরা ইখলাস— কুনুত বা দোয়া সম্বলিত সুরা নয়। কুনুতের উদ্দেশ্য হচ্ছে- আল্লাহর কাছে দোয়া করা। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দোয়া ব্যতীত অন্য যেকোনো দোয়া পড়লেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে এবং নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে হাদিসে বর্ণিত দোয়া যেমন ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা’ এটা পড়া অবশ্যই সুন্নত। তাই হাদিসে বর্ণিত এ দোয়া কেউ না জানলে দ্রুত শিখে নেওয়া।

যেকোন দোয়া পড়লে এর দ্বারা কুনুত হয়ে যাবে; এমনকি দোয়া সম্বলিত এক বা একাধিক কুরআনের আয়াত পড়লেও কুনুতের উদ্দেশ্য অর্জন হয়ে যাবে। তবে হাদিসে যে দোয়া এসেছে, সেটা পড়া উত্তম। (আল-আজকার, ইমাম নববি : ৫০)

মনে রাখতে হবে, কেউ যদি এক্ষেত্রে কোনো দোয়াই না পড়ে— তাহলে তাকে পুনরায় নামাজ আদায় করতে হবে। (আল-মুহিতুল বুরহানি : ২/২৭০; আল-বাহরুর রায়েক : ২/৪২; রদ্দুল মুহতার : ১/৪৬৮; হাশিয়াতুত তহতাভি আলাদ্দুর : ১/২৮০)

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও

Leave a Comment