প্ৰবীণ কল্যাণের ধারণা দাও। বাংলাদেশে বয়স্ক ব্যক্তিদের সমস্যাসমূহ বর্ণনা কর, প্রবীণ কল্যাণ কী? বাংলাদেশে প্রবীণদের চ্যালেঞ্জসমূহ আলোচনা কর, প্রবীণ কল্যাণের সংজ্ঞা দাও, বাংলাদেশের প্রবীণ ব্যক্তিরা কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীণ হয়?

প্রশ্ন সমাধান: প্ৰবীণ কল্যাণের ধারণা দাও। বাংলাদেশে বয়স্ক ব্যক্তিদের সমস্যাসমূহ বর্ণনা কর, প্রবীণ কল্যাণ কী? বাংলাদেশে প্রবীণদের চ্যালেঞ্জসমূহ আলোচনা কর, প্রবীণ কল্যাণের সংজ্ঞা দাও, বাংলাদেশের প্রবীণ ব্যক্তিরা কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীণ হয়?

ভূমিকা : আজকে যারা প্রবীণ ক’দিন আগে তারা নবীন ছিল। আবার আজকে যারা নবীন তারাও আগামীতে প্রবীণ হবে। আর এই আজকের প্রবীণদের মাধ্যমে নবীনরা পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখছে। নবীনদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা, তাদের শিক্ষা দান, তাদের মৌল মানবিক চাহিদাসহ যাবতীয় চাহিদা পূরণ করেছে প্রবীণরা। তাই তাদের প্রতিও সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে। তারা যাতে বৃদ্ধজনিত অক্ষমতার কারণে কোন কষ্টের শিকার না হয় সে
দায়িত্ব আজ আমাদের; আমাদের সমাজের এবং আমাদের রাষ্ট্রের।


প্রবীণ কল্যাণের ধারণা : সাধারণভাবে বলা যায়, প্রবীণ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ও মনোদৈহিক চাহিদা পূরণের যথাযথ ব্যবস্থাই হলো প্রবীণ কল্যাণ। অন্যভাবে আমরা বলতে পারি, প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা, তাদের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ, সামাজিক চাহিদা পূরণ ও আবেগীয় চাহিদা পূরণের জন্য সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত সেবামূলক ব্যবস্থাকে প্রবীণ কল্যাণ বলে।


জাতিসংঘের মতে, “শিল্পোন্নত দেশসমূহে ৬০ বা ৬৫ বছর বয়সে অবসর গ্রহণের সাথে সমীকরণ করে সচরাচর বার্ধক্য সূচিত হয়।এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৬০ বা তদূর্ধ্ব বয়সীদের প্রবীণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।”


W. E. Henry and E. Cumming বলেছেন, “It is a period of moving away from some previous and more desirable period the prime of life or the years of usefulness.”
N. W. Shock বার্ধক্যের স্বরূপ বিশ্লেষণ করেন এভাবে, “বার্ধক্য হলো কোন প্রাণীর ধারাবাহিক/আনুক্রমিক অথবা ক্রমবর্ধিষ্ণু পরিবর্তন যা দুর্বলতা, অসুস্থতা বা রোগ ও মৃত্যুর ঝুঁকির দিকে নিয়ে যায়। এটা মানবজীবনের এক স্বাভাবিক অংশ এবং এ সময়ে শরীরের বিভিন্ন অংশের সংরক্ষণ ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।”


Elizabeth Ferguson বলেন, “The aging are generally thought to be less intelligent, less able to learn, less ambitious and therefore more easily satisfied, less able to adapt and cope.” অর্থাৎ, প্রবীণত্বকে সাধারণত ভাবা হয় কম বুদ্ধি, শিক্ষণে কম যোগ্য, কম উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং খুব সহজে সন্তুষ্ট, কম সামঞ্জস্যশীল ও সামর্থ্যবান।
মরগান (Morgan) বার্ধক্য সম্পর্কে বলেছেন, “Some intellectual skill more or less smooth, year after
year other skill decline.” অর্থাৎ, এই সময় বুদ্ধিবৃত্তিগত দক্ষতা কম-বেশি বিদ্যমান থাকে তবে বছরের পর বছর অন্যান্য দক্ষতা কমতে থাকে।


বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মতে, “৫৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সীরাই হচ্ছেন প্রবীণ ।”
বার্ধক্যে শারীরিক ও মানসিক ক্ষেত্রে অবনতি ঘটে। তখন মানুষ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। মানুষের চামড়া কুঁচকে যায়, মাথার চুল পেকে যায় বা উঠে যায়, রোগব্যাধি সহজেই আক্রমণ করে, দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, অনেকে অন্ধ হয়ে যায়, দাঁত পড়ে যায়, এক সময় চলাফেরা করার মতো শক্তি থাকে না।


বার্ধক্য প্রসঙ্গে Encyclopaedia of Social Work এ বলা হয়েছে, একটি দল হিসেবে বয়স্ক ব্যক্তিরা বিশেষভাবে আবেগীয় বিশৃঙ্খলার প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময়ে তাদের মাঝে যেসব বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় তার মাঝে রয়েছে নেতিবাচক আত্মচিন্তার জন্য হতাশা, বয়সের পরিবর্তনের জন্য স্বাধীনতা হারানো ও একাকীত্ব শোক এবং ক্রমহ্রাসমান শারীরিক ক্ষমতা।


প্রবীণদের বয়সসীমা একেক দেশে একেক রকম। আফ্রিকাতে আয়ু প্রত্যাশা কম বলে সেখানে প্রবীণদের বয়সও বেশি। আমাদের দেশে সরকারি চাকরিজীবীদের সাধারণত (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) ৫৭ বছর বয়সে অবসর নিতে হয়।কাজেই আজ আমাদের দেশে ৫৭ বছর বয়সোর্ধ্ব ব্যক্তিরা প্রবীণ। তবে আন্তর্জাতিক হিসেবে ৬৫ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠীকে প্রবীণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অনেক দেশেই এই বয়স ৬০ বছর থেকে গণনা করা হয়।সুতরাং বয়সের আলোকে আমরা বলতে পারি, কোন দেশের নির্দিষ্ট বয়ঃসীমার ঊর্ধ্ব (মোটামুটি ৬০ বছর বা তার কাছাকাছি) বয়সী জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক, সামাজিক, মানসিক ও আবেগিক দিকসহ সকল দিকের কল্যাণসাধনের নাম প্রবীণ কল্যাণ।সরকারি বা বেসরকারি উভয় সংস্থার মাধ্যমে প্রবীণ কল্যাণ সাধিত হতে পারে।
বাংলাদেশে বয়স্ক ব্যক্তিদের সমস্যাসমূহ


প্রবীণদের সমস্যা বিভিন্ন ধরনের।নিম্নে তাদের সমস্যাসমূহ আলোচনা করা হলো :


১. নিঃসঙ্গতা : বৃদ্ধদের জন্য একটি বড় সমস্যা হলো নিঃসঙ্গতা বা একাকিত্ব। বৃদ্ধরা অনেকটা শিশুদের মতো।তারা শিশুদের মত বেশি বেশি কথা বলতে চায়। কিন্তু অনেকেই তাদের পছন্দ করে না। বৃদ্ধরা সবার সাথে মিশতে চায়।কিন্তু সমাজ তথা পরিবারের সদস্যরা সেভাবে তাদের সঙ্গ দেয় না।ফলে তারা নিঃসঙ্গতায় ভোগে।


২. স্বাস্থ্যহীনতা : স্বাস্থ্যগত সমস্যা বৃদ্ধদের একটি বড় সমস্যা। অসুস্থতা তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। তারা সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।তাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম।বৃদ্ধরা রক্তচাপ,ডায়াবেটিস, প্রস্রাবে সমস্যা, ঘাড়ে ও কোমরে ব্যথা, হাঁপানি, পেপটিক আলসার, চক্ষুরোগ, বাত, রক্তশূন্যতা, হৃদরোগ প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হয়। তারা শারীরিক দুর্বলতা, অপুষ্টি, অনিদ্রা, ঔষধপথ্যের অভাব প্রভৃতি সমস্যায়ও আক্রান্ত হন।


৩. মানসিক সমস্যা : বাংলাদেশে প্রবীণ বা বৃদ্ধরা নানা কারণে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় ভোগেন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ, হীনম্মন্যতা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মৃত্যু ভয় পারিবারিক ভাঙন, একাকিত্ব,, অবহেলা, নিরাপত্তাহীনতা প্রভৃতি তাদের নিত্যসঙ্গী। এসব কারণে তারা মানসিক দুর্বলতায় ভোগেন।


আরো ও সাজেশন:-

৪. অর্থসংকট : আমাদের দেশে বৃদ্ধ বয়সে অনেক মানুষ চরম অর্থসংকটে থাকে। কারণ তখন তারা আয়-রোজগার করতে পারে না।অনেকের সম্পত্তি ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়। ফলে তারা পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েন।অনেক সময় ছেলেমেয়েরা পিতা-মাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন না। ফলে তারা অর্থসংকটের শিকার হোন।


৫. বাসস্থান সমস্যা : বাংলাদেশে প্রবীণ বা বৃদ্ধ বয়সে অনেকেই বাসস্থান সমস্যায় ভোগেন।অনেকের কারণ রোজগারহীনতার কারণে পরিবারে তখন তাদের ভূমিকা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। অনেকে পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে পড়ে যা বেদনাদায়ক ও অমানবিক। এজন্য বৃদ্ধদের দরিদ্রতা ও পরিবারের সদস্যদের অবহেলাই বেশি দায়ী।


৬. মূল্যবোধের অবক্ষয় : বৃদ্ধদের বড় সমস্যা হলো তারা তাদের মৌল মানবিক চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করতে পারে না। এজন্য তারা পরিবারের সদস্যদের উপর নির্ভরশীল। চাহিদা অপূরণের ফলে তারা মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে পড়ে। এ সময় অনেক বৃদ্ধ প্রয়োজনের তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত হয়।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

৭. কর্মবিমুখতা : বৃদ্ধ বয়সে মানুষ কর্মবিমুখ হয়। তখন কাজ করার মতো শারীরিক শক্তিও থাকে না। অলসতাও তখন ভর করে। তাদের মধ্যে একপ্রকার অস্থিরতা বিরাজ করে। কাজকর্ম না করার ফলে তারা ভারসাম্যহীন জীবনযাপন করে।


৮. নিরাপত্তাহীনতা : বৃদ্ধ বয়সে মানুষ নিরাপত্তাহীনতার শিকার হন। তারা আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করে এবং অনেক সময় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে।


৯. ভিক্ষাবৃত্তি : অক্ষম, দরিদ্র, অসহায় ও পঙ্গু বৃদ্ধরা ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় নিয়োজিত হয়।আমাদের দেশে ১.৫ লক্ষের অধিক লোক ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত যাদের বেশির ভাগই বৃদ্ধ। যেসব বৃদ্ধের অন্যের উপর নির্ভর করার মতো কেউ থাকে না তারা ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় আসতে বাধ্য হয়।


১০. যৌন সংক্রান্ত : বৃদ্ধ বয়সে অনেক মানুষ যৌন ক্ষমতা কেননা অনেক বৃদ্ধেরই এসময় যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায়।


১১. যাতায়াতের অসুবিধা : বৃদ্ধরা যাতায়াত ও পরিবহন সমস্যায় ভোগেন। শারীরিক অক্ষমতার কারণে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে তাদের বেশ কষ্ট হয়।


১২. দৈহিক আকর্ষণহীনতা : বৃদ্ধরা বয়সের কারণে দৈহিক লাবণ্য কমে যায়। দেহের বাহ্যিক আকর্ষণ তাদের থাকে না বললেই চলে। যেসব বৃদ্ধের পুরুষালি বা মেয়েলি গুণাবলি দৈহিক আকর্ষণের উপর নির্ভরশীল তারা প্রচণ্ড মানবিক চাপে অস্থির হয়ে পড়েন।


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক

১৩. সুষম খাদ্যের অভাব : বৃদ্ধ বয়সে অনেক মানুষ আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সুষম খাদ্য খেতে পারে না। ফলে তারা পুষ্টিহীনতার শিকার হন।


১৪. রোগব্যাধি ও অন্যান্য সমস্যা : বৃদ্ধদের আরো কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো হলো : জটিল ও স্থায়ী রোগব্যাধি, আবেগীয় সমস্যা, প্রিয়জনের মৃত্যু ব্যথা, লিঙ্গ বৈষম্য, পরাধীনতা, চাহিদার অপূর্ণতা, বন্ধন লোপ, সাংস্কৃতিক সমস্যা, খাপ-খাওয়াতে ব্যর্থতা, হতাশা প্রভৃতি। এসব সমস্যা তাদের দুর্বল করে ফেলে।


১৫. অবকাশ যাপনের সমস্যা : বৃদ্ধদের অবকাশ যাপনের সুযোগ তেমন নেই। ফলে তাদের মধ্যে অবসাদগ্রস্ততা দেখা দেয়।পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, অধিক সন্তানের জন্মদান এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির অনুপস্থিতির কারণে তাদের অবসর বিনোদনের সুযোগ কমে আসছে। এছাড়া মিডিয়াগুলোরও তাদের উপযোগী অনুষ্ঠান তেমন হচ্ছে না।


১৬. নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি : বৃদ্ধদের সমস্যা নিয়ে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হয়।ফলে তারা স্বজনদের স্নেহ, যত্ন, ভালোবাসা, সহানুভূতি, সমানুভূতি, সহমর্মিতা প্রভৃতি থেকে বঞ্চিত হয়। ফলশ্রুতিতে তারা মানসিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে।


উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বৃদ্ধরা অনেক সমস্যায় জর্জরিত।তাদেরকে সমস্যাবহুল জীবন মেনে নিতে হয়।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৃদ্ধ বয়স সুখের নয়, এটি একটি কষ্টের জীবন। বেশিরভাগ বৃদ্ধকে সমস্যার ভিতরেই জীবনযাপন করতে হয়। তারপর এক সময় তাদেরকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment