দারিদ্র বিমোচনে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ, দারিদ্র বিমোচনের উপায়, বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র,দারিদ্র্য বিমোচনে এনজিওর ভূমিকা,দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা

প্রশ্ন সমাধান:দারিদ্র বিমোচনে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ

ভূমিকা : সমসাময়িককালে দারিদ্র্য একটি বহুল আলোচিত বিষয়, যা মানবতার প্রতি একটি বড় অভিশাপ। আধুনিক মানবসভ্যতার বিকাশে দারিদ্র্য একটি মারাত্মক অন্তরায়। অনুন্নত ও তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহের বিশেষ করে বাংলাদেশের অনুন্নয়নের অন্যতম প্রধান কারণ হলো দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের দিক থেকে শীর্ষ স্থানীয় ১৩টি দেশের একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। এ কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু প্রায় ৬৫০০ টাকা বিশ্ব ব্যাংকের ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ভূমিষ্ঠ হচ্ছে। আর এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে বর্তমান বিশ্বে ‘দারিদ্র্য বিমোচন’ (Poverty Alleviation) একটি সামাজিক ন্দোলনে (Social Movement) রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।


দারিদ্র্য বিমোচনে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ : নিম্নে এ গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :


সরকারি পদক্ষেপসমূহ : দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধিসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন আবশ্যক। দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর যাতে দরিদ্রতা লাঘব ও টেকসই উন্নয়ন হয়, সেজন্য তাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সাথে সাথে মাথাপিছু আয় এবং সঞ্চয় বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি গ্রহণ আবশ্যক। দারিদ্র্যের কর্মসংস্থান আয় বৃদ্ধি ও তাদের উন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি নানা পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। এসব কর্মসূচি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের ক্ষমতায়ন ও সচেতনতার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো :


১. নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি : চরম দারিদ্র্যে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে অনাহার থেকে বাঁচানো এবং তাদের আয় বর্ধনকারী কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার প্রতিবছর রাজস্ব বাজেট হতে প্রচুর সম্পদের সংস্থান করেছে। ১৯৯০/৯১ ও ১৯৯৭/৯৮ অর্থ বছরে কি পরিমাণ সম্পদ কাজের বিনিময়ে খাদ্য, ডিজিডি, ডিজিএফ ইত্যাদি কর্মসূচি বাবদ ব্যবহার করেছে তার বিবরণ নিম্নে প্রদত্ত হলো :


আরো ও সাজেশন:-

Document 1

২. বিশেষ কর্মসূচি : ১৯৯৭/৯৮ সালের রাজস্ব বাজেটে দারিদ্র্য বিমোচনে নির্দিষ্ট ৩টি কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্যান্য খাতের নিয়মিত 

বরাদ্দের অতিরিক্ত এ ৩টি কর্মসূচি সরাসরি দারিদ্র্য লাঘবে অবদান রাখছে। কর্মসূচি ৩টি হলো :
ক. বয়স্ক ভাতা : দেশের প্রতিটি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে সর্বোপেক্ষা ১০ জন বয়োজ্যেষ্ঠ ও দরিদ্র ব্যক্তিকে মাসিক ১০০ টাকা হারে বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হয়। এ ১০ জনের মধ্যে ৫°জন অন্তত মহিলা থাকছে। এর ফলে দেশের লক্ষাধিক দরিদ্র ব্যক্তি উপকৃত হচ্ছে। ১৯৯৭/৯৮ সালের বাজেটে ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তবে ২০০৩/২০০৪ সালের বাজেটে বয়স্ক ভাতার পরিমাণ ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা করা হয়েছে এবং সংখ্যা ৪ থেকে ৫ লক্ষে উন্নীত করা হয়েছে।


খ. গৃহায়ন তহবিল : দরিদ্র লোকদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার জন্য গৃহায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। গৃহায়ন তহবিলের জন্য ১৯৯৭/৯৮ অর্থ বছরের রাজস্ব বাজেটে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তহবিল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থমন্ত্রী, গৃহায়ন ও পূর্তমন্ত্রী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও D.G. এবং সরকার কর্তৃক মনোনীত ২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব নিয়ে একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়।


গ. কর্মসংস্থান ব্যাংক : অপরদিকে, কর্মসংস্থান ব্যাংক দেশের বেকার যুবকদের বিভিন্ন লাভজনক ও উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে ২২ মে ১৯৯৮ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ করেছে। এ উৎসাহী কর্মকাণ্ড আমাদের দেশের দারিদ্র্যকে অনেকাংশে লাঘব করেছে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

৩. কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি : এ কর্মসূচির অধীনে যখন মানুষের কাজকর্মের অভাব দেখা যায়, তখন সরকার তার বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে দারিদ্র্য লোকদের নিয়োগ করে বিনিময়ে খাদ্য প্রদান করে থাকে।


৪. শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি : দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সন্তানদের কাজে নিয়োগের পরিবর্তে বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে এ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দশম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদেরকে বিভিন্ন হারে উপবৃত্তিও প্রদান করা হচ্ছে।


৫. আশ্রায়ন প্রকল্প : চরম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল সুবিধা এবং আয়ের পথ উন্মুক্ত করার জন্য সরকার এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যেমন- ‘গুচ্ছ গ্রাম’ ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ ।


৬. পল্লি অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি : স্থানীয় সরকার ও পল্লিউন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়াধীন এ অধিদপ্তর বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে বিশেষ করে পল্লি অঞ্চলে গ্রামীণ সড়ক, গ্রোথ সেন্টার, বাঁধ নির্মাণ, প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। এতে করে পল্লি অঞ্চলে অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। ১৯৯৮/৯৯ অর্থ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২২ কোটি শ্রম দিবসের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে।


৭. পল্লিউন্নয়ন একাডেমি : বাংলাদেশ পল্লিউন্নয়ন একাডেমি কুমিল্লা, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী জেলার ১৯টি প্রত্যন্ত থানাসহ ২২টি থানার ক্ষুদ্র কৃষক ও ভূমিহীন শ্রমিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ১৯৯৮ সালের ৫০,৫৯৮ জন সদস্যের মধ্য মোট ৪১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।


৮. পল্লিউন্নয়ন বোর্ড (BARD) : সমগ্র দেশব্যাপী সমবায় ও group network এর মাধ্যমে ও BRDB বাংলাদেশ সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা পল্লিউন্নয়ন বিশেষ করে পল্লি দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম শুরু করেছে। দারিদ্র্যের target group এর মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র কৃষক, বিত্তহীন পুরষ, মহিলা, এছাড়া ঋণ প্রশিক্ষণ
কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মসূচি।


উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, দারিদ্র্য শুধুমাত্র দেশের নয় সারাবিশ্বের একটি সমস্যা। এ থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নতুবা দেশ এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পতিত হবে।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment