গ্রামীন পল্লী উন্নয়ন কাকে বলে, পল্লী উন্নয়নে গুরুত্ব, গ্রামীন পল্লী উন্নয়নের সূচকসমূহ, পল্লী উন্নয়নের বৈশিষ্ট্য,গ্রামীণ অর্থনীতি বলতে কী বোঝ,পল্লী উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা

প্রশ্ন সমাধান: গ্রামীন পল্লী উন্নয়ন কাকে বলে, পল্লী উন্নয়নে গুরুত্ব, গ্রামীন পল্লী উন্নয়নের সূচকসমূহ, পল্লী উন্নয়নের বৈশিষ্ট্য,গ্রামীণ অর্থনীতি বলতে কী বোঝ,পল্লী উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা

বৈশ্বিক উৎপাদনব্যবস্থা ও শহরাঞ্চলের উত্তরোত্তর পরিবর্তনের ফলে পল্লী এলাকার বৈশিষ্ট্যাবলি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। পল্লী উন্নয়ন বলতে সাধারণত জীবন ও অর্থনৈতিক মানোন্নয়নের প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয় যা পৃথক ও বিক্ষিপ্ত জনবহুল এলাকার সাথে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। প্রচলিত ধারায় পল্লী উন্নয়ন কৃষি ও বনের মতো প্রাকৃতিক সম্পদকে ঘিরে কেন্দ্রীভ‚ত হয়েছে। সম্পদের বিচ্ছুরণ ও অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কৃষিজ সম্পদের পরিবর্তে পর্যটন, উৎপাদক এবং বিনোদনব্যবস্থা স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ততার ফলে উন্নয়নের লক্ষ্যস্থলকে বৃহৎ দৃষ্টিতে প্রসারণ ঘটানোয় কৃষি অথবা প্রাকৃতিক সম্পদভিত্তিক ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষা, উদ্যোক্তা, বাহ্যিক অবকাঠামো ও সামাজিক অবকাঠামো গ্রাম্য এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে। এ ছাড়াও পল্লী উন্নয়নের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে রয়েছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা। বিপরীতক্রমে শহুরে এলাকার সাথে অনেক বিষয়ে মিল থাকলেও গ্রাম্য এলাকার সাথে একে-অপরের পার্থক্য বিশাল ও ব্যাপক। এ প্রেক্ষিতে পল্লী উন্নয়নের বিভিন্ন কৌশল ও রূপরেখা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত রয়েছে। পল্লী উন্নয়ন উৎপাদন বৃদ্ধি, সম্পদের সুষম বণ্টন ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনমান উন্নয়নের জন্য এক পরিকল্পিত পরিবর্তন। সাধারণত এ পরিবর্তনকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, পল্লী প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও প্রযুক্তিগত।

উন্নয়নঃ মানসম্মতভাবে বেঁচে থাকাই হলো উন্নয়ন। উন্নয়ন শব্দটি ইবনে খালদুন সর্বপ্রথম তার বিখ্যাত গ্রন্থ AL- Muqaddimah তে প্রয়োগ করেন। তিনি উন্নয়ন শব্দটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামোর ইতিবাচক পরিবর্তনকে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করেন। সাধারণত উন্নয়ন বলতে বুঝি মানুষের সঠিক অবস্থার পরিবর্তন। একটি স্বাভাবিক অবস্থা থেকে বিশেষ অবস্থায় উপনিত হওয়াকে বুঝায়।

ILO এর মতে,
“বেঁচে থাকার জন্য মানুষের নূন্যতম মৌলিক চাহিদা পূরণই হল উন্নয়ন”

অমর্ত্যসেন এর মতে,
“মানুষের ক্ষমতার বিকাশই উন্নয়ন”

UNDP এর মতে,
“উন্নয়ন হল একটি দেশের বা অঞ্চলের জনসমষ্টির গড় আয়ু, শিক্ষা ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি”


আরো ও সাজেশন:-

*পল্লী উন্নয়নঃ
সাধারণ অর্থে পল্লী উন্নয়ন বলতে পল্লীর জনগণের আর্থ সামাজিক উন্নয়নকে বুঝায়। ব্যাপক অর্থে পল্লী উন্নয়ন বলতে বুঝায়, পল্লী এলাকার জনগণের জীবন ধারণের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা বিজ্ঞান সম্মত কারিগরি দিক সমূহের কাংখিত পরিবর্তনকে বুঝায়। প্রমাণ্য সংজ্ঞা-

ড. আখতার হামিদ খানের মতে-
“পল্লী উন্নয়ন হল একটি ধীমান মানুষ চালিত প্রক্রিয়া যা পল্লীর সর্বস্তরের জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা প্রদান করে এবং সার্বিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে”

হাসানাত আব্দুল হাই এর মতে- পল্লী উন্নয়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পল্লীবাসীর পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং নিয়ন্ত্রণের এ দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠের সুফল লাভ নিশ্চিত করা যায়।

প্রেসিডেন্ট লুসিয়ার নায়ার বলেন-
“A rural development is a policy of national development”

উপরোক্ত সংজ্ঞা সমূহের আলোকে আমরা বলতে পারি যে, যে প্রক্রিয়ায় পল্লীর জনগণের উৎপাদন, আয়, বন্টন, ভোগ, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতির গুণগত ও পরিমাণগত উন্নয়ন সাধন হয় তাকে পল্লী উন্নয়ন বলে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে পল্লী উন্নয়নের গুরুত্বঃ বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশের শতকরা ৮০জন মানুষের বসবাস গ্রামে। পল্লী উন্নয়নের উপরই এদেশের জাতীয় উন্নয়ন নির্ভরশীল। এদেশের শতকরা ৪০জন মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। এদের জমি, পুঁজি, সম্পদ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য কিছুই নেই এবং এমনকি মাথা গোজার মত এক খন্ড জমিও নেই। দেশের এ বিরাট জনগোষ্ঠীর অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ব্যতিরেকে দেশের উন্নয়ন আশা করা যায় না। তাই পল্লী উন্নয়নকে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কেন এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় সে সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

*কৃষি উন্নয়নঃ কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। দেশের মোট জাতীয় আয়ের একটি বিরাট অংশ আসে কৃষিখাত থেকে। কৃষির উন্নয়নই হল এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধানশর্ত। সুতরাং, পল্লীর সার্বিক উন্নয়ন ব্যতীত কৃষির উন্নয়ন সম্ভব নয়। পরিকল্পিত পল্লী উন্নয়ন শুরু হলে গ্রামের অর্থনীতিতে কাঠামোগত পরিবর্তন আসবে এবং তার ফলে কৃষির আধুনিকায়ন সম্ভবপর হবে
যার সুফল শিল্প বাণিজ্যসহ অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে পড়বে।


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক

*জাতীয় আয় বৃদ্ধিঃ পল্লী উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষির উন্নতি হলে দেশের মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধি পাবে। এবং জন সাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।

*গ্রামীণ সম্পদের পূর্ণব্যবহারঃ পল্লীর উন্নয়ন হলে পল্লীর অনেক অব্যবহৃত ও প্রাকৃতিক জনসম্পদ সুষ্ঠভাবে ব্যবহৃত হবে। ফলে দেশের জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

*শিল্পায়নঃ দেশের পল্লী উন্নয়ন দেশের শিল্পায়নকেও প্রভাবিত করে। পল্লী উন্নয়নের ফলে কৃষির উন্নতি হলে কাঁচামালের যোগান বাড়বে। কৃষকের আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে শিল্পজাত পণ্যের বাজার বিস্তৃত হবে। এতে করে দেশের শিল্প-উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে।

*রপ্তানি বৃদ্ধিঃ পল্লী উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষির উন্নতি সাধিত হলে আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। এবং আমদানি হ্রাস পাবে। ফলে দেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্যের প্রতিকূলতা হ্রাস পাবে।

*বেকারত্ব হ্রাসঃ বর্তমানে বাংলাদেশে বেকার সমস্যা একটি জাতীয় সমস্যা। এ বেকারত্ব দূর করতে হলে পল্লী উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ শিল্পের উন্নতি ও পল্লী অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও হালকা শিল্পের ব্যবহার করে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।

*উৎপাদন বৃদ্ধিঃ পল্লী উন্নয়নের লক্ষ্যে আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে ফলন বৃদ্ধি করতে হবে। পল্লী উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নত বীজ, সার, প্রয়োজনীয় কীটনাশক এবং সেচের ব্যবস্থা করলে কৃষির ফলন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।

*জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণঃ পল্লী উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব শর্ত হলো শিক্ষা। পল্লীর জনগণকে সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে সচেতন করে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা হতে দেশকে রক্ষা তথা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

*জনগণের আয়বৃদ্ধিঃ পল্লী উন্নয়ন পরিকল্পনা মাধ্যমে কুটির শিল্প, সেলাই ও হাতের কাজের প্রকল্প স্থাপন, মাছ চাষ, ব্যবস্থা করা যায়। এ ধরণের কার্যক্রম সফল হলে গ্রামীণ জনগনের আয় বাড়বে।

*গ্রামীণ নেতৃত্ব বিকাশঃ পল্লী উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের দ্বারা একশ্রেণির উদ্যোগী ও দক্ষ কর্মী বাহিণী সৃষ্টি করা যায়। এতে করে গ্রামীণ স্থানীয় সমষ্টির সমাধান করা যায়।

*শিক্ষার প্রসারঃ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর। এমনকি কৃষি বিষয়ক নূন্যতম জ্ঞান ও তাদের মধ্যে নেই। পল্লী উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে গণশক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূর করে শিক্ষার প্রসার ঘটানো সম্ভব।

*গ্রামীণ মূলধন গঠনঃ গ্রামীণ এলাকায় বিভিন্ন সমবায় সমিতি, ক্লাবগঠন কিংবা জনকল্যাণমূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে মাসিক স্বল্পহারে চাঁদা আদায় এর ব্যবস্থা করলে পরবর্তীতে তা বড় অংকের টাকায় রূপান্তরিত হবে। যা গ্রামীণ উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে পারে।

*বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনঃ উন্নয়নশীল অনেক দেশেই বৈদেশিক মুদ্রার উৎস হল কৃষি তথা পল্লী অঞ্চল। রপ্তানিযোগ্য কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করে রপ্তানি বাড়ানো। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ প্রমাণ করছে চিংড়ি, শাকসবজি ইত্যাদি রপ্তানির যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে কৃষি ও পল্লী উন্নয়নের মাধ্যমে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

*সার্বিক উন্নয়নঃ কোন দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বীকৃতি দিতে চাইলে সে দেশেএ সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন আবশ্যক। আর যেহেতু বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ, তাই গ্রামীণ সার্বিক উন্নয়ন যেমন- বেকারত্বদূরীকরণ, শিক্ষার প্রসার গ্রামীণ উন্নয়ন প্রভৃতির মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সাধন করা যাবে।

*বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়নের সমস্যাঃ ব্রিটিশ আমল হতে বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়নের জন্য নানাবিধ পরিলল্পনা কর্মসূচি হাতে নেওয়া সত্ত্বেও পল্লীর উন্নয়ন হচ্ছে না। এখনো বাংলাদেশ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর অন্যতম। অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায় ৬০এর দশকে কুমিল্লা মডেল, ৬০ এর দশকে আরেকটি সবুজ বিপ্লব, ৭০এর দশকে স্বনির্ভর আন্দোলন কর্মসূচি হল সরকার কর্তৃক গৃহীত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচির অন্যতম। কিন্তু তবুও পল্লী উন্নয়ন তরান্বিত হয়িনি। এর পিছনে কাজ করছে কতগুলো বিশেষ সমস্যা। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হল-

*অর্থনৈতিক সমস্যা।
*সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যা।
*রাজনৈতিক সমস্যা।
*প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা।
(দুঃখিত,লিখাটা অসমাপ্ত, খুব শিগ্রী পরের আলোচনা গুলো দেয়া হবে )

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment