কার্টেল কি,কার্টেল কত প্রকার ও কি কি ,কার্টেল এর শর্তসমূহ, কার্টেল ভেঙ্গে যায় কেন, কার্টেল কখন ভেঙ্গে যায়,কার্টেলের সীমাবদ্ধতা ও ভেঙ্গে যাবার কারণসমূহ, কার্টেলের সাফল্যের শর্তসমূহ

প্রশ্ন সমাধান: কার্টেল কি,কার্টেল কত প্রকার ও কি কি ,কার্টেল এর শর্তসমূহ, কার্টেল ভেঙ্গে যায় কেন, কার্টেল কখন ভেঙ্গে যায়,কার্টেলের সীমাবদ্ধতা ও ভেঙ্গে যাবার কারণসমূহ, কার্টেলের সাফল্যের শর্তসমূহ

কার্টেল কি

অলিগোপলি বাজারে দ্রব্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ফার্মগুলোর মধ্যে অনিশ্চয়তা বিরাজ করতে পারে। এ অবস্থায় প্রতিযোগী ফার্মসমূহ নিজেদের একচেটিয়া মুনাফা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিযোগিতা পরিহারের কথা চিন্তা করতে পারে। দ্রব্যের দাম ও বিক্রয়ের পরিমাণ নির্ধারণে অনিশ্চয়তা এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে ফার্মসমূহ নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে। এই চুক্তি গোপনভাবে হতে পারে, আবার অলিখিতভাবেও হতে পারে।

অলিগোপলি বাজারে ফার্মসমূহ পারস্পরিক অনিশ্চয়তা দূর করে মুনাফা সর্বোচ্চকরণের জন্য চুক্তিতে উপনীত হয়ে যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে তাকে কার্টেল বলে। কার্টেলের উদাহরণ হিসেবে আমরা তেল উৎপাদনকারী বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে গঠিত ওপেক এর কথা উল্লেখ করতে পারি। কার্টেলের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ফার্মগুলোর মুনাফা সর্বোচ্চ করা। কার্টেলের মাধ্যমে গঠিত প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করে দেয় কোন ফার্ম কি পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদন করবে।


আরো ও সাজেশন:-

কার্টেল কত প্রকার ও কি কি

কার্টেল  সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে । যথা, (১) পরিপূর্ণ কার্টেল এবং (২) অপূর্ণ কার্টেল ।

১. পরিপূর্ণ কার্টেল (Perfect Cartel)

এক্ষেত্রে প্রতিটি ফার্ম দাম এবং উৎপাদন নির্ধারণের ব্যাপারে নিজের অধিকার বিসর্জন দিয়ে একটি কেন্দ্রীয় পরিষদ বা বোর্ড গঠন করে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক বোর্ড ঠিক করে দেয়, কোন ফার্ম কতটুকু উৎপাদন করবে, কি দামে বিক্রি হবে এবং মুনাফা কিভাবে বণ্টিত হবে। কেন্দ্রীয় বোর্ডের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যৌথ মুনাফা সর্বোচ্চ করা।

২. অপূর্ণ কার্টেল (Imperfect Cartel)

ওলিগোপলি বাজারে বিভিন্ন ফার্ম দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে চুক্তিতে পৌছাতে পারে এবং একই সাথে দ্রব্যের প্রকৃতি, বিক্রয়, কাজকর্ম ইত্যাদি সম্পর্কে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। বাজার শেয়ারের ভিত্তিতে প্রতিটি ফার্মের মুনাফা এক্ষেত্রে পৃথক পৃথক হয়। বাজার শেয়ার দুই ধরনের হতে পারে। যথা, (ক) মূল্য প্রতিযোগিতা এবং (খ) কোটা নির্ধারণ।

ক. মূল্য প্রতিযোগিতা : অমূল্য প্রতিযোগিতা কার্টেলের অধীনে ফার্মসমূহ শুধু দামের ব্যাপারে একটি সাধারণ চুক্তিতে পৌঁছে। কিন্তু প্রতিটি ফার্ম তাদের ইচ্ছামতো দ্রব্যের উৎপাদন, গুণগত মানের পরিবর্তন, বিজ্ঞাপন, বিক্রয় কর্মকাণ্ড প্রভৃতি কাজ পরিচালনা করার স্বাধীনতা ভোগ করে।

খ. কোটা নির্ধারণ : কোটা নির্ধারণ কার্টেলের অধীনে প্রতিটি ফার্ম কেন্দ্রীয় সংস্থা কর্তৃক বরাদ্দকৃত কোটা অনুসারে উৎপাদন করে এবং Cartel কর্তৃক নির্ধারিত দামে দ্রব্য বিক্রয় করে। যদি প্রতিটি ফার্মের উৎপাদন ব্যয় সমান হয়, তবে এক্ষেত্রে ভারসাম্য অবস্থায় একচেটিয়া সমাধান অর্জিত হবে।

কার্টেলের সাফল্যের শর্তসমূহ

কার্টেল চুক্তিভিত্তিক অলিগোপলির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অলিগোপলি বাজারে কার্টেল গঠন এবং এর ফলে যৌথ মুনাফা বৃদ্ধির সফলতা কতকগুলো শর্তের উপর নির্ভর করে। নিম্নে কার্টেলের সাফল্যের শর্তসমূহ বর্ণনা করা হল।

  • ১. কার্টেলের সফলতার জন্য সফল ফার্ম দাম ও উৎপাদন নির্ধারণের নিজ নিজ অধিকার বিসর্জন দিয়ে একটি কেন্দ্রীয় সংস্থার উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্ণ অধিকার অর্পণ করতে হবে।
  • ২. প্রত্যেক ফার্মের প্রান্তিক বয় সফলভাবে হিসাব করে এবং তাদের যোগফল দ্বারা সমগ্র বাজারের প্রান্তিক ব্যয় সঠিকভাবে নির্ধারণের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • ৩. কার্টেলের অন্তর্গত সফল ফার্ম একটি সমঝোতামূলক দাম গ্রহণ করে তা দীর্ঘ মেয়াদে অপরিবর্তিত থাকতে হবে।
  • ৪. ফার্মসমূহ যাতে গোপনে একে অপরকে কোন প্রকার ধোকা দেবার চেষ্টা না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • ৫. কার্টেলের সফলতার জন্য বাজারে কোন সরকারি হস্তক্ষেপ থাকতে পারবে না।
  • ৬. প্রত্যেক ফার্মের অভিন্ন ব্যয় অবস্থা এবং চাহিদা ও খরচ রেখা থাকতে হবে।

কার্টেলের অধীনে প্রত্যেক ফার্মসমূহ যদি উপরিউক্ত শর্তসমূহ মেনে চলে তাহলে কার্টেল সফল হতে পারে। অন্যথায় কার্টেল ভেঙ্গে যেতে পারে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

কার্টেল ভেঙ্গে যায় কেন

অলিগোপলি বাজারে বিভিন্ন ফার্ম ব্যবসায়ের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। ফলে স্বাধীনভাবে নীতি নির্ধারণ করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। এরূপ অনিশ্চয়তা দূর করে মুনাফা সর্বোচ্চকরণের জন্য অলিগোপলি বাজারে ফার্মসমূহ চুক্তিতে উপনীত হয়ে যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে তাকে কার্টেল বলে। অলিগোপলি বাজারে চুক্তিবদ্ধ কার্টেলের স্থায়িত্ব খুবই কম। নানা কারণে কার্টেল সহজেই ভেঙ্গে যায়। কার্টেলের সীমাবদ্ধতা ও ভেঙ্গে যাবার কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হল।

  • ১. বিভিন্ন ফার্মের দক্ষতা মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। কার্টেলের কারণে অধিক দক্ষ ফার্মগুলো মনে করে যে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে স্বাধীন দামনীতি গ্রহণ করে। এভাবে আস্তে আস্তে কার্টেল দুর্বল হতে থাকে এবং এক সময় ভেঙ্গে যায়।
  • ২. কার্টেলের সাফল্যের জন্য সদস্য ফার্মগুলোর চাহিদা সঠিকভাবে নির্ণয় করা প্রয়োজন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থা সঠিকভাবে ফার্মসমূহের চাহিদা নির্ণয় করতে পারে না। তাই দ্রব্যের দাম, কোটা বণ্টন, মুনাফা বণ্টন ইত্যাদি সিদ্ধান্ত গ্রহণে পক্ষপাতিত্ব দেখা দেয়। এমতাবস্থায় কার্টেলের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়।
  • ৩. কেন্দ্রীয় সংস্থা কর্তৃক সঠিকভাবে সকল ফার্মের খরচগুলো নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে অনুমানের উপর নির্ভর করতে হয় বলে সদস্য ফার্মগুলোর দাম ও উৎপাদনের পরিমাণ নির্ধারণ করা অনেকক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়ে। এরূপ অবস্থায় ফার্মসমূহ নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত মনে করে কার্টেল ত্যাগ করে।
  • ৪. কার্টেলের অভ্যন্তরীণ চাপের কারণেই অনেক সময় কার্টেল ভেঙ্গে যায়। অনেক সময় সদস্য ফার্মসমূহ গোপনে সমঝোতামূলক দামের চেয়ে কম দামে অধিক পরিমাণে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করে মুনাফা অর্জনের সুযোগ নিতে পারে। একটি ফার্ম এরূপ শুরু করলে অন্যান্য ফার্মের মধ্যে গোপন প্রতিযোগিতা তথা দাম যুদ্ধ শুরু হয়। আর তখনই কার্টেলের অস্থিতিশীলতা দেখা দেয় এবং কার্টেল ভেঙ্গে যায়।
  • ৫. নতুন ফার্মের প্রবেশের কারণে কার্টেলের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়। কেননা অনেক সময় নতুন ফার্মগুলো কার্টেলের দামনীতি অনুসরণ করতে চায় না। এমতাবস্থায় উৎপাদনের উপর কার্টেলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে না; এর ফলে কার্টেলের পরিচালনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং কার্টেল ভেঙ্গে পড়ে।
  • ৬. বাস্তবে সফল ফার্মের ব্যয় ও চাহিদার দিক ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। ফলে কার্টেলের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয় এবং কার্টেল ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়। তাছাড়া সরকারি হস্তক্ষেপের কারণেও কার্টেল ভেঙ্গে যেতে পারে।

উপরিউক্ত কারণে কার্টেলের অস্তিত্ব টিকে রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment