বিতর নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

বিতর নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, বিতর সালাতের ফজিলত

বিতর নামাজ তিন রাকাত। অন্য ফরজ নামাজের মতো দুই রাকাত নামাজ পড়ে প্রথম বৈঠকে বসে তাশাহহুদ পড়বে।

কিন্তু সালাম ফেরাবে না। 

তারপর তৃতীয় রাকাত পড়ার জন্য উঠে সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য কোনো সুরা বা আয়াত মিলাবে।

কিরাত (সুরা বা অন্য আয়াত মিলানোর পর) শেষ করার পর তাকবির বলে দুহাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে তাকবিরে তাহরিমার মতো হাত বাঁধবে।

তারপর নিঃশব্দে দোয়া কুনুত পড়বে। 

দোয়া কুনুত পড়ে আগের মতো রুকু, সিজদার পর শেষ তাশাহহুদ, দরুদ,

দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে বিতরের নামাজ সমাপ্ত করবে।

আপনার জন্য: আল কোরআনের অনুবাদ ও প্রতিটি সূরার ফজিলত ও তরজমা

বিতর নামাজ। ইশার পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত সময়ে পড়তে হয়। এটি রাতের নামাজ।

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজ নামাজের বাইরে সফর কিংবা মুসাফির সর্বাবস্থায় দুইটি নামাজ কখনো ছাড়তেন না।

তার একটি হলো রাতের বিতর নামাজ এবং ফজরের সুন্নাত নামাজ।

বিতর নামাজ সম্পর্কে নবিজী কী বলেছেন?

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতর নামাজ সম্পর্কে বলেছেন-

إن الله تعالى قد أمدكم بصلاة وهي خير لكم من حُمرِ النَّعم، وهي الوِتر، وجعلها لكم فيما بين العشاء إلى طلوع الفجر

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের একটি নামাজ দ্বারা সাহায্য করেছেন, 

যা তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম; আর তা হচ্ছে- ‘বিতর’। তিনি তা (এ নামাজ পড়ার সময়) নির্ধারণ করেছেন ইশা থেকে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত।’

(আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মুসতাদরাকে হাকেম)

বিতর নামাজের পরে আমল, বিতর নামাজের পর নবীজির আমল

রাতের এ বিতর নামাজ ওয়াজিব নাকি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এ নিয়ে মত পার্থক্য থাকলেও নামাজটি খুবই ফজিলতপূর্ণ।

এ কারণেই নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর-মুকিম সর্বাবস্থায় বিতর নামাজ পড়তেন। কখনো এ নামাজ ছাড়তেন না।

তবে বিতর নামাজ ফরজ নামাজের মতো নয়। এ সম্পর্কে হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত সুফিয়ান সাওরি ও অন্যান্যরা আবু ইসহাক থেকে, তিনি আসিম ইবনু যামরাহ থেকে, তিনি হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন-

الوتر ليس بحَتْم كصلاتكم المكتوبة، ولكن سنةٌ سنها رسول الله صلى الله عليه وسلم‎

‘বিতরের নামাজ ফরজ নামাজের মত জরুরি নামাজ নয়। বরং এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত নামাজ।’ (তিরমিজি, নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম, নাসাঈ, মুসনাদে আহামদ, আ-তারগিব)

বিতর নামাজ ফরজের মতো আবশ্যক নয়; বরং তা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তাগিদ দেওয়া সুন্নাত। হাদিসের অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়ামানে প্রেরণ করেন; তখন তাকে উপদেশ দিয়ে নবিজী বলেছিলেন, ‘… তুমি তাদের জানাবে যে, আল্লাহ তাদের ওপর দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ (আবশ্যক) করেছেন…।‘ (বুখারি ও মুসলিম)

পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বিতর নামাজের গুরুত্ব, বিতর এর নফল নামাজের ফজিলত

বিতর নামাজ পড়া ফরজের মতো আবশ্যক না হলেও বিতর ফজিলতপূর্ণ একটি নামাজ। হাদিসের বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত-

হজরত খারেজা ইবনে হুজাফাতুল আদাভি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন-

إن الله تعالى قد أمدكم بصلاة وهي خير لكم من حُمرِ النَّعم، وهي الوِتر، وجعلها لكم فيما بين العشاء إلى طلوع الفجر

‘মহা মহীয়ান আল্লাহ তোমাদেরকে একটি অতিরিক্ত নামাজ দিয়েছেন, 

সেটা তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম। তা হলো বিতর।

তোমাদের জন্য এ নামাজ আদায়ের সময় হচ্ছে ‘ইশার সালাতের পর থেকে ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।’

(আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মুসতাদরাকে হাকেম)

বিতর নামাজের ভিত্তি কোন ফজিলত,বিতর নামাজের গুরুত্ব কি

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, বিতরের নামাজ তোমাদের ফরজ নামাজসমূহের মতো অত্যাবশ্যকীয় (ফরজ) নামাজ নয়।

বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (এ নামাজ) তোমাদের জন্য সুন্নাতরূপে প্রবর্তন করেছেন।

তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-

يا أهل القرآن أوتروا فإن الله تعالى وتر يحب الوتر

‘হে আহলে কুরআন! তোমরা বিতর পড়ো; কারণ আল্লাহ তাআলা বিতর (বেজোড়), তিনি বিতর পছন্দ করেন।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)

সুতরাং ইশার পর থেকে ফজরের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে বিতর নামাজ পড়া উত্তম। কেননা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় বিতর নামাজ পড়তেন।

বিতর নামাজ (ফরজ-ওয়াজিব-সুন্নাতে মুয়াক্কাদা) নিয়ে কোনো বিতর্ক নয়। বরং প্রিয় নবির আমল হিসেবে সবারই বিতর নামাজ পড়া উচিত।

বিতর নামাজের পর আমল pdf,বিতর নামাজের পর সূরা

রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি শেষ রাতে ওঠার ব্যাপারে নিশ্চিত নয়, সে যেন রাতের প্রথম ভাগে বিতর পড়ে নেয়।

আর যে শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ার ব্যাপারে আশাবাদী, সে রাতের শেষ ভাগে বিতর পড়বে। কারণ,

শেষ রাতের নামাজের সময় ব্যাপকহারে ফেরেশতারা উপস্থিত থাকেন এবং এটাই উত্তম।’ (মুসলিম)

আপনার জন্য: আল কোরআনের অনুবাদ ও প্রতিটি সূরার ফজিলত ও তরজমা

রাসুল (সাঃ) কখনো বিতর ছাড়তেন না। সাহাবিদেরও বিতর পড়ার নির্দেশ দিতেন। রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা একটি বাড়তি নামাজ দিয়ে তোমাদের সাহায্য করেছেন, যা তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম। তা হচ্ছে বিতর। আল্লাহ তাআলা এই নামাজ তোমাদের জন্য এশা ও ফজরের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ার জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ (তিরমিজি)

আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, ‘আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু আমাকে তিনটি বিষয়ের অসিয়ত করেছেন, যা মৃত্যু পর্যন্ত আমি ত্যাগ করব না।

তা হলো, প্রতি মাসে তিনটা রোজা রাখা, দুই রাকাত চাশতের নামাজ পড়া এবং ঘুমানোর আগে বিতর নামাজ পড়া।

(বুখারি ও মুসলিম) অন্য এক হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘হে কোরআনের অনুসারীরা, তোমরা বিতর পড়ো। কারণ, আল্লাহ তাআলা বিজোড় এবং বিতর নামাজ ভালোবাসেন।’ (তিরমিজি)

আর্টিকেলের শেষ কথাঃ বিতর নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

Leave a Comment