পায়ের পাতা ব্যথায় করণীয়, পায়ের পাতা ব্যথা সারানোর সহজ উপায়, পায়ের পাতায় ব্যথা হলে করণীয়

পায়ের পাতা ব্যথায় করণীয়, পায়ের পাতা ব্যথা সারানোর সহজ উপায়, পায়ের পাতায় ব্যথা হলে করণীয়, পায়ে ভীষণ যন্ত্রণা কমানোর উপায়েই,পায়ে ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়, পায়ের মাংসপেশির ব্যথা উপশমে, গোড়ালি ব্যথা কমাতে যা করতে পারেন

পায়ের পাতা ব্যথায় করণীয়, পায়ের পাতা ব্যথা সারানোর সহজ উপায়

পা হল হাঁটা চলা করা এবং সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য মানব শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। হাঁটা এবং দাঁড়িয়ে থাকার সময় শরীরের ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখাতে পায়ের গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আমেরিকান পোডিয়্যাট্রিক মেডিক্যাল এসোসিয়েশান’র কিছু গবেষণাতে জানা গিয়েছে যে 50 বছর বয়স পর্যন্ত মানুষের এক জোড়া পা গড়ে 75,000 মাইল অতিক্রম করে। এর ফলে পা’য়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষয় ক্ষতি হয়, আঘাত পায় এবং শারীরিক চাপ সহ্য করে, যেগুলি পায়ের ব্যথার মূল কারণ। মহিলাদের ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে পা ব্যথা বেশি হয়। পায়ের যে কোন জায়গায় ব্যথা হতে পারে।

তবে সব চেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় গোড়ালি এবং মেটাটারসালস (গোড়ালি এবং পায়ের আঙুলের মাঝের হাড়) কারণ এরাই শরীরের ওজন সব চেয়ে বেশি বহনকারী পায়ের অংশ। ডাক্তারবাবুরা পা ব্যথা নির্ণয়ের জন্য শারীরিক পরীক্ষা, ইমেজিং পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা এবং অন্যান্য পরীক্ষার উপর নির্ভর করেন।

নিজের চিকিৎসা নিজে করতে হলে বরফের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন, সঠিক মাপের জুতো, যা ধাক্কা সামলাতে পারে, তা পড়তে পারেন, গোড়ালির নিচে প্যাড ব্যবহার করতে পারেন, স্ট্রেচিং ব্যায়াম করতে পারেন – এইগুলি পায়ের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ব্যথার ওষুধ সেবন করলে এবং ফিজিওথেরাপি’র ব্যায়াম করলেও ব্যথা কমানো যায়।

পা ব্যথা (পায়ের পাতার ব্যথা) এর উপসর্গ – Symptoms of Foot Pain in Bengali

পায়ের ব্যথার প্রকারে উপরে এর লক্ষণগুলি নির্ভর করে, যেমন:

পায়ের ব্যথার লক্ষণগুলির মধ্য রয়েছে:

  • গোড়ালি ব্যথা
    গোড়ালি থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত সরু এবং লম্বা লিগামেন্টটির প্রদাহকে প্ল্যানটার ফ্যাসাইটিস বলা হয়। গোড়ালির বৃদ্ধি (ক্যালসিয়াম জমে গিয়ে হাড় বড় হয়ে যাওয়া) হলে অথবা লিগামেন্টগুলিতে অতিরিক্ত চাপ পড়লে লিগামেন্টগুলিতে টান পড়ে এবং আঘাত লাগে, ফলে গোড়ালি ব্যথা হয়। নিম্ন লিখিত উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে:
    • গোড়ালি বা পায়ের পাতার মাঝখানে ব্যথা।
    • অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পর (ঘুম থেকে ওঠার পর) বা বসে থাকার পর উঠে দাঁড়িয়ে প্রথম কয়েকটি পদক্ষেপের ফেলার সময় গোড়ালিতে অসহ্য ব্যথা লাগে।
    • কয়েক পা চলার পর ব্যথা কমতে থাকে।
    • ব্যায়াম করার পর বা অনেক্ষণ হাঁটার পর বা ওই রকমের কোন কাজের পর ব্যথা বেড়ে যায়।
    • ব্যথার সাথে শিরশিরানি বা অসাড়তাও বোধ হতে পারে।
  • আচিলেস টেনডিনাইটিস
    যে টেনডনটি গোড়ালি আর পায়ের মধ্যে সংযোগ রাখে তার প্রদাহকে আচিলেস টেনডিনাইটিস বলা হয়। পায়ের গুলির পেশীর শেষ প্রান্ত উপরের দিকে উঠে গিয়ে আচিলেস টেনডন তৈরি হয়। হাঁটা, লাফানো এবং দৌড়ানোর সময়ে পা নিচের দিকে নামাতে আচিলেস টেনডন সাহায্য করে। অত্যধিক হাঁটা, বা দৌড়ানো, পায়ের গুলির পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া।, শক্ত জমির উপরে দৌড়ানো, লাফানো এবং এই রকমের অন্যান্য কার্যক্রমের ফলে টেনডনের প্রদাহ হয়। ফ্ল্যাট ফিট, জুতোর নাল এবং আর্থ্রাইটিস আচিলেস টেনডনের প্রদাহ কারণ হয়। নিম্ন লিখিত উপসর্গগুলি দেখা যেতে পারে:
    • পায়ের গোড়ালির উপরে এবং আচিলেস টেনডনে ব্যথা হয়।
    • হাঁটা এবং দৌড়ানোর মত কার্যক্রমের জন্য শক্ত হয়ে যায় এবং ব্যথা বৃদ্ধি পায়।
    • পা’য়ের উপরে দাড়ান কষ্টকর হয়ে ওঠে।
    • গোড়ালিতে ব্যাথা এবং ফোলা হয়।
  • মধ্য পাতায় ব্যথা
    পায়ের পাতার মধ্যবর্তী স্থানের ব্যথাকে মেটাটারসালজিয়া বলা হয়। সঠিক জুতো না পড়া, আর্থ্রাইটিস এবং অত্যধিক খেলাধুলার কারণে গোড়ালি আর আঙুলের মধ্যবর্তী জায়গার হাড়ে ব্যথা হয়। স্থূলতা, চ্যাপটা পায়ের পাতা, ধনুকাকৃতির পায়ের পাতা, আর্থ্রাইটিস, বাত, বুনিয়নস (পায়ের বুড়ো আঙুলের প্রথম গাঁটে বেদনাদায়ক ফোলা), হ্যামারটো (পায়ের পাতা স্থায়ী ভাবে নিচের দিকে বেঁকে থাকা), মর্টন’এর নিউরোমা (ক্যান্সার নয় এমন একটি ফোলা যা নার্ভকে চাপ দেয়), ফেটে যাওয়া এবং বয়স্কদের মধুমেহ থেকে মেটাটারসালজিয়া হয়। এর উপসর্গগুলি হল:
    • একটি বা দুটি পায়েই, জ্বালা এবং ব্যথার অনুভূতি, বিশেষত পায়ের আঙুলের দিকে।
    • পায়ের নিচে পাথর থাকার মত অনুভূতি।
    • গুলি লাগার মত ব্যথা এবং তার সাথে শির শিরা করা ব্যথা এবং অসাড়তা।
    • দাড়িয়ে থাকলে বা হাঁটতে থাকলে ব্যথা বেড়ে যায়।
  • পাতার সামনের দিকে ব্যথা
    কতকগুলি সাধারণ সমস্যা, যেমন বাড়তে থাকা পায়ের নখ, ভেরুসে বা আব, নখে ও ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ, (এ্যথলেট’স ফুট), কড়া, এবং ক্যালোসাইটস (মোটা ও শক্ত চামড়া), বুনিয়নস, হ্যামার টো, ক্ল ফুট এবং বাত পায়ের পাতের সামনের অংশকে প্রভাবিত করে। সাধারণত যে লক্ষণগুলি দেখা যায়, সেগুলি হল:
    • প্রভাবিত জায়গা ফুলে যাওয়া, খস খসে হয়ে যাওয়া এবং সাথে ধক ধক করা ব্যথা সাধারণত হয় যখন পায়ের নখ ভিতর দিকে বাড়তে থাকে এবং বাত থাকে। বাত হচ্ছে হাড়ের প্রদাহ, বিশেষত পায়ের বুড়ো আঙুলের।
    • পায়ের পাতার বিকৃতি থেকেও ব্যথা হতে পারে, যেমন:
      • হ্যামার টো
        পায়ের পাতা হাতুড়ির মতন দেখতে হয়। এর কারক পাতার বিকৃতি (দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ আঙুলের)।
      • ক্ল ফুট
        পায়ের বিকৃতির জন্য পা’এর পাতাকে থাবার মত দেখতে লাগে।
      • বুনিয়ন
        হাড়ে একটি শক্ত পিণ্ড হওয়ার কারণে পায়ের বুড়ো আঙুল ডান দিকের আঙুলের দিকে বেঁকে যায়।
    • পায়ের পাতার পেশীর সংকোচন হওয়াতে স্নায়ুগুলি জড়িয়ে যায়। এর ফলে পাতার সামনের দিকে জ্বালা ও ব্যথা হয়।
    • যখন স্নায়ুগুলি জড়িত থাকে তখন পায়ে শির শির করা এবং অসাড়তা বোধ হয়।
    • মোটা এবং শক্ত চামড়া থাকলে (কড়া বা কলুষতা) পায়ের পাতার উপরে ও নিচে ক্রমাগত চাপ পড়ে, ফলে তীক্ষ্ণ ব্যথা বোধ হয়।
    • ছত্রাকের সংক্রমণ হলে ব্যথা এবং বেদনার সাথে ফোড়া হয় এবং ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। নখগুলি ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং তাদের রঙ সাধারণত বদলে যায়।
  • পায়ের সাধারণ ব্যথা
    • ইডিমা, হাড়ের ফাটল এবং পাদস্ফোট (দীর্ঘ সময় ধরে কম তাপমাত্রাতে থাকার কারণে ফোলা) পা’য়ে ব্যথার কারণ।
    • ভেরুসে বা আব, কড়া এবং কলুষতার জন্য পা’য়ে তীক্ষ্ণ ব্যথা হয়।
    • পাদস্ফোট হলে পা’য়ে তীব্র ব্যথা এবং বেদনা হয়। চামড়া ফুলে যায় এবং রঙ বদলে গাঢ় লাল বা নীল হয়ে যায়।
    • পা’য়ের ফাটল এবং প্রদাহ, যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, বাত, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য সমস্যা থাকলে অসহ্য ব্যথা হতে থাকে। ব্যথার সাথে সাথে পা ফুলে যায়, ফলে পা নাড়াচাড়া করা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

পা ব্যথা (পায়ের পাতার ব্যথা) এর চিকিৎসা – Treatment of Foot Pain in Bengali

পা’য়ের ব্যথার চিকিৎসার অন্তর্গত হল ওষুধ এবং বিভিন্ন ভাবে নিজের যত্ন নিজে নেওয়া।

ওষুধ-পত্র

  • প্যারাসিটামল জাতিয় ব্যথা কমানোর ওষুধগুলি অল্প ব্যথায় আরাম দেয়।
  • প্রদাহ কমার ওষুধগুলি, যেমন ইবুপ্রোফেন, প্রদাহ হ্রাস করে ব্যথা কমায়।
  • যখন অন্য কিছু আর কাজ না করে তখন কর্টিকোস্টেরইড ওষুধ সেবন করলে এবং ব্যথার জায়গায় ইনজেকশান দিলে পা ব্যথা খুব তাড়াতাড়ি কমে যায়।
  • ইউরিক এসিড কমানোর ওষুধ দিয়ে বাতের চিকিৎসা করা হয়।
  • আব’কে ঘসে তুলে ফেলার জন্য স্যালিসাইলিক এসিড ক্রিম বা জেল ব্যবহার করা হয়।

শল্য চিকিৎসা

  • পা’য়ের বিকৃতি ঠিক করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির অস্ত্রোপচার করা হয়। এর ফলে যে স্নায়ুগুলি অবরুদ্ধ অবস্থাতে শির শির করা এবং অসাড়তার সাথে সাথে ব্যথার কারণ থাকে সেগুলি মুক্তি পায়। পা’য়ের ব্যথাও ঠিক হয়ে যায়।
  • প্ল্যানটার ফাসিয়াতে চাপ সৃষ্টিকারী শক্ত হয়ে যাওয়া পায়ের গুলি, যেগুলি স্ট্রেচিং ব্যায়ামে সাড়া দেয় না, সেই পেশীগুলিকে গ্যাসট্রোনেমাস রিসেশান পদ্ধতিতে টান টান করা হয়।
  • প্ল্যানটার ফাসিয়াকে ছাড়াতে একটা ছোট কাটা হয় যাতে শক্ত হয়ে যাওয়া প্ল্যানটার ফাসিয়া’র টেনশান কমে যায়।

জীবনধারার পরিবর্তন

জীবনধারার সামান্য পরিবর্তন করলে তীব্র পায়ের ব্যথাকে হ্রাস করা যায়, যেমন:

  • তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় গরম সেঁক দিলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং ব্যথা কমে যায়।
  • বরফের প্যাক দিলে প্রদাহ এবং ফোলা কমে গিয়ে ব্যথা কমে যায়। বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে ঠাণ্ডা জলের বোতল ব্যথার জায়গার উপর দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নিয়ে গেলে ব্যথা কমে।
  • প্রভাবিত পায়ে যাতে চাপ না পড়ে সেই জন্য সেই পায়ে দেহের ওজন কম দেওয়ার চেষ্টা করুন।
  • নরম সোল আছে এমন আরামদায়ক জুতো পড়ুন অথবা গোড়ালির নিচে হিল প্যাড ব্যবহার করুন। এতে ব্যথার পায়ে চাপ কম পড়বে।
  • শক্ত জমিতে খালি পায়ে হাঁটবেন না।
  • পায়ের গুলির পেশী এবং পায়ের পাতার (প্ল্যানটার ফ্যাসিয়া) জন্য স্ট্রেচিং ব্যায়াম করলে কঠিনতা কমে গিয়ে পেশীর নমনীয়তা বৃদ্ধি করে।
  • ঘুমের মধ্যে প্ল্যানটার ফ্যাসিয়েকে প্রসারিত করতে নাইট স্প্লিন্টস ব্যবহার করা হয়। এতে প্ল্যানটার ফ্যাসিয়ের কারণের ব্যথা কম হয়।
  • যদি দেহের ওজন বেশি থাকে তাহলে অতিরিক্ত ওজন কমাতে নিয়মিত মাঝারি ধরণেরে ব্যায়াম করুন।
  • পায়ের নখ নিয়মিত কাটুন এবং পরিষ্কার রাখুন যাতে এদের বাড়তি অংশ আশে পাশের চামড়াতে ঢুকে না যায়।
  • পায়ের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে বিশ্রাম খুবই জরুরী। 
  • নিয়মিত স্ট্রেচিং ব্যায়াম করলে পা এবং পায়ের গুলির পেশীগুলিকে নমনীয় থাকবে এবং পায়ে ব্যথাও কম হবে।
  • আঁটো-শাঁটো শক্ত ইন-সোল যুক্ত জুতো বদলে ফেলে নরম ইন-সোল যুক্ত আরামদায়ক জুতো পড়ুন।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্য খান যাতে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। পুষ্টিকর খাদ্যের একটি ঘাটতি প্রতিরোধ করুন।
পরিশেষে : পায়ে ভীষণ যন্ত্রণা কমানোর উপায়েই,পায়ে ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়

আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট

স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ

Leave a Comment