তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

আপনার জন্য: আল কোরআনের অনুবাদ ও প্রতিটি সূরার ফজিলত ও তরজমা

ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফযীলত সবচেয়ে বেশী (আহমাদ, মেশকাত ১১০ পৃঃ)


রাসুল (সাঃ) বলেন, আমাদের প্রভু পরওয়ারদিগার তাবারাকা ওয়া তা’আলা প্রত্যেক রাত্রে দুনিয়ার আসমানে (যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়) নেমে আসেন যখন রাত্রের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকে ।

অতঃপর তিনি বলেন, তোমাদের কে আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দেব । কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দেব, কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব (মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)


রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে নামায পড়ায় এমনকি সে যদি জেগে না উঠে, তবে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করে থাকেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের ৭০টি ফজিলত

অনুরুপ কোন মহিলা যদি রাত্রিকালে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে এবং সে তার স্বামীকে নামাযের জন্য জাগায় এমনকি স্বামী না জাগলে স্ত্রী তার মুখে পানি ছিটিয়ে তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতিও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে (আবু দাউদ, নাসায়ী, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)
রাসুল (সাঃ) বলেন, আল্লাহর নিকট অতি প্রিয় নামায দাউদ (আঃ) এর নামায। তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন এবং রাতেন তৃতীয় ভাগে নামাযে দাঁড়াতেন আর ৬ষ্ঠ ভাগে আবার ঘুমাতেন (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)

কেয়ামতের ভয়াবহ বিপর্যয় ও কঠিন হিসাব-নিকাশের দিবসে কোন ব্যক্তি যদি সহজ হিসাব কামনা করে, তবে তার উচিত হবে নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া। শ্রেষ্ঠতম মুফাসিসরে কোরআন আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (র.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হাশরের ময়দানে সহজ হিসাব কামনা করে, তার উচিত হবে আল্লাহ যেন তাকে রাত্রির অন্ধকারে সেজদারত ও দাঁড়ানো অবস্থায় পান। তার মধ্যে পরকালের চিন্তা ও রহমতের প্রত্যাশাও থাকা দরকার। (তাফসিরে কুরতুবি, মা’আরেফুল কোরআন, ক্বিয়ামুল লাইল)।

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।’ তাইতো কবি বলেছেন, ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা ভবে’।

যারা ঈমাণের সঙ্গে মারা যাবে জাহান্নাম তাদের জন্য হারাম। জান্নাতের সুসংবাদ তাদের জন্যই। তাই মৃত্যুর আগেই ঈমান নিয়ে মৃত্যু বরণ করার আমল করা জরুরি।

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের ফজিলত

আবার ঈমানি মৃত্যুর পাশাপাশি জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের আমলও অধিক প্রয়োজন। ‘ঈমানি মৃত্যু ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি’ এক সঙ্গে দুই আমলের এক সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে মুসলিম উম্মাহর জন্য।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের জন্য ওঠে কুরআনের এ আয়াতসহ সুরা আল-ইমরানের শেষ পর্যন্ত পড়তেন। যা পড়া সুন্নাত। (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব,তাহাজ্জুদ নামাজের পর আমল

رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ – رَبَّنَا إِنَّكَ مَن تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ – رَّبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلإِيمَانِ أَنْ آمِنُواْ بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الأبْرَارِ

উচ্চারণ : রাব্বানা মা খালাক্বতা হা-যা বা-ত্বিলান, সুবহা-নাকা ফাক্বিনা ‘আযাবাননা-র।

রাব্বানা ইন্নাকা মান তুদখিলিননা-রা ফাক্বাদ্ আখঝাইতাহু, ওয়া মালিজজ্বা-লিমী-না মিন্ আনছা-র।

রাব্বানা ইন্না-না সামি’না মুনা-দিআই ইউনা-দী লিলঈমা-নি আন আ-মিনু বিরাব্বিকুম ফা আ-মান্না;

রাব্বানা ফাগফিরলানা যুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সাইয়্যেআ-তিনা ওয়া তাওয়াফ্ফানা মাআ’ল আবরা-র।

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। পবিত্রতা তোমারই জন্য। আমাদেরকে তুমি জাহানড়বামের শাস্তি থেকে বাঁচাও। হে প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি যাকে জাহানড়বামে নিক্ষেপ কর তাকে অপমানিত কর। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।

তাহাজ্জত নামাজের ফজিলত ও বরকত

হে আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান আনার জন্য একজন আহবানকারীকে আহবান করতে শুনে ঈমান এনেছি।

হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদের সকল গোনাহ মাফ করে দাও। আমাদের সকল দোষ-ত্রুটি দূর করে দাও। আর নেক লোকদের সঙ্গে আমাদের মৃত্যু দাও।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৯১-১৯৩)

আমলের উৎস
আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি ও সৃষ্টি জগতের ওপর চিন্তা-গবেষণা করে তার মাহাত্ম্য ও সুমহান কুদরত সম্পর্কে জানা একটি মহান ইবাদত।

আল্লাহর কুদরত সম্পর্কে গবেষণা করে জ্ঞানার্জন না করা চরম নির্বুদ্ধিতার শামিল। আল্লাহ তাআলার জগত ও সব বস্তু সৃষ্টির পিছনে নিহিত রয়েছে হাজারো তাৎপর্য।

আল্লাহর মহত্ম ও কুদরত সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা না করে বেপরোয়া জীবন যাপন করে যেন জাহান্নামে যেতে না হয়; সে বিষয়ে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ঈমানদারদের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।

ঈমানদারগণ যাতে আল্লাহর সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করার মাধ্যমে জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি লাভ করে; হাশরের ময়দানে লাঞ্ছিত ও অপমানিত না হয় এবং ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু বরণ করে। এ আয়াতে কারিমাগুলো সে নির্দেশনায় রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব ঈমানদার আল্লাহ ও রাসুল প্রেমিকদেরকে এ আয়াতগুলোসহ সুরা আল ইমরানের শেষ পর্যন্ত আয়াতগুলোর মাধ্যমে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। ঈমানি মৃত্যু ও জাহান্নাম মুক্তি দান করুন।

আপনার জন্য: আল কোরআনের অনুবাদ ও প্রতিটি সূরার ফজিলত ও তরজমা

Leave a Comment