দীর্ঘ মেয়াদি ঋন কি? জামানত গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের বিবেচ্য বিষয়সমূহ বর্ণনা কর।

দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ

কমপক্ষে ৫ বছর বা তার বেশি মেয়াদের জন্য ব্যাংক যে ঋণ মঞ্জুর করে তাকে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ বলে। মিল-কারখানা তৈরী,
বাড়ি তৈরী, জমি বা যন্ত্রপাতি কেনা ইত্যাদি খাতে ব্যাংক দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিয়ে থাকে। স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে এ ধরনের ঋণ
দেওয়া হয়।

অথবা

দীর্ঘ মেয়াদে (সাধারণত কয়েক বছর) একটি নির্দিষ্ট পরিশোধসূচি অনুযায়ী (যেমন: ৬০টি সমান মাসিক কিস্তিতে বা ১২টি সমান ত্রৈমাসিক কিস্তিতে) পরিশোধযোগ্য ঋণ স্থায়ী মেয়াদি ঋণ হিসেবে বিবেচিত হবে, যেমন- হাউজিং ঋণ।

অথবা

অন্য ভাবে বলতে গেলে যে সকল ঋনের মেয়াদ কাল ৫ বছর থেকে ২০ বছর ও তার বেশি তাকে আমরা দীঘ মেয়াদী ঋণ বলতে পারি।

জামানত গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের বিবেচ্য বিষয়সমূহ বর্ণনা কর।

ঋণের জামানত কাকে বলে
ব্যাংক তার কোন মক্কেলকে ঋণ দেওয়ার আগে এই মর্মে নিশ্চিত হতে চায় যে, ঋণের টাকা সময়মত ফেরত পাওয়া যাবে।


কারণ, কোন কোন মক্কেল ঋণ নেওয়ার পর ঋণের টাকা ঠিকমত পরিশোধ নাও করতে পারে। তাই ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তার প্রমাণ স্বরূপ ঋণগ্রহীতা ব্যাংককে যে সম্পত্তি বা গ্যারান্টি দেয় তাই ঋণের জামানত হিসাবে পরিচিত।


ব্যাংক ঋণের নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যে ঋণগ্রহীতার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি অথবা ঋণগ্রহীতা বা তৃতীয় পক্ষের নিশ্চয়তা গ্রহণ করে থাকে। ঋণগ্রহীতা কোন কারণে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে ব্যাংক জামানত বিক্রি করে অথবা নিশ্চয়তা
দানকারী তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায় করতে পারে।

জামানতের প্রকারভেদ
ব্যাংক যে জামানতের বিপরীতে অগ্রীম বা ঋণ দেয় তাকে প্রধানত দুই ভাবে ভাগ করা যায়। যথা-

ক) ব্যক্তিক বা ব্যক্তিগত জামানত,

খ) অব্যক্তিক বা নৈর্ব্যক্তিক জামানত। এছাড়াও আরও এক ধরনের জামানতের প্রচলন রয়েছে যাকে অতিরিক্ত জামানত বলা হয়।

১. জামানতের গ্রহণযোগ্যতা: কোন জামানতী সম্পত্তি আইনত গ্রহণযোগ্য না হলে ঐ জামানতকে উত্তম জামানত বলা যায় না।
কারণ, ঋণের টাকা ফেরত পাওয়া না গেলে এজাতীয় সম্পত্তি বিক্রি করে ঋণের অর্থ আদায় করা ব্যাংকের জন্য অসম্ভব
হয়ে পড়ে।

২. জামানতের বিক্রয়যোগ্যতা: যে জামানতী সম্পত্তি সহজে বিক্রি করা যায় তাকেই উত্তম জামানত বলে। সহজে ও নির্বিঘেœ
বিক্রয়যোগ্য জামানত ব্যাংক ঋণের নিরাপত্তা বাড়ায়।

৩. জামানতী সম্পত্তির তারল্য: যেই জামানতের পর্যাপ্ত তারল্য থাকে না তাকে উত্তম জামানত বলা যায় না। তাই জামানতী
সম্পত্তি গ্রহণ করার আগেই ঐ সম্পদের তারল্য কেমন তা নির্ধারণ করা জরুরী। এক্ষেত্রে তারল্য বলতে কত সহজে, কত
কম ক্ষতিতে ও কত দ্রুত জামানতী সম্পত্তি বিক্রি করে নগদ অর্থ পাওয়া যায় তাকে বুঝায়।

৪. জামানতী সম্পদের স্বত্ত¡: জামানতী সম্পত্তির উপরে ঋণ গ্রহীতার প্রকৃত মালিকানা না থাকলে ঐ জামানত ব্যাংকের কাছে
গ্রহণযোগ্য নয়। জামানতী সম্পত্তির মালিকানায় ঝামেলা থাকলে তাকে উত্তম জামানত বলা যায় না। তাই ব্যাংক জামানতী
সম্পদ গ্রহণের পূর্বে এর মালিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়।

৫. জামানতী সম্পদের মূল্য: জামানতী সম্পদের মূল্য অবশ্যই ঋণের পরিমাণের চেয়ে যথেষ্ট বেশি হওয়া উচিত। এতে ব্যাংক
ঋণের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়। কারণ, জামানতী সম্পদের মূল্য ঋণের পরিমাণের চেয়ে কম বা সমান হলেও বিক্রি করার সময়
ঐ দামে বিক্রি করা যায় না। তাই মোট ঋণের পরিমাণের চেয়ে বেশি মূল্যবাণ সম্পত্তিকে উত্তম জামানত বলা হয়।

৬. জামানতী সম্পদের মূল্যের স্থিতিশীলতা: জামানতী সম্পত্তির বাজার মূল্য খুব বেশি উঠানামা করলে ঐ জামানতের বিপক্ষে
ঋণ দেওয়া ব্যাংকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। কারণ, ঋণ অনাদায়ী থাকলে জামানতী সম্পত্তি বিক্রির সময় যদি তার
বাজার মূল্য কমে যায় তবে ব্যাংক ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত পেতে পারে না। এজন্য জামানতী সম্পত্তির মূল্য স্থিতিশীল
হওয়া উত্তম জামানতের বৈশিষ্ট্য।

৭. জামানতের দায়মুক্ততা: যে সম্পদ অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে জামানত হিসাবে দায়বদ্ধ আছে তা ব্যাংক ঋণের
বিপক্ষে জামানত হিসাবে গ্রহণ করা ব্যাংকের জন্য নিরাপদ নয়। তাই দায়মুক্ত জামানতই উত্তম জামানত।
৮. পণ্যের দখল: ব্যাংকের এমন ধরনের জামানত নেওয়া উচিত যা খুব সহজেই নিজের দখলে নেওয়া যায়। বিশেষ করে
জামানত হিসাবে পণ্য নিলে ঋণ মঞ্জুরের সময় অথবা ঋণ চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে ঐ সম্পত্তির দখল নেওয়া
উচিত।

৯. জামানতী সম্পত্তির গুণাগুণ: জামানতী সম্পদ যদি পণ্যদ্রব্য হয় তবে তা উন্নতমানের হওয়া উচিত। বিলাসদ্রব্য বা যেসব
পণ্যের চাহিদা সবসময় পরিবর্তন হয় এমন পণ্য জামানত হিসাবে গ্রহণ করা উচিত নয়। এছাড়াও যে পণ্য পচণশীল
প্রকৃতির বা যে পণ্যের রং ও গুণাগুণ ইত্যাদি কমে যায় তা জামানত হিসাবে গ্রহণ করা উচিত নয়।

১০. আর্থিক সামর্থ্য: ঋণগ্রহীতার বা তৃতীয় কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জামানত গ্রহণের ক্ষেত্রে তার আর্থিক সামর্থ্য বা সচ্ছলতা
সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ব্যাংক তবেই ঋণ দেয়। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলে ব্যক্তিগত জামানতের আসলে কোন দাম থাকে না।

১১. জামিদারের সততা: তৃতীয় পক্ষ যখন ব্যক্তিগত জামানত দেয় তখন শুধু তার আর্থিক সচ্ছলতা দেখলেই চলে না, বরং
তার সততা ও সুনামও থাকা চাই। কারণ, কোন অসৎ ব্যক্তি জামিনদার হয়ে থাকলে অনাদায়ী ঋণের ক্ষেত্রে ঋণের টাকা
আদায় করা কঠিন হয়ে পড়ে।

১২. জামিনদারের সামাজিক মর্যাদা: ঋণ দেওয়ার সময় জামিনদার ঋণগ্রহীতা বা তৃতীয় পক্ষের সামাজিক মর্যাদা বিবেচনা করা
উচিত। সমাজে সুখ্যাতি আছে এমন কোন ব্যক্তি নিজের মর্যাদার কথা চিন্তা করেই ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করে। ভোগ্য
পণ্যে ঋণ দেওয়ার সময় ব্যাংককে এ বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করতে দেখা যায়।

শিক্ষা

Leave a Comment