তমদ্দুন মজলিস কি? | তমদ্দুন মজলিস বলতে কী বুঝ? |তমদ্দুন মজলিস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর

তমদ্দুন মজলিস কি? | তমদ্দুন মজলিস বলতে কী বুঝ? |তমদ্দুন মজলিস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর


আমাদের ভাষা আন্দোলনের সূচনা এবং এর বিকাশ ও পরিণতি লাভের পুরো অধ্যায়জুড়েই তমদ্দুন মজলিসের অবদান অনস্বীকার্য। সে সময় তমদ্দুন মজলিসের মাধ্যমেই এই আন্দোলনে সবাই সম্পৃক্ত হন। এই আন্দোলনই ছিল ভাষা আন্দোলনের মূলধারা। তখনকার ছাত্র-যুবক সবাই এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। তরুণ সমাজের আকাক্সক্ষার সাথে তমদ্দুন মজলিসের আন্দোলন এক হয়ে যায়। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পরবর্তীকালে বিভিন্ন ভাবধারায় বিভক্ত হলেও সূচনায় তা ছিল না। প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম তমদ্দুন মজলিসের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর একটি পুস্তিকা আকারে ভাষা আন্দোলনের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন।

১৮ পৃষ্ঠার এই পুস্তিকার নাম ছিল ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’। এতে প্রফেসর আবুল কাসেম, কাজী মোতাহার হোসেন এবং আবুল মনসুর আহমদের তিনটি প্রবন্ধ প্রকাশ হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় প্রফেসর আবুল কাসেম ১৯ আজিমপুরে তার বাসভবনে স্থাপিত তমদ্দুন মজলিসের অফিসে এ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ঘোষণাপত্রের মূল বিষয় ছিল :

১. পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে দু’টিÑ বাংলা ও উর্দু,

২. পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার মাধ্যম, অফিস আদালতের ভাষা হবে বাংলা। উর্দু ও ইংরেজি হবে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাষা।

৩. রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি মেনে না নেয়ার পরিণামে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হবে।

৪. বাংলার দাবি না মানা হলে লাহোর প্রস্তাব অনুসারে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অথবা স্বাধিকার আদায়ের পথ প্রশস্ত হবে।

৫. বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে না নেয়া হলে দেশবাসীকে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করতে হবে। প্রত্যেক স্কুল-কলেজ, নগর-বন্দরে সভা করে ভাষাকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে হবে।


বস্তুত তমদ্দুন মজলিসের এই ঘোষণাপত্রের মধ্যেই স্বাধীনতার বীজ লুক্কায়িত ছিল বলে পরে অনেকে মনে করেন। প্রফেসর আবুল কাসেম এ ঘোষণাপত্র পাঠ করে বলেন, উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টাকে সর্বপ্রকারে বাধা দিতে হবে।

এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রকাশিত পুস্তিকায় ব্যাপক আমরা কয়েকজন লব্ধপ্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকের প্রবন্ধ প্রকাশ করেছি এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যেককে এ আন্দোলনে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

ঘোষণাপত্র পাঠের পর সেখানে উপস্থিত সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান তিনি। যেকোনো ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ছিল সেই শপথবাক্যের মধ্যে।


তমদ্দুন মজলিসের এ পুস্তিকা সেদিন সমাজে নতুন চেতনা সৃষ্টি করে। তাই ভাষা আন্দোলনের ভিত্তি ছিল এই পুস্তিকা। প্রফেসর আবুল কাসেমের ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে সেদিন উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এ কে এম আহসান, নুরুল হক ভূঁইয়া, শামসুল আলম, আব্দুল মতিন খান চৌধুরী, ফজলুর রহমান ভূঁইয়া, কবি মোফাখখারুল ইসলাম প্রমুখ।


ভাষা আন্দোলনের ঘোষণাপত্র পাঠের পর কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেগুলো ছিল প্রত্যেক স্কুল-কলেজ, শহরে-বন্দরে সমাবেশের আয়োজন করে মাতৃভাষা রক্ষার তাৎপর্য এবং অপর ভাষা চাপিয়ে দিলে পরিণতি কী হতে পারে তা তুলে ধরা এবং গণপরিষদের প্রত্যেক সদস্যকে বাংলার পক্ষে আনার ব্যবস্থা করা।

Leave a Comment