দিল্লি সালতানাতের আমলে আর্থ-সামাজিক অবস্থার একটি বিবরণ দাও, আর্থ-সামাজিক অবস্থার একটি বিবরণ দাও দিল্লি সালতানাতের আমলে

প্রশ্ন সমাধান: দিল্লি সালতানাতের আমলে আর্থ-সামাজিক অবস্থার একটি বিবরণ দাও, আর্থ-সামাজিক অবস্থার একটি বিবরণ দাও দিল্লি সালতানাতের আমলে, সুলতানী আমলে উপমহাদেশের আর্থ-সামাজিক ও প্রশাসনিক অবস্থা, সুলতানি আমলে বাংলার আর্থ-সামাজিক ও প্রশাসনিক অবস্থা

দিল্লী সালতানাতের আমলে আর্থ-সামাজিক অবস্থার একটি বিরবণ দাও ।

ভূমিকা: ভারতে সুলতানী শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মধ্যযুগের সূচনা হয় । ফলে মধ্যযুগীয় শাসনের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সুলতানী শাসনে পুরোমাত্রায় লক্ষ করা যায় ।

দিল্লী সালতানাতের আমলে সামাজিক অবস্থাঃ

সমসাময়িক মুসলিম ঐতিহাসিক ও বিদেশী পর্যটকদের লেখনীতে সুলতানী আমলের সামাজিক অবস্থার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়। সে যুগে ভারতে প্রধানতঃ দুইটি সম্প্রদায় বসবাস করত । যথা- হিন্দু ও মুসলমান । অবশ্য বেীদ্ধ ও জৈনসহ আরো কিছু সম্প্রদায় বসবাস করত, তবে তাদের সংখ্যা ও প্রভাব খুবই সামান্য ছিল । মুলতঃ হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়েই এ যুগের ভারতীয় সমাজের বিবর্তন ঘটে।

ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী হিন্দুরা ছিল শাসিত আর সংখ্যালঘু নবাগত মুসলমানরা ছিল শাসকশ্রেণী । ধর্মীয় ক্ষেত্রে উভয়ের বিপরীত অবস্থান ছিল এবং তা তাদের নিজ নিজ ধর্ম ও সামাজিক রীতিনীতি ভিত্তিক ছিল । তা সত্ত্বেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে মিলও খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন:-

উভয় সম্প্রদায়ের সমাজ জীবনের মূল ভিত্তি ছিল পিতৃতান্ত্রিক পরিবার । উভয় সমাজে নারীর অবস্থান প্রায় একই রকম ছিল । উভয় সমাজেই নারীর উপর পুরুষের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট ছিল ।মেয়েদের অবস্থান ছিল অন্তঃপুরে । তারা পর্দার আড়াল থেকে বের হতে পারত না। মেয়ে সন্তানকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিয়ে স্বামীর ঘরে পাঠানোই ছিল পিতা বা অভিভাবকের অন্যতম কর্তব্য । পিতার সংসারে কন্যা সন্তানের চেয়ে পুত্র সন্তানের অধিকার ও কদর ছিল অনেক বেশী । পুত্র সন্তানের জনক-জননী হওয়া ছিল সেীভাগ্যের। নারীদের পড়াশুনার সুযোগ ছিল না, পতিই ছিল তাদের পরম ধর্ম । সাংস্কৃতিক অঙ্গণে মেয়েদের বিচরণ ছিল না বললেই চলে । অবশ্য রাজদরবারের হেরেমে উভয় সম্প্রদায়ের মেয়েরা নাচ-গান করত । একটা শ্রেণী এই পেশা বেছে নিত । তবে সমাজে তাদের স্বীকৃতি ছিল না । সমাজে বাল্য বিবাহ ও বহু বিবাহ প্রচলিত ছিল ।


আরো ও সাজেশন:-

উভয় সমাজের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্যও ছিল । পিত্রালয় হিন্দু মেয়েদের তুলনায় মুসলিম মেয়েদের অধিকার বেশী ছিল । মুসলমানদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ছিল কিন্তু হিন্দু সমাজে তা ছিল অসম্ভব ও অভিনব । উত্তরাধিকার আইনের ক্ষেত্রে উভয়ের অবস্থান বিপরীত বলা যায়। মুসলিম অভিজাত পরিবারে মেয়েদের শিক্ষা-দীক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ ছিল । হিন্দু সমাজের সতীদাহ প্রথা মুসলমানদের নিকট বিষ্ময়ের ছিল । হিন্দু সমাজে “ জহরব্রত” প্রথা প্রচলিত ছিল । অবশ্যরাজপুতদের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ ছিল বলে মনে হয়। জহরব্রত হলো- যুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় জেনে শত্রুর হাত থেকে সম্ভ্রম রক্ষার জন্য হিন্দু রমণীদের আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার পদ্ধতি । এ পদ্ধতি রাজপুত রমণীরা অনুসরণ করত ।

অবশ্য কোন কোন ক্ষেত্রে উভয় সমাজেই কিছু কিছু ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয় । যেমন: – দেবলা রাণী, পদ্মিনী, মীরাবাঊ, সুলতানা রাজিয়া প্রমুখ নারীগণ বিদূষী, অধিকার সচেতন ও সংস্কৃতমনা ছিলেন এবং তাঁরা সমাজের কুসংস্কার অস্বীকার করেন।

হিন্দু সমাজে তখনও জাতিভেদ প্রথা প্রচলিত ছিল । অসবর্ণ বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল । তবে তা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের উপর প্রযোজ্য ছিল । ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়রা হিন্দু সমাজের উচ্চবর্ণ হিসেবে কর্তৃত্ব ও অধিকার ভোগ করলেও মুসলমানদের আগমনে ক্ষত্রিয়দের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। এ সুযোগে ব্রাহ্মণরা হিন্দু সমাজের উপর একক কর্তৃত্বের সুযোগ লাভ করে । ফলে হিন্দু সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হয় । ক্ষত্রিয়রা ক্ষমতা হারিয়ে কোন শ্রেনীতে পরিনত হয় তা সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা দেয়া কঠিন। তবে অনেকে হয়তো সেনাবাহিনীসহ অনেক উচ্চ রাজপদে যোগদান করেন। অনেকে হয়তো সামন্ত হিসেবে স্থানীয়ভাবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করে । এক্ষেত্রে রাজপুতদের অবস্থান লক্ষণীয় । তারা মোগল আমলেও রাষ্ট্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়। সুলতানী আমলে বৈশ্যদের অবস্থা ভাল ছিল । সাম্রাজ্যে ব্যবসায় বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটতে থাকলে তাদের অবস্থারও উন্নতি ঘটতে থাকে । তবে শূদ্রদের অবস্থা খুবেই খারাপ ছিল । জাতিভেদ প্রথার কঠোরতায় হিন্দু সমাজে তাদের কোন মর্যাদাই ছিল না । ফলে মুসলমানদের সাম্যের বাণী তাদেরকে আকৃষ্ট করে এবং দলে দলে তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয় । অন্যান্য শ্রেণী যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি তা নয়, তবে ঐ সকল শ্রেণীর অধিকাংশই স্বার্থ রক্ষার্থে ধর্মান্তরিত হয় । কিন্তু শূদ্ররা ধর্মান্তরিত হয় সামাজিক ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়ে । হিন্দুদের মধ্যে যারা শিক্ষিত ছিলেন তাঁরা সুলতানী আমলের প্রথম থেকেই রাজস্ব নির্ধারণ ও আদায়কার্যে নিয়োজিত হন । এদের অনেকে স্থানীয় শাসন ব্যাপারে সুলতানদের বিশ্বস্ত সহচররূপে তাঁদেরকে সহায়তা করেন। যেহেতু হিন্দু সমাজে শিক্ষার বিস্তার অভিজাত শ্রেণীর মধ্যেই বেশী ঘটে। তাই বলা যায়, প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষিত হিন্দুদের অধিকাংশের আগমন ঘটে ক্ষত্রিয় থেকে এবং তাঁরা বংশ পরস্পরায় প্রশাসনিক কার্যে দক্ষতা সম্পন্ন ছিল ।

অবশ্য এর স্বপক্ষে কোন তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না । তবে ক্ষমতা হারিয়ে ক্ষত্রিয়দের এ সকল কাজে সম্পৃক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক । যাহোক, সমাজে এই স্থানীয় শাসক শ্রেণীর মর্যাদাগত অবস্থান ভাল ছিল । তারা নানা প্রকার সম্মানজনক উপাধিও লাভ করত এবং রাষ্ট্রীয় অনেক সুবিধাদি গ্রহণ করত ।ন গুরুত্ব পায়নি।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

মুসলমানদের মধ্যে পেশাভিত্তিক জাতিভেদ প্রথা না থাকলেও জাতিগত বিরোধ ছিল । তুর্কি, আফগান, আবিসিনিয়া, আরবীয়, ভারতীয় প্রভৃতি বিভিন্ন জাতিভুক্ত অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে মর্যাদাগত বিরোধ ছিল । তবে অভিজাত শ্রেণী ও ওলামাগণ সমাজের উঁচু শ্রেণীর লোক হিসেবে বিবেচিত হতেন এবং বিশেষ মর্যাদা ও অধিকার লাভ করতেন। রাজনীতিতে অধিকাংশ সময়ই তাদের অশুভ হস্তক্ষেপ লক্ষ করা যায় । বিশেষ করে, ওলামা শ্রেণী ধর্মাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব হিসেবে মুসলিম রাষ্ট্রে সর্বত্র কর্তৃত্ব করতে সচেষ্ট ছিল , যা হিন্দুস্থানের মুসলিম রাষ্ট্রটির জন্য বিব্রতকর বা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল । এজন্য বলবন অভিজাতদেরকে কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আলাউদ্দিন খলজী ও মুহাম্ম-বিন-তুঘলক ওলামাদেরকে দরবার থেকে বিতাড়ন করেন। অবশ্য পরবর্তীকালে তাদের আবার আবির্ভাব ঘটে। অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে তুর্কিদের অবস্থান ছিল সুদৃঢ় । তারপরে ছিল যথাক্রমে আফগান, আবিসিনীয়, আরবীয় ও ভারতীয়দের অবস্থান । মুসলমানরা প্রাথমিকভাবে দুইভাগে বিভক্ত ছিল । যথা: – বহিরাগত ও ভারতীয় । বহিরাগতরাই ছিল প্রথম শ্রেণীভুক্ত । ভারতীয় মুসলমানরা মুসলিম সমাজের নিম্নস্তরের ছিল । কোনো কোন ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান হিন্দুদের চেয়েও করুণ ছিল । ভারতীয় মুসলমানরা দেশীয় ভাষায় কথা বলত । বহিরাগত মুসলমানদের অধিকাংশই পারর্সিক ভাষা-ভাষী ছিল । তবে অন্যান্যরা তাদের নিজ নিজ ভাষায় কথা বলত । পরবর্তীতে বহিরাগত বিদেশীয়দের ভাষার সংমিশ্রণ ঘটে । তবে ভারতীয় তথা হিন্দি ভাষাও উর্দু ভাষায় পারস্কিক ও আরবি ভাষারই বেশি সংমিশ্রণ ঘটে। তবে ভারতীয় তথা হিন্দি ভাষাও উর্দু ভাষাতে অবস্থান করে নেয়। অবশ্য মিশ্রিত ভাষা তথা উর্দু ভাষা মুষ্টিমেয় মুসলিম অভিজাত শ্রেণীর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে । সুলতানী আমলে এ ভাষা পরিপূর্ণতা পায়নি,আর তার তেমন বিস্তার লাভও ঘটেনি।

সুলতানী যুগে মুসলমানদের মধ্যে একটা বিরাট অংশ ছিল ক্রিতদাস । সুলতানদের ক্রীতদাস পোষণ যেন একটা ঐতিহ্য ও আভিজাত্যে পরিণত হয়। অবশ্য ক্রীতদাসদের সকলে আমৃত্যু ক্রীতদাস থাকত না । তারা দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেত , এমনকি, সিংহাসনও লাভ করতে সক্ষম হত । মুসলিম রাজত্বে ক্রীতদাস থেকে সুলতান হওয়ায় উদাহরণ অনেক । এক্ষেত্রে কুতুবউদ্দিন আইবক, ইলতুৎমিস, বলবনের নাম উল্লেখযোগ্য । এছাড়া আমীর, প্রাদেশিক শাসনকর্তা, সেনাপতি প্রভৃতি অসংখ্য উর্ধ্বতন পদে ক্রীতদাসরা সমাসীন হয়ে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে গেছে । তবে তারা অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অকল্যাণও বয়ে আনেন । প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, দুর্নীতি প্রভৃতি কাজে তাদের অনেক লিপ্ত ছিল । কোন কোন সুলতানের আমলে ক্রীতদাসদের সংখ্যা এত বেশী ছিল যে, তা রাজকোষাগারের উপর মারাত্মক বোঝা হয়ে দাঁড়ায় ।

সুলতানী যুগের হিন্দু-মুসলিম সমাজের অন্যতম দিক হলো বিভিন্ন পালা-পার্বন । প্রাচীন যুগ থেকেই হিন্দুরা ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন পালা-পার্বন পালন করে । মুসলমানদের আগমনে হিন্দুরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য পালা-পার্বণের ক্ষেত্রে অধিক মনোযোগী হয় । তাদের এ সকল উৎসব ক্রমেই ধর্মীয় গন্ডি পেরিয়ে বৈচিত্রময় ও ঐশ্বর্যমন্ডিত হয়ে উঠে। এ সময় হিন্দুদের মধ্যে একতাবোধ বৃদ্ধি পায় । ফলে তাদের উৎসবাদি জাঁকজমক ও আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। তাদের এ সকল উৎসবাদির মধ্যে বসন্ত-পঞ্চমী, হোলিখেলা, দীপাবলী, শিবরাত্রি, রথযাত্রা, মেলা, বিভিন্ন পূজা ইত্যাদি । মুসলমান সমাজেও অনুরূপ বিভিন্ন উৎসব পালিত হতো । যেমন: – নওরোজ, শব-ই-বরাত, মহররম, উরস ইত্যাদি ।

দীর্ঘদীন যাবৎ হিন্দু-মুসলমানরা পাশাপাশি বসবাস করায় তাদের সামাজিক রীতি-নীতির উপর পারস্পরিক প্রভাবও পড়ে । বহু হিন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে । আবার মুসলমানদের মধ্যে অনেকে হিন্দু রমণীদের বিবাহ করে । বিশেষ করে, অনেক সুলতান ও আমীর-ওমরাহ এ ধরণের বিবাহের মাধ্যমে হিন্দু রমণীদের নিজ ঘরে আনেন। এতে ধর্মীয় ক্ষেত্রে পারস্পরিক প্রভাব যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, যার সামাজিক প্রতিক্রিয়া অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

দীল্লী সালতানাতের আমলে অর্থনৈতিক অবস্থাঃ

সম্পদ ও ঐশ্বর্যের দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী ভারতের খ্যাতি প্রাচীনকাল হতে । এদেশের অপরিসীম ঐশ্বর্য ও মণি-মানিক্য প্রাচীনকাল হতে বিদেশীদের আকৃষ্ট করে। এ সম্পদের লোভে ভারত বহুবার বিদেশী কর্তৃক আক্রান্ত হয়, লুন্ঠিত হয় । তবে ভারত এতে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কখনো নিঃস্ব হয়নি। ভারতের মাটি ও মানুষ সে ক্ষতি যথারীতি কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে পুষিয়ে নেয়। ভারতের এ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা বিভন্ন উৎস থেকে জানা যায় । যেমন:- চীনা পর্যটক মাহুয়ান, মরক্কো দেশীয় ইবনে বতুতা, ইটালিয় নিকোলাই কন্টি, পারসিক আঃ রাজ্জাক প্রমুখ পর্যটকদের বিবরণসহ দেশীয় সমসাময়িক অনেক লেখকের বিবরণ । এসকল বিবর থেকে দিল্লী সুলতানী সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধির কথা জানা যায়। তবে এ সকল বিবরণে শাসককুলের অর্থনৈতিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কথা প্রাধান্য পায়। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে, কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে কৃষকদের কথা এতে তেম


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক

প্রাচীন যুগের ন্যায় মধ্যযুগেও অর্থাৎ সুলতানী যুগেও ভারতের অর্থনীতির মেরুদন্ড ছিল কৃষি । সুলতানরা সাম্রাজ্য বিস্তারের মাধ্যমে ভূমি দখল করে কৃষির সম্প্রসারণ ও উন্নতির দিকে নজর দেয় ।কৃষির উন্নতির সাথে রাজস্ব বৃদ্ধির সম্পর্ক ছিল বিধায় কৃষির উন্নতির জন্য সুলতানরা ক্রমেই অধিক ফসল ফলানোর মাধ্যমে অধিক রাজস্ব সংগ্রহে আত্মনিয়োগ করেন। আমীর কোহি ছিলেন কৃষি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা । কৃষির উন্নতির জন্য সুলতানগণ কৃষকদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন । যেমন: – জলসেচ, খাল খনন, ঋণ প্রদান, বীজ ও বলদ সরবরাহ প্রভৃতি । কোথাও কোথাও একই জমিতে একই ফসল বছরে একাধিকবার ফলানো হতো বলে জানা যায় । ফসলের মধ্যে ধান, গম, যব, মটর, তুলা, আদা, আলু বিভিন্ন প্রকার ডাল ও মশলা উৎপাদন হতো । ফলের মধ্যে আম, জাম, কাঁঠাল, কমলা, আঙ্গুর, নারিকেল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । ফলের বাগান তৈরীতে সুলতানরা প্রশংসনীয় অবদান রাখতেন।

কৃষির উন্নতির পাশাপাশি শিল্পের উন্নতির দিকেও সুলতানদের গভীর মনোযোগ ছিল । শিল্পের মধ্যে তাঁত , রজত, চিনি, মিত্র, কাগজ, প্রস্তর, ইস্টক প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । কুঠির শিল্পের মধ্যে জুতা, তেল, ঝুড়ি , দড়ি , সুবা, অস্ত্র, সুগন্ধি প্রভৃতি শিল্প বিখ্যাত ছিল ।

কৃষি ও শিল্পের এ সকল উৎপাদন দেশের সমৃদ্ধির সহায়ক হলেও কৃষক ও শ্রমিকদের অবস্থান কেমন ছিল তা স্পষ্টভাবে জানা যায় না। তবে ভূমি কর হিসেবে এক-পশ্চমাংশ থেকে এক-তৃতীয়াংশ আদায়ের যে বিবরণ পাওযা যায় তা থেকে বোঝা যায় যে, তাদের অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না । জীবিকার জন্য তাদেরকে কঠিন পরিশ্রম করতে হতো । তাঁরা সহজ-সরল ছিল এবং সমাজে নিম্নমানের জীবন যাবন করত । সাধারণ মানুষের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে আমীর খশরু বলেন যে, Every pearl in the royal crown is but the crystalized drop of blood fallen from the tearful eyes of the poor peasants.
তবে অভিজাত শ্রেণী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা উন্নত জীবন-যাপন করত । তারা ভোগ বিলাসে কাটাতো । অবশ্য বলবন ও আলাউদ্দি খলজীর কঠোর ব্যবস্থায় অভিজাত শ্রেণীর ভোগ বিলাশে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত হয় ।

অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের আর এক অংশীদার ছিল ব্যবসায়ীরা । যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ব্যবসায় বাণিজ্যেরও ব্যাপক উন্নতি হয়। ব্যবসায় বাণিজ্যেকে কেন্দ্র করে শহর-নগরের সৃষ্টি হয়্ বাংলার রেশম ও সূতীবস্ত্র বিদেশে রপ্তানী হয় । অন্যান্য এলাকা থেকে তুঁত, আফিম, নীল, মশলা প্রভৃতি দেশের সাথে ব্যবসায় বাণিজ্যে চলত । স্থলপথে ভারতের সঙ্গে মধ্য এশিয়া , আফগানিস্তান, পারস্য , তিব্বত ও ভূটান এবং সমুদ্রপথে চীন, মালয়দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি দেশের সাথে ব্যবসায় বাণিজ্য চলত । এ সকল বাণিজ্যের মাধ্যমে বিদেশ থেকে ভারতে প্রচুর পরিমাণে সোন আমদানী হতো ।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment