বাংলা সাহিত্য বইয়ের ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে রাক্ষসের উল্লেখ আছে

ক্ষস হিন্দু পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী এক প্রকার দানবীয় প্রাণী। এরা সাধারণত মানুষখেকো হয়। যারা লাজলজ্জাহীনভাবে বেশি খায়, তাদেরও আমরা রাক্ষস বলি বা রাক্ষসের সঙ্গে তুলনা করি।

হিন্দু পুরাণ যেমন—রামায়ণ ও মহাভারতে রাক্ষসের উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে এরা বৌদ্ধ পুরাণেও স্থান লাভ করে। স্ত্রী রাক্ষসকে রাক্ষসী বলা হয়।

রাক্ষস সাধারণত বিভিন্ন রূপের পাশাপাশি মনুষ্য রূপও ধারণ করতে পারে। দেবী দুর্গা মহিষাসুর নামে যে অসুরকে বধ করেছিল, সে-ও একজন রাক্ষস।

বর্তমানে শিশুতোষ বই, ঈশপের গল্প বা ঠাকুরমার ঝুলিতেও রাক্ষসের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। ছোটবেলায় মা-খালাদের মুখে রাক্ষস-খোক্কসের গল্প শুনে বড় হয়নি—এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। বাচ্চাদের ফ্যান্টাসি এই রাক্ষস এখন পরিচিত চরিত্র হলেও এদের সৃষ্টি হিন্দু পুরাণে।

বৈদিক হিন্দু পুরাণের বিশ্বাস অনুযায়ী, সত্য যুগের শেষের দিকে ব্রহ্মার নিদ্রাবস্থায় নিঃশ্বাস থেকে রাক্ষস সৃষ্টি হয়। রাক্ষস জন্মের পরপরই এতটা রক্তপিপাসু হয়ে পড়ে যে, এরা এদের সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে খেতে উদ্যত হয়। ব্রহ্মা ভয়ে চিৎকার করে ‘রক্ষাম’ বলে ওঠেন। সংস্কৃতে যার অর্থ রক্ষা করা। ব্রহ্মার এই আর্তনাদ থেকেই এরা রাক্ষস নামে পরিচিতি লাভ করে।

রাক্ষসকে সর্বদা কুিসত, বিশাল ও ভয়ংকর হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এদের মুখ থেকে দুটি বিষদাঁত বেরিয়ে থাকে এবং হাতে ও পায়ে বড় বড় নখ থাকে। এরা স্বার্থপর ও জন্তুর মতো। বেশির ভাগ রাক্ষসের চোখ জ্বলজ্বল করে। হিন্দু পুরাণের রাক্ষসরা ওড়ার ও অদৃশ্য হওয়ার কৌশল জানত।

রামায়ণ ও মহাভারতের রাক্ষসরা ছিল এক জনবহুল গোষ্ঠীর অধিবাসী। ভালো ও মন্দ দুই প্রকারের রাক্ষসের উদাহরণ পাওয়া যায়। এরা অতি শক্তিশালী যোদ্ধা, নিপুণ জাদুকর ও মায়াবী ছিল। রাক্ষসরা মায়ার দ্বারা এমন দৃশ্য সৃষ্টি করত, যা বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো।

পরবর্তী সময়ে কিছু রাক্ষস অত্যন্ত বল অর্জন করে নায়ক বা প্রতিনায়ক হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। লঙ্কার যুদ্ধ রাবণের রাক্ষসসেনা এবং রামের বানরসেনার মধ্যে যুদ্ধ হয়।

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, রাক্ষসের সঙ্গে মানুষের বিয়ে হতো। মহর্ষি পুলস্তর পুত্র বিশ্রবা রাক্ষসী কেকশীকে বিয়ে করে। তাদের তিন পুত্র রাবন, কুম্ভকর্ণ ও বিভীষণ এবং এক কন্যা শূর্পনখা। মহাভারতের পাণ্ডব নায়ক ভীম হিড়িম্বা নামের এক রাক্ষসীর স্বামী ছিল। পরবর্তীকালে ঘটোৎকচ নামে তাদের পুত্রসন্তান হয়। 

Leave a Comment