পর্নোগ্রাফির প্রভাব, পর্ন দেখলে কি শারীরিক ক্ষতি হয়? , ‘পর্ন আসক্তি জীবনের এক অন্ধকার দিক’ , পর্নগ্রাফি খারাপ দিক, পর্ণোগ্রাফি কিভাবে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি দূর্বল করে?,পর্নগ্রাফি মানুষের মস্তিষ্কের উপর যেভাবে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে

আজকের বিষয়: পর্নোগ্রাফির প্রভাব, পর্ন দেখলে কি শারীরিক ক্ষতি হয়?

স্নায়ুবিজ্ঞান (Neuroscience) এখন স্বীকার করে যে, মানুষের মস্তিষ্ক অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন। অর্থাৎ, অভিজ্ঞতা লাভের মধ্যদিয়ে মস্তিষ্কে পরিবর্তন ঘটে এবং আমরা যা দেখি, শুনি বা জানি, তার সবকিছুর সাথেই মস্তিষ্কের সংযোগ গড়ে ওঠে। দর্শন ক্লাসের আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে নতুন কোনো শহরের পথঘাট চেনা, এমনকি আপাতদৃষ্টিতে নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে থেকে কোনো গান শোনা কিংবা টিভি দেখা — আমাদের প্রতিটি কাজের সাথেই মস্তিষ্কের তাৎক্ষনিক সংযোগ গড়ে ওঠে এবং মানুষ হিসেবে আমরা কে, কেমন, এই সংযোগগুলোই সেটা নির্ধারণ করে দেয়। পর্নোগ্রাফী দেখা একটি নীরব অথচ ভয়ঙ্কর সমস্যা যা মহামারীর আকার ধারণ করেছে। এর মাধ্যমে নারীদের চাইতে পুরুষরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

এই বিষয়টির ক্ষতিকারক দিক সংক্রান্ত অধিকাংশ নিবন্ধগুলোতে বিষয়টি সম্পর্কে সাধারণত মনস্তাত্ত্বিক এবং/অথবা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করা হয়। তবে বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে স্নায়ুবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে পর্নোগ্রাফী দেখার ক্ষতিকর প্রভাবগুলো সম্পর্কে আলোপাত করা হবে।

প্রচলিত যে মডেলটির (model) মাধ্যমে মানুষের শেখা এবং মনে রাখার প্রক্রিয়াটিকে ব্যাখ্যা করা হয়, সেই মডেলটির ভিত্তি হলো সিন্যাপটিক প্লাসটিসিটি (synaptic plasticity)। সিন্যাপটিক প্লাসটিসিটি হলো মস্তিষ্কের সেই ক্ষমতা যার মাধ্যমে অভিজ্ঞতায় সাড়া দিতে মস্তিষ্ক তার নিউরনসমূহের (মস্তিষ্ক কোষ) মধ্যকার সংযোগগুলোর শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কি পরিমাণ এবং কোন ধরণের স্নায়বিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এবং সেইসাথে কি পরিমাণ নিউরোট্রান্সমিটারের (neurotransmitter – আনবিক গঠন সম্পন্ন স্নায়বিক সংবাহক) নির্গমন ঘটবে, তা নিয়ন্ত্রণ করাও এই ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত। অধিকাংশ মানুষ ডোপামিন সম্পর্কে যা কিছু জানে তা বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তি যেমন, মুহাম্মাদ আলি বা মাইকেল জে. ফক্সের পারকিন্‌সন্‌ (Parkinson) রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থেকে। শরীরে ডোপামিনের কার্যকারিতায় ত্রুটি দেখা দিলে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়।

মস্তিষ্কের একটি অত্যাবশ্যক নিউরোট্রান্সমিটার হলো ডোপামিন (dopamine)। এর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি সচেতন অঙ্গসঞ্চালন, অনুপ্রেরণা দান, প্রতিদান দেওয়া, শাস্তি দেওয়া এবং শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। শিশুদের এডিএইচডি (ADHD – Attention Deficit-Hyperactivity Disorder), বার্ধক্যজনিত স্মৃতিশক্তি হ্রাস (cognitive decline) এবং বিষণ্ণতার (depression) ক্ষেত্রেও ডোপামিনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

আনন্দ অনুভব, প্রতিদান, শিক্ষণ প্রক্রিয়া ইত্যাদিতে ডোপামিনের ভূমিকা অবিচ্ছেদ্য। কোকেইনের মতো ড্রাগগুলোর কার্যকারিতা ডোপামিনারজিক সিস্টেম (Dopaminergic System) কেন্দ্রিক। এই ড্রাগগুলোর কার্যকারিতার ফলে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটে। ফলে শরীরে “উচ্চমাত্রার শক্তি বা আনন্দ অনুভূতি” সৃষ্টি হয় যা ক্রমেই আসক্তিতে পরিণত হয়। একাধিক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ডোপামিন আনন্দের আবহ তৈরি করে, নয়তো প্রত্যক্ষ আনন্দ দানে ভূমিকা রাখে। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে, চরম আনন্দ লাভের মুহূর্তে, নয়তো আনন্দ লাভের পরে, ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটে। এই নিঃসরণের সময়, ডোপামিন শারীরিক ক্রিয়ার সাথে মস্তিষ্কের নতুন সংযোগগুলোকে আরও বেশি শক্তিশালী (strengthen) এবং দৃঢ় (reinforce) করে যা ব্যক্তিকে পুরনায় ওই আনন্দ লাভের জন্য একই কাজ করতে উৎসাহ যোগাতে থাকে।

পর্নোগ্রাফীর সাথে এর সম্পর্কটা কোথায়? পর্দায় যৌন ক্রিয়াকলাপের দৃশ্য দেখলে যৌন উত্তেজনা তৈরি হয়, যা ডোপামিনারজিক সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলে। কোকেইনের মতো ড্রাগগুলো ঠিক এই কাজটিই করে থাকে। পর্দায় যৌন ক্রিয়াকলাপের দৃশ্য দেখার ফলে মস্তিকে নতুনভাবে তৈরি হওয়া সংযোগগুলো প্রচুর পরিমাণে নিঃসৃত ডোপামিনের দ্বারা আরও বেশি শক্তিশালী হয়। ফলে পর্দায় দেখা দৃশ্যগুলো ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিপটে না-গিয়ে — যেক্ষেত্রে দৃশ্যগুলো পর্দা বন্ধ হওয়ার পর মন থেকে মুছে যেতো — ডোপামিনের দৃঢ়ীকরণ (reinforcement) প্রক্রিয়ার কারণে স্থায়ী স্মৃতিপটে প্রবেশ করে। এখানে দৃশ্যগুলো দর্শকের মনে রিপ্লেই মোডে (replay mode – বারবার চোখে ভাসতে থাকে) দৃঢ়ভাবে গেঁথে যায়। এক্ষেত্রে সমস্যার কথা হলো, কোনো কিছুকে যতবেশি স্মরণ করা হবে, মস্তিষ্কে তা ততবেশি স্থায়ী রূপ লাভ করতে থাকবে। স্কুলের ওই দিনগুলোর কথা মনে করে দেখুন — পরীক্ষার পড়া মুখস্ত করতে গিয়ে একটা বিষয় বারবার পুনরাবৃত্তির পর তা মাথায় গেঁথে যেতো!

পর্নোগ্রাফী হলো অলীক কল্পনা (fantasy)। প্রতিটি নতুন দৃশ্যে একজন নতুন নারীকে দেখে দর্শকের ভ্রম জাগে যেন প্রতিবার সে নতুন একজন নারীর সাথে সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে। পর্নোগ্রাফীর “তারকা” অভিনেত্রীরা ছবিতে পুরুষদের কাছে নিজেদেরকে মর্যাদাহীন এবং অবমাননাকর যৌনকর্মের শিকারে পরিণত করে। এসব যৌন আচরণ মানসিকভাবে সুস্থ অধিকাংশ মানুষের কাছে সম্পূর্ণরূপে অশ্লীল, জঘন্য। পর্নোগ্রাফীর চিত্রনাট্যের কাজই হলো দুএকটা পরিচিত এবং স্বাভাবিকভাবে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী আচরণের মাঝে এমন কিছু যৌন আচরণকে ঢুকিয়ে দেওয়া যেগুলো যৌনভাবে সুখকর নয়। আর এভাবেই দর্শক নতুন নতুন যৌন আচরণের সাথে পরিচিত হয়ে থাকে। পর্দা থেকে অবাস্তব কল্পনার পাশাপাশি এক ধরনের তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ (electromagnetic wave) বিচ্ছুরিত হয় যা মস্তিষ্কে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়। ফলে ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটে। পরিণতিতে, এক ধরনের বাস্তব অনুভূতির তৈরি হয় ঠিকই, তবে যে আনন্দ এবং তৃপ্তিবোধ তৈরি হয়, তা নিজেকে ধোকা দেওয়া ছাড়া কিছু নয়। ডোপামিন নতুন করে পাওয়া যৌনতৃপ্তি সাথে সাথে মস্তিষ্কের সংযোগসমূহকে শক্তিশালী করে। ফলে যা ঘটে তা হলো, ব্যক্তি তখন তার স্ত্রীকে নিজের অবচেতন মনে জমে থাকা কল্পিত যৌন আচরণে লিপ্ত হওয়ার আহ্বান করে।

মস্তিষ্কে সংঘটিত ঘটনা প্রবাহ খুবই যৌগিক আবার সরলও। পর্নোগ্রাফী দেখার ফলে সিন্যাপটিক প্লাসটিসিটি মস্তিষ্কে নতুন সংযোগ তৈরি করে। ফলে নতুন করে লাভ করা স্মৃতিগুলো সংরক্ষিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা যেহেতু যৌন উত্তেজনার সাথে সম্পৃক্ত, তাই ডোপামিন নিঃসরণের মাধ্যমে নতুন সৃষ্ট সংযোগগুলো বহুগুণ বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে এবং পর্দায় দেখা দৃশ্যগুলো স্থায়ী স্মৃতিপটে সংরক্ষিত হওয়ার ফলে দুই ধরণের ঘটনা ঘটে :

১) কোকেইন মস্তিষ্কের যে গঠনতন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে, পর্নোগ্রাফীও ঠিক সেই গঠনতন্ত্রকেই উদ্দীপ্ত করে। ফলে আসক্তির জন্ম হয়।

২) পুরুষ প্রায়ই তার স্ত্রীর সাথে এসব দৃশ্যের পুনর্মঞ্চায়ন করতে চায় যার অনিবার্য পরিণাম হতাশা। এই পুনর্মঞ্চায়নের প্রত্যাশা পূরণ হবার নয়। কারণ একাধিক নতুন নতুন নারীর পরিবর্তে স্ত্রী শুধু একজন। আরও ভয়ানক বিষয় হলো, এই একজন নারীর যৌন বাচনভঙ্গি, আচরণ, শারীরিক আবেদন ইত্যাদি পুরুষের মনে জমে থাকা ওইসব নতুন নতুন নারীর সাথে কখনোই মিলবে না। হয়তো প্রথম প্রথম দুএকবার পুনর্মঞ্চায়ন বেশ উত্তেজনাকর এবং আনন্দঘন হতে পারে। তবে শীঘ্রই বাস্তবতা এসে হানা দেবে এবং যখন আনন্দ পাওয়া যাবে না, ডোপামিনের নিঃসরণও তখন বন্ধ হয়ে যাবে।

দুঃখজনক হলো, ঘটনার এখানেই শেষ নয়। অবাস্তব এবং কাল্পনা নির্ভর প্রত্যাশার কারণে বাস্তবে যখন হতাশার সৃষ্টি হবে, মস্তিষ্ক তখন ডোপামিনের নিঃসরণ শুধু বন্ধই করবে না; বাস্তবিক অর্থে, এই নিঃসরণ স্তর তখন সর্বনিম্ন স্তরেরও নীচে নেমে গিয়ে বিষণ্ণতার স্তরে গিয়ে পৌঁছবে। ফলে দাম্পত্য জীবনে হতাশা, অতৃপ্তি এবং অশান্তির জন্ম হবে। কারণ স্ত্রীকে সে “যেভাবে প্রত্যাশা করে, সেভাবে পায় না।” অনেক নারী নিজেদেরকে আরও বেশি আবেদনময়ী করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও, এমনকি স্বামীদের মনের মতো করে আত্মমর্যাদাহীন, বিকৃতরুচির যৌনকর্মের জন্য নিজেদেরকে স্বামীদের হাতে তুলে দিলেও, পর্নোগ্রাফীতে আসক্ত স্বামীরা খুব সামান্য সময়ের জন্যই আনন্দ লাভ করবে এবং অল্প সময়েই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ফলে সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও স্ত্রী নিজেকে অনাকর্ষণীয় এবং আবেগিক দিক থেকে পরিত্যক্তা মনে করবে। অথচ সে জানবেও না যে, পর্নোগ্রাফীর ডোপামিনের সাথে সে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।

এই সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, মস্তিষ্ক একটি সামগ্রিক সত্ত্বার মতো কাজ করে; এর কার্যকারিতার পরিধি হলো সর্বব্যাপী। ফলে মস্তিষ্কের কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের পরিবর্তন হলে অন্যান্য অংশও প্রভাবিত হয়। পর্নোগ্রাফী দেখার মাধ্যমে আক্ষরিক অর্থেই পুরো মস্তিষ্কের সকল স্নায়বিক সংযোগগুলোর পুনর্বিন্যাস ঘটে। ফলে মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশ এবং তাদের কর্মদক্ষতার উপর কেমন প্রভাব পড়ে, তা গবেষণার ভিন্ন একটি ক্ষেত্র যা গভীর মনোযোগের দাবি রাখে।

স্নায়ুবিজ্ঞান পর্নোগ্রাফীতে আসক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বেশ পীড়াদায়ক চিত্র তুলে ধরলেও, এটি পুরোপুরি দুঃসংবাদ নয়। যদিও পর্নোগ্রাফী এবং কোকেইন মস্তিষ্কের একই গঠনতন্ত্রকে আক্রমণ করে, তথাপি দুটির পরিণতি পুরোপুরি এক নয়। মস্তিষ্কের সংশ্লিষ্ট গঠনতন্ত্রকে বিষমুক্ত করার জন্য, কোকেইনে আসক্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই একটি সুশৃঙ্খল এবং ধারাবাহিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অন্যথায়, তার জীবনই ঝুঁকিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে, অনেক মানুষ যারা পর্নোগ্রাফী দেখার বাস্তব এবং সুস্পষ্ট ক্ষতির দিক সম্পর্কে জেনে গেছে, তারা কোনো রকম নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যয়ের শিকার না হয়েই, তাৎক্ষনিকভাবে পর্নোগ্রাফী দেখা বাদ দিতে পারে। এজন্য প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে এবং নিজেকে নানা রকম কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখতে হবে। প্রথম প্রথম অতীতের দেখা পর্নোগ্রাফীর মনোযোগ বিনষ্টকারী দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসতে থাকবে যা পর্নোগ্রাফী পরিত্যাগের ক্ষেত্রে ব্যক্তির ইচ্ছা এবং উদ্যমের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা। তবে সুখের কথা হলো, পর্নোগ্রাফী দেখার কারণে মস্তিস্কের স্নায়বিক সংযোগগুলোর যেভাবে পুনর্বিন্যাস ঘটেছিল, সেই পুনর্বিন্যাস ঘটানো আবারও সম্ভব। মস্তিষ্ক খুবই কর্মদক্ষ একটি অঙ্গ যা অব্যবহৃত সংযোগগুলো থেকে মুক্ত হতে পারে। ব্যক্তি যতই পর্নোগ্রাফীর সংযোগগুলোকে পুনরুদ্দীপ্ত না-করে থাকবে, মস্তিষ্কের পক্ষে ওইসব সংযোগগুলো পরিত্যাগ করার সম্ভাবনাও তত বেশি। আবার পূর্বের অভিজ্ঞতায় জড়ালে এবং মস্তিষ্ককে যৌন আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিষয়ে ব্যস্ত রাখলে, অনিবার্যভাবেই তা অন্যান্য সংযোগগুলোকে পুনরুদ্দীপ্ত করবে। কর্ম সম্পাদনের জন্য মস্তিষ্কের শুধু সময় এবং পছন্দ প্রয়োজন। ব্যক্তি তার মস্তিষ্কে যে বিষয়টি বারবার সক্রিয় করবে, মস্তিষ্ক সেটিকেই তার পছন্দ হিসেবে গ্রহণ করবে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

পর্ন বর্তমান সময়ের এক মহামারি সমস্যা। বেখেয়ালে এতে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত লাখো তরুণ। তবে আশার কথা হলো, পর্নের বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক গবেষণা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা। তবুও অনেকেই পর্ন আসক্তি থেকে মুক্তির যাত্রা শুরু করার প্রেরণা পায় না। তাদের জন্যই এ আর্টিকেল। এখানে আমরা পর্ন ছাড়ার ৫০টি কারণ নিয়ে আলোচনা করব। আসুন, শুরু করা যাক।

১) শারীরিক মিলন সম্পর্কে পর্ন কোনো আকর্ষণীয় উপায় জানায় না

পর্নের সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার হচ্ছে এটা মানুষকে সেক্সচুয়াল ফ্যান্টাসিতে ভোগায়। এসব পর্নে যা দেখানো হয় সেগুলো বাস্তবতার সম্পূর্ণ বিপরীত। বেশি পর্ন দেখার ফলে বাস্তব মিলন তখন মানুষের কাছে পর্নের মতো আকর্ষণীয় মনে হয় না। দেখা দেয় অপ্রাপ্তির বিষণ্ণতা, মনোমালিন্য ও সম্পর্কে টানাপোড়ন। পর্নে যা দেখানো হয় সবটুকুই অতিরঞ্জিত অভিনয় যার সাথে বাস্তবতার সামান্যতম সম্পর্ক নেই। 

২) এটা একটা নেশার মতো

বাইরে থেকে দেখলে কোকেন আর পর্ন এক জিনিস নয়। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল বলে, মাদকসেবনের ফলে মস্তিস্কে যে হরমোন নিঃসৃত হয়ে আনন্দের অনুভূতি দেয়, পর্ন দেখলেও ঐ একই হরমোন একইভাবে কাজ করে। মাদকসেবনের ফলে ডোপামিন, অক্সিটোসিন প্রভৃতি হরমোন নিঃসরিত হয়ে মস্তিস্কে একটি পথ (pathway) তৈরি করে, যে পথে নিয়মিত হরমোন নিঃসরণের প্রয়োজন দেখা দেয়, যা ব্যক্তিকে মাদকাসক্ত করে তোলে। তাই পর্নও একটি মাদক। এটা চোখের মাধ্যমে প্রবেশ করে। অন্যান্য ড্রাগ আসক্তির মতো এ আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়াও একসময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে আসক্তি থেকে মুক্তির এই যাত্রায় আপনি সঙ্গী হিসেবে আমাদের পাশে পাবেন, আর এ মুক্তির স্বাদ অত্যন্ত প্রশান্তিদায়ক। 

৩) এ অভ্যাস ও আসক্তি ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে

পর্ন আসক্তি বেশ ভয়ানক। নিজেকে টিকিয়ে রাখতে এ আসক্তি ক্রমেই ডালপালা ছড়াতে থাকে। ব্যক্তি আনন্দ পাবার জন্য আরও বেশি পর্ন দেখতে থাকে। প্রতিবার পর্ন দেখার সময় আগের বারের চেয়ে বেশি আনন্দ পেতে হার্ডকোর পর্ন দেখার প্রয়োজন পড়ে। ফলে দিন দিন তার চেতনা ও বোধশক্তি আরও ভোঁতা হতে থাকে। তাই আসক্তি আপনাকে শেষ করে ফেলার আগেই মুক্তির পথে ঘুরে দাঁড়ান। নিজেকে বাঁচান।

৪) জীবন ও মনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন

একপর্যায়ে পর্ন দর্শকরা এমনসব দৃশ্য দেখে আনন্দ পায় যা আগে তাদের কাছে জঘন্য লাগতো। কড়া ধাঁচের পর্নগুলো দেখতে দেখতে সে মারাত্মক ক্ষতিকর কাজগুলোকে দর্শক খুবই স্বাভাবিক ভাবতে শুরু করে। পর্ন মানুষের আদর্শকে ধ্বংস করে, বিবেককে নষ্ট করে আর সম্পর্কগুলোতে তিক্ততা বয়ে আনে। আপনার এ বদভ্যাসকে দূর করুন। নাহলে জীবনে আরও কষ্টদায়ক অবস্থায় পড়তে আপনি বাধ্য।

৫) বাস্তব জীবনে ফিরে আসুন

পর্নে মানুষকে যৌন পন্য হিসেবে দেখানো হয়। এর মাঝে বাস্তব অথবা রোমান্টিক কিছুই নেই। বরং এটা বাস্তবতা থেকে মানুষকে দূরে নিয়ে যায়। ফলে বাস্তব জীবনে তারা সুখী হতে পারে না। আপনার জীবন তখনই পূর্ণতায় পৌঁছবে যখন আপনি পর্ন ছেড়ে বাস্তব জীবনে ফিরে আসবেন।

৬) নিজের দেহের কদর করুন

পর্নে মেকাপ, সার্জারি, এডিটিং, অভিনয়- এসব ব্যবহার করে মানবদেহ ও যৌনতা নিয়ে অনেক ভুল ও অবাস্তব ধারণা মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। দর্শক নিজের অজান্তেই যা দেখছে তার সাথে নিজেকে তুলনা করতে থাকে। নিজের শরীর ও জীবন নিয়ে হতাশা, হীনমন্যতায় ভোগে। পর্ন আসক্তি থেকে মুক্তি আপনার সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেবে, আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। 

৭) প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করুন

পর্নের প্রভাবে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে অবমূল্যায়ন করা হয়। কারণ, সেখানে তাদের এমন যৌন বস্তু হিসেবে দেখানো হয় যা অমানুষিক ও বাস্তবতাবিরোধী। ফলে প্রকৃত সুন্দরকে আর সুন্দর মনে হয় না। পর্ন এমন এক মিথ্যা কাল্পনিক জগতে মানুষকে নিয়ে যায় ফলে তার রুচি-কামনা-বাসনা কুৎসিত রূপ লাভ করে। সে এমন কিছু চায় যা তার স্ত্রীর মাঝে থাকে না। থাকার কথাও নয়। পর্ন ছেড়ে দেবার পর লোকে বলে যে তারা তাদের স্ত্রীর সৌন্দর্য উপলদ্ধি করতে পারেন। তাদেরকে আর ভোগের বস্তু হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করেন। প্রকৃতভাবে ভালবাসতে পারেন, সৌন্দর্যের মূল্য বোঝেন।

৮) যৌন অক্ষমতা প্রতিরোধ করুন

পর্ন যৌন অক্ষমতা ও যৌন অতৃপ্তির মূল কারণ। পর্ন দর্শকদের জরিপ নিয়ে জানা গিয়েছে, পর্ন দেখতে দেখতে একসময় ব্যক্তি তার স্বাভাবিক যৌনতাকেই ধ্বংস করে ফেলে । জানা গেছে, নিয়মিত পর্ন দেখার ফলে মস্তিষ্কে এমন পরিবর্তন আসে যার ফলে বাস্তবে সহবাস করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। পর্ন আসক্তি একজন পুরুষের উত্তেজিত হবার ক্ষমতাকেই নষ্ট করে দেয়। কিন্তু এটা তারা টের পায় অনেক দেরিতে। এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো পর্ন ও মাস্টারবেশনের মতো বাজে অভ্যাস থেকে মুক্ত হওয়া। স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসা।

৯) যৌন পাচার বন্ধ করুন

মানুষ যত পর্ন দেখবে পর্ন ইন্ডাস্ট্রি তাদের চাহিদা পূরণের জন্য তত বেশি মানব পাচার চালিয়ে যাবে। যৌন পাচারের শিকার অগণিত নারীকে পর্নে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এমনকি সরকারিভাবে বৈধতাপ্রাপ্ত আমেরিকান এডাল্ট ইন্ডাস্ট্রিতেও পর্ন তারকারা হরহামেশাই জুলুম ও জোরপূর্বক মাদকদ্রব্য গ্রহণের শিকার হয়। ক্যামেরার পেছনে থাকা অন্ধকার তিক্ত সত্যকে জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। পর্নকে ‘না’ বলে আপনি এসব শোষণ-নিপীড়ন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারবেন। জালিমদের কালো হাত থেকে কাউকে হয়ত বাঁচাতে পারবেন।

১০) পর্ন নারী নির্যাতনে উৎসাহিত করে

অনেক পারফর্মার বলেছে, পর্নে উগ্র ও অনিরাপদ যৌনকর্ম দেখানোর জন্য তাদেরকে ধর্ষণ করা হয়। প্রতিনিয়ত নির্যাতন চলে। জোরপূর্বক মাদকও দেওয়া হয়। পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ক্যামেরার পেছনের অন্ধকার জগত খুবই ভয়াবহ। পর্ন এসব নিপীড়নকে স্বাভাবিক প্রমাণ করতে চায়, কিন্তু সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ এটা মেনে নিতে পারেন না। পর্ন দেখা মানে হচ্ছে এমন একটা গোষ্ঠীকে সাহায্য করা যারা তাদের অভিনেত্রী ও দর্শক সবাইকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

১১) পর্ন আপনার আচরণকে উগ্র করে তোলে আপনার অজান্তে

সব পর্ন একরকম না হলেও বেশিরভাগ পর্নেই নারীদের মৌখিক ও শারীরিকভাবে অপমান করা হয়, গালাগালি করা হয়। আর দর্শক এর দ্বারা অবশ্যই প্রভাবিত হয়। লাঞ্ছিত না করা হলেও পর্নগুলোতে পুরুষকে দেখানো হয় শক্তিশালী রুপে, শিকারি হিসেবে- আর নারীকে দেখানো হয় দুর্বল, ভোগের বস্তু, শিকার হিসেবে। কাউকে লাঞ্ছিত বা আক্রমণ করা হলে সেও পাল্টা আক্রমণ করবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু ৯৫% পর্নে নারীরা আক্রমণের বিরোধিতা করা তো দূরে থাক, উল্টো ভুক্তভোগী নারীকে এক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় অথবা এসব উপভোগ করে দেখানো হয়। ফলে দর্শকদের মনে এ বিশ্বাস জন্মে যে, জবরদস্তি বা আক্রমণাত্মক আচরণ মেয়েরা পছন্দ করে, ছেলেরা চাইলেই মেয়েদের ওপর ঝাপিয়ে পড়তে পারে। ফলস্বরুপ এসব দর্শকরা নিজেদের স্ত্রীদের কষ্ট দিয়ে থাকে। আর এভাবে এদের সম্পর্কগুলোও বিষাদময় হয়ে উঠে। সমাজে বাড়তে থাকে ধর্ষণ ও খুনের পরিমাণ।

১২) সৃজনশীলতা বাড়াতে পর্ন ত্যাগ করুন

সৃজনশীল হবার জন্য আপনাকে জীবনের গভীরে ঢুকতে হবে। জীবনের প্রতিটি দিককে দেখে তার মর্ম উপলদ্ধি করতে হবে। কিন্তু পর্ন এমন সব সস্তা আর নোংরা ঘেরা কল্পনার জগতে আপনাকে বন্দি করে ফেলে যা আপনার ভিতরের আবেগ ও প্রেরণাকে নষ্ট করে দেয়। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনি আরও সুক্ষ্ম চিন্তার অধিকারী ও দূরদর্শী হতে পারবেন। ঠাণ্ডা মাথার মানুষে পরিণত হবেন।

১৩) আরও সৎ জীবনে অভ্যস্ত হোন

সব পর্ন আসক্তরা তাদের আসক্তির ব্যাপারে মিথ্যা বলে না। তবে তারা সত্য বলতে লজ্জা পায়। সত্যকে লুকিয়ে রাখা আবশ্যক মনে করে। তারা স্বীকার করুক বা না করুক এটা ভালোভাবেই তারা জানে তাদের সঙ্গী পর্ন আসক্তিকে খারাপ চোখে দেখে। দীর্ঘদিন ধরে একটা মিথ্যার সাথে জীবন কাটানোর ফলে এটাকে তারা একসময় স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেয়। আপনি যত বেশি মিথ্যার আশ্রয় নিবেন, সত্য স্বীকার করা তত বেশি কঠিন হয়ে যাবে। আপনার সমস্যার কথা খুলে বলুন, আশা করা যায় আপনি আগের থেকে অনেক হালকা অনুভব করবেন। 

১৪) সময় বাঁচান, কাজে লাগান

আপনি হয়ত খেয়াল করেছেন যে পর্ন আপনার অজস্র সময় নষ্ট করেছে। পর্ন দর্শক প্রতিদিন কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা সময় এসব ক্ষতিকর দৃশ্য দেখে নষ্ট করে। যারা ঘন ঘন পর্ন দেখে তারা জানে সময়ের সাথে সাথে তারা আরও কড়া ধাঁচের পর্ন আরও বেশি সময় ধরে দেখছে। ভেবে দেখুন, যদি আপনি দিনে মাত্র ১০ মিনিট সময় পর্ন দেখেন, তাহলে বছরে ৬০ ঘণ্টা সময় আপনি পর্ন দেখে নষ্ট করলেন। এই লম্বা সময়টা আপনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা ভালো কাজে লাগাতে পারতেন। সময় অনেক মূল্যবান। সময়কে কাজে লাগান। ভালো কাজ করুন। সময়কে এমন স্মৃতি দিয়ে ভরিয়ে তুলুন যেগুলো দীর্ঘস্থায়ী, এমন দৃশ্য দিয়ে নয় যেগুলো এক ক্লিকেই হারিয়ে যায়। 

১৫) মনের মানুষকে খুঁজে বের করুন

পর্নে যেভাবে মিলন দেখানো হয় তা ডাহা মিথ্যা। পর্ন দর্শক এ মিথ্যা আনন্দের জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে ওঠে আর সত্যিকারের সুখকে পেছনে ফেলে দেয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পুরুষদের বিয়ের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। কারণ, তারা ভাবছে পর্ন তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করছে। মিথ্যার এ ফাঁদ থেকে নিজেকে বাঁচান, আর আপনার মনের মানুষটিকে খুঁজে বের করুন। (বিয়ে করুন।) ভালোবাসা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

১৬) একজন উত্তম জীবনসঙ্গী হয়ে উঠুন

পর্ন শুধু আপনাকে নয়, আপনার জীবন সঙ্গীকেও প্রভাবিত করে। পর্ন আসক্তরা যেমন অনেক সমস্যায় ভোগে একইসাথে তাদের সঙ্গীও একা একা অনেক কষ্টকর অনুভূতির মধ্য দিয়ে যায়। যখন একজন স্ত্রী জানতে পারে তার স্বামী পর্ন আসক্ত; নিজের প্রয়োজন পূরণে সে তার স্ত্রীর কাছে না গিয়ে পর্নের দ্বারস্থ হয়, তখন ঐ নারী নিজেকে প্রতারিত ও অবহেলিত মনে করে। আপনি যদি আপনার ও আপনার স্ত্রীর মাঝে পর্নকে জায়গা না দেন তবে আপনাদের মাঝে মানসিক ও শারীরিক উভয়দিক থেকেই খুব মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠবে।

১৭) উত্তম বাবা-মা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলুন

পর্নের ক্ষতি শুধু স্বামী-স্ত্রীর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে না। পর্ন পরিবারের সদস্যদের বিচ্ছিন্ন করে, এমনকি পরিবার ভেঙ্গে যায়। তাছাড়া বর্তমানে শিশু-কিশোররা খুব অল্প বয়সে হার্ডকোর পর্ন দেখছে। এসব থেকে তারা যৌন শিক্ষা লাভ করছে, যা তাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। তারাও ভবিষ্যতে তাদের দাম্পত্য জীবনে এজন্য ভুগবে। আপনার সন্তানদের সাথে স্নেহ-ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলুন, তাদের খেয়াল রাখুন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পর্নমুক্ত জীবন উপহার দিন।

১৮) একজন উত্তম বন্ধুতে পরিণত হোন

আপনার পর্ন আসক্তি আপনাকে বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। সামাজিকতা থেকে অনেক দূরে চলে যাবেন আপনি। একাকিত্বসহ আরও নানান সমস্যা আপনাকে ঘিরে ধরবে। পর্নকে জীবন থেকে দূরে নিক্ষেপ করেই কেবল আপনি এর দাসত্ব এবং এ সম্পর্কিত সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাবেন।

১৯) মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখুন

পর্ন আসক্তি আপনার অনেক মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে। এছাড়া আপনাকে জীবনের আনন্দগুলো উপভোগ করতে দেয় না- যেমন- গল্পগুজব করা, কর্মঠ হওয়া ইত্যাদি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ঘন ঘন পর্ন দেখার ফলে উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতার মতো বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দেয় পর্ন ছেড়ে দেওয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ, এজন্য আপনাকে অবশ্যই কষ্ট করতে হবে। পরিশেষে আপনি একটি বড় বিজয় লাভ করবেন।

২০) নিজেকে আবার নিজের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনুন

নিয়মিত পর্ন দেখে এমন প্রতি পাঁচজনের একজন অনুভব করে, তারা তাদের কামনা-বাসনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এতে করে বাস্তব জীবনে তারা তাদের স্ত্রীদের দ্বারা উত্তেজিত হতে পারে না। ফলে মন ভুলে রাখতে তারা আরও বেশি পর্ন দেখে। তাদের জীবনে আরও জটিলতা বাড়তে থাকে। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনি কামনা-বাসনার গোলামী থেকে মুক্তি লাভ করবেন। আপনার যৌন চাহিদার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে, আর আপনার স্ত্রীর আরও কাছে যেতে পারবেন।

২১) কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসুন

পর্নের দৃশ্য ধারণের পূর্বে রিহার্সাল করা হয়। এরপর ধারণ করা দৃশ্যগুলো অনেক অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়। বিশেষ করে পারফর্মারদের দেহকে অত্যধিক সুন্দর হিসেবে দেখানো হয়। আর এসব দেখার ফলে দর্শক ও তার সঙ্গীর দৈহিক চাহিদা প্রভাবিত হয়। তাদের যৌন জীবন পশুর মত হয়ে ওঠে। পর্ন ছেড়ে দেওয়ার পরে আপনার ও আপনার স্ত্রীর মাঝে আরও মধুর সম্পর্ক তৈরি হবে, আপনাদের সত্যিকার অর্থে যেটা প্রয়োজন আপনারা সেটা চাইবেন, পর্নে যেটা দেখানো হবে সেসব নয়। আপনাদের মেলামেশাকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে তুলুন, পর্নের মতো অবাস্তব- জন্তু-জানোয়ার সদৃশ আচরণকে অনুসরণ নয়, পরিত্যাগ করুন।

২২) যৌনশক্তি বৃদ্ধি করুন

পর্ন দেখার সময় অনেকেই হস্তমৈথুন করে থাকে। কেউ এতে এতই আসক্ত হয়ে পড়ে যে দিনে কয়েকবার তারা হস্তমৈথুন করে। যে এরূপ করে সে তার দাম্পত্য জীবনে বিছানায় মেলামাশায় আনন্দ পায় না, অন্যভাবে বললে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়। আপনি নিশ্চিতভাবেই হস্তমৈথুন করার ফলে অনেক দুর্বলতা অনুভব করবেন, আপনার যৌন আকাঙ্ক্ষায়ও ঘাটতি দেখা দেবে। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনার এই শক্তি আপনি ধরে রাখতে পারবেন।

২৩) সামগ্রিক দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি করুন

পর্ন আপনার সময় ও স্বাভাবিক যৌনতাকে নষ্ট করে এটা তো স্পষ্টভাবেই বুঝা যায়। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন তা আপনাকে শারীরিকভাবে কতটা দুর্বল করে? দৈনন্দিন জীবনে যেরকম শারীরিক ও মানসিক শক্তির প্রয়োজন, পর্ন আপনার থেকে তা পুরোপুরি শুষে নিবে। এভাবে পর্ন আপনার কর্মক্ষমতা, আর জীবনীশক্তি একদম শেষ করে দিবে। পর্ন ছাড়ুন, আর আপনার নিজের ও অন্যদের উপকার হয় এমন কাজে নিয়োজিত হোন।

২৪) ফোকাস পুনর্জন করুন

কেউ কেউ দৈনন্দিন জীবনের দায়দায়িত্বে নিমজ্জিত হবার পর তা থেকে নিষ্কৃতি পাবার মাধ্যম হিসেবে পর্ন দেখে। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনি আরও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবেন এবং নিয়মমাফিক জীবনযাপন করতে পারবেন। এই বিপথ হতে বের হতে পারলে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কাজে ঠিকভাবে ফোকাস করতে পারবেন।

২৫) আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন

পর্ন থেকে মুক্তি পাবার জন্য আত্মবিশ্বাস একটি বড় হাতিয়ার। পর্ন আসক্তদের অনেকেই মূলত ভঙ্গুর হৃদয়ের হয়ে থাকে। তারা ভালোবাসা এবং আনন্দকে ঠিকমত উপলদ্ধি করতে পারেনা। পর্ন ছাড়তে পারার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসের অভাব সহ মনের আরও কিছু নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেক মানুষ পর্ন ছাড়তে পারে না। আর ক্রমাগত পর্ন দেখার ফলে মনের ওপর আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে যা এসব নেতিবাচক দিককে আরও বাড়িয়ে তোলে। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনার জীবনে যে সুখের অনুভূতি হবে তা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনার আত্মবিশ্বাস আরও বৃদ্ধি করবে।

২৬) আপনার সংসারকে রক্ষা করুন

বর্তমান বিশ্বে বিবাহ-বিচ্ছেদের একটি প্রধান কারণ হলো পর্ন আসক্তি। আপনি হয়ত বিয়ে করেছেন অথবা করবেন। এটা নিশ্চিত যে পর্ন আপনার বৈবাহিক জীবনকে বিষিয়ে তুলবে। পর্নের উপস্থিতিতে একটি সোনার সংসার, একটি মধুর সম্পর্ক ভেঙ্গে যেতে পারে। এরকম গুরুতর সমস্যার একটিই সমাধান- পর্ন চিরতরে ছেড়ে দেওয়া।

২৭) অর্থ বাঁচান

পর্ন বৈশ্বিকভাবে ৯৭ বিলিয়ন ডলার অর্থমূল্যের একটি ইন্ডাস্ট্রি যার ১২ বিলিয়ন ডলার আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আপনি পর্নের জন্য কত টাকা খরচ করেছেন? যদি খরচ নাও করে থাকেন, তাহলে এভাবে চিন্তা করুন- আপনি যে সময়গুলো পর্ন দেখে নষ্ট করেছেন সেগুলো দুইভাবে কাজে লাগাতে পারতেন। যেমন, ১) অর্থ উপার্জনে অথবা ২) কর্মক্ষেত্রে আরও ভালো করে সেখানে এতদিনে আরও বেশি উপার্জন করে। কথায় বলে, ‘Time is money’, সময়ই অর্থ। পর্ন দেখে সেই মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে আপনি নিজেকে কতটা নিষ্কর্মা হিসেবে গড়ে তুলছেন সেকথা ভেবে দেখেছেন?

২৮) স্বাভাবিক যৌনতা ধরে রাখুন

পর্ন যৌনমিলনের মধুরতা, পরস্পরের অন্তরঙ্গতাকে ধ্বংস করে দেয়। এটা ভালবাসতে শিখায় না বরং শুধু নিজের লালসা পূরণ করতে শিখায়। যখন আপনি পর্নে দেখানো সেসব দৃশ্য দিয়ে মন-মগজকে ভরে ফেলেন, তখন তা আপনার থেকে স্বাভাবিকভাবে যৌন উত্তেজনা পাবার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়, আপনার যৌনতাকেই বিকৃত করে তোলে। পর্ন ছাড়ার ফলে আপনার মস্তিষ্ক আবার স্বাভাবিকভাবে কাজ করবে এবং আপনার যৌন জীবনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

২৯) আগ্রহগুলোকে রক্ষা করুন

যে জিনিসগুলো আপনাকে আগে আনন্দ দিত পর্ন দেখতে শুরু করার পর সেগুলো আর আগের মতো ভালো লাগবে না। পর্ন আপনার ব্রেইনকে যতটা নাড়া দেয় বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া বা খেলাধুলা করা- এই কাজগুলো ততটা নাড়া দেয় না। পর্ন আপনার মাঝে যে চরম উত্তেজনা তৈরি করবে, তার ফলে আপানার অন্যকিছু আর ভালো লাগবে না। কিন্তু চিন্তার কোনো কারণ নেই। যত দ্রুত আপনি পর্ন ছাড়তে পারবেন তত দ্রুত আপনি আপনার ভালোলাগার কাজগুলোতে মনোনিবেশ করতে সক্ষম হবেন।

৩০) যৌন আসক্তি প্রতিরোধ করুন

আসক্তি সে যা কিছুরই হোক কখনোই ভালো কিছু নয়। পর্ন আপনার মাঝে প্রচণ্ড যৌনক্ষুধা জাগিয়ে তুলবে যা আপনাকে কখনও তৃপ্তি দিবে না। এই প্রক্রিয়ায় পর্ন দর্শক এক ঘোরের মাঝে আটকে যায় যা তাকে মানবসমাজে স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপন করতে দেয় না। বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের ব্যাপারে সে খুবই বিকৃত চিন্তাভাবনা লালন করতে থাকে। এমনকি সে এতটাই নিচে নেমে যেতে পারে যে সে পতিতালয়ে গমন করতে পারে। জীবনে সামনে এগিয়ে যেতে এবং পদস্খলন হতে নিজেকে বাঁচাতে পর্নকে আপনার জীবন থেকে অবশ্যই দূর করতে হবে।

৩১) স্ক্রিনের সাথে আবদ্ধ হবেন না

অক্সিটোসিনকে বলা হয় ভালোবাসার হরমোন। কারণ, এই হরমোন দুজন মানুষের মাঝে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। যৌন মিলনের সময়ও এই হরমোন নিঃসৃত হয়। আবার পর্ন দেখার সময়ও এই হরমোন নিঃসৃত হয় যা আপনার মাঝে পর্নের প্রতি টান তৈরি করে। পর্ন থেকে দূরে থাকুন। প্রকৃত ভালোবাসাকে কাছে টানুন, গ্রহন করুন। নকলকে বর্জন করুন।

৩২) উদ্বেগ প্রতিরোধ করুন

আগেই বলা হয়েছে, পর্ন দেখার কারণে মানসিক উদ্বেগ-দুশ্চিন্তার মতো সমস্যা হতে পারে। যখন আসক্তরা পর্নের কথা চিন্তা না করে থাকতে পারে না তখন তা গুরুতর উদ্বেগের সৃষ্টি করে। বলার অপেক্ষা রাখেনা এই উদ্বেগ বেডরুমেও প্রভাব বিস্তার করে। ফলে যৌন অক্ষমতার (erectile dysfunction) মতো সমস্যা দেখা দেয়। মানসিক উদ্বেগ খুবই পীড়াদায়ক। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততায় এমনিতেই কত মানসিক চাপে ভুগতে হয়। কি দরকার এর সাথে আরও কিছু যোগ করার?

৩৩) বিষণ্ণতা প্রতিরোধ করুন

আমরা জানি পর্ন দেখার ফলে বিষণ্ণতা বোধ হয়, আর মনের অবস্থা ক্রমেই আরও খারাপ হতে থাকে। অতি ক্ষণস্থায়ী একটি বিনোদন কারও আকাশে কালো অন্ধকার ডেকে আনে। পর্ন আপনার জীবনে শুধুই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জীবনকে স্বাধীন আর আনন্দময় করে তোলার উপায় হল পর্ন ছেড়ে দেয়া।

৩৪) স্বাধীন জীবন লাভ করুন

খারাপ কাজের কিন্তু মনের ওপর একটা খারাপ প্রভাব পড়ে। পর্ন দেখার ফলে আপনার মনে লজ্জার অনুভূতি হয়, নিজের কাছে খারাপ লাগে। পর্নের দৃশ্যগুলো খুবই নোংরা লাগার পরও আসক্ত দর্শক তা দেখা ছাড়তে পারে না। এই কষ্টকর অনুভূতি আরও পর্ন দেখতে প্ররোচিত করে। এভাবে একজন ব্যাক্তিকে পর্ন তার দাসত্ব করায় আর তাকে গ্রাস করতে থাকে। আপনি অবশ্যই নিজেকে মুক্ত, স্বাধীন অনুভব করবেন যখন দাসত্বের এই শিকল আপনি ভাঙতে পারবেন। 

৩৫) কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করুন

এরচেয়ে বড় প্রেরণাদানকারী কথা আর কি হতে পারে বলুন। আপনি কি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে চান না? জীবনে সফলতা চান না? বড় কিছু করার স্বপ্ন কি আপনি দেখেন না? রেড্ডিট কমিউনিটি ‘নো ফ্যাপ’ নামে একটি জরিপ চালিয়ে জানতে পারে যারা পর্ন ছাড়তে পেরেছিলেন তাদের শতকরা ৬৭ জনের শারীরিক শক্তি এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিলো। আর কিসের জন্য অপেক্ষা করছেন? আজই এই পরীক্ষায় অবতরণ করুন।

৩৬) কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করুন

পর্ন যেমন মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে তেমনি একইসাথে তা দর্শককে বিষণ্ণতা এবং দুশ্চিন্তায় নিপতিত করে। এরকম কষ্টকর পরিস্থিতিতে পড়ে তারা তাদের কাজকর্ম মোটেই ঠিকমত করতে পারে না। এমন ঘটনাও ঘটেছে যেখানে কাজের সময় পর্ন দেখতে গিয়ে ধরা পড়ার পর তাদের চাকরি হারানোর অবস্থা হয়েছে। পর্নের মতো সর্বনাশা বস্তুকে কখনই আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে ধ্বংস করতে দিবেন না।

৩৭) যৌনরোগ(STD) প্রতিরোধ করুন

বারংবার গবেষণায় জানতে পারা গেছে, বেশি পর্ন দেখা অনেকে যিনা-ব্যাভিচারে জড়িয়ে পড়ে। এক বা একাধিক মানুষের সাথে তারা যৌনসংগম করে। অনেক ভয়ানক ও ক্ষতিকর যৌন কর্মে লিপ্ত হয় যা তাদের মারাত্মক সব যৌনরোগে আক্রান্ত করে।

৩৮) শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান

পর্ন ছাড়ার মাধ্যমে আপনি একটি শোষণমূলক ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন। নিজেকে এবং পুরো সমাজকে বদলানোর দায়িত্ব কাধে তুলে নিচ্ছেন। ব্যাপারটা সত্যিই অসাধারণ। তাই বদলে যান, বদলে দিন।

৩৯) পৃথিবীকে আরও উত্তম করে তুলুন

পর্ন সাইটগুলোর লিংকে একেকটি ক্লিক এই ইন্ড্রাস্টির লোভী গোষ্ঠীকে প্রতিনিয়ত লাভবান করছে। এসব সাইটে যাওয়ার ফলে পর্নের চাহিদাকে ক্রমেই বাড়িছে। ফলে পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি সমাজে আরও বিস্তার লাভ করছে। এই অন্ধকারকে ছড়াতে দেওয়া যায় না। একে রুখতে হবে। কারণ, এই ইন্ডাস্ট্রি মানুষের জীবন নষ্ট করে এবং যৌন শোষণ-নিপীড়নকে সমর্থন করে। তাদের ক্ষতি আপনাকে সেভাবে স্পর্শ না করলেও আপনার আশেপাশের অনেককেই তা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিশেষ করে এই ইন্ডাস্ট্রির অসংখ্য জিম্মি যাদেরকে এসব কাজে বাধ্য করা হয় তাদের জীবনগুলো তছনছ হয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ নিন। পৃথিবীকে রক্ষা করুন।

৪০) একাকীত্ব কাটিয়ে তুলুন

পর্ন একজন ব্যক্তির একাকী সময়ে তাকে খানিকটা সঙ্গ দিয়ে তার একাকীত্বকে আরও শোচনীয় অবস্থায় নিয়ে যায়। পর্ন একজন দর্শককে নগদ পরিতৃপ্তি, অসীম উত্তেজনা এবং খুব সহজে যৌন প্রয়োজন পূরণের লোভ দেখায়। কিন্তু পরিশেষে তাকে প্রতারিত করে। তিনটির কোনটিই তাকে দেয় না। বরং, তার থেকে কেড়ে নেয়। তাকে নিঃস্ব করে ছাড়ে। 

৪১) সহিংসতা স্বাভাবিক হওয়াকে বাধা দিন

সহিংসতা কখনোই স্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু ১০-১১ বছরের কোমলমতি শিশুরাও এখন হার্ডকোর পর্নের নিকৃষ্ট দৃশ্য দেখে এসব কাজ স্বাভাবিক ভাবছে। ভেবে দেখুন তো এটা আমাদের মূল্যবোধকে কোথায় নামিয়ে দিচ্ছে। পর্ন আমাদের সম্পর্কগুলো ভঙ্গুর করে তুলছে। সকল ধরণের পর্ন ছাড়তে পারলে সহিংস ও আক্রমণাত্মক আচরণকে ভালোবাসা হিসেবে স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া বন্ধ হবে। আমাদের সমাজ এর ক্ষতির হাতথেকে রক্ষা পাবে।

৪২) মানুষকে সম্মান দিতে শিখুন

কখনও কি এমন হয়েছে যে কেউ ঘুম থেকে উঠে বলল, “আজকে আমি বের হয়ে সবার সাথে সব সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলব। নিজেকে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলব। আর সবাইকে অবহেলা করব, কষ্ট দিব?” এরকম কেউ করে না। কিন্তু কিছু জরিপে উঠে এসেছে পর্ন দেখার ফলে ঠিক এরকমটাই হতে পারে। পর্ন ছাড়ুন, আপনার প্রিয়জনদের পাশে থাকুন। এভাবে আপনি নিজেকে এবং অন্যদের সম্মান রক্ষা করবেন।

৪৩) বস্তুবাদের প্রসারকে বাধা দিন

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ কেন্ট-এর একটি জরিপে দেখা গেছে মেয়েদেরকে ভোগের বস্তু হিসেবে দেখা আর তাদের প্রতি আক্রমণাত্মক বা সহিংস হয়ে ওঠা পরস্পর সরাসরি সম্পর্কিত। আমরা পর্নের বিরুদ্ধে এজন্যই লড়াই করি। আমরা বিশ্বাস করি, মানুষ শুধু একটা দেহ নয়, যা চাইলেই যেভাবে খুশি ব্যবহার করা যায়, আবার চাইলেই ফেলে দেয়া যায়। পর্ন ক্ষতিকর তা গবেষণায় প্রমাণিত। কিছু মানুষ পর্নকে যতই স্বাভাবিক এবং ভালো প্রমাণ করতে চেষ্টা করুক না কেন, তাদেরকে ভুল প্রমাণ করার জন্য অনেক প্রমাণ আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন।

৪৪) মিথ্যা যৌনতাকে ছুড়ে ফেলুন

এমন জায়গা থেকে যৌনতা শিখতে যাবেন না যেখানে যৌন তৃপ্তির মিথ্যা অভিনয় দেখিয়ে টাকা কামানো হয়। আর কিছু নাহয় নাই বললাম।

৪৫) যুবসমাজকে ও শিশু-কিশোরদের রক্ষা করুন

পর্নে শেখায়, বেশি বয়সী কমবয়সীর ওপর এবং শক্তিবান দুর্বলের ওপর ক্ষমতাবান। পর্নকে দূর করতে পারলে শিশুকিশোরদের যৌন নির্যাতনের হাত থেকে অনেকটা রক্ষা করা যাবে। এটা নিশ্চয়ই অনেক বড় ব্যাপার। পর্ন ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে শিশু পর্ন, কিশোর পর্ন এর চাহিদাও কমিয়ে যাচ্ছে। এটা পর্নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভূমিকা রাখবে।

৪৬) বাস্তব মানবদেহ নিখুঁত নয়, তবে অতুলনীয় সুন্দর

পর্নে ফটোশপ বা এ জাতীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করে তাতে অভিনয় করা মানুষদের দেহগুলোকে চোখ ধাঁধানো, আকর্ষণীয় এবং নিখুঁত রূপে দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হয় না। একজন স্বাভাবিক মানুষের দেহ এমনিই সুন্দর, অতুলনীয়। পর্ন মুক্ত একটি পৃথিবী হলো এমন যেখানে কৃত্রিম সৌন্দর্য নেই, যেখানে মানুষকে কদর করা হয়, সম্মান করা হয়, তুলনা নয়। আমরা এমনই একটি পৃথিবীতে থাকেতে চাই। আপনিও কি তাই চান না?

৪৭) অসুস্থ সম্পর্ককে না বলুন

স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গতা অনেক বেশি কিছু দেয়। স্বামী-স্ত্রী মেলেমেশা করে যে আনন্দ পায় সেটা কখনই পর্ন দেখে পাওয়া সম্ভব নয়। বরং পর্ন একজন মানুষকে অপর একজনের প্রতি আক্রমণাত্মক, উগ্র করে তোলে। এই উগ্রতা শুধু বিছানায় নয়- মনে ও সমগ্র জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। সহবাস পরস্পরের অধিকার পূরণের জন্য করা হয়, শুধু নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য নয়। পর্ন ভালোবাসা শেখায় না, শুধু উগ্রতা আর অসভ্যতা শেখায়।

৪৮) সম্পর্ক থেকে বাস্তবতা বিবর্জিত চাহিদা ত্যাগ করুন

একটা সম্পর্ক গড়ে তোলা পরিশ্রমের কাজ। সম্পর্কগুলো কখনোই নিখুঁত হয় না। একইভাবে শারীরিক সম্পর্কও প্রত্যেকবার নিখুঁত ও সহজ হবে না। ভালোবাসা একটা মিশ্র অনুভূতি- আর এখানেই এর সৌন্দর্য- এটা বাস্তব ব্যাপার, কোনো রূপালী পর্দার মিথ্যা অভিনয় নয়। পর্নের সাথে বাস্তব সম্পর্কগুলোর পার্থক্যটা এখানেই। পর্ন এর অভিনেতার পারফর্ম্যান্সের বিচারে মাপা হয়, এখানে মানসিক যোগাযোগের কোনো ধার ধারা হয় না। বাস্তব ভালোবাসার সোন্দর্যই হলো- এর বাস্তবতা- বাস্তব মানসিক-শারীরিক-পারিবারিক অনুভূতির এক মিশ্র আনন্দ।

৪৯) সত্য ভালোবাসায় বিশ্বাস করুন

পর্ন যখন একজন মানুষের মন-মস্তিষ্ককে গ্রাস করে ফেলে, তখন সে পর্নে যা দেখে সেটাই তার কাছে সবকিছু মনে হয়। সে তখন ভালোবাসা বলতে কিছুতে বিশ্বাস করে না। তাদের কাছে যৌনতাই সবকিছু মনে হয়। সে মন থেকে কাউকে ভালবাসতে পারে না। পর্নের এসব মিথ্যাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেবার জন্য আপনাকে আজই পর্ন ছাড়তে হবে।

৫০) সত্য ভালোবাসাকে বেছে নিন

যেসব কারণে আপনার পর্ন ছাড়া উচিত এটি সেগুলোর মাঝে খুব গুরুত্বপূর্ণ। পর্ন আপনার ও আপনার জীবনসঙ্গীর মাঝে এসে দাড়িয়েছে। আপনাদের পরস্পরে প্রতি টান, ভালোবাসাকে এটা প্রভাবিত করে। পর্ন আপনাদের বিছানার অন্তরঙ্গতা একদম বিকৃত করে তুলবে। আমাদের কাছে এরকম অনেকের অভিজ্ঞতা এসেছে যেখানে পর্নের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে টানাপড়ন হয়েছে এবং তাদের মাঝ থেকে একসময় সুখ, আনন্দ- এই জিনিসগুলো হারিয়ে গিয়েছে। এভাবে অনেক সম্পর্ক ভেঙ্গেও যাচ্ছে। আমরা সবাই ভালোবাসা চাই। আমাদের জীবনে ভালোবাসা প্রয়োজন। ভালোবাসা জীবনকে খুবই উপভোগ্য করে তোলে, আনন্দময় করে তোলে। অন্তত আপনার সংসারটি রক্ষা করার জন্য পর্ন ছাড়ুন। পর্ন ভালোবাসার মৃত্যু ঘটায়। সেটা নিশ্চয় হতে দেওয়া যায় না। তাই আপনার জীবনে ভালোবাসাকে স্থান দিন, পর্নকে নয়। 

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

বিভিন্ন ড্রাগ অর্থাৎ মাদকদ্রব্য ও পর্ণের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়না। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পর্ণ দেখার ফলে আমাদের মস্তিষ্কে এক ধরনের আনন্দদানকারী রাসায়নিক বা কেমিক্যাল পদার্থের উৎপন্ন হয়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল এই একই ধরণের কেমিক্যাল ড্রাগ বা বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ব্যবহারকারীদের মস্তিষ্কেও উৎপন্ন হয়। পর্ণ বা ড্রাগে আসক্ত মস্তিষ্ক নতুন করে নিউরাল সার্কিট (Neural Circuit) তৈরি করা শুরু করে।

এখানে একটি উল্লেখ্য যে, নেশার জন্য ড্রাগ বা বিভিন্ন মাদকদ্রব্যগুলির উপর সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকার ফলে আইনের চোখে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্নভাবে কাঠখড় পুড়িয়ে গোপনে সংগ্রহ করতে হয়, কিন্তু পর্নগ্রাফি ডাউনলোড করা হয় একেবারেই বিনামূল্যে, ফ্রিতে। ড্রাগের নেশা খুব দ্রুত প্রবল হতে থাকে, অন্যদিকে পর্নের নেশাটি নির্ভর করে ইন্টারনেটের দ্রুততা বা স্পিড কিরকম তার উপর। তবে এদের মধ্যে একটাই মিল সেটা হল মস্তিষ্কের ভেতর। দুটোতেই মস্তিষ্কের উপর মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে।

যাঁরা নিউরোলজিষ্ট তাঁরা ভালভাবেই জানেন যে আমাদের মস্তিষ্কের গভীরে রিওয়ার্ড প্যাথওয়ে (reward pathway) বা পুরষ্কার তৈরীর পথ বলে একটি ব্যাপার থাকে। এই রিওয়ার্ড প্যাথওয়ের কাজটা হল, আপনাকে ঠিক সেভাবে পুরস্কৃত করে ঠিক যেভাবে সে আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সহজ ভাবে বলতে গেলে, মস্তিষ্কের এই সার্কিটটি আপনাকে আনন্দ দেয় যখন আপনি আপনার জীবনকে অগ্রসর করার মতো কোন কিছু করেন। সুস্বাদু কোন খাবার খাওয়ার সময় আমাদের মস্তিষ্কে এমনটা ঘটে থাকে তখন আমাদের মস্তিষ্কে কিছু রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। এদের মধ্যে সাধারণত যে রাসায়নিক পদার্থটি নির্গত হয় তার নাম হচ্ছে ডোপামিন, কিন্তু অক্সিটোসিনের মতো অন্য রাসায়নিক পদার্থটি নির্গত হয়।

এইসব রাসায়নিক পদার্থগুলি ব্যাপক হারে হারে উৎপন্ন হয়ে থাকে। অর্থাৎ, স্বস্তি পাওয়া যায় এমন যেকোনো কিছুতেই এইসব রাসায়নিক পদার্থগুলি উৎপন্ন হতে থাকবে। মহান সৃষ্টিকর্তা এভাবেই এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন। এদের কাজ আমাদের পরিতৃপ্ত হয় এমন কিছুকে অনুভব করানো, বিভিন্ন মানুষদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সাহায্য করা এবং আনন্দদায়ক কোনো কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া। তবে এর একটা সমস্যাও আছে তা হল, এই রিওয়ার্ড প্যাথওয়ে হাইজ্যাকড্ (hijacked) হবার সম্ভাবনাও রয়েছে।

নেশা জাতীয় দ্রব্যগুলো সেবনের সময় অধিক পরিমানে ডোপামিন নির্গত করতে চায়। ফলে এইসব ডোপামিনগুলি মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড প্যাথওয়েতে আঘাত হানে। ফলে নেশাখোরেরা মাতাল হয়ে উন্মাদের মত আচরণ করে। আশ্চর্যের বিষয় হল পর্নগ্রাফীও ঠিক সেরকম আচরণটিও করে থাকে পর্ণ এডিক্টদের উপর।

একজন মাদকদ্রব্য ব্যবহারকারী বা পর্নগ্রাফি এডিক্ট যত বেশী মাদকদ্রব্য সেবন করে বা পর্ন দেখে, তাদের মস্তিষ্কে এই প্যাথওয়েগুলো তত বেশি উৎপন্ন হয়। মাদক বা পর্ন ব্যবহার আরও সহজতর করতে থাকে। যার ফলে উক্ত মানুষগুলো বার বার মাদক সেবন করতে চায় কিংবা পর্ন দেখার জন্য তাদের মন ছটফট করতে থাকে।

পর্ন ব্যবহারকারীরা কিন্তু সহজে তাদের মস্তিষ্কের এইসব পরিবর্তনগুলো বুঝতে পারে না। কেননা তাদের মস্তিষ্ক থেকে এতটাই ডেপামিন উৎপন্ন যে তারা অতিরিক্ত ডোপামিনের বোঝা থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য মস্তিষ্ক কিছু পরিমান ডোপামিন রিসেপ্টর (dopamine receptor) কমিয়ে ফেলে। রিসেপ্টর কম থাকার ফলে ডোপামিনের পরিমান কমে গেছে বলে মনে হয়। তাই একই রকমের পর্ন ব্যবহারকারী আগের মতো আর উত্তেজনা দেয়না। ফলে অনেক পর্ন ব্যবহারকারীরা আরো অধিক পরিমাণে পর্ন সার্চ করতে থাকে, আরো এক্সট্রিম লেবেলের পর্নের দিকে তারা ঝুঁকে পড়ে। তাদের একটাই উদ্দেশ্য তা হল অতিরিক্ত পরিমাণে ডোপামিন উৎপাদনের মাধ্যমে আগের উত্তেজনা ফিরে পাওয়া, আধিক পরিমাণে উত্তেজনা সৃষ্টি করা। যেমনটা ড্রাগ সেবনকারীরা সময়ে ড্রাগ না পেলে পাগলের মত আচরণ করে অনুরুপ পর্ন এডিক্টরাও আরো এক্সট্রিম লেবেলের পর্ন দেখতে না পেলে তারাও পাগলের মত আচরণ করে থাকে। আইনজীবী ওয়েনডি সেলজার ইয়েল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের একজন সহকর্মী, তিনি বলেন,

“পর্নে আসক্ত ব্যক্তির চাহিদা আরও অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে থাকে। (ইন্টারনেটের) বিনামূল্যের পর্নগুলো তাদের জন্য যথেষ্ট চাহিদার খোরাক জোগায় জোগায় না, বরং তাদের ক্ষুধা বৃদ্ধি করে দেয়। বিনামূল্যের পর্নগুলো দেখতে দেখতে তারা পেইড পর্নের দিকে ঝুকে পড়ে।”

এর জন্য দায়ী ইন্টারনেটের সেইসব ওয়েবসাইট এবং সেই সকল ওয়েব ব্রাউজারগুলো যাদের গর্ভে পর্ন বিস্তার লাভ করছে এবং ডোপামিনের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের তরুণ সমাজকে। ইউ.এস. সিনেট কমিটিকে, ডঃ জেফারি স্যাটিনোভার পর্নের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বলেছিলেন,

“আমরা যেন নতুন এক হিরোইনের উদ্ভব ঘটিয়েছি.. যা নিজের ঘরে সম্পূর্ণ প্রাইভেসির মধ্যে ব্যবহারযোগ্য এবং চোখের মাধ্যমে সরাসরি চলে যায় মস্তিষ্কে।”

এতক্ষণ আলোচনা করা হল পর্নগ্রাফি কিভাবে মস্তিষ্কে ড্রাগের মত প্রভাব বিস্তার করে। এবার আলোচনা করব পর্ণ কিভাবে মানুষের মস্তিষ্কের গঠনকে পরিবর্তন করে ফেলে। আগেই বলা হয়েছে যে, আসক্তি সৃষ্টকারী ড্রাগের মতো পর্নও আমাদের মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিনের উৎপন্ন করে। পর্ন যতবার দেখা হয় ঠিক ততবার আমাদের মস্তিষ্কে রাসায়নিক পদার্থ বয়ে যেতে থাকে। তৈরি হতে থাকে নতুন নতুন রিওয়ার্ড প্যাথওয়ে (reward pathway) যা একজন পর্ন ব্যবহারকারীর মস্তিষ্কের গঠনকে একেবারে পরিবর্তন করে ফেলে। ফলে পর্নের প্রতি মারাত্মক রকমের আসক্তি সৃষ্টি হয়। শুনতে আশ্চর্য লাগলে এটাই সত্যি যে পর্ন আমাদের মস্তিষ্কের গঠন পরিবর্তন করে দেয়। স্নায়ুবিজ্ঞানীদের মুখে শোনা যায়: “Neurons that fire together, wire together”। অনেকে এটা ভেবে অবাক হবেন যে নিউরোনে আবার আগুন ধরে কীভাবে? নিউরন হলো ব্রেইনের একটি কোষ (cell), মানুষ যখন কিছু দেখে, শোনে বা কোনো ধরনের ঘ্রাণ পায় ঠিক তখনি মস্তিষ্কের এই কোষগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে, কিছু রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে। যেমন যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রী বা যে কোন নারীকে স্পর্শ করে তখন তার মস্তিষ্ক থেকে যে রাসায়নিক পদার্থটি নির্গত সেটি হচ্ছে অক্সিটোসিন। এটি মানুষের সাথে সামাজিক সম্পর্ক তৈরিতে সহায়তা করে।

ড্রাগের মতো পর্ন আমাদের মস্তিষ্ককে ডোপামিনে ডুবিয়ে দেয়। পর্নগ্রাফি দেখার ফলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত পরিমাণে ডোপামিন উৎপন্ন হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ডোপামিন নির্গত হওয়ার ফলে তা থেকে রক্ষা পাবার জন্য মস্তিষ্ক কিছু পরিমাণ ডোপামিন রিসেপ্টর কমিয়ে ফেলে। এক্ষেত্রে মস্তিষ্ক নিউরনের শেষ প্রান্তে থাকা ছোট কানের মতো অংশকে ব্যবহার করে থাকে। এটি ডোপামিনের পরিমাণ নির্ণয় করে। এর আগে আমরা জেনেছি যে, যখন মস্তিষ্কে রিসেপ্টর কম থাকে, তখন পর্ন দেখার ফলে ডোপামিন উৎপন্ন হতে থাকলেও, পর্ন আসক্ত ব্যক্তিরা এর প্রভাব খুব একটা বুঝতে পারে না। তাই একই লেবেলের পর্ন আর আগের মতো তাদের মনে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারেনা। ফলে অনেক পর্ন ব্যবহারকারীরা আরো অধিক পরিমাণে পর্ন সার্চ করতে থাকে, তাদের আরো এক্সট্রিম লেবেলের পর্ন দেখার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাদের একটাই উদ্দেশ্য অতিরিক্ত পরিমাণে ডোপামিন উৎপাদনের মাধ্যমে আগের উত্তেজনা ফিরে পাওয়া। আধিক পরিমাণে উত্তেজনা সৃষ্টি করা। যেমনটা ড্রাগ সেবনকারীরা সময়ে ড্রাগ না পেলে পাগলের মত আচরণ করে অনুরুপ পর্ণ এডিক্টরাও আরো এক্সট্রিম লেবেলের পর্ণ দেখতে না পেলে পাগলের মত আচরণ করে থাকে। পর্ন ছাড়া টিকে থাকাটা তাদের কাছে অসম্ভব হয়ে পড়ে। পর্নগ্রাফি এতটাই আসক্তিকর। শুধু তাই নয় একজন পর্ন ব্যবহারকারীর জীবনে নিত্য নতুন সমস্যা দেখা দেয়, কারণ, পর্ন আসক্তি মস্তিষ্কের ভালো এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবার অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে ফলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।

ভালোলাগা পদ্ধতি বা liking system হল মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সেন্টারের একটি ছোট ভাগ বা অংশ। এটা আনন্দময় মুহূর্তের অনুভূতি দেয় যখন মানুষ কোন কাজে সফল হয় তখন আনন্দ উপভোগ করে, দুঃখজনক বা ক্ষতিকর কোন কিছু ঘটলেও এ পদ্ধতিটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। যেমন, নেশাজাতীয় কোন কিছু সেবন করা বা পর্ন দেখা প্রভৃতি। ফলে প্রথমদিকে যে কাজগুলো শুধু ভালো লাগতো পরবর্তীকালে আসক্তিতে পর্যবসিত হয়।

যখন কোনো কিছু আপনার মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সেন্টারকে সক্রিয় করে তোলে আর মানুষ ভালোলাগার আধিক্য অনুভুতি লাভ করে, তখন মস্তিষ্কে ‘CREB’ নামক একটি ক্যামিকেল পদার্থ নিঃসৃত করতে শুরু করে। CREB আপনার রিওয়ার্ড সিস্টেমে কিছু বাধার সৃষ্টি করে। এটা সাধারণত আনন্দকে বিলীন করে দেয়, আপনাকে তৃপ্ত করে তোলে আর জীবনে সামনে অগ্রসর হতে প্রস্তুত করে তোলে। তবে liking system  সময়ে সময়ে অধিক সক্রিয় হয়ে উঠলে (যা ড্রাগজাতীয় দ্রব্য ও পর্নের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে) CREB লেভেল বেড়ে যায় যা মানুষের আনন্দ-উপভোগকে অসাড় করে দিতে সক্ষম। গবেষকরা বলেন, CREB এর কারণে আসক্তরা এইসব আসক্তির কাজগুলিকে সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করে। অর্থাৎ অধিক পরিমাণে আনন্দ লাভ করার জন্য  একই কাজ বার বার করতে থাকে। এমনকি মস্তিষ্কে CREB এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার জন্য মানুষকে সবধরনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে সক্ষম। এজন্যই একজন আসক্ত ব্যক্তি উদাসীনতা ও বিভিন্ন ধরণের মানসিক ডিপ্রেসন অনুভব করে।

ডেল্টাফসবি নামক প্রোটিনটি শক্তিশালী ট্রিগারের মত কাজ করে। এরকম ট্রিগার প্রতিটি আসক্তির মধ্যে রয়েছে। একজন ধূমপানকারীর কাছে ট্রিগার হতে পারে বিড়ি বা সিগারেটের ঘ্রাণ, একজন মদ্যপের জন্য ট্রিগার হতে পারে মদের বোতল বা মদখোর সঙ্গীর ডাক। অনুরুপ একজন একইভাবে পর্ন আসক্তির কাছে ট্রিগার হতে পারে পর্ন দৃশ্য মনে পড়ে যাওয়া অথবা কোনো নির্জন জায়গা বা পরিবেশ অথবা এমন কোনো সময যখন সে নির্জনে একাকী ইন্টারনেট ব্রাউজিং করতে পারে। একজন পর্নগ্রাফি আসক্ত ব্যক্তির কাছে আশেপাশের যে কোন কিছুই ট্রিগার হতে পারে যা তাকে পুনরায় আসক্তির কাছে নিয়ে যেতে পারে। ক্রমে মস্তিষ্কে পর্নের পাথওয়ে এতই সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে যার দ্বারা আসক্ত ব্যক্তি আশেপাশের যেকোনো কিছু মাধ্যমেই ট্রিগারড হতে পারে। তারা আগের মতো আনন্দ লাভের জন্য আরও বেশি সময় ধরে পর্ন দেখে, আরও এক্সট্রিম লেবেলের পর্ন দেখতে থাকে। অনেক পর্ন ব্যবহারকারীরা পর্নের আগ্রাসী ও সহিংস দৃশ্যগুলোকে নিয়ে কল্পনায় মেতে থাকে, এমনকি বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার জন্য মেতে ওঠে। এভাবে পর্ন ব্যবহারকারীর রুচি আরও নিচে নামতে থাকে আর পর্নোগ্রাফাররা গ্রাহক ধরে রাখার জন্য আরও কুরুচিকর ভিডিও বানাতে থাকে। চলতে থাকে ইন্টারনেটের অন্ধকার জগতের রহস্যময় ব্যবসা। পুঁজিপতিরা আরও পুঁজির মালিক হয়ে ওঠে আর পর্ন আসক্ত ব্যক্তির জীবনে নেমে আসে অন্ধকার ও হতাশা।

প্রায় ১০ বছরেরও অধিক সময় ধরে করা কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ড্রাগ আসক্তি মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবকে সংকীর্ণ করে ফেলে। ফ্রন্টাল লোব মস্তিষ্কের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। এটি বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা যায়, শুধুমাত্র ড্রাগ আসক্তিই মস্তিষ্কের এই অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, যারা বেশি পর্ন দেখে, তাদের মস্তিষ্কের ক্ষতিও তত মারাত্মক হয়, এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে সুখবর হচ্ছে- এই কু-অভ্যাস পরিত্যাগের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মস্তিষ্ককে আগের মত সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাই সঠিক সময়ে যদি পর্ন আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসা না যায় তাহলে এই পর্নের মায়াজাল থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।

অনেকের ধারণা যে পর্নগ্রাফি র প্রতি আসক্তি বলে কিছু নেই। তাঁরা মনে করেন, কোনো কিছু শরীরে প্রবেশ না করালে আসক্তি সৃষ্টি হয় না। অর্থাৎ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের মত শরীরে প্রবেশ না করে আসক্তি হয় না। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান অন্য কথা বলে। মানুষের এই প্রাচীন ধারণাকে বিজ্ঞান একেবারে পরিবর্তন করে দিয়েছে। বর্তমান বিজ্ঞানীদের মতে অতিরিক্ত পর্ন ব্যবহারের ফলে আসক্তির সৃষ্টি হয়। US National Institute on Drug Abuse (NIDA) এর ডিরেক্টর ডঃ নরা ভলকোর এর বক্তব্য পর্ন আসক্তি সত্য। শুধু তাই নয় তিনি NIDA এর নাম এমনভাবে রাখার পরামর্শ দেন বলেন যাতে নাম দেখলেই বোঝা যায় যে, “পর্নোগ্রাফি, জুয়া, অতিরিক্ত ভক্ষণ আসক্তির কাতারে পড়ে”।

এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, ইন্টারনেটে যা সার্ফিং হয় তার সবকিছুর মধ্যে পর্নের প্রতি আসক্ত হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে অধিক। আমাদের মস্তিষ্কে “রিওয়ার্ড সেন্টার” নামক একটা স্থান আছে। এটি জীবন ধারণের জন্য যেসব কাজের প্রয়োজন সেইসব কাজের উপর জোর দেয়। আমরা যখন আমাদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করি তখন “রিওয়ার্ড সেন্টার” আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ তৈরি করে। বিজ্ঞানীদের মতে পর্ন হচ্ছে সেক্সচুয়াল জাংক ফুডের মত, যখন কেউ এটা দেখতে থাকে, তখন তাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন উৎপন্ন হতে হতে উপচে পড়ার উপক্রম হয়। অতিরিক্ত পরিমাণে নির্গত হওয়ার জন্য পর্ন, জাংক ফুডের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। পর্ন দেখার সময় মানুষের মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সেন্টারে বার্তা যায়। এটি মস্তিষ্কে ডোপামিন নির্গত করার জোর দেয়। পরবর্তীতে ডেলটাফসবি (DeltaFosB) সহ অন্যান্য কেমিক্যাল নির্গত হতে থাকে। যা শরীরের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর।

ডেলটাফসবি এর কাজ হল মস্তিষ্কে নতুন নার্ভ প্যাথওয়ে সৃষ্টি করা। এর সাহায্যেই কাজ ও অনুভূতির মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়। পর্ন দেখার এই অনুভূতিগুলো এতো বেশী শক্তিশালী হয় যে, এগুলো মস্তিষ্কের অন্যান্য অনুভূতি সৃষ্টকারী সংযোগগুলোকে অতিক্রম করে, ফলে একজন পর্ন ব্যবহারকারী অন্য কাজগুলোর উপর পর্নকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। ডেলটাফসবি এর আর একটি কাজ হল পরিমিত পরিমাণে উৎপন্ন হওয়ার মাধ্যমে একটি জেনেটিক বা জিনের পরিবর্তন ঘটায়। এতে একজন পর্ন আসক্তি ব্যক্তির পর্নের প্রতি আরো বেশি দুর্বল হয়ে যায়। এর আরেকটি নাম হল “মলিকিউলার সুইচ ফর অ্যাডিকশন”। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এই ঝুঁকি আরো বহুগুণ। কারণ তাদের মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সেন্টার একজন প্রাপ্তবয়স্কের মস্তিষ্কের চেয়ে দুই থেকে চারগুণ দ্রুত সাড়া দেয়। উৎপন্ন হয় আরো বেশি ডোপামিন ও ডেলটাফসবি। এই অতিরিক্ত ডোপামিনের উৎপন্ন হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য মস্তিষ্ক আরেকটি রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে যার নাম হল CREB (Cyclic Adenosine Monophosphate Response Element Binding Protein!)। যার কাজ হল রিওয়ার্ড সেন্টারকে অধিক পরিমাণে ডোপামিন উৎপন্ন করে অস্বাভাবিক  পরিস্থিতি সৃষ্টি করা থেকে মানুষকে বিরত রাখা। মস্তিষ্কে যখন CREB নির্গত হয় তখন একজন পর্নের প্রতি আসক্ত ব্যক্তিকে আর আগের মতো আনন্দ দান করতে পারে না। তাই সে আগের উত্তেজনা ও আনন্দ পাওয়ার জন্য আরো অধিক পরিমাণে পর্নগ্রাফি দেখে। গবেষকদের মতে CREB এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। পর্নের প্রতি এই আসক্তিকে বলা হয় “টলারেন্স”, যা সব ধরনের আসক্তির ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়। এক্ষেত্রে কাজ করে ডেল্টাফসবি, একে বলা হয় ‘আসক্তির আণবিক সুইচ’। কারণ প্রোটিনটা মানুষের বিভিন্ন ধরণের চাহিদাকে জাগ্রত করে তোলে। মস্তিষ্কে এর পরিমান বেড়ে গেলে এটা জিনের ওপরও প্রভাব বিস্তার করে যা মানুষের আসক্তিকে আরও বিপদজনক মাত্রায় পৌঁছে দিতে সক্ষম।

একজন পর্নগ্রাফি আসক্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবনের কাজ করে আর আনন্দ পায় না যা তারা আসক্তির আগে পেত। যেমন, খেলাধুলা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারা প্রভৃতি। তারা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলি পর্ন দেখে ব্যয় করে দেয়। তাদের পর্নের প্রতি আকাঙ্খা এতটাই তীব্র হয়ে যায় যে সব কাজ ছেড়ে দিয়ে পর্নের পিছনে সময় ব্যয় করতে থাকে। ক্রমাগত এই অভ্যাস তীব্র হয়ে যাওয়ার জন্য তারা আরও এক্সট্রিম লেবেলের পর্ন দেখতে শুরু করে। পর্নে আসক্তদের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু পরিবর্তনও দেখতে পাওয়া পায়। যেসব যৌন ক্রিয়া তাদের কাছে জঘন্য বলে মনে হতো, পর্ন দেখার পর থেকে সেগুলোই তাদের কাছে উত্তেজনাকর হয়ে দাঁড়ায়। একথা সবাই জানেন, ইঁদুর পচা লাশের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। জিম ফস্ট নামক একজন গবেষক ইঁদুরের এই স্বভাবটা পরিবর্তন করার জন্য একটা মহিলা ইঁদুরের গায়ে এক ধরণের লিকুইডযুক্ত স্প্রে মারেন যার গন্ধ পচা লাশের মতো। এরপর তিনি একটি খাঁচার ভেতর কিছু পুরুষ ইঁদুরের মধ্যে সেই মহিলা ইঁদুরটিকে ছেড়ে দিলেন। অবাক করা তথ্য হল যখন পুরুষ ইঁদুরগুলো তারা মহিলা ইঁদুরটির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে, যে পচা লাশের গন্ধের ব্যাপারটা পুরোপুরি এড়িয়ে যায়। এবং যখন পুরুষ ইঁদুরগুলো মৃত পচা লাশের দুর্গন্ধযুক্ত মহিলা ইঁদুরের সাথে সেক্স করাতে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন জিম ফস্ট এক কাজ করলেন, তিনি সেই মহিলা ইঁদুরটিকে এবং পুরুষ ইঁদুর থেকে আলাদা একটি খাঁচায় রেখে বিভিন্ন ধরণের খেলনা দিয়ে খেলতে দিলেন। তবে সেইসব খেলনার মধ্যে বেশ কয়েকটি খেলনায় সেই পচা লাশের গন্ধযুক্ত লিকুইড স্প্রে করেন। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, পুরুষ ইঁদুরগুলো সব খেলনার মধ্যে পচা লাশের গন্ধযুক্ত খেলনাগুলোকে নিয়েই খেলতে শুরু করলো। সেইসব ইঁদুরগুলোর কাছে পচা লাশে গন্ধটাই এখন পছন্দনীয় হয়ে ওঠেছিল। এখন প্রশ্ন হল, ইঁদুরের একটা স্বাভাবিক স্বভাবকে কীভাবে বদলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে? এর উত্তর হল, সব ধরণের স্তন্যপায়ী প্রাণীর মস্তিষ্কে “রিওয়ার্ড সেন্টার” নামক একটা জিনিস আছে। এটি আমাদের ভালো অনুভূতি দেয়। মস্তিষ্কে বিভিন্ন আনন্দ দানকারী কেমিক্যালের মিশ্রণে অনুভূতির উদ্ভব হয়। ভাল কিছু করার সময় সেই দিকে আমাদের ধাবিত করে আবার ক্ষতিকর কোন কিছু করার সময় মস্তিষ্কের এই অংশটি আমাদের সেইদিকেই ধাবিত করে অর্থাৎ মস্তিষ্ক পুরর্গঠিত (rewired) হয়ে আমাদের স্বাভাবিক প্রবণতার বিপরীতটা কাজটা করে থাকে।

এবার আসি ইঁদুরের স্বাভাবকেকেন বদলে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল তার ব্যাপারে। পচা লাশের দুর্গন্ধযুক্ত মহিলা ইঁদুরের সাথে সেক্স করার ফলে উক্ত পুরুষ ইঁদুরগুলোর মস্তিষ্ক পুরর্গঠিত (rewired) হয়েছিল। অর্থাৎ, যে গন্ধ ইঁদুর সহ্য করতে পারেনা সেই গন্ধটাই তাদের ভালো লাগাতে শুরু হয়েছিল। একইভাবে ইঁদুরের উক্ত ঘটনার মত মানুষের মস্তিষ্কও পর্নগ্রাফি দ্বারা পুনর্গঠিত (rewired) হয়ে থাকে। পর্ন আসক্তিদের বক্তব্য যে তারা শুধু বিনোদনের জন্য পর্ন দেখে, কারও ক্ষতি তো করে না। কিন্তু ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে অন্যের ক্ষতি না করলেও ভয়ঙ্কর ক্ষতিটা হচ্ছে তাদের নিজেদের মস্তিষ্কে। মানুষ যখন আরাম করে পর্ন দেখে, তখন মস্তিষ্ক বিশ্রাম নেয়না। মস্তিষ্ক মানুষের যৌন অনুভূতিকে পর্নের সাথে সংযুক্ত করাতে ব্যস্ত থাকে। তাই তাদের আরো এক্সট্রিম পর্ন দেখার প্রতি প্রবণতা বাড়তে থাকে। নতুন ক্যাটাগরীর পর্ন সার্চ করে ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। বাড়ে বিকৃত যৌনাচার।

একবার ১৫০০ জন পর্ন আসক্ত যুবকের মধ্যে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। তাদের শতকরা ৫৬ জন বলে যে, যতই তারা পর্ন দেখতে থাকে, তাদের রুচি ততোই এক্সট্রিম লেবেলের পর্নের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্নে যেসব  বিকৃত যৌনাচার দেখার আগে তারা অনৈতিক ও জঘন্য কাজ বলে মনে করত পর্নে আসক্ত হওয়ার পর সেগুলোই তাদের কাছে ভাল লাগাতে পরিণত হয়ে যায়। ঠিক উপরোল্লিখিত ইঁদুরের মত। এমন ঘটনাও দেখা গেছে যে পর্নে আসক্ত ব্যক্তিরা তাদের স্ত্রীর যৌন আবেদনে সাড়া দেয়না, কিন্তু পর্ন দেখার সময় ঠিকঠাক দেখে নিচ্ছে। অবস্থাটা কতটা নির্মম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তা সহজেই বোঝায় যাচ্ছে। পর্নে যেসব বিকৃত যৌন ক্রিয়া দেখানো হয় সেগুলো দেখতে দেখতে পর্নে আসক্ত ব্যবক্তিরা সেই বিকৃত যৌনাচারকেই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে নেয়। অথচ আগে এই বিকৃত যৌনাচারকেই তারা ঘৃণা করত। গবেষণায় দেখা গেছে যারা পর্ন দেখে তারা উগ্র সেক্স করা, এমনকি পশুর সাথে যৌন ক্রিয়া করাকেও তারা অস্বাভাবিক মনে করেনা। শুধু অস্বাভাবিক মনে করে না এমন নয় তারা এসব ব্যক্তিগত জীবনেও প্রয়োগ করাকে স্বাভাবিক মনে করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, পর্নগ্রাফি দেখার ফলে মানুষের যৌন চেতনাতেও পরিবর্তন আসে। পর্নগ্রাফি আসক্ত ব্যক্তিরা নারী নির্যাতনের মতো জঘন্য কাজকেও সমর্থন করে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে যে পর্নগ্রাফি আসক্ত পুরুষদের দ্বারা নারীরা প্রতারণার শিকার বেশি হয়। ২০১৫ সালে ৭টি দেশে ২২টি গবেষণায় দেখা যায় যারা অতিরিক্ত পর্নে আসক্ত তারা অনেকেই যৌন নির্যাতনকে সমর্থন করে এবং তারা নিজেরাও যৌন নির্যাতনে অংশগ্রহণ করে।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment