জুমুআর দিনে ও রাতে বেশী বেশী দরুদ পাঠ করার ফজিলত, জুমার দিনে দরুদ পাঠে রয়েছে যে বিশেষ ফজিলত, জুমার দিনে দরুদ শরীফ পড়ার ফজিলত

জুমুআর দিনে ও রাতে বেশী বেশী দরুদ পাঠ করার ফজিলত!!!

জুমআর রাতে (বৃহ্‌স্পতিবার দিবাগত রাতে) ও (জুমআর) দিনে প্রিয়তম হাবীব মহানবী (সাঃ)-এর শানে অধিকাধিক দরুদ পাঠ করা কর্তব্য।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল, জুমআর দিন। এই দিনে তোমরা আমার প্রতি দরুদ পাঠ কর।

যেহেতু তোমাদের দরুদ আমার উপর পেশ করা হয়ে থাকে। (আবূদাঊদ, সুনান ১৫৩১নং)

তিনি আরো বলেন, “জুমআর রাতে ও দিনে তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দরুদ পাঠ কর।

আর যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে, সে ব্যক্তির উপর আল্লাহ ১০ বার রহ্‌মত বর্ষণ করবেন।” (বায়হাকী, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৪০৭নং

জুমআর দিনের অন্যতম আমল হলো প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরূদ পড়া। দরূদের আমল জারি করা। দরূদ পড়ার প্রতি মুমিন মুসলমানকে আগ্রহী করে তোলা। কুরআনুল কারিমে দরূদ পড়ার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِىِّ ۚ يَٰأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ صَلُّوا۟ عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا۟ تَسْلِيمًا
আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৬)

কুরআনুল কারিমের এ নির্দেশনা মুমিন মুসলমানের জন্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পড়ার মর্যাদা ও ফজিলত অনেক। আর জুমআর দিন দরূদ পড়ায় রয়েছে বিশেষ ফজিলত ও নির্দেশ। হাদিসে এসেছে-

– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‌জুমআর দিন আমার ওপর বেশি বেশি দরূদ পাঠাও। এ দিন দরূদ পাঠের সময় ফেরেশতা উপস্থিত হন এবং এ দরূদ আমার সমীপে পেশ করা হয়।’ (ইবনে মাজাহ)

– হজরত আওস ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সব দিন অপেক্ষা জুমআর দিনটিই হলো শ্রেষ্ঠ। এদিন হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এবং এ দিনেই বিশ্ব ধ্বংসের জন্য শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে এবং এ দিনেই পুনর্জীবিত করার জন্য দ্বিতীয়বার ফুঁক দেয়া হবে। এ দিন তোমরা আমার প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ কর।
তোমাদের দরূদ নিশ্চয়ই আমার কাছে উপস্থিত করা হবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দরূদ আপনার কাছে কেমন করে উপস্থিত করা হবে অথচ আপনি তখন মাটি হয়ে যাবেন?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, ‌আল্লাহ তাআলা নবিদের শরীর জমিনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, বাইহাকি)

– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমআর দিন (শুক্রবার) এবং জুমুআ রাতে (বৃহস্পতিবার রাতে) তাঁর জন্য প্রচুর পরিমাণে দরূদ পাঠ কর। যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তার প্রতি ১০টি রহমত নাজিল করন।’ (সহিহ জামে) সুতরাং জুমআর দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরূদ পড়ুন-
‎اَللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّد
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রহমত ও শান্তি দান করুন।’

– হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার ওপর জুমআর দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ আমার উম্মতের দরুদ জুমআর দিন আমার কাছে পৌঁছানো হয়। যে ব্যক্তি আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠাবে সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন সবচেয়ে আমার নিকটতম হবে।’ (তারগিব)

– হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জুমআর দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ জিবরিল আলাইহিস সালাম এইমাত্র আল্লাহ তাআলার বাণী নিয়ে হাজির হলেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘পৃথিবীতে যখন কোনো মুসলমান আপনার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে আমি তার ওপর দশবার রহমত নাজিল করি এবং আমার সব ফেরেশতা তার জন্য দশবার ইস্তেগফার করে।’ (তারগিব)

– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার ওপর দরুদ পাঠ করা পুলসিরাত পার হওয়ার সময় আলো হবে। যে ব্যক্তি জুমআর দিন ৮০ বার দরুদ পড়ে তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’

অন্য রেওয়াতে নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমআর দিন আসরের নামাজের পর নিজ স্থান থেকে ওঠার আগে ৮০ বার এই দরুদ শরিফ পাঠ করে-
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ وَعَلَى آلِهِ وَسَلِّم تَسْلِيْمَا
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া সাল্লিমু তাসলিমা।’
তার ৮০ বছরের গোনাহ্ মাফ হবে এবং ৮০ বছর ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে। সুবহানাল্লাহ! (আফজালুস সালাওয়াত)

– হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর জুমআর দিন ১০০ বার দরুদ পাঠ করে, সে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় নূরের জ্যোতি দেখে লোকেরা বলাবলি করতে থাকবে এই ব্যক্তি কী আমল করেছিল!’ (কানজুল উম্মাল)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমআর এ পবিত্র ও ফজিলতপূর্ণ দিনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরূদ পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করে ঘোষিত ফজিলত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Comment