গল্প- “Depression”

গল্প- “Depression”
গল্পটি একজনের বাস্তবের উপরে ঘটনা ভিত্তি করে লেখা হইছে……….

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আমি আরেকটা সিগারেট ধরালাম। জায়গা বদল করে বিছানা ছেড়ে বেলকনিতে এসে বসলাম। ভুল আমারও ছিলো। স্ত্রীর হাতে সবকিছু ছেড়ে দিতে নেই। একটা নিশ্বাস ছাড়লাম। সাজেকে আমাদের একটা রাতের ই ট্যুর ছিলো।

এরমধ্যে অনেকদিন আপা আর দুলাভাইয়ের সাথে আমাদের যোগাযোগ নেই। হুট করে একদিন মা কল দিয়ে জানালো বাসায় চাচাতো বোনের বিয়ে। বড় আপা তার বাচ্চাকাচ্চা সহ এক সপ্তাহ আগে আসবেন। মেজো আপা, দুই বোনের শ্বশুর বাড়ির লোকজন, ফুফুরা সবাই আসবেন। মোটকথা বাড়িতে একটা হৈ হুল্লোড় হবে।

সব আত্মীয় স্বজন একত্রিত হওয়ার সুযোগ খুব একটা হয় না। এই সুযোগ মিস করে যেন আফসোস না করি। নাজিয়াকে বলতেই ও মুখ কালো করে বললো, ‘আমার তো গয়নাগাটি নেই তেমন একটা, আর ভালো শাড়িও নেই।’

আমি শাড়ির ব্যাপারটা মেনে নিলাম। আসলেই নাজিয়াকে আমি একটা ভালো শাড়ি কিনে পারি নি। বললাম, ‘গয়না তো বিয়ের গুলোই আছে। ওগুলো পরিও। আর শাড়ি নাহয় দুটো কিনে দিলাম।’
নাজিয়া তবুও মুখ কালো করে বললো, ‘ওগুলো গয়না হলো নাকি? অত ভারী গয়না আমি সবসময় পরবো? ধরো একদিন পরলাম, বিয়ের অনুষ্ঠানে। বাকি দিনগুলোর জন্য তো আমার একটা চেইন, দুটো চিকন চুড়ি দরকার ই। তাই না?’

আমি মাথা ঝাঁকালাম। এসবের ব্যাপারে আমার অত জানা নেই। বললাম, ‘একটা চেইন নিয়ে দেয়ার আমারও অনেক ইচ্ছে। কিন্তু হাতে তো টাকা নেই গো। এ মাসের ঘর ভাড়া এখনো বাকি।’

নাজিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ‘আচ্ছা সমস্যা নেই। আমি একটা ইমিটেশনের চেইন কিনে নেবো। আর কে দেখবে বলো আমাকে। থাক ওসব নিয়ে মন খারাপ কোরো না।’

আমি নাজিয়াকে দুটো নতুন শাড়ি কিনে দিলাম। একটা জামদানী, একটা কাতান। দুটোই ও নিজে পছন্দ করে কিনেছে। গাউসিয়া থেকে ঘুরে ঘুরে একগাদা শাড়ির ভেতর থেকে পছন্দ করেছে। শাড়ি দুটো আমারও বেশ পছন্দ হয়েছে। বাড়ি গিয়ে সেই হুল্লোড়। কত আত্মীয় স্বজন, কত মানুষ! মেজো আপাকে দেখলেই সবার থেকে আলাদা করা যায়। সে কি দামী শাড়ি, দামী গয়না গায়ে।

কানের দুলে উন্নত ডিজাইন, গলায় জ্বলজ্বল করছে স্বর্ণের চেইন। চুল স্ট্রেইট করে কখনো ছেড়ে দিচ্ছে আবার কখনো বেঁধে রাখছে। বাহারী সাজসজ্জা তার। এক পোষাকে দুইবার দেখা গেলো না। আমি অবশ্য এতে খুশিই হলাম। আমার বাবা তার আভিজাত্য মানেন সবসময়। নিজের জায়গা জমি অগাধ, সেরকম জামাইও বেছে নিয়েছেন। অবশ্য আমি হয়েছি একটু একরোখা। বাবার জমির ওপর আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। অতিরিক্ত কোনোকিছুই আমার ভালো লাগে না। তবে বোনের সুখ দেখতেও ভালো লাগে।

বড় আপা তার দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে দারুণ সুখে আছেন। তার অত অভিজাত জামাকাপড় আর অলংকার না থাকলেও চেহারায় সুখের ভাবটা প্রকাশ পায়। বাচ্চাগুলো সারাদিন মামা মামা করে আশেপাশে ঘুরঘুর করে। আমার এতেই আনন্দ। তবে নাজিয়াকে দেখে বুঝতে পারি, ওর মনটা খারাপ। আমার বাবার বাসায় সবাই মোটামুটি দামী জামাকাপড় আর লোক দেখানো সাজসজ্জা করতে অভ্যস্ত। কিন্তু বাপের টাকায় ফুটানি যে আমি একেবারে অপছন্দ করি।

নাজিয়া এটা জেনেই আমাকে বিয়ে করেছে। তাই মুখের ওপর কিছু বলতেও পারে না। তবুও ওর মনটা যে ভেতরে ভেতরে হা হুতাশ করে সেটা বুঝতে আমার অসুবিধা হলো না।

আমি এক বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার করে আঠারো হাজার টাকা দিয়ে নাজিয়ার জন্য একটা স্বর্ণের চেইন কিনে আনলাম। নাজিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কই পাইলা এত টাকা?’ আমি বললাম, ‘আরে অফিসে একটা একটা একাউন্টে প্রতিমাসে কিছু জমাই বলেছিলাম না? ওখান থেকে স্যারকে বলে কিছু টাকা তুললাম।’

নাজিয়া মুখে বললো, ‘কি যে করো না তুমি। পাগল একটা। কি দরকার ছিলো এটার? মিছেমিছি।’

মুখে কথাটা বললেও ওর চেহারার উজ্জ্বলতাই বলে দিলো চেইনটা পেয়ে সে আসলে কতটা খুশি হয়েছে। আমি ওর আনন্দ দেখে বরাবরই আনন্দ পাই। ওকে ঘরে এনে জাপটে ধরে বললাম, ‘বউ আই লাভ ইউ।’ নাজিয়া আমাকে একটা ছোটখাটো মাইর বসিয়ে দৌড়ে পালায়। আবার খানিক পরেই দৌড়ে এসে বলে, ‘আই লাভ ইউ টু শিহাব। আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি খুব ভালো।’

বিয়েতে সবাই দিব্যি আনন্দ করছে। বড় দুলাভাই ও মেজো দুলাভাই কনের বিয়ের কেনাকাটার সাথে গিয়েছিলেন। ওনারা দুজনে ভাগাভাগি করে বাড়ির সব বউদের জন্য শাড়ি কিনে এনেছেন। আমার মায়ের জন্য দামী জামদানী, চাচাতো ভাইয়ের বউয়ের জন্যও ভালো শাড়ি এনেছেন। আমি মনেমনে আন্দাজ করলাম নিশ্চয় নাজিয়ার জন্যও এনেছে। বিষয়টাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিলাম।

কিন্তু শাড়ি দেখে আমি রীতিমতো অবাক। নাজিয়া বললো ওটার দাম নাকি বারো হাজার টাকা। আমি বিস্ময় লুকাতে পারলাম না। মায়ের শাড়ির দাম বড়জোর চার হাজার হবে।

বাকিদের শাড়িও তিন হাজারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সেখানে নাজিয়ার শাড়ির দাম বারো হাজার টাকা, বিষয়টা অবাক করার মতোই। আমি শুধু জানতে চাইলাম, ‘এত দামী শাড়ি কেন তোমার জন্য?’

নাজিয়া বললো, ‘আরে আমি কি জানতাম নাকি এটার এত দাম। আমি তো জাস্ট শাড়িটা পছন্দ করছি। দুলাভাই বললো এটা প্যাকেট করে দেন। আমি দাম শুনে বারবার করে বললাম অন্য একটা নিবো। দুলাভাই বললো, যেটা পছন্দ হইছে সেটাই নেন। দাম নিয়ে ভাব্বেন না তো ভাবী। আর কি বলি বলো? জোর করে নিয়া দিলো।’

আমি স্বীকার করি মেজো দুলাভাইয়ের মনটা বড়। সব টাকাওয়ালা এত বেশি খরচ করে না যতটা দুলাভাই করে। কিন্তু তারপরও শাড়ির এত দাম শুনে আমার মনটা কেমন যেন করছে। মনেমনে ভেবে রাখলাম, আমার হাতে টাকা এলে মেজো আপাকে একটা দামী কিছু গিফট করবো। তাহলে শোধবোধ হয়ে যাবে।

নাজিয়া বড় দুলাভাইকে বড় ভাইয়া ডাকে। অনেক শ্রদ্ধাও করেন ওনাকে। আর মেজো দুলাভাইকে দুলাভাই ডাকে। নাস্তা নিয়ে গেলে দুই দুলাভাইয়ের জন্যই নিয়ে যায়।

দুজনকেই সমান খাতির সম্মান করে। এরমধ্যে কিভাবে যে মেজো দুলাভাইয়ের সাথে জড়িয়ে গেলো আমি বুঝতেও পারিনি। মাথাটা আবার চক্কর দিচ্ছে। আবার উঠে জায়গা বদল করে রুমে চলে আসলাম। ভাবলাম, কালকেই বাড়ি যাবো। আপাকে নিয়ে আলাদা করে বসবো। নিশ্চয় ও কিছু আন্দাজ করেছিলো। সবকিছু তো এভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে না।

Leave a Comment