কসমেটিক ও জুয়েলারি ব্যবসা হালাল হওয়ার শর্তাবলি

কসমেটিক ও জুয়েলারি ব্যবসা হালাল হওয়ার শর্তাবলি
▬▬▬✪✪✪▬▬▬

প্রশ্ন: কসমেটিক ও জুয়েলারি এর বিজনেস কি হালাল?

উত্তর:
সাজসজ্জা করা নারীদের সৃষ্টিগত প্রবণতা। তাই তাদের অঙ্গসজ্জার জন্য বিভিন্ন প্রকার গহনার সঙ্গে চাই প্রসাধনী। যেমন: কানের দুল, গলার হার, ব্রেসলেট, লিপস্টিক, স্নো, ক্রিম,পাউডার, মেকআপ বক্স ইত্যাদি। এটি খুবই স্বভাবজাত বিষয়। তাই তো মহান আল্লাহ কুরআনে নারীদের সম্পর্কে বলেছেন,
أَوَمَن يُنَشَّأُ فِي الْحِلْيَةِ
“যে অলংকারে লালিত-পালিত হয়।” (সূরা যুখরুখ: ১৮)

আরো

লাইসেন্স বিহীন অনলাইন ব্যবসা এবং ভেজাল পণ্য বিক্রয়ের বিধান

‘মুযারাবা’ তথা ‘একজনের অর্থ আরেকজনের শ্রম’ ভিত্তিতে ব্যবসা করার পদ্ধতি ও বিধিবিধান

যারা হাট-বাজারের খাজনা/হাসিল আদায়ে ফাঁকিবাজি করে তারা সাবধান! পাঠ ১

যারা হাট-বাজারের খাজনা/হাসিল আদায়ে ফাঁকিবাজি করে তারা সাবধান! পাঠ ২

কসমেটিক ও জুয়েলারি ব্যবসা হালাল হওয়ার শর্তাবলি

তারা স্বামীর জন্য সাজবে। অনুরূপভাবে সাজ-সজ্জা করে শালীন ভাবে তারা নারী অঙ্গনে বা মাহরাম পুরুষ তথা বাবা, ভাই, দাদা, চাচা, আপন ভাতিজা, ভাগনে ইত্যাদি রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের সামনেও চলাফেরা করতে পারে। কিন্তু বেপর্দা অবস্থায় পর পুরুষদের সামনে নিজেদের দেহ, পোশাক বা অলংকারাদির সৌন্দর্য প্রকাশ করা করা জায়েজ নেই।

যাহোক নারীদের অলংকার পরিধান করা এবং বিভিন্ন প্রকার প্রসাধনী দ্বারা অঙ্গসজ্জা করা একটি জায়েজ বিষয়। সুতরাং এ সব পণ্যের ব্যবসা করাও হালাল-কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে।

নিম্নে এই ব্যবসা বৈধ হওয়ার শর্তাবলী তুলে ধরা হল:

◍ ১. বিক্রেতা যদি মহিলা ক্রেতা সম্পর্কে জানতে পারে যে, সে এসকল প্রসাধনী ও অলংকার পড়ে বেপর্দা হয়ে চলাফেরা করবে বা নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা পূর্ণ অনুষ্ঠানে লোক প্রদর্শনী করে বেড়াবে তাহলে তার নিকট এইসব জিনিস বিক্রয় করা বৈধ নয়। কেননা এটি অন্যায় ও পাপাচারে সহযোগিতার শামিল।
তবে কারো অবস্থা সম্পর্কে যদি কোন কিছু না জানা যায় তাহলে তার নিকট বিক্রয় করতে আপত্তি নেই।
সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটিকে মহিলাদের সাজ-সজ্জা বা কসমেটিক সামগ্রী বিক্রয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেন,
” لا يجوز بيعها إذا علم التاجر أن من يشتريها سيستعملها فيما حرم الله ؛ لما في ذلك من التعاون على الإثم والعدوان ، إما إذا علم أن المشترية ستتزين به لزوجها ، أو لم يعلم شيئًا فيجوز له الاتجار فيها ” انتهى .
“فتاوى اللجنة الدائمة” (13/67) .
“এ সব জিনিস বিক্রয় করা জায়েজ নাই যদি ব্যবসায়ী জানতে পারে যে, ক্রেতা তা আল্লাহর হারাম কৃত কাজে ব্যবহার করবে। কেননা এটি গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতার শামিল। কিন্তু সে যদি জানতে পারে যে, সে তার স্বামীর উদ্দেশ্যে সাজ-সজ্জা করবে অথবা এ ব্যাপারে সে কিছুই না জানে তবে এসব জিনিস দ্বারা ব্যবসা করা জায়েজ রয়েছে।” (ফাতায়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/৬৭)

◍ ২. ইসলামী শরীয়ত দৃষ্টিতে নারীদের জন্য যে সকল সাজ-সজ্জা করা নিষিদ্ধ সেগুলোর উপকরণ ও পণ্য সামগ্রী বিক্রয় করাও বৈধ নয়। যেমন: ঘণ্টাযুক্ত নূপুর, পায়েল ও ঘুঙুর, পরচুলা, ভ্রু প্লাগ করার সামগ্রী, শরীরে উল্কি বা ট্যাটু লাগানোর উপকরণ ইত্যাদি।

◍ ৩. কোন কসমেটিক সম্পর্কে যদি জানা যায় যে, তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক বা তাতে নাপাক উপাদান মিশ্রণ আছে (যেমন: শুকরের চর্বি) তাহলে তা বিক্রয় করা হারাম।

◍ ৪. ধোঁকাবাজির মাধ্যমে নকল ও ভেজাল যুক্ত পণ্যকে খাঁটি পণ্য বলে বিক্রয় করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। দেশের ভোক্তা অধিকার আইনেও তা দণ্ডণীয় অপরাধ।

◍ ৫. দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে চোরাই পথে আনা পণ্য বিক্রয় করা বৈধ নয়। এটি দেশীয় আইনেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

◍ ৬. অলংকার বা প্রসাধনী বিক্রয়ের সময় পুরুষ বিক্রেতার জন্য বেপর্দা নারীর দিকে তাকানো, নারী ক্রেতার শরীরে স্পর্শ করা, নিষ্প্রয়োজনীয় ও অবান্তর কথাবার্তা বলা, হাসাহাসি করা ইত্যাদি হারাম। অনুরূপভাবে কোন নারী ক্রেতার সাথে নির্জন অবস্থায় একাকী দোকানে অবস্থান করাও হারাম।
উপরোক্ত শর্তাবলী সাপেক্ষে কসমেটিক ও জুয়েলারি সামগ্রীর ব্যবসা করা জায়েজ আছে ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন করার এবং হারাম পথ ও কার্যক্রম থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

আরো

লাইসেন্স বিহীন অনলাইন ব্যবসা এবং ভেজাল পণ্য বিক্রয়ের বিধান

‘মুযারাবা’ তথা ‘একজনের অর্থ আরেকজনের শ্রম’ ভিত্তিতে ব্যবসা করার পদ্ধতি ও বিধিবিধান

যারা হাট-বাজারের খাজনা/হাসিল আদায়ে ফাঁকিবাজি করে তারা সাবধান! পাঠ ১

যারা হাট-বাজারের খাজনা/হাসিল আদায়ে ফাঁকিবাজি করে তারা সাবধান! পাঠ ২

কসমেটিক ও জুয়েলারি ব্যবসা হালাল হওয়ার শর্তাবলি

Leave a Comment