প্রশ্ন সমাধান: গণতন্ত্র কি? গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য কি?,গণতন্ত্র বলতে কিবুঝায়?, গণতন্ত্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন, গণতন্ত্র বলতে কি বুঝায়?, বাংলাদেশে গণতন্ত্র: প্রকৃতি বৈশিষ্ট্য
গণতন্ত্র এমন একটি শব্দ যা যুগ যুগ ধরে রাজনৈতিক চিন্তা জগতে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গণতন্ত্র কথাটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে জনগণের শাসন বা কর্তৃত্ব। গণতন্ত্র এমন এক ধরনের শাসন ব্যবস্থা যে শাসন ক্ষমতা সমাজের সদস্যদের কাছে থাকে। গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে শাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে শাসিতের সম্মতি লাভ।
গণতন্ত্রের সংজ্ঞা (Defination of Democracy)
গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে জনগণের শাসন। অতীত ও মধ্যযুগে গণতন্ত্র মূলত এ অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু আধুনিক যুগে গণতন্ত্র বলতে আমরা কেবল এক ধরনের সরকারকেই বুঝিনা, সাথে সাথে এক ধরনের সমাজ ব্যবস্থাকেও বুঝি। এ ধরনের সমাজব্যবস্থা যেখানে বিরাজমান নেই, সেখানে শাসনপ্রথা গণতন্ত্র নামে পরিচিত হলেও তা’ সম্পূণরূপে গণতান্ত্রিক নয়। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গণতন্ত্র বলতে আমরা এক প্রকার শাসন ব্যবস্থাকে বুঝি।
প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে গ্রীক ঐতিহাসিক হিরোডোটাস (Herohotus) গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে বলেছেন,
“গণতন্ত্র এক প্রকার শাসনব্যবস্থা যেখানে শাসন ক্ষমতা কোনো শ্রেণি বা শ্রেণিসমূহের উপর ন্যস্ত থাকে না, বরং সমাজের সদস্যগণের উপর ন্যস্ত হয় ব্যাপকভাবে।”
এর প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাই আধুনিককালের শ্রেষ্ঠ চিন্তবিদ লর্ড ব্রাইসের সংজ্ঞায়।
গণতন্ত্র সম্পর্কে লর্ড ব্রাইস বলেন,
” যে শাসন প্রথায় জনসমষ্টির অন্তত তিন-চতুর্থাংশ নাগরিকের ভোটের শক্তি যেন তাদের শারীরিক বলের সমান হয়”
(A government in which the will of the majority of the qualified citizen’s rules…..say, at lest three-fourths so that the physical force of the citizens coincides with their voting power)
লর্ড ব্রাইস এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ঐ শাসনব্যবস্থাই গণতান্ত্রিক, যা (ক) জনসাধারণের ইচ্ছা, (খ) তাদের মংগলামংগল ও (গ) হিতকর্মের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এবং (ঘ) যেখানে সাম্য ও স্বাধীনতা প্রধান্য পায়।
গণতন্ত্রের প্রকারভেদ
গণতন্ত্রকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-
১. প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র
২. পরোক্ষ গণতন্ত্র
আরো ও সাজেশন:-
গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য
গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Democracy)
গণতন্ত্রের কতকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কোনো শাসনব্যবস্থা গণতান্ত্রিক কিনা তা’এসব বৈশিষ্ট্যের মানদণ্ডে বিচার করে সহজেই আমরা অনুধাবন করতে পারি।
- প্রথমত, লক্ষ্য করতে হবে উক্ত শাসনব্যবস্থায় প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয় কিনা।
- দ্বিতীয়ত, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সরকারকে পরিবর্তন করা যায় কিনা।
- তৃতীয়ত, উক্ত ব্যবস্থায় দল গঠন, মত প্রকাশ ও সমালোচনার অধিকার স্বীকৃত হয়েছে কিনা।
- চতুর্থত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের স্বার্থরক্ষার সুবন্দোবস্ত রয়েছে কিনা।
- পঞ্চমত, উক্ত ব্যবস্থায় প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারসমূহ আইনগতভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে কিনা।
- এবং শেষত, জনসাধারণ এ আশ্বাস পেয়েছে কি-না যে, সুষ্ঠু বিচার ছাড়া তাদের অহেতুক বন্দীদশা ভোগ করতে হবে না। অথবা অন্য কোনো শা্স্তি ভোগ করতে হবে না।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণ হলো রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার উৎস। গণতন্ত্রের যেসব বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো-
১। সরকার প্রতিনিধিত্বমূলক
বর্তমানে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলতে প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারকে বোঝায়। প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠন গণতন্ত্রের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বর্তমান রাষ্ট্রগুলো বৃহদায়তন এবং জনসংখ্যা ব্যাপক হওয়ার কারণে সরাসরি জনগণের মতামত গ্রহণপূর্বক শাসনকার্য পরিচালনা সম্ভবপর হয় না। ফলে বর্তমানে প্রতিনিধিত্বমূলক বা পরোক্ষ গণতন্ত্রের সৃষ্টি হয়েছে।
২। আইনের শাসন
গণতন্ত্রে আইনের শাসনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এখানে আইনের চোখে সবাই সমান মর্যাদা ভোগ করে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, ধনী-দরিদ্র-নির্বিশেষে সবাইকে আইনের অনুশাসন মেনে চলতে হয়।
৩। নির্বাচনব্যবস্থা
আধুনিক গণতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নির্বাচনব্যবস্থা। নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ তাদের প্রতিনিধিদের বাছাই করে থাকে। এ নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই শাসনকার্য পরিচালনা করে থাকে। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের বাহন।
৪। স্বাধীন প্রচারমাধ্যম
গণতন্ত্রে প্রচারমাধ্যমের স্বাধীনতা স্বীকৃত। প্রচারমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতা সুষ্ঠু জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রচারমাধ্যমে সরকারের কর্মকাণ্ড প্রচারের পাশাপাশি এ বিষয়ে জনগণের প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
৫। বহুদলীয় ব্যবস্থা
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো বহুদলীয় ব্যবস্থা। পরোক্ষ গণতন্ত্রে বিভিন্ন দল থাকে। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের সমর্থন লাভের চেষ্টা করে থাকে। নির্বাচনে যে দল জয়লাভ করে সে দল সরকার গঠন করে। যেসব দল সরকার গঠন করতে পারে না তারা সরকারের বাইরে থেকে গঠনমূলক বিরোধিতা করে সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।
৬। সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন
গণতন্ত্রের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। গণতন্ত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সবাই শাসনকার্য পরিচালনা করার সুযোগ পায় না। সাধারণত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দলের মধ্যে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সে দলের নেতৃস্থানীয় সদস্যদের নিয়ে সরকার গঠিত ও দেশ পরিচালিত হয়।
৭। জনমতের প্রাধান্য
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জনমতের প্রাধান্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। গণতন্ত্রে জনমতকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। জনমতের উপর নির্ভর করে গণতান্ত্রিক সরকারের স্থায়িত্ব। জনমত হলো গণতন্ত্রের আত্মাস্বরূপ।
৮। দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার তার যাবতীয় কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনগণের কাছে দায়ী থাকে। বিশেষত সংসদীয় গণতন্ত্রের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সরকার আইনসভার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে। আইনসভার আস্থা হারালে সরকারের পতন ঘটে।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- ইজারা গ্রহীতার বইয়ের হিসাব সংরক্ষণের প্রক্রিয়া আলোচনা কর
- ইজারা দাতার প্রত্যক্ষ ইজারার অর্থায়ন পদ্ধতি ধারণা সহ আলোচনা কর
- ইজারা ও মালিকানা পার্থক্য । ইজারা vs মালিকানা পার্থক্য
- ইজারা অর্থসংস্থানের সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ লিখ, ইজারা অর্থসংস্থানের সুবিধা ও অসুবিধা গুলো বিস্তারিত আলোচনা কর
- ইজারা অর্থসংস্থানের আর্থিক প্রভাব সমূহ আলোচনা কর
- অপারেশন চুক্তি কি ও ব্ল্যাক সোলস মডেল ব্যাখ্যা কর
এই পোস্টটা আমার ব্লগ থেকে হুবহু কপি-পেস্ট করা হয়েছে। আমি পোস্ট করার দুই ঘণ্টা পর হুবহু কপি করে এই ব্লগে পোস্ট করা হয়েছে। এরকম অনেকগুলো লেখা আমার ব্লগ থেকে হুবহু চুরি করে এখানে পোস্ট করা হয়েছে। আমার ব্লগ সহজপড়াকম।
লেখাটা আপডেট করা হয়েছে আশা করি আপনার আর কোনো সমস্যা হবে না