বাংলা গ্রন্থ সমালোচনা- হাঁসুলী বাঁকের উপকথা, হাঁসুলী বাঁকের উপকথা কাব্যের সার্থকতা আলোচনা,বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি হাঁসুলী বাঁকের উপকথা

প্রশ্ন সমাধান: বাংলা গ্রন্থ সমালোচনা- হাঁসুলী বাঁকের উপকথা, হাঁসুলী বাঁকের উপকথা কাব্যের সার্থকতা আলোচনা,বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি হাঁসুলী বাঁকের উপকথা

হাঁসুলী বাঁকের উপকথা
লেখক: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
চরিত্র: চরিত্র: কারালী, বনওয়ারী, পাখি, সুবাসী।

‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকাব্যিক উপন্যাস। এই উপন্যাসটি অবয়বের দিক থেকে দীর্ঘ তো বটেই, এর প্লটও দীর্ঘ। ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা” উপন্যাসে উঠে এসেছে লোকায়িত জগতের অতলে লুকিয়ে থাকা এক আদিম সমাজচিত্র। যে সমাজ ব্যবস্থা বা যে সমাজের লোকেরা আমাদের পরিচিত গন্ডির বাইরে।
কোপাই নদীর প্রায় বৃত্তাকার বাঁকে (মেয়েদের গলার হাসুলীর মতো) বাঁশবাঁদি গ্রাম। এগ্রামে কাহার জাতির লোকেরা বাস করে। যারা পেশাগতভাবে পালকি বাহক তারাই হচ্ছে কাহার। লেখক এ উপন্যাসে কাহারদের বিশ্বাস- সংস্কার, হাসি-কান্না, ভয়-ভীতি, প্রেম-প্রীতি, বিবাহ, জন্ম-মৃত্যুর পুঙ্খানুপুঙ্খ ছবি এঁকেছেন।

কাহারেরা ছিল দুটি পাড়ায় বিভক্ত: বেহারা পাড়া এবং আটপৌরে পাড়া। বেহারা পাড়ার প্রধান ছিল বনওযারী এবং আটপৌরে পাড়ার প্রধান ছিল পরম। একই জাতির অংশ হলেও দুই পাড়ার মধ্যে মাঝে মধ্যে সংঘর্ষ হত। তবুও দুই পাড়ার লোকজনই দেবতা কত্তাবাবাকে মানত। কত্তা বাবা ছিলেন হাঁসুলী বাঁকের পশ্চিম দিকের শিমুল গাছে।
ঔপন্যাসিক এই উপন্যাসে ৩ টি প্রজন্মে ধরেছে। ৩ টি প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীন হচ্ছে সুঁচাদ। সমাজের নিয়ম-নীতি, আচার-আচরণ, সংস্কারগুলো তিনিই সকলকে জানান। সুঁচাদ তেমন কাজ করতে পারেন না। তবে যতটুকু পারেন করেন। কারণ বাঁশবাঁদি গ্রামের কেউ বসে বসে খায় না। সুঁচাদের পরবর্তি প্রজন্ম হচ্ছে সুঁচাদের মেয়ে বসন্ত। এবং তার পরবর্তি প্রজন্ম হচ্ছে বসন্তের মেয়ে পাখি।

উপন্যাসের কেন্দ্রীয় করালী। মা বাবা না থাকায় সে ছোটবেলা থেকে নিজের মত করে বড় হয়েছে। সমাজের নির্দিষ্ট আচার-আচরণ, রীতি-নীতি ও সংস্কার (বা কুসংস্কার) যেগুলো সবাইকে মান্য করতে হয় করালী তাতে প্রশ্ন তোলে। করালীই প্রথম যে এই নিয়মগুলো ভাঙ্গে। একসময় কারালী রেলস্টেশনে কুলির কাজ নেয়। এতে বেহারা পাড়ার মাতব্বর বনওয়ারীসহ অন্যরা আপত্তি তোলে। কারণ তাদের পূর্ব পুরুষেরা বলে গেছেন চন্দনপুরের ওখানে যেতে নেই।

উপন্যাসের পুরোটা জুড়ে বনওয়ারী এবং করালীর মধ্যে দ্বন্ধ লেগে থাকে। এই দ্বন্ধটা গ্রাম বনাম শহরের, সমাজতন্ত্র বনাম ধনতন্ত্রের, পুরনো বনাম নতুনের দ্বন্ধ।


এই দ্বন্ধের কারণ হলো, সমাজে এতদিন ধরে যেসব রীতি-নীতি, আচার-আচরণ, সংস্কারগুলো তারা জেনে এসেছে সেগুলো তারা মান্য করতে চায় বিনা প্রশ্নে এবং অন্যকে মানাতে চায়। আর করালী সবকিছুর বিরুদ্ধে প্রশ্ন করে। উপন্যাসের শুরুতে হঠাৎ শিসের শব্দে সবাই ভীতস্বন্ত্রস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু করালী ভয় পাচ্ছে না। সে জানতে চায় শিস হওয়ার কারণ কি। এবং খুজতে খুজতে সে একদিন বিশাল একটা চন্দ্রবোড়া সাপ মেরে এনে প্রমাণ করে দিয়েছে যে এইটা কোন অলৌকিক কিছু নয়, এইটার কারণেই শিস উঠছিল। কিন্তু তখন বনওয়ারীরা বলছিল যে এইটা কর্তা বাবার বাহন। এইটাতে চড়ে কর্তা বাবা ভ্রমণ করে।


আরো ও সাজেশন:-

এছাড়া ও বনওয়ারী আর করালীর মধ্যে পার্থক্য হলো বনওয়ারীরা একটি সমাজতান্ত্রিক পরিবেশের মধ্যে রয়েছে। তারা এর বাইরে যেতে চাই না। কিন্তু করালী ধনতান্ত্রীক পরিবেশের মধ্যে রয়েছে। সে রেলস্টেশনে কুলির কাজ করে। এখানে ও বনওয়ারীদের আপত্তি। কারণ তাদের পূর্ব পুরুষেরা বলে গেছে যে, চন্দনপুরের ওখানে যেতে নেই।
তারা এতদিন ধরে যে জায়গার মধ্যে রয়েছে সেখানেই থাকতে চায়। এর বাইরে তারা যেতে চাই না। কিন্তু করালী সেরকম নয়। কুলির কাজ করে করালীর হাতে একটা কাচা টাকা আসে যেইটা বনওয়ারীর হাতে আসেনা। করালী কোটা ঘর তুলতে চাইলে সেখানেও বনওয়ারীর আপত্তি। কারণ কাহার পাড়ায় কোটা বাড়ি তুলতে নেই। জমিদারদের কাছে তাদের মাথা নত করে থাকতে হয়; তাদের মনোভাব ছিল এই রকম। এগুলোর বিরুদ্ধে নিরন্তর প্রশ্ন করতে থাকে করালী।

আবার বনওয়ারী করালীকে খুবই স্নেহ করে। কারণ বনওয়ারী মনে করে এই ছেলেটাই কাহার পাড়াকে বাঁচাতে পারে। করালী যে কাহার পাড়াকে ভালবাসেনা তা কিন্তু না। বৃষ্টির সময় যখন বনওয়ারীর পুকুর ডুবে যাচ্ছিল তখন করালী ছুটাছুটি করছিল। যা দরকার হচ্ছিল তা এনে দিচ্ছিল। এই করালী আবার তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও করে।
কারণ অন্যায়কে তিনি কখনো মানতে পারে না। এই কারণে বনওয়ারী এবং করালীর মধ্যে দ্বন্ধ চলতে থাকে। এই দ্বন্ধটা একটা চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছায় সুবাসীকে কেন্দ্র করে। অসমবিবাহ মেনে নিতে না পেরে বনওয়ারীর থেকে সুবাসীকে কেড়ে নেয় করালী। সুবাসী ও করালীর প্রতি আসক্ত ছিল। করালী সুবাসীকে ঘরে নিয়ে গেলে করালীর বউ পাখি আত্মহত্যা করে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

এই দ্বন্দ্বে বনওয়ারী পরাজিত হয়। এই পরাজয় বনওয়ারীর অন্তিম পরাজয়। এর পরে উপন্যাসে করালী নায়কের জায়গায় চলে আসে। এবং করালী কাহার পাড়াকে চন্দনপুরে নিয়ে যায়। এবং সবাই সেখানে চলে যায়। কারণ সেখানে টাকা আছে, না খেয়ে থাকতে হবে না। বাঁশবাঁদি গ্রাম উজাড় হয়ে যায়। এবং দেখা যায় একটা বন্যার পর বাঁশবাঁদি গ্রাম জুড়ে শুধু বালি আর বালি। কেউ কোথাও নেই। কয়েকদিন পর দেখা যায় যে, করালী আবার সেই বাঁশবাঁদি গ্রামে ফিরে আসছে। সে আবার কাহার পাড়া বসাতে চায়।

এ উপন্যাসের একক কোন নায়ক নেই। সাধারণ মানুষই নায়ক হয়ে উঠেছে। একটি গোষ্ঠী মুখ্য হলেও এর মাধ্যমে দেশ বা জাতির দীর্ঘদিনের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সেই সাথে রাঢ় অঞ্চলের নিম্নবর্ণের হিন্দুদের জীবনের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। উপন্যাসে দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামায় নগদ অর্থ উপার্জনের প্রলোভনে আকৃষ্ট করে কাহারদের দিনমজুরে পরিণত করেছে। যুদ্ধের রসদ যোগাড় করতে ধ্বংস করা হয়েছে কাহারদের বাঁশবন। এমনিভাবে তাদের বাস্তু ও সংস্কৃতি ধ্বংস করে তাদের ধনতান্ত্রিক সমাজের যন্ত্রকলের শ্রমদাসে পরিণত করা হয়েছে।

লেখক তাঁর এই বিখ্যাত উপন্যাসে পুরাতনের সাথে নতুন, বার্ধক্যের সাথে তারুণ্যের এবং প্রাচীন ধ্যানধারণার সাথে আধুনিক চিন্তা-চেতনার সেই চিরন্তন লড়াইকে উপস্থাপন করেছেন। বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস ধারায় এটি একটি ক্লাসিক উপন্যাস ।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment