করোনা চিকিৎসায় আশা দেখাচ্ছে প্লাজমা পদ্ধতি

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে রয়েছে পুরো বিশ্ব। এই মহামারিতে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

আর এর মধ্যেই কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে পস্নাজমা থেরাপির ফলাফল। ভারতে পস্নাজমা চিকিৎসার পথ দেখিয়েছিল কেরালা।

সেই পথে হেঁটে সম্প্রতি করোনা রোগীদের শরীরে পস্নাজমা থেরাপি করে প্রাথমিক পরীক্ষায় ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে দিলিস্নও।

এবার একই পথে হাঁটবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। জানা গেছে, আগামী সপ্তাহ থেকেই এই বিষয়ে পরীক্ষা শুরু হবে পশ্চিমবঙ্গে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে এই পরীক্ষা করা হবে। ডাক্তারি ভাষায়, এই পদ্ধতির নাম পস্নাজমা থেরাপি।

সহজে ব্যাখ্যা করা যাক। যাদের করোনা হয়েছিল এবং সেরে উঠেছেন, তাদের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয় বা রক্তে প্রোটিন জাতীয় পদার্থ তৈরি হয়, যা ওই ভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে।

পস্নাজমা পদ্ধতির অর্থ হলো, ওই ব্যক্তিদের রক্ত থেকে পস্নাজমা সংগ্রহ করে করোনা আক্রান্তের শরীরে দেওয়া।

যাতে রোগীর শরীরেও অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। প্রাথমিকভাবে দিলিস্নতে চারজনের পস্নাজমা থেরাপি হয়েছিল। তার মধ্যে যে দুইজন রোগীর দেহে আগে পস্নাজমা দেওয়া হয়েছিল, তারা এখন প্রায় সুস্থ।

দিন দুয়েকের মধ্যে তারা বাড়ি ফিরতে পারবেন। এই দুইজন রোগীকেই ভেন্টিলেটরে পাঠাবার মতো অবস্থা হয়েছিল। বাকি দুইজনকে পরে পস্নাজমা দেওয়া হয়েছে। তাদেরও শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে।

এই অবস্থায় আরও বেশি করে রোগীর পস্নাজমা থেরাপি করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

দিলিস্নর লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতালে পস্নাজমা দিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে। এর দায়িত্বে আছেন চিকিৎসক এস কে সারিন। তিনি জানিয়েছেন, ‘করোনার তিনটি পর্যায় আছে। প্রথম পর্যায়ে করোনা আক্রান্তের জ্বর, সর্দি, গলাব্যথা, দুর্বলতা দেখা দেয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনা ফুসফুসকে আক্রমণ করে। তৃতীয় পর্যায়ে করোনার কারণে দেহের অনেকগুলো যন্ত্র আক্রান্ত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের রোগীদের পস্নাজমা থেরাপি করা হচ্ছে। চারজন রোগীর ক্ষেত্রে এই থেরাপি সফল হয়েছে।

আরও তিনজনকে শুক্রবার পস্নাজমা দিয়ে চিকিৎসা করা হবে।’ সারিন জানিয়েছেন, ‘এ ক্ষেত্রে একটাই সমস্যা। পস্নাজমা জোগাড় করা। পস্নাজমা তাদের কাছ থেকেই পাওয়া যাবে, যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন।

তাদের এগিয়ে আসতে হবে। পস্নাজমা নেওয়ার পদ্ধতিও খুব সহজ। যিনি দেবেন, তার কোনো ক্ষতি হবে না।

যত বেশি পস্নাজমা পাওয়া যাবে, তত বেশি রোগীর শরীরে তা দেওয়া সম্ভব হবে।’ প্রশ্ন হলো, পস্নাজমা থেরাপি দিয়ে করোনা সারিয়ে তোলা কি সম্ভব? সারিনের বক্তব্য, ‘এটা নতুন কোনো পদ্ধতি নয়। যে রোগের ওষুধ থাকে না, সেখানে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়।

১৯০১ সালে এইভাবে ডিপথেরিয়ার চিকিৎসা হয়েছে। করোনার কোনো ওষুধ নেই। তাই পস্নাজমা দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে। প্রাথমিক সাফল্য পাওয়া গিয়েছে।’ চিকিৎসক সুব্রত কুন্ডু বলেন, ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এত তাড়াতাড়ি রায় দেওয়া যায় না।

এটা ঠিক, প্রাথমিক সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। এখন আরও অনেকের ওপর তা প্রয়োগ করতে হবে।

তারপর যাদের পস্নাজমার মাধ্যমে চিকিৎসা করা হলো এবং যাদের করা হয়নি, দুই ধরনের ঘটনা তুলনা করে দেখতে হবে। এই গবেষণায় সময় লাগে। অন্তত ছয় মাস থেকে এক বছর লাগবে।

এত তাড়াতাড়ি নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। তবে প্রাথমিক সাফল্য পাওয়া গিয়েছে, এটা নিঃসন্দেহে খুবই ভালো ব্যাপার।’

এরই পাশাপাশি দিলিস্ন আইআইটি কম দামে করোনা পরীক্ষার কিট তৈরি করার অনুমোদন পেয়েছে।

আইআইটির দশজন অধ্যাপক ও গবেষক এই কিট তৈরি করেছেন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ বা আইসিএমআর তাদের এই কিটকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ব্যাপকভাবে তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। তারা এখন একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে দ্রম্নত উৎপাদন শুরু করে দিচ্ছে।

আইসিএমআর আপাতত চীনের থেকে কিট আমদানি বন্ধ রেখেছে। চীনা কিট নিয়ে প্রচুর অভিযোগ আসায় তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইআইটির কিট বাজারে এসে গেলে কিটেরও অভাব হবে না।

Leave a Comment