কোষ কী?, প্রথম কোষের সৃষ্টি হয় কীভাবে?, কোষবিদ্যা (Cytology) কাকে বলে?, কোষের প্রকারভেদ (Kinds of Cell)

জীববিজ্ঞান পড়ার সময় আমাদের সবার প্রথমে যে জিনিসটাকে নিয়ে অবশ্যই জানতে হয় সেটা হচ্ছে কোষ বা Cell. কোষকে একটা জীবের গঠন (Structure) এবং কাজের (Function) একক বলা হয়। অর্থাৎ একটা জীব বেঁচে থাকা অবস্থায় যত ধরনের কাজ করে সেগুলো সব তার কোষের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কোষ তৈরি হয় কতগুলো macro elements বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপাদান নিয়ে। অল্প কিছু কিংবা কোটি কোটি কোষ নিয়ে প্রতিটা জীবের শরীর গঠিত হয়।

তবে কিছু কিছু জীবের কোষ থাকে মাত্র একটা। জীবের শরীর গঠন হবার সময় একটা সিকুয়েন্স মেনে চলে কোষ। সিকুয়েন্সটা হচ্ছে, অনেকগুলো কোষ নিয়ে একটা টিস্যু তৈরি হয়, অনেকগুলো টিস্যু নিয়ে একটা অঙ্গ (Organs) তৈরি হয়, অনেকগুলো অঙ্গ নিয়ে একটা তন্ত্র (Organ System) তৈরি হয়, সবশেষে অনেকগুলো তন্ত্র নিয়ে উদ্ভিদ কিংবা প্রাণির শরীর (Body বা Organism) তৈরি হয়।

কোষের macro organ বা ক্ষুদ্র অঙ্গাণু গুলোর মধ্যে বিভিন্ন কেমিক্যাল, প্রোটিন, লিপিড, এনজাইম, কার্বোহাইড্রেট এগুলো থাকে। আমাদের জীবনের শুরুটা হয় কোষ বা cell থেকে। তাই কোষকে আমরা জীবনের শুরুর উপাদান বলতে পারি। কোষে যেসব micro elements গুলো থাকে তারা আলাদা আলাদাভাবে জীবনের জন্য দায়ী না। অর্থাৎ লিপিড, প্রোটিন, এনজাইম এগুলো কেউই জীবন বা life এর জন্য দায়ী না। কিন্তু কোষের ভেতর এদের যে arrangement থাকে সেটা জীবনের জন্য দায়ী। কোষের ভেতরে একটা মিডিয়াম থাকে যেটাকে জীবনের জন্য দায়ী বলা হয়। এই মিডিয়ামকে প্লোটোপ্লাজম বলে। প্রোটোপ্লাজমকে জীবনের ভিত্তি বলা হয়।

কোষ কী?

লিউয়েনহুক (Antonie van Leeuwenhoek) প্রথম ১৬৭৪ সালে কোষ প্রাচীর ছাড়াও ভেতরে পূর্ণাঙ্গ কোষীয় দ্রব্যসহ জীবিত কোষ পর্যবেক্ষণ করেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানী কোষের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
Jean Brachet (1961) এর মতে- ‘কোষ হলাে জীবের গঠনগত মৌলিক একক।

Loewy and Siekevitz (1969) এর মতে- ‘কোষ হলাে জৈবিক ক্রিয়াকলাপের একক যা একটি অর্ধভেদ্য ঝিল্লি দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে এবং যা অন্য কোনাে সজীব মাধ্যম ছাড়াই আত্ম-জননে সক্ষম।
De Robertis (1979) এর মতে- ‘কোষ হলাে জীবের মৌলিক গঠনগত ও কার্যগত একক।

প্রথম কোষের সৃষ্টি হয় কীভাবে?

১৮৮০ দশক থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয় যে পূর্ব থেকে বিরাজমান কোষ থেকেই নতুন কোষের সৃষ্টি (Cells come from pre-existing cells)। কিন্তু বহুপূর্বে পৃথিবীতে কোনাে কোষই ছিল না, তাহলে Pre-existing cell এলাে কোথা হতে? প্রথম কোষ কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল?

Alexander Oparin এবং J.B.S. Haldane (1920) বলেন যে আদিকালের বায়ুমণ্ডলে মিথেন (CH;), অ্যামােনিয়া (NH), হাইড্রোজেন (H) এবং পানি (জলীয় বাষ্প, HO) ছিল কিন্তু মুক্ত 0, ছিল না। এসব গ্যাসসমূহের পরস্পর ঘর্ষণের ফলে কোনাে জৈব অণু সৃষ্টি হয়েছে। Stanley Miller এবং Harold Urey (1953) গবেষণাগারে উপরিউক্ত গ্যাসসমূহ একত্রে করে ইলেক্ট্রিক প্রবাহ প্রদানের ফলে অ্যামিনাে অ্যাসিড সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকেই মনে করেন আদি জীবন সম্ভবত সরল RNA ছিল, যা থেকে পরে প্রােটিন তৈরি হয়েছিল। এই ধারণা RNA-World হাইপােথেসিস নামে পরিচিত।

[ উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

কোষবিদ্যা (Cytology) কাকে বলে?

জীববিদ্যার যে শাখায় কোষ সম্পর্কে আলােচনা করা হয় অর্থাৎ কোষের প্রকার, অঙ্গাণুর ভৌত ও রাসায়নিক গঠন, বিভাজন, বিকাশ, জৈবিক কার্যাবলি, বৃদ্ধি ইত্যাদি সম্পর্কে আলােচনা করা হয় তাকে কোষবিদ্যা বা সাইটোলজি (Cytology) বলে। সাইটোলজি শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দের Kytos (= cell, ফাপা) এবং logos (= discourse, আলােচনা) সমন্বয়ে গঠিত Robert Hooke (1635–1703) কে কোষবিদ্যার জনক বলা হয়। তৰুে আধুনিক কোষবিদ্যার জনক হলাে Carl P. Swanson (1911-1996)

কোষের প্রকারভেদ (Kinds of Cell)

শারীরবৃত্তীয় কাজের ভিত্তিতে কোষকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়; যথা

(ক) দেহকোষ (Somatic Cell)

জীবদেহের অঙ্গ ও অঙ্গতন্ত্র গঠনকারী কোষকে দেহকোষ বলে। উচ্চ জীবের দেহকোষে সাধারণত[ডিপ্লয়েডসংখ্যক ক্রোমােসােম থাকে। মূল, কাণ্ড ও পাতার কোষ, স্নায়ু কোষ, রক্তকণিকা ইত্যাদি দেহকোষের উদাহরণ ।

(খ) জননকোষ বা গ্যামিট (Reproductive Cell or Gamete)

যৌন প্রজননের জন্য ডিপ্লয়েড জীবের জননাঙ্গে মায়ােসিস প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হ্যাপ্লয়েড কোষকে জননকোষ বলে। শুক্রাণু ও ডিম্বাণু জননকোষের উদাহরণ । জননকোষ বা গ্যামিট সর্বদাই হ্যাপ্লয়েড।

নিউক্লিয়াসের গঠনের উপর ভিত্তি করে কোষকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা

(ক) আদিকেন্দ্রিক কোষ বা আদি কোষ (Prokaryotic Cell)

যে কোষে কোনাে আবরণীবেষ্টিত নিউক্লিয়াস, এমনকি আরণীবেষ্টিত (membrane-bound) অন্যকোনাে অঙ্গাণুও (organelles) থাকে না তা হলাে আদি কোষ | আদি কোষে নন-হিস্টোন প্রােটিনযুক্ত একটি মাত্র বৃত্তাকার DNA থাকে যা সাইটোপ্লাজমে মুক্তভাবে অবস্থান করে। আদিকোষে বৃত্তাকার DNA যা মুক্তভাবে ছড়ানাে থাকে তাকে নিউক্লিঅয়েড (Nucleoid) বলে! এদের রাইবােসােম 70S । আদি কোষ দ্বি-ভাজন বা অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়। আদি কোষ দ্বারা গঠিত জীব হলাে আদিকোষী জীব (Prokaryotes)। উদাহরণ-মাইকোপ্লাজমা, ব্যাকটেরিয়া (Escherichia coli ও সায়ানােব্যাকটেরিয়া (BGA = Blue Green Ainae) মনের রাজ্যের সব জীবই আদিকোষী। [গ্রিক Pro = before, এবং, karyof a nut, nucleus অর্থাৎ, নিউক্লিয়াস কাছগতার আগের অবস্থা] আদিকোষে অবাত শ্বসন ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শােষণ পদ্ধতিতে পুষ্টি ঘটে। কতক ক্ষেত্রে সালোয়াশ্রেষন কাটে।

(খ) প্ৰকৃতকেন্দ্রিক কোষ বা প্রকৃত কোষ (Eukaryotic Cell)

যে কোষে আবরণীবেষ্টিত নিউক্লিয়াস থাকে তা হলাে প্রকৃত কোষ প্রকৃত কোষে নিউক্লিয়াস ছাড়াও আবরণীবেষ্টিত অন্যান্য অঙ্গাণু (যেমন- মাইটোকন্ড্রিয়া, ক্লোরােপ্লাস্ট, গলগিব, লাইসােসােম প্রভৃতি) থাকে। দুই স্তরবিশিষ্ট একটি আবরণী (নিউক্লিয়ার এনভেলপ) দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থায় নিউক্লিয়ােপ্লাজম, নিউক্লিয়ােলাস এবং একাধিক ক্রোমােসােম নিয়ে নিউক্লিয়াস গঠিত। প্রকৃত কোষের ক্রোমােসােম লম্বা (বৃত্তাকার নয়), দুই প্রান্তবিশিষ্ট এবং DNA ও হিস্টোন-প্রােটিন সমন্বয়ে গঠিত।

এদের রাইবােসােম 80S, DNA সূত্রাকার এবং একাধিক ক্রোমােসােমে অবস্থিত; কোষ বিভাজন মাইটোসিস ও মায়ােসিস প্রকৃতির। Eukaryotic শব্দটি গ্রিক শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে, যার অর্থ গ্রিক eu = good; এবং kanyon=nucleus অর্থাৎ সুগঠিত নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষ ।

জড় কোষপ্রাচীর বিশিষ্ট প্রকৃত কোষই প্রকৃত উদ্ভিদকোষ। শৈবাল, ছত্রাক, ব্রায়ােফাইটস, টেরিডােফাইট, জিমনােস্পার্মস এবং অ্যানজিওস্পার্মস ইত্যাদি সব উদ্ভিদই প্রকৃত কোষ দিয়ে গঠিত এবং সকল প্রাণিকোষ প্রকৃত কোষ । প্রকৃত কোষ দ্বারা গঠিত জীব হলাে প্রকৃতকোষী জীব (Eukaryotes), প্রকৃত কোষে সবাত শ্বসন ঘটে। শােষণ, আত্তিকরণ ও সালােকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে পুষ্টি ঘটে।

[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

এখানে সকল প্রকাশ শিক্ষা বিষয় তথ্য ও সাজেশন পেতে আমাদের সাথে থাকুন ।

Leave a Comment