ধনুষ্টংকার বা টিটেনাস

#মেডিকেল_ও_চিকিৎসা_পরামর্শ

#ধনুষ্টংকার_বা_টিটেনাস

👉ধনুষ্টংকার বা টিটেনাস একটি সংক্রামক রোগ, যা ক্লসট্রিডিয়াম টিটেনি জীবাণুর মাধ্যমে হয়। এ রোগে শরীরের মাংসপেশিগুলো শক্ত হয় এবং খিঁচুনি হয়। সঠিক চিকিৎসা না করালে মৃত্যুর হার খুব বেশি। বাংলাদেশ ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে এ রোগের প্রকোপ বেশি। অথচ টিকা দিয়ে সহজেই এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

#যেভাবে_হয়
টিটেনাস রোগের জীবাণু সাধারণত মাটি, ধুলাবালি, গোবর, ময়লা-আবর্জনা, লোহার মরিচা ইত্যাদির মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। সাধারণত গ্রামের বাসিন্দা, যারা মাটিতে কাজ করে, তাদের এ রোগ বেশি হয়। এই রোগের জীবাণু শরীরে কোনো কাটাছেঁড়া, আঘাত, প্রাণীর কামড়ের স্থানের সংস্পর্শে এসে সক্রিয় হয়ে বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। এ সক্রিয় জীবাণু টিটেনোপ্লাজমিন নামের বিষ বা টক্সিন তৈরি করে। এই টক্সিন স্নায়ুকোষকে আক্রমণ করে। ফলে শরীরের মাংসপেশিগুলো শক্ত হয়ে যায় এবং প্রচণ্ড খিঁচুনি হয়।

#রোগের_লক্ষণ
* এ রোগের জীবাণু এক থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
* প্রথম দিকে ঘাড়, শরীরের পেছন দিক এবং পেটে ব্যাথা হতে পারে।
* জ্বর থাকতে পারে।
* মাংসপেশিগুলো সংকুচিত হতে থাকে এবং প্রচণ্ড খিঁচুনি হতে পারে। মুখের মাংসপেশিগুলো শক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে হাঁ করতে অসুবিধা হয়।
* শরীরের পেছনের মাংসপেশিগুলো সংকুচিত হয় বলে পুরো শরীর ধনুকের মতো বেঁকে যায়।
* যেকোনো ব্যাথা, শব্দ, আলো ইত্যাদির কারণে খিঁচুনি আরম্ভ হয় এবং ৩-৪ মিনিট স্থায়ী হয়।
* শ্বাসকষ্ট হয় এবং রোগী ঢোক গিলতেও পারে না।
* শরীরের কাটা জায়গা, যার মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে, সেখানে ইনফেকশন হতে পারে।

#চিকিৎসা
টিকা দিয়ে সহজে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। পাশাপাশি শরীরের কোনো জায়গায় কেটে গেলে সেই কাটা স্থানের চিকিৎসার পাশাপাশি টিটেনাস প্রতিরোধের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। কাটা স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলে শুধু টিটেনাস টক্সয়েড বা টিটি টিকা দিতে হবে।

#ডোজ_যখন_দিতে হবে প্রতিরোধের সময়কাল:

প্রথম জন্মের প্রথম দিন প্রতিরোধ হয় না।
দ্বিতীয় প্রথম ডোজের ৪ সপ্তাহ পর ৩ বছর পর্যন্ত
তৃতীয় দ্বিতীয় ডোজের ৬ মাস পর ৫ বছর পর্যন্ত
চতুর্থ তৃতীয় ডোজের ১ বছর পর ১০ বছর পর্যন্ত
পঞ্চম চতুর্থ ডোজের ১ বছর পর আজীবন
* দীর্ঘমেয়াদে এ রোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য ATS-১৫০০ ইউনিট মাংসপেশিতে দিতে হবে। তবে এর আগে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে নিতে হবে।
* যেখানে কাটা বা আঘাতের ফলে টিটেনাস হয়, সে ক্ষত স্থান নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক সল্যুশন দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
* টিটেনাস নির্মূল করতে পেনিসিলিন ও মেট্রোনিডাজল অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হয়।

#টিটেনাসে_আক্রান্ত_রোগীর_চিকিৎসা
* আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে এমন স্থানে রাখতে হবে, যেখানে আলো ও শব্দ কম থাকে।
* টিআইজি বা টিটেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইনজেকশন দিয়ে টক্সিনকে নিষ্ক্রিয় করতে হবে।
* আগে যদি টিটেনাসের কোনো টিকা দেওয়া না থাকে, তবে তিনটি টিআইজি দিতে হবে।
* বেনজাইল পেনিসিলিন ইনজেকশন ৬০০ মি.গ্রা. করে ৬ ঘণ্টা পর পর (যদি এই ওষুধে অ্যালার্জি থাকে, তবে বিকল্প হিসেবে মেট্রোনিডাজল ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে) দিতে হবে।
* ডায়াজিপাম, লোরাজিপাম অথবা ক্লোরপ্রোমাজিন জাতীয় ইনজেশন শিরায় দিতে হবে। এতে খিঁচুনি ও মাংসপেশি শক্তভাব হওয়া কমবে।
* আক্রান্ত ক্ষতস্থান হাইড্রোজেন-পারঅক্সাইড দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

#জটিলতা
* নাইট্রোজেনঘটিত ভারসাম্যতা নষ্ট হতে পারে।
* হার্টের মাংসপেশিতে ইনফেকশন হতে পারে।
* রক্ত সংবহনতন্ত্রের বিশৃঙ্খলা এবং সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে ও নাড়ির গতি বেড়ে যেতে পারে।
* স্নায়ুবৈকল্য দেখা দিতে পারে।

#শিশুদের_টিটেনাস
সাধারণত পাঁচ থেকে ১৫ দিনের বাচ্চাদের হয়। জন্মের পর শিশুর নাভি অপরিষ্কার ছুরি, কাঁচি দিয়ে কাটার ফলে অথবা শিশুর নাভিতে গরুর গোবর প্রয়োগ করলে এটি হয়। এ রোগে শিশু প্রথম দিকে খেতে পারে না। নাভিতে ইনফেকশন থাকে, প্রচণ্ড খিঁচুনি হয়। এটি প্রতিরোধের জন্য জীবাণুমুক্ত ছুরি বা কাঁচি দিয়ে চিকিৎসকের সাহায্যে নাভি কাটাতে হবে। স্পিরিট দিয়ে শিশুর নাভি পরিষ্কার করতে হবে। এ ছাড়া প্রতিরোধ হিসেবে শিশু গর্ভে থাকাকালীন মাকে দুইবার টিটেনাস টক্সয়েড টিকা দিতে হবে। এই টিকা এক মাস ব্যবধানে গর্ভাবস্থায় দিতে হয়।

©ollected

Leave a Comment