“কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি বানায়

কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি বানায় (আঁকে)।” [সহীহ বুখারী, নবম খণ্ড, হাদিস নং ৫৫২৬ – ইফা]।

আরেক হাদিসে এসেছে- “আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি বালিশ তৈরি করেছিলাম। যেন তা একটি ছোট গদী। এরপর তিনি আমার ঘরে এসে দু’দরজার মাঝখানে দাঁড়ালেন এবং তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ আমার কি অপরাধ হয়েছে? তিনি বললেন, এ বালিশটি কেন? আমি বললাম, এ বালিশটি আপনি এর উপর ঠেস দিয়ে বসতে পারেন আমি সে জন্য তৈরি করেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “(হে আয়িশা) (রা) তুমি কি জান না? যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে (রহমতের) ফিরিশতা প্রবেশ করেন না? আর যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে তাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে? তাকে (আল্লাহ্) বলবেন, ‘তুমি যে প্রাণীর ছবি বানিয়েছ, এখন তাকে প্রাণ দান করো।’ [সহীহ বুখারী, পঞ্চম খণ্ড, হাদিস নং ২৯৯৭ – ইফা]

অথচ আজ ছবি আঁকা আমাদের ফ্যাশান হয়ে দাড়িয়েছে। শুধু ফ্যাশান না, ছবি আঁকা অনেকের নেশা হয়ে গেছে, অনেকের কলিজায় বসে গেছে। ছবি না আঁকলে ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় অনেকেরই। আবার যারা ছবি আঁকতে পারি না, তারাও চেষ্টা করি আঁকতে। ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যায় করি। অথচ কি বলা হয়েছে হাদিস শরিফে সে ব্যাপারে আমরা ভাবি না। হ্যাঁ আপনি আঁকুন ছবি, তবে তা যেনো কোনো প্রাণীর না হয়। জড়বস্তুর ছবি আঁকা যেতে পারে। আঁকার জন্য তো কতো কি আছে, ওসব আঁকুন। গাছ-গাছালি, নদী-খাল, চাঁদ, সূর্য, প্রকৃতিক দৃশ্য সহ সকল জড়বস্তু আঁকতে পারবেন।

অনেকে সখের বসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল, আইনস্টাইন এর ছবি আঁকে, আবার অনেকে আঁকে প্রিয়জনদের ছবি, অনেকে আবার কমার্সিয়াল। আল্লাহ মাফ করুন, কেয়ামতের দিন যদি এসবের প্রাণ দিতে বলে, পারবেন প্রাণ দিতে? যদি পারেন তাহলে আঁকেন। মাত্র ৬০-৭০ বছরের জিন্দেগির বাহবা, ফেমাস হওয়া ইত্যাদি তো দুনিয়াতেই পরে থাকবে। আর অনন্ত কালের জন্য যে শাস্তিটা হবে পারবেন সেটা সহ্য করতে? কি দরকার আছে মানুষদের খুশি করার? মানুষ তো হলো এমন যে- এই আপনাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে, এই আপনাকে যা-তা বলে গালিগালাজ করছে। মানুষের মনে প্রাসাদ নির্মান আর সমূদ্রের ফেনার উপর প্রাসাদ নির্মান একই। একটাবার আল্লাহ পাকের জন্য ছবি আঁকা বন্ধ করুন।

জানি কষ্ট হবে, কিন্তু এই কষ্টের বদলায় জান্নাতে শিল্পী হতে চান না? সেখানে ইচ্ছে করলেই আঁকতে পারবেন, যা কখনো কল্পনাও করেন নি সেখানে তা আঁকতে পারবেন। যেখানে আল্লাহ পাক জবাবদিহিতা করবেন না। দুনিয়ায় পাঠিয়ে তো পরিক্ষা করছেন, কোন কোন বান্দা তাকে মেনে চলে! আল্লাহ পাকের জন্য এইটুকু করুন। আল্লাহর কাছে বলতে পারবেন- “হে আমার রব, দুনিয়ায় আমি বিক্ষাত শিল্পী ছিলাম, জীবন্ত সব ছবি আঁকতে পারতাম, লোকে আমায় বাহবা দিতো, অনেক ট্রাফি, পুরুষ্কার জিতেছি। কিন্তু একমাত্র তোমার জন্য, তোমার সন্তুষ্টির জন্য এসব ছেড়ে দিয়েছি, ছিঁড়ে ফেলেছি সব ছবি। হে আমার রব আমায় ক্ষমা করুন”। হতে পারে আল্লাহ পাক আপনার এই আমলটুকুর বদলায় জান্নাত নসিব করলেন!

এবার আসি ছবি তোলার ব্যাপারে:

অনেকে বিনা প্রয়োজনে ছবি তুলে। উদ্দেশ্য মেয়ে পটানো বা ছেলে পটানো অথবা নিজের সৌন্দর্যের অহংকারে পিক আপলোড দেয়। না দ্বীনি প্রয়োজন আছে, না দুনিয়াবি, একটার পর একটা স্টাইলিশ ছবিতে ভরে গেছে আপনার ফেসবুকের টাইমলাইন। ছবির তোলার ধরনের কোনো পরিসীমাও নেই। খেতে বসে সেলফি, পড়তে বসে সেলফি, হাঁটতে গিয়ে সেলফি, রিকশায় উঠে সেলফি, মার্কেটে গিয়ে সেলফি, গরুর সাথে সেলফি, দান-খয়রাতে সেলফি, নতুন বউ নিয়ে সেলফি, পার্কে বসে প্রেমিকার হাত ধরে সেলফি, ব্রেকাপের পর মেয়েকে জব্দ করতে পিক আপলোড, নতুন ফ্যাসানের ড্রেস পড়ে পিক আপলোড এমনকি নিউ ব্রান্ডের লিপস্টিক মেখেও পিক আপলোড !

কি দরকার আছে এসবের ? এটা কি মুমিনদের কাজ হতে পারে? সূরা মুমিনুনের মধ্যে আল্লাহ পাক মুমিনদের কি কি গুণ সেগুলো বর্ননা করেছে, সেটা দেখেননি!

মহান আল্লাহ পাক বলেন- ” মুমিনরা অনর্থক কথা এবং বেহুদা কাজ থেকে বিরত থাকে।” -[সূরা মুমিনুন; ৩ ]

অযথা ছবি তুলে ঘন্টার পর ঘন্টা নষ্ট করা, আপলোড দেওয়া, কমেন্টের রিপ্লে দেওয়া, এগুলোর জন্য কি দুনিয়ায় আল্লাহ তাআ’লা পাঠিয়েছেন? মৃত্যু না হলেও তো কথা ছিলো। যা ইচ্ছে তা-ই করা যেতো। কিন্তু মৃত্যু যেখানে নিশ্চিত, রবের সামনে দাঁড়ানো যেখানে নিশ্চিত, সেখানে রবকে এভাবে অসন্তুষ্ট করার কোনো মানে হয়?

এমনও দেখেছি, মানুষ এক্সিডেন্ট হয়ে পড়ে আছে, সেদিকে খেয়াল নেই, একদল সেলফি পাগলরা পিক তুলতে ব্যাস্ত। এমনকি মরা মানুষের সাথেও সেলফি তোলে, কবর জিয়ারত করতে গিয়েও তোলে, জানাজায় গিয়েও তোলে, ঈদের নামাজে তোলে, কাবা শরিফেও তোলে।

এসবের কোনো প্রয়োজনই নেই, মোটেও ঠিক না। আর ইবাদত করতে গিয়ে ছবি তুলে আপলোড দেওয়া তো আরও বেশি অপরাধ। কেনোনা এর মাধ্যমে রিয়া চলে আসবে। কাবা শরিফে গিয়েছেন ভালো কথা, আপনি সেলফি তুলে সবাইকে দেখালেন লোকে আমায় হাজি বলুক! মনে রাখবেন এমনটা হলে এ হজ্জ, এ ইবাদত কোনো কাজেই আসবে না। বরং উল্টো গুনাহগার হয়ে যাবেন।

তাই অপ্রয়োজনীয় ছবি তোলা থেকে বিরত থাকুন। ছবি ডিলিট দিন। কষ্ট হলেও সেটা আল্লাহর জন্য করুন, এর বদলায় জান্নাতে উত্তম কিছু পাবেন, ইনশাআল্লাহ। ছবি তোলার অনেক কিছু আছে সেগুলো তুলুন। প্রাণীর ছবি বাদে আরও হাজারো, লক্ষ আইটেম আছে সেগুলো তুলুন।

ইদানীং আবার লক্ষ্য করছি বিভিন্ন ইসলামিক গ্রুপে মেয়েরা বোরখা পড়া ছবি আপলোড দিচ্ছে, সেসব ছবিতে পরিপূর্ণ পর্দা মানা হচ্ছে না। শরীরের অঙ্গভঙ্গি স্পষ্ট হয়ে থাকে, চোখে কাজল, হাত খোলা, কখনো কখনো মুখটাই খোলা! আর যারা দেখছে, সবাই মাশাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ বলে আকাশ বাতাস মুখরিত করছে। হাজার হাজার লাইক, কমেন্ট। এসব কি বোন! নিজের দেহকে বেগানা পুরুষের সামনে তুলে ধরা যে পর্দার খেলাফ এটা তো জানুন। ছেলেরা আপনার চোখ, বা হাত দেখেই আকৃষ্ট হতে পারে, সে এটা দেখেই বড়ো কোনো গুনাহ করতে পারে, নিবেন সেই গুনাহের ভাগ? আপনি বোরখা পড়েন ভালো কথা, সেটা আর দশজনকে দেখানোর উদ্দেশ্য কি শয়তানের সূক্ষ্ম ধোঁকা নয়? ছবি দোওয়াটা কি খুবই প্রয়োজন বোন?

অথচ চোখের পর্দা, হাতের পর্দা, কন্ঠের পর্দা। সবকিছুর পর্দার বিধান আছে। এসব যথাযথ পালন না করেই বোরখা পড়ে পিক দিয়ে এভাবে ক্যাপশন দেয় অনেকে-
” সত্যি করে বলুন তো মেয়েদের বোরখা পড়ে সুন্দর লাগে নাকি বোরখা ছাড়া!”
“জানি কেউ নাইস বলবে না”
“এভাবেই স্বামী স্ত্রী একদিন থাকবো ইনশাআল্লাহ “
“আমার ইজ্জত আমার কাছ দামী “
“আসল সৌন্দর্য বোরখায়”
” পাত্র চাই তেমনই যে আমায় পছন্দ করে”
ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি…

আর এসব পিক দেখে লক্ষ লক্ষ যুবকের মনে কল্পনায় খেলতে থাকে বোরখাওয়ালীর জামাই হবো, বোরখাওয়ালীকে প্রপজ করবো। অনেকে আবার বোরখা পড়া গালফ্রেন্ড খুঁজে। গানও তৈরি হয়- ‘একটা বোরখা পড়া মেয়ে পাগল করেছে!” কেনো শিল্পী আপনাকে নিয়ে লিখবে? বোরখা করার পরও পাগল করার মতো বিষয়াদি আছে সেটা যদি জানতেন তবে সঠিকভাবে পর্দা করতেন আর পিক আপলোড করা থেকে দূরে থাকতেন।

আবার দেখা যায় অনেক বোরখা পড়া মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ডকে নামাজের কথা বলে পাঞ্জাবি পড়ার কথা বলে, ইসলাম মানতে বলে! অথচ রিলেশন যে হারাম এটাই মানে না। সে এটাকে জায়েজ মনে করে! ছেলে পাঞ্জাবি পড়ে আর মেয়ে পড়ে বোরখা। ব্যাস পার্কে বসে বাদাম হাতে ইসলামি রিলেশন (নাউজুবিল্লাহ)। অথচ, ইসলামে রিলেশন হারাম মানে হারামই। পাঞ্জাবি আর বোরখা পড়লেই হালাল হয়ে যায় না, প্রেম পবিত্র হয়ে যায় না, স্বর্গ থেকেও আসে না। এটা তো বিসমিল্লাহ বলে মদ খাওয়ার মতো! যাই হোক এ ব্যাপারে পরে বিস্তারিত লেখা যাবে ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ আমাদের প্রাণীর ছবি আঁকা এবং বিনা প্রয়োজনে ছবি তোলা, আপলোড দেওয়া থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন। সহীহ্ বুঝ দান করুন। আমিন।

Leave a Comment