ওহির পরিচয়, প্রকার ও ওহি প্রেরণের পদ্ধতিসহ আল কুরআন সংকলনের ইতিহাস বর্ণনা কর

ওহির পরিচয়, প্রকার ও ওহি প্রেরণের পদ্ধতিসহ আল কুরআন সংকলনের ইতিহাস বর্ণনা কর


নির্দেশনা:

  • ওহির ধারণা দিবে।
  • ওহির প্রকার উল্লেখ করবে।
  • ওহি অবতরণের পদ্ধতি উল্লেখ করবে।
  • আল কুরআন সংকলনের ইতিহাস উল্লেখ করবে।
  • এ বিষয়ে পাঠ্যপুস্তক ও প্রয়োজনে অত্র বিষয়ে শিক্ষক/অভিজ্ঞদের সহযোগিতা নিবে।

উত্তর সমুহ:

  • ওহির ধারণা দিবে।

উত্তর:

আরবীতে ওহী (وحی) শব্দটি বাবে ضرب এর মাসদার। এটির আভিধানিক অর্থ হলোঃ গোপনে জানিয়ে দেয়া, ইঙ্গিত করা, প্রেরণ করা – ইত্যাদি। 

পরিভাষায়, নবী-রাসূলদের ওপর আল্লাহ তা’য়ালার অবতারিত বাণীকে ওহী বলে। কিংবা, গোপনে আল্লাহ প্রদত্ত নবী-রাসূলদেরকে কোনকিছু জানানোর নামই ওহী। 

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

ওহি শব্দের অর্থ ইশারা, ইঙ্গিত, গোপন কথা ইত্যাদি।

ওহি বলতে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবি-রাসুলগণের কাছে পাঠানো বার্তাকে বোঝায়।
ওহি আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ ইশারা, ইঙ্গিত, গোপন বার্তা ইত্যাদি।সাধারণত কোনো ব্যক্তির কাছে গোপনে পাঠানো সংবাদকে ওহি বলা হয়। ইসলামের পরিভাষায় আল্লাহর পক্ষ থেকে নবি-রাসুলগণের কাছে প্রেরিত সংবাদ বা বাণীকে ওহি বলা হয়।

  • ওহির প্রকার উল্লেখ করবে।

উত্তর:

ওহী দু’প্রকার। 

  1. وحی متلو বা পঠিত ওহী৷ এটি হলোঃ পবিত্র কুরআন শরীফ।    
  2. وحی غير متلو বা অপঠিত ওহী৷ এটি হলোঃ পবিত্র হাদীস শরীফ।

তবে, নবী-রাসূলদের প্রত্যাদেশ প্রাপ্তির ধরণ হিসেবে ওহী তিন প্রকার।

  1. নবীদের সরাসরি আল্লাহ তা’য়ালার শাশ্বত বাণী শ্রবণ করা। যেমনঃ হযরত মূসা (আঃ)-এর শ্রবণ। 
  2. আল্লাহ প্রদত্ত ফেরপশতার মাধ্যমে ওহী অবতরণ করা৷ 
  3. নবীর অন্তকরনে বিষয়বস্তুর ভাব সৃষ্টি করা৷ যেমনঃ রাসূল (সঃ) বলেছেন, ان روح القدس نفث فی روحی

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
  • ওহি অবতরণের পদ্ধতি উল্লেখ করবে।

উত্তর:

মহানবী (সা.)-এর ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে যত আহকাম আসত তা দুই প্রকার। প্রথম প্রকারের ওহিতে আল্লাহপাকের নিজস্ব শব্দ থাকত এবং দ্বিতীয় প্রকার হলো, যেসব ওহিতে আল্লাহপাকের নিজস্ব শব্দ থাকত না বটে কিন্তু বিষয়বস্তু আল্লাহপাকের হতো এবং জিবরাইল আলাইহিস সালাম নিজস্ব শব্দের দ্বারা তা ব্যক্ত করতেন।

প্রথম প্রকারকে ‘কোরআন’ বলা হয় এবং দ্বিতীয় প্রকার হলো ‘সুন্নাতে রসুল’। অবশ্যই দুই প্রকার ওহিই আল্লাহর তরফ থেকে নাজিল হয়েছে এবং মহানবী (সা.)-এর পবিত্র কণ্ঠ থেকে নিঃসৃত হয়েছে।

মহানবী (সা.)-এর ওপর যেসব ওহি আসত তা ছয় প্রকার। (১) প্রথমে ঘণ্টার শব্দ আসতে থাকত; এমন সময় মহানবী (সা.)-এর পবিত্র দেহের বর্ণ পরিবর্তিত হয়ে পড়ত, তীব্র শীতের দিনেও তিনি ঘর্মাক্ত হয়ে পড়তেন। হজরত আয়েশা বলেন, এ অবস্থাটি যখন হতো তখন তাঁর হাত মোবারক যদি আমার ঊরুতে স্থাপন করা থাকত তাহলে মনে হতো, ঊরু ফেটে যাবে; তিনি আরোহী অবস্থায় থাকলে শক্তিশালী উষ্ট্রীও ওহির ভার বহন না করতে পেরে বসে পড়ত।

আলেমরা লিখেছেন, এ অবস্থাটি মহানবী (সা.)-এর জন্য বড় কষ্টকর ছিল। সাধারণত যখন আজাব, ধমক এবং ক্রোধপূর্ণ আয়াত নাজিল হতো তখন এ অবস্থাটি ঘটত। (২) হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম অন্তরে কথা রেখে দিতেন। (৩) জিবরাইল আলাইহিস সালাম মানুষের বেশে তাশরিফ আনতেন এবং আল্লাহর হুকুম বলে যেতেন। এটি ছিল সহজ পদ্ধতি।

অধিকাংশ সময় হজরত দাহিয়া কালবী (রা.)-এর আকৃতিতে জিবরাইল আলাইহিস সালাম তাশরিফ আনতেন। (৪) জিবরাইল আলাইহিস সালাম মহানবী (সা.)-এর ঘুমন্ত অবস্থায় আসতেন এবং আল্লাহপাকের পয়গাম পৌঁছে দিয়ে যেতেন। যেমন সুরা কাওসার। (৫) আল্লাহপাক রাব্বুল ইজ্জত সরাসরি কথা বলতেন।

যেমন শবে মেরাজে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে। মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুমুখে পতিত ব্যক্তির যে শোচনীয় পরিণাম হবে তার ঘোষণাও করা হয়েছে এভাবে।  (৬) ঘুমন্ত অবস্থায় আল্লাহপাক ওহি নাজিল করেছেন। এমন ওহির উদাহরণ হাদিস শরিফে রয়েছে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: ইস্পাহানি দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা, পূর্ব আগানগর, দ. কেরানীগঞ্জ, ঢাকা। (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
  • আল কুরআন সংকলনের ইতিহাস উল্লেখ করবে।

উত্তর:

আল কোরআন বিশ্বের বিস্ময়কর গ্রন্থ। এটি সর্বাধিক প্রশংসিত মহা প্রজ্ঞাময় রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ নবী বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর অবতারিত হয়েছে। বিশ্বজনীন এ গ্রন্থের আবেদন ও উপযোগিতা সব যুগে এবং সব স্থানেই কার্যকর রয়েছে। কোরআনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এ গ্রন্থ দুইবার নাজিল হয়েছে।

প্রথমে একবার পুরো কোরআনের আয়াত প্রথম আসমানে ‘বাইতুল ইজ্জতে’ নাজিল হয়েছে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৩ বছর ধরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ঘটনা উপলক্ষে, যুগ-জিজ্ঞাসার জবাবে নাজিল হয়েছে। কুদরতি নিয়মে হাজারো বছর ধরে অত্যন্ত বিস্ময়কর প্রক্রিয়ায় এ গ্রন্থকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লিখে রাখার পাশাপাশি হাজারো বছর ধরে হৃদয় থেকে হৃদয়ে একে ধারণ করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোরআনের লাখো হাফেজ বা মুখস্থকারী রয়েছেন। মানব ইতিহাসে আর কোনো গ্রন্থের এত হাফেজ নেই।

রাসুল (সা.)-এর যুগে কোরআন সংরক্ষণ :

যেহেতু পূর্ণ কোরআন একসঙ্গে নাজিল হয়নি; বরং কোরআনের বিভিন্ন আয়াত বিশেষ প্রয়োজনীয়তা ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়েছে; তাই রাসুল (সা.)-এর যুগে শুরু থেকেই বই আকারে একে সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। আসমানি গ্রন্থগুলোর মধ্যে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনকে এ বিশেষত্ব দান করেছেন যে কলম-কাগজের চেয়েও একে অগণিতসংখ্যক হাফেজের স্মৃতিপটে সংরক্ষণ করেছেন। মুসলিম শরিফে এসেছে, আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবিব (সা.)-কে বলেছেন, ‘আমি আপনার ওপর এমন কিতাব অবতীর্ণ করব, যাকে পানি ধুয়ে নিতে পারবে না।’

অর্থাৎ দুনিয়ার সাধারণ গ্রন্থগুলোর অবস্থা এই যে পার্থিব বিপর্যয়ের কারণে সেগুলো ধ্বংস হয়ে যায়; কিন্তু কোরআনকে মানুষের অন্তরে অন্তরে এভাবে সংরক্ষণ করা হবে যে তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকবে না। তাই প্রথম দিকে লেখার চেয়েও কোরআন মুখস্থ করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায়ই সাহাবায়ে কেরামের একটি বড় অংশ হাফেজে কোরআন হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন-হজরত আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলী, তালহা, সাআদ, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হুজায়ফা বিন ইয়ামান, হজরত সালেম, আবু হুরায়রা, ইবনে ওমর, ইবনে আব্বাস, আমর ইবনুল আস, আবদুল্লাহ বিন আমর, মুয়াবিয়া, ইবনে জুবাইর, আবদুল্লাহ বিন আস্ সায়েব, আয়েশা, হাফসা, উম্মে সালমা, উম্মে ওয়ারাকা, উবাই ইবনে কাআব, মাআজ ইবনে জাবাল, আবু হুলাইমা মাআজ, জায়েদ ইবনে সাবেত, আবুদ্ দারদা, মুজাম্মা বিন জারিয়া, মাসলামা বিন মুখাল্লিদ, আনাস ইবনে মালেক, উকবা বিন আমের, তামিম দারেমি, আবু মুসা আশআরি এবং হজরত আবু জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ অন্যতম হাফেজ সাহাবি ছিলেন। (আল-ইত্বকান, খ. ১, পৃ. ৭৩-৭৪) মূলত উল্লিখিত নামগুলো সেসব সাহাবির, যাঁদের নাম হাফেজে কোরআন হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। অন্যথায় আরো অগণিত সাহাবির গোটা কোরআন মুখস্থ ছিল। কেননা বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) কখনো কখনো একেক গোত্রে সত্তরজন করে কোরআনের শিক্ষক পাঠাতেন। বিরে মউনার যুদ্ধে সত্তরজন কারি সাহাবি শহীদ হওয়ার কথা বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। হাফেজ সাহাবির সংখ্যা এতই বেশি যে ইমামার যুদ্ধে প্রায় সমসংখ্যক হাফেজ, আরেক বর্ণনা মতে, পাঁচ শ (ইবনে কাছির, খ. ১, পৃ. ২৬), অন্য বর্ণনা মতে, সাত শ কারি/হাফেজ সাহাবি শহীদ হয়েছেন। (উলুমুল কোরআন, পৃ. ১৭৬)

রাসুল (সা.)-এর যুগে কোরআন সংকলন :

আরবদের দুনিয়াজুড়ে খ্যাত বিস্ময়কর স্মৃতির ওপর ভর করে কোরআন সংরক্ষণের পাশাপাশি রাসুল (সা.) লিখিতভাবে কোরআন সংকলন, সংরক্ষণ ও একত্রীকরণের ব্যবস্থা করে গেছেন। ওহির ইলম লিপিবদ্ধ করার জন্য তিনি চল্লিশজন ‘কাতেবে ওহি’ বা ওহি লেখক নিযুক্ত করেছেন। সে সময় কাগজ ছাড়াও পাথর, চামড়া, খেজুরের ডাল, বাঁশের টুকরা, গাছের পাতা এবং চতুষ্পদ জন্তুর হাড্ডির ওপর কোরআন লিখে রাখা হতো। এভাবেই রাসুল (সা.)-এর তত্ত্বাবধানে কোরআনের একটি কপি প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল, যদিও তা পুস্তিকারূপে ও গ্রন্থিত আকারে ছিল না।

এ ছাড়া সাহাবায়ে কেরামের কারো কারো কাছে ব্যক্তিগতভাবে কোরআনের সম্পূর্ণ অথবা অসম্পূর্ণ কপি বিদ্যমান ছিল। যেমনটা বুখারি শরিফের এক বর্ণনায় এসেছে, হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কোরআন নিয়ে (অর্থাৎ কোরআনের কপি নিয়ে) শত্রুদের ভূখণ্ডে সফর করতে নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি শরিফ, খ. ১, পৃ. ৪১৯)

আবু বকর (রা.)-এর যুগে কোরআন সংকলন :

যেহেতু রাসুল (সা.)-এর যুগে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন বস্তুর ওপর কোরআন সংরক্ষিত ছিল, তাই হজরত আবু বকর (রা.) নিজ খেলাফতের সময় বিক্ষিপ্ত অংশগুলো একত্র করে সংরক্ষণের প্রতি মনোযোগী হয়েছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে সহিহ বুখারি শরিফে। হজরত জায়েদ ইবনে সাবেত (রা) বলেন, ”ইমামার যুদ্ধের পরপরই হজরত আবু বকর (রা.) আমাকে ডেকে পাঠালেন।

আমি সেখানে গিয়ে দেখি ওমর (রা.)ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আবু বকর (রা.) আমাকে বললেন-ওমর (রা.) এসে আমাকে বলেছেন, ‘ইমামার যুদ্ধে কোরআনে হাফেজদের একটি বড় অংশ শহীদ হয়ে গেছে। আর এভাবেই যদি বিভিন্ন স্থানে কোরআনের হাফেজরা শহীদ হতে থাকেন, তাহলে আমার আশঙ্কা হয়, কোরআনের একটি বড় অংশ হারিয়ে যাবে। তাই আমার অভিমত হলো, আপনি চাইলে কোরআন সংকলনের নির্দেশ দিতে পারেন।’ আমি তাঁকে বললাম, ‘যে কাজ রাসুল (সা.) করেননি, সেই কাজ আমি কিভাবে করব?’ জবাবে ওমর (রা.) বললেন, ‘আল্লাহর কসম, এ কাজ উত্তমই উত্তম। এরপর ওমর (রা.) বারবার আমাকে একই কথা বলতে লাগলেন। একপর্যায়ে এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা আমার অন্তর খুলে দিলেন। এখন ওমরের অভিমত যা, আমার অভিমতও তা-ই।’

এরপর আবু বকর (রা.) আমাকে বললেন, ‘তুমি বিচক্ষণ যুবক, তোমার ব্যাপারে আমাদের কোনো খারাপ ধারণা নেই। রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় তুমি ওহি লেখার কাজ করতে। তাই তুমিই কোরআনের আয়াতগুলো অনুসন্ধান করে সেগুলো একত্র করো।’ জায়েদ (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম, তাঁরা যদি আমাকে সস্থান থেকে কোনো পাহাড় সরানোর আদেশ দিতেন, তাহলে তা আমার কাছে এত কঠিন মনে হতো না, যতটা কঠিন মনে হয়েছে কোরআন সংকলনের দায়িত্ব পালনের নির্দেশটি।’ আমি বললাম, ‘আপনারা এমন কাজ কিভাবে করবেন, যা রাসুল (সা.) করেননি?’ আবু বকর (রা.) বললেন, ‘আল্লাহর কসম, এ কাজে মঙ্গলই মঙ্গল রয়েছে। এরপর তিনি আমাকে বারবার তা বলতে লাগলেন।

একপর্যায়ে এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা আমার বক্ষ উন্মুক্ত করে দিলেন, যে বিষয়ে বক্ষ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন হজরত আবু বকর ও ওমর (রা.)-কে। অতঃপর আমি কোরআনের আয়াত অনুসন্ধান করতে লাগলাম। সুতরাং কোরআনের আয়াতগুলো খেজুরের ডাল, পাথরের তখতি এবং মানুষের হৃদয় থেকে খুঁজে খুঁজে আমি তা একত্র করলাম। সুরা তওবার শেষ আয়াত আবু খুজাইমা আনসারি (রা.)-এর কাছে পেলাম, অন্যদের কাছে (লিখিতভাবে) তা আমি পাইনি’।” (বুখারি শরিফ, হা. ৪৯৮৬; ইবনে কাছির : ভূমিকা) তবে নিঃসন্দেহে সে আয়াতটি হাফেজ সাহাবিদের মুখস্থ ছিল এবং সেটি ‘মুতাওয়াতির’ বর্ণনা দ্বারাও কোরআনের আয়াত হওয়া প্রমাণিত। (উলুমুল কোরআন, তকি্ব উসমানি, পৃ. ১৮৫)

জায়েদ (রা.)-এর গবেষণা পদ্ধতি :

হজরত জায়েদ (রা.) নিজে কোরআনে হাফেজ হওয়া সত্ত্বেও এককভাবে কোরআন সংকলনের গুরুদায়িত্বটি আঞ্জাম দেননি, বরং তিনি চারটি পদ্ধতিতে কোরআন সংকলন করতেন। এক. কোনো আয়াত পাওয়া গেলে সর্বপ্রথম তা নিজের হিফজ ও মুখস্থের সঙ্গে মিলিয়ে নিতেন। দুই. হজরত উমর (রা.)ও হাফেজ ছিলেন। বর্ণিত আছে যে তিনিও আবু বকর (রা.)-এর নির্দেশে জায়েদ (রা.)-কে সহযোগিতা করতেন।

তিন. কোনো আয়াত ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করা হতো না যতক্ষণ না দুজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি এ কথার সাক্ষ্য দিতেন যে এ আয়াত রাসুল (সা.)-এর সামনে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে অথবা সেগুলো রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুর আগে তাঁর কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। সুরা তাওবার শেষ আয়াতটি যখন কেবল হজরত আবু খুজাইমা (রা)-এর কাছে পাওয়া গেছে তখন এ সূত্রে সেটিকে গ্রহণ করা হয়েছে যে জীবদ্দশায় রাসুল (সা.) সে সাহাবির একজনের সাক্ষ্যকে দুজনের সাক্ষ্যের সমতুল্য ঘোষণা করে গেছেন। চার. অবশেষে চূড়ান্ত পর্যায়ে সে আয়াতগুলোর সমষ্টিকে বিভিন্ন সাহাবির ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগৃহীত কোরআনের পাণ্ডুলিপির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া হতো।

আবু বকর (রা.) সংকলিত কোরআনের বৈশিষ্ট্য :

আবু বকর (রা.) সংকলিত কোরআনকে পরিভাষায় ‘উম্ম’ বা আদি কোরআন বলা হয়। কেননা এটিই প্রথম লিখিত সুবিন্যস্ত কোরআন। এর বৈশিষ্ট্য হলো-এটি রাসুল (সা.) বর্ণিত ধারাক্রম অনুসারে প্রস্তুত করা হয়েছে। সুরাগুলো আলাদা রেখে দেওয়া হয়েছে; সুরার ক্রমধারা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। এটি সাত হরফ বা সাত কেরাতে লেখা হয়েছে। এ কপিটি হীরার হস্তাক্ষরে লেখা হয়েছে।

এখানে কেবল সেসব আয়াত লেখা হয়েছে, যেগুলোর তিলাওয়াত রহিত হয়নি। এই সংকলনের উদ্দেশ্য ছিল একটি সুবিন্যস্ত, গ্রন্থিত কোরআনের কপি সংগ্রহ করা, যাতে প্রয়োজনের সময় এর দ্বারস্থ হওয়া যায়। এটি ১৩ হিজরিতে শুরু হয়ে পূর্ণ এক বছর মতান্তরে প্রায় দুই বছরে সমাপ্ত হয়। (তারিখুল কোরআনিল কারিম, তাহের আল কুরদি; খ. ১, পৃ. ২৮)

হজরত আবু বকর (রা.) সংকলিত কোরআনটি মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর কাছেই ছিল। এরপর উমর (রা.)-এর কাছে। তাঁর শাহাদাতের পর নিজ অসিয়ত মোতাবেক রাসুল (সা.)-এর স্ত্রী, নিজ কন্যা হাফসা (রা.)-এর কাছে বিদ্যমান ছিল। অতঃপর মারওয়ান বিন হাকাম তাঁর রাজত্বকালে এ কপিটি চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

হাফসা (রা.)-এর ইন্তেকালের পর মারওয়ান এ কপি হজরত ইবনে উমর (রা.)-এর কাছ থেকে নিয়ে যান। অতঃপর তিনি এ চিন্তা করে সেটি জ্বালিয়ে দিয়েছেন যে উসমান (রা.)-এর খেলাফত আমলে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তুতকৃত কপির সঙ্গে এর কেরাতের পার্থক্যের কারণে অদূর ভবিষ্যতে ফেতনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কেননা উসমান (রা.) সাত কেরাতের পরিবর্তে এক কেরাত, আঞ্চলিক একাধিক ভাষার পরিবর্তে প্রমিত এক ভাষায় সে কোরআনটি সংকলন করেছেন। (উলুমুল কোরআন, তকি্ব উসমানি, পৃ. ১৮৬-১৮৭)

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

জানা অজানা

3 thoughts on “ওহির পরিচয়, প্রকার ও ওহি প্রেরণের পদ্ধতিসহ আল কুরআন সংকলনের ইতিহাস বর্ণনা কর”

Leave a Comment