প্রশ্ন সমাধান: বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক আমলাতন্ত্রের ভূমিকা আলোচনা কর, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক আমলাতন্ত্রের অবদান পর্যালোচনা কর,বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক আমলাতন্ত্র কী ভূমিকা পালন করে থাকে? বর্ণনা কর।,বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক আমলাতন্ত্রের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর
ভূমিকা : তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল ও স্বাধীন দেশ হিসেবে এদেশের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। এদেশের সংবিধান উন্নতমানের ও সুলিখিত হলেও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বারংবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এদেশের জনগণ ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সামরিক আমলাতন্ত্রের কাছে জিম্মি হয়েছে একাধিকবার।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক আমলাতন্ত্রের ভূমিকা : বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী একটি সুশৃঙ্খল গোষ্ঠী। উন্নত প্রশিক্ষণ কাজের মান এবং সর্বোপরি দেশের ক্রান্তিকালে তাদের অবদান ও আত্মত্যাগ তুলনাবিহীন। কিন্তু বাংলাদেশ পাকিস্তানি আমলে সামরিক ক্ষেত্রে অবহেলিত ছিল।
পরবর্তী স্বাধীনতা সংগ্রামে এদেশের মুক্তিকামী জনতার সাথে এদেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা মরণপণ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা আনয়ন করে।
দ. স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সামরিক বাহিনীর কতিপয় উচ্চাভিলাষী সদস্যগণ এদেশের শাসনভার গ্রহণের নিমিত্তে দয়ে গণতন্ত্রকে ব্যাহত করে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক আমলাতন্ত্রের ভূমিকা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১. গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতা খর্ব : বাংলাদেশ একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশ। গণতান্ত্রিক অধিকার ও সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য এদেশের সরকার ও জনগণ নানাভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার বিনষ্ট হয় এবং স্বাধীনতা খর্ব হয়। পাশাপাশি ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। সামরিক শাসকরা প্রায়শই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সকল ধরনের গণতান্ত্রিক কার্যক্রম তথা সভা, মিছিল, মিটিং, নির্বাচন ইত্যাদির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। আর দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের সময় বেঁধে দেয়ার ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।
২. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা : রাষ্ট্রীয় রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপের ফলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়। কেননা এর ফলে তারা ক্ষমতা দখলের পর বেসামরিকীকরণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে এবং সে দলের নেপথ্যে কাজ করে অন্যান্য দলের কার্যক্রমকে স্তিমিত করে দিতে প্রচেষ্টা চালায়। অর্থনীতি সর্বক্ষেত্রে সামরিকীকরণের প্রচেষ্টা চালায়। মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ সদস্যকেই নেয়া হয় সামরিক বাহিনী থেকে।
৩. মন্ত্রিসভার সামরিকীকরণ : সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে মন্ত্রিসভা থেকে শুরু করে রাজনীতি, নির্বাচন, যেমন- এরশাদের সময় বিভিন্ন পোর্টফোলিও নিয়ে প্রায় ১৭ জন সামরিক অফিসার মন্ত্রিত্বের পদে আসীন হয়েছিলেন। ফলে তারা রাজনীতি করেছেন, দেশ শাসন করেছেন আবার চাকরিও করেছেন।
আরো ও সাজেশন:-
৪. সামরিক বাহিনীর অধিক সুবিধা : সামিরক বাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করলে তাদের স্বার্থ প্রদান সংরক্ষণ সর্বাধিক প্রাধান্য লাভ করে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কয়েকটি স্তরে ভাগ করা হয় এবং প্রত্যের স্তরেই সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়। বিভিন্ন সময়ে সামরিক কর্তৃত্ববিহীন শাসনে সামরিক বাহিনীকে পূর্বাপেক্ষা অনেক বেশি শক্তিশালী করা হয়েছিল এবং সামরিক সদস্যদেরকে নানা সুযোগ সুবিধা ও বেসামরিক পদ দেয়া হয়। সামরিক বাহিনীর মর্যাদা, সুযোগ, পদোন্নতি, বেতন রেশন বৃদ্ধি এবং উন্নত আবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
৫. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব : বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক আমলাতন্ত্রের হস্তক্ষেপের ফলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, যখনই সামিরক বাহিনী রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করেছে তখনই তারা গণমাধ্যমের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। ফলে গণমাধ্যমসমূহ সম্পূর্ণ বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ খবর প্রকাশ করতে সক্ষম হয় না। আবার গণমাধ্যমের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করার ফলে তাদের কুকীর্তি পুরোপুরিভাবে জনসম্মুখে ওঠে আসে না।
৬. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে বাধা : বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। শিক্ষা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে এদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। রাজনৈতিক বিষয়ে অনেকখানি অজ্ঞ অসেচতন সাধারণ জনগণ সামরিক বাহিনীর শাসনকালে ভীত হয়ে পড়ে। তাদের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ অনেক ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত হয়।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
৭. সামরিক বাহিনীর ক্ষমতার মোহ : রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া তথা রাষ্ট্র পরিচালনার লোভ সকলকেই কমবেশি প্রভাবিত করে। আর রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের প্রধান হিসেবে এ মোহ তাদের মাঝে আরো বেশি আকারে কাজ করে। ফলে সেনাবাহিনীর একশ্রেণির কর্মকর্তাদের মধ্যে রাষ্ট্র ক্ষমতার উচ্চাভিলাষ পরিলক্ষিত হয়।
এতে করে সুযোগ সন্ধানী সামরিক বাহিনী বার বার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার প্রয়াস পায় এবং ক্ষমতায় আরোহণের পর বিভিন্ন অজুহাতে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করে। তারা মনে করে জাতির যে কোনো সংকটে সেনাবাহিনীই একমাত্র জাতির পাশে দাঁড়াতে এবং জাতিকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। এ সমস্ত উচ্চাভিলাষী সামরিক শাসকরা তখন সুযোগ পেয়েই রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ও উন্নয়নে সামরিক বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সামরিক আমলাতন্ত্র যখন উচ্চাভিলাষী হয় এবং ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে তখনই |
গণতন্ত্র ব্যাহত হয় এবং স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এজন্য সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতন হওয়া | প্রয়োজন। রাজনীতিবিদগণেরও যথেষ্ট সতর্ক হওয়া আবশ্যক ।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization
- সমাজদর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের সম্পর্ক, সমাজদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শনের সম্পর্ক, Relation between Social Philosophy & Political Philosophy
- দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?, দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে অধিবিদ্যা আলোচনা করুন।
- দর্শনের প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা কর