‘ছয় দফা: বাঙালির মুক্তিসনদ’, ৬ দফা কর্মসূচিকে কেন বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বলা হয়,বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা, ভাষা আন্দোলন-স্বায়ত্বশাসন থেকে স্বাধীনতা: ছয় দফার সফলতা

প্রশ্ন সমাধান: ‘ছয় দফা: বাঙালির মুক্তিসনদ’, ৬ দফা কর্মসূচিকে কেন বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বলা হয়,বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা, ভাষা আন্দোলন-স্বায়ত্বশাসন থেকে স্বাধীনতা: ছয় দফার সফলতা

ছয় দফা কর্মসূচি বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বলা হয় কেন?

১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত পাকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হলেও স্বাধীন হয়নি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশ। ভারত পাকিস্তান বিভক্ত হলে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের অন্তভূক্ত হয়ে থাকে। বাঙালীদের উপর ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের বৈষম্য, শোষণ-নিপীড়ন, জোড়-জুলুম, অন্যায়-অত্যাচার শেষ হয়ে গেলে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালীদের উপর চরম বৈষম্য, অন্যায়-অত্যাচার শুরু করে।

তারই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদেরা এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে এবং ১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী আওয়ামীলীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয়দফা দাবি আদায়ের লক্ষে কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আমাদের বাঁচার দাবি ৬ দফা কর্মসূচি শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রচার করা হয়। ক্রমান্বয়ে ছয় দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন গড়ে উঠে। আর তাই ছয় দফা দাবিকে বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ বলা হয় এবং এটিকে ইংল্যান্ডের রাজা জন কতৃক স্বীকৃত ম্যাগনাকার্টার সাথে তুলনা করা হয়।


আরো ও সাজেশন:-

ছয়-দফা কর্মসূচিকে গুলো কি কি

১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত পাকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হলেও স্বাধীন হয়নি তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশ। ভারত পাকিস্তান বিভক্ত হলে পূর্বপাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের অন্তভূক্ত হয়ে থাকে। বাঙালীদের উপর ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের বৈষম্য, শোষণ-নিপীড়ন, জোড়-জুলুম, অন্যায়-অত্যাচার শেষ হয়ে গেলে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালীদের উপর চরম বৈষম্য, অন্যায়-অত্যাচার শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদেরা এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে এবং ১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী আওয়ামীলীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয়দফা দাবি আদায়ের লক্ষে কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ৬-দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রচার করা হয়। ক্রমান্বয়ে ছয় দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন গড়ে উঠে। আর তাই ছয় দফা দাবিকে বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ বলা হয় এবং এটিকে ইংল্যান্ডের ”রাজা জন” কতৃক স্বীকৃত ম্যাগনাকার্টার সাথে তুলনা করা হয়। নিম্নে ছয় দফার দাবিগুলো তুলে ধরা হলোঃ

প্রথম দফাঃ শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি

১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান হবে যুক্তরাষ্ট্রীয় ও সংসদীয় পদ্ধতীর সরকার। আইন পরিষদ নির্বাচিত হবে জনগণের সরাসরি ভোটে এবং আইন পরিষদ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী থাকবে।

দ্বিতীয় দফাঃ কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা

কেন্দীয় সরকারের ক্ষমতা শুধু প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক নীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে এবং বাকি সকল ক্ষমতা অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে বহাল থাকবে।

তৃতীয় দফাঃ মুদ্রা ও অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা

পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে যাতে মুদ্রা পাচার না হয় এজন্য পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সহজে বিনিময়যোগ্য দুটি পৃথক মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং মুদ্রার পরিচালনা ক্ষমতা আঞ্চলিক সরকারের হাতে ন্যাস্ত থাকবে। অথবা এর বিকল্প হিসেবে একটি মুদ্রা ব্যবস্থা চালু থাকবে এই শর্তে যে, একটি কেন্দীয় রিজার্ভ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার অধীনে দুই অঞ্চলে দুইটি রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে এবং মূলধন পাচার বন্ধ করার জন্য কার্যকরী সাংবিধানিক ব্যবস্থা থাকতে হবে।

চতুর্থ দফাঃ কর, রাজস্ব ও শুল্ক বিষয়ক ক্ষমতা

অঙ্গরাজ্যগুলির কর ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। দুই অঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পৃথক হিসাব থাকবে এবং অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা রাজ্যের হাতে থাকবে। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গরাজ্যগুলির করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।

পঞ্চম দফাঃ বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা

০১। অঙ্গরাজ্যগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পৃথক হিসাব থাকবে।

০২। অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলির হাতে থাকবে।

০৩। কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অঙ্গরাজ্যগুলিই মিটাবে।

০৪। রাজ্যগুলির মধ্যে দেশিয় পণ্য বিনিময়ে কোনো শুল্ক ধার্য করা হবে না।

০৫। রাজ্যগুলোর হতে অন্যকোনো রাষ্ট্রের সাথে আন্তজার্তিক বাণিজ্য করার ক্ষমতা থাকবে।

০৬। শাসনতন্ত্রের অন্তভূক্ত অঙ্গরাজ্যগুলো বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারবে।

০৭। অঙ্গরাজ্যগুলোর নিজেদের প্রয়োজনে বানিজ্যিক চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে।

ষষ্ঠ দফাঃ আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন সংক্রান্ত ক্ষমতা

আঞ্চলিক সংহতি ও প্রতিরক্ষার জন্য অঙ্গরাজ্যগুলিতে আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন করার ক্ষমতা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় নৌবাহিনীর সদর দপ্তর পূর্ব পাকিস্তানে তথা বর্তমান বাংলাদেশে স্থাপন করতে হবে এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্র কারখানা স্থাপন করতে হবে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

ছয় দফা দাবির আত্মপ্রকাশ

১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর বাসভবনে কাউন্সিল মুসলিম লীগের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আফজালের সভাপতিত্বে বিরোধীদলের সম্মেলন শুরু হয়। সাবজেক্ট কমিটির এই সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি পেশ করেন। প্রস্তাব গৃহীত হয় না। পূর্ব বাংলার ফরিদ আহমদও প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

৬ই ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকটি পত্রিকা এ দাবি সম্পর্কে উল্লেখ করে বলে যে, পাকিস্তানের দুটি অংশ বিচ্ছিন্ন করার জন্যই ৬-দফা দাবি আনা হয়েছে। ১০ই ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাংবাদিক সম্মেলন করে এর জবাব দেন। ১১ই ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। বিমান বন্দরেই তিনি সাংবাদিকদের সামনে ৬-দফা সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরেন।

৬-দফা দাবিতে পাকিস্তানের প্রত্যেক প্রদেশকে স্বায়ত্বশাসন দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের অন্যান্য রাজনৈতিক দল এ দাবি গ্রহণ বা আলোচনা করতেও রাজি হয়নি। বঙ্গবন্ধু ফিরে আসেন ঢাকায়।

আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটিতে ৬-দফা দাবি পাশ করা হয়। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে এ দাবি গ্রহণ করা হয়। ব্যাপকভাবে এ দাবি প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয় দলের নেতৃবৃন্দ সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান সফর করে জনগণের কাছে এ দাবি তুলে ধরবেন। ৬-দফা দাবির ওপর বঙ্গবন্ধুর লেখা একটি পুস্তিকা দলের সাধারণ সম্পাদকের নামে প্রকাশ করা হয়। লিফলেট, প্যাম্ফলেট, পোস্টার ইত্যাদির মাধ্যমেও এ দাবিনামা জনগণের কাছে তুলে ধরা হয়।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

কেন ছয় দফা দাবি

১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল সে যুদ্ধের সময় পূর্ববঙ্গ বা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এ অঞ্চলের সুরক্ষার কোন গুরুত্বই ছিল না। ভারতের দয়ার উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল পূর্ব বাংলাকে।

ভারত সে সময় যদি পূর্ববঙ্গে ব্যাপক আক্রমণ চালাত, তাহলে ১২শ মাইল দূর থেকে পাকিস্তান কোনভাবেই এ অঞ্চলকে রক্ষা করতে পারত না। অপরদিকে তখনকার যুদ্ধের চিত্র যদি পর্যালোচনা করি, তাহলে আমরা দেখি পাকিস্তানের লাহোর পর্যন্ত ভারত দখল করে নিত যদি না বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈনিকেরা সাহসের সঙ্গে ভারতের সামরিক আক্রমণের মোকাবেলা করত।

পূর্ব পাকিস্তানে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর কোন শক্তিশালী ঘাঁটি কখনও গড়ে তোলা হয়নি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৪ ডিভিশনের একটা হেড কোয়ার্টার ছিল খুবই দুর্বল অবস্থায়। আর সামরিক বাহিনীতে বাঙালির অস্তিত্ব ছিল খুবই সীমিত। ১৯৫৬ সালে দৈনিক ডন পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বাঙালিদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছিল।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

ছয় দফার প্রতি জনসমর্থন

আইয়ুব খানের নির্যাতন-নিপীড়নের পটভূমিতে যখন ৬-দফা পেশ করা হয়, অতি দ্রুত এর প্রতি জনসমর্থন বৃদ্ধি পেতে থাকে। আমার মনে হয় পৃথিবীতে এ এক বিরল ঘটনা। কোন দাবির প্রতি এত দ্রুত জনসমর্থন পাওয়ার ইতিহাস আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সমগ্র পূর্ব বাংলা সফর শুরু করেন। তিনি যে জেলায় জনসভা করতেন সেখানেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হত, গ্রেপ্তার করা হত। জামিন পেয়ে আবার অন্য জেলায় সভা করতেন। এভাবে পরপর ৮ বার গ্রেপ্তার হন মাত্র দুই মাসের মধ্যে। এরপর ১৯৬৬ সালের ৮ই মে নারায়ণগঞ্জে জনসভা শেষে ঢাকায় ফিরে আসার পর ধানমন্ডির বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। ৯ই মে তাঁকে কারাগারে প্রেরণ করে। একের পর এক মামলা দিতে থাকে।

একইসঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা শুরু হয়। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে ছাত্রনেতা, শ্রমিক নেতাসহ অগণিত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে মামলা দায়ের করে।

১৯৬৬ সালের ১৩ই মে আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ দিবস পালন উপলক্ষে জনসভা করে। জনসভায় জনতা ছয় দফার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। ৩০-এ মে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির (ওয়ার্কিং কমিটি) সভা হয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী। ৭ই জুন প্রদেশব্যাপী হরতাল ডাকা হয় এবং হরতাল সফল করার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের অনেক সভা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমণ্ডির বাড়িতে অনুষ্ঠিত হত।

৭ই জুনের হরতালকে সফল করতে আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ছাত্র নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে তিনি দিক-নির্দেশনা দেন। শ্রমিক নেতা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব ধরনের সহযোগিতা করেছিলেন। পাকিস্তানি শাসকদের দমনপীড়ন-গ্রেপ্তার সমানতালে বাড়তে থাকে। এর প্রতিবাদে সর্বস্তরের মানুষ এক্যবদ্ধ হয়। ছয় দফা আন্দোলনের সঙ্গে পূর্ব বাংলার সকল স্তরের মানুষ – রিক্সাওয়ালা, স্কুটারওয়ালা, কলকারখানার শ্রমিক, বাস-ট্রাক-বেবিটেক্সি চালক, ভ্যান চালক, দোকানদার, মুটে-মজুর – সকলে এ আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন।

পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ও রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান যে কোন উপায়ে এই আন্দোলন দমন করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেয় পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানকে।

কিন্তু তাদের শত নির্যাতন উপেক্ষা করে বাংলাদেশের মানুষ ৭ই জুনের হরতাল পালন করে ৬ দফার প্রতি তাঁদের সমর্থন জানিয়ে দেন। পাকিস্তান সরকার উপযুক্ত জবাব পায়। দুঃখের বিষয় হল বিনা উস্কানিতে জনতার উপর পুলিশ গুলি চালায়। শ্রমিক নেতা মনু মিয়াসহ ১১ জন নিহত হন। আন্দোলন দমন করতে নির্যাতনের মাত্রা যত বাড়তে থাকে, সাধারণ মানুষ ততবেশি আন্দোলনে সামিল হতে থাকেন।

৭ই জুন হরতাল সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন: ”১২ টার পরে খবর পাকাপাকি পাওয়া গেল যে হরতাল হয়েছে। জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করেছেন। তাঁরা ৬-দফা সমর্থন করে আর মুক্তি চায়। বাঁচতে চায়, খেতে চায়, ব্যক্তি স্বাধীনতা চায়, শ্রমিকের ন্যায্য দাবি, কৃষকদের বাঁচার দাবি তাঁরা চায়, এর প্রমাণ এই হরতালের মধ্যে হয়েই গেল” (কারাগারের রোজনামচা পৃ: ৬৯)।

১৯৬৬ সালের ১০ ও ১১ই জুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় হরতাল পালনের মাধ্যমে ছয় দফার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করায় ছাত্র-শ্রমিক ও সাধারণ জনগণকে ধন্যবাদ জানানো হয়। পূর্ববঙ্গের মানুষ যে স্বায়ত্বশাসন চায়, তারই প্রমাণ এই হরতালের সফলতা। এ জন্য সভায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। ১৭, ১৮ ও ১৯-এ জুন নির্যাতন- নিপীড়ন প্রতিরোধ দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীর বাড়িতে বাড়িতে কালো পতাকা উত্তোলন এবং তিন দিন সকলে কালো ব্যাচ পড়বে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। হরতালে নিহতদের পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্য এবং আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য একটা তহবিল গঠন এবং মামলা পরিচালনা ও জামিনের জন্য আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের সমন্বয়ে একটি আইনগত সহায়তা কমিটি গঠন করা হয়। দলের তহবিল থেকে সব ধরনের খরচ বহন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আন্দোলনের সকল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ছয় দফা দাবির ভিত্তিতে স্বায়ত্বশাসনের আন্দোলন আরও ব্যাপকভাবে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সভা, সমাবেশ, প্রতিবাদ মিছিল, প্রচারপত্র বিলিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এই দাবির প্রতি ব্যাপক জনমত গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়।

এদিকে সরকারি নির্যাতনও বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে যত বেশি নির্যাতন আইয়ুব-মোনায়েম গং-রা চালাতে থাকে, জনগণ তত বেশি তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং সকল নিপীড়ন উপেক্ষা করে আরও সংগঠিত হতে থাকেন।

১৯৬৬ সালের ২৩ ও ২৪-এ জুলাই আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং আন্দোলন দ্বিতীয় ধাপে এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ আন্দোলন কেন্দ্র থেকে জেলা, মহকুমা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে, তীব্রতর হতে থাকে।

সরকারও নির্যাতনের মাত্রা বাড়াতে থাকে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্তদের একের পর এক গ্রেপ্তার করতে থাকে। অবশেষে একমাত্র মহিলা সম্পাদিকা অবশিষ্ট ছিলেন। আমার মা সিদ্ধান্ত দিলেন তাঁকেই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হোক। আওয়ামী লীগ সে পদক্ষেপ নেয়।


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক

ভাষা আন্দোলন-স্বায়ত্বশাসন থেকে স্বাধীনতা: ছয় দফার সফলতা

গণআন্দোলনে আইয়ুব সরকারের পতন ঘটে। ক্ষমতা দখল করে সেনাপ্রধান ইয়াহিয়া খান। ছয় দফার ভিত্তিতে ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সমগ্র পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

১৯৭০ সালের ৫ই ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা দেন পূর্ব পাকিস্তানের নাম হবে ‘বাংলাদেশ’।

কিন্তু বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশের মানুষ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন।

অসহযোগ আন্দোলন থেকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন করে বাঙালি জাতি। ২৫-এ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক জান্তা গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭১ সালের ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ৯-মাসের যুদ্ধ শেষে ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। বাঙালিরা একটি জাতি হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পায়, পায় জাতিরাষ্ট্র স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment