উপন্যাস : লালসালু, ধলামিয়া কেমন ধরনের মানুষ ছিল?

উপন্যাস : লালসালু

৩। লালসালু’ কু-সংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মবােধের প্রতীক, অন্ধ ধর্মাচ্ছন্নতার প্রতীক। তারপরও অসহায় দুর্বল মানুষের মানসিক সান্ত্বনার শেষ আশ্রয়স্থল হল মাজার। তাই ভন্ড প্রতারক ধর্মব্যবসায়ীরা এ সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রেখেছে। লালসালুর দৌরাত্ম্যে শােষিত ও নিঃস্ব হচ্ছে সরল অন্ধবিশ্বাসী সাধারণ মানুষ। কেননা তাদের সচেতনতার উৎস ঢাকা পড়ে আছে লালসালুর অলৌকিক শক্তির কাছে।

(ক) ধলামিয়া কেমন ধরনের মানুষ ছিল?

উত্তর: ধলা মিয়া বোকা কিছিমের মানুষ ছিল?

(খ) মজিদের মন ক’দিন ধরে থম থম করে কেন?

উত্তর: মজিদের মন থম থম করে এ জন্য যে পীর সাহেবের আগমনে সে সত্যি সত্যি ভয় পেয়েছে। … বাইরে নিরুদ্বিগ্ন ও সচ্ছন্দ থাকলেও ভেতরে-ভেতরে মজিদের মন ক-দিন ধরে চিন্তায় ঘুরপাক খায়।

(গ) উদ্দীপকের সাথে ‘লালসালু উপন্যাসের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: উদ্দীপকের সাথে লালসালু উপন্যাসের সাদৃশ্য আছে ।

লালসালু’ কু-সংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মবােধের প্রতীক, অন্ধ ধর্মাচ্ছন্নতার প্রতীক। তারপরও অসহায় দুর্বল মানুষের মানসিক সান্ত্বনার শেষ আশ্রয়স্থল হল মাজার। তাই ভন্ড প্রতারক ধর্মব্যবসায়ীরা এ সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রেখেছে। লালসালুর দৌরাত্ম্যে শােষিত ও নিঃস্ব হচ্ছে সরল অন্ধবিশ্বাসী সাধারণ মানুষ। কেননা তাদের সচেতনতার উৎস ঢাকা পড়ে আছে লালসালুর অলৌকিক শক্তির কাছে।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ মানবতাবাদী লেখক। মানব-মুক্তির স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা তাঁর সাহিত্য সাধনার কেন্দ্রে সক্রিয়। এ দেশের মানুষের সুসংগত ও স্বাতঃস্ফূর্ত বিকাশের অন্তরায়গুলিকে তিনি তাঁর রচিত সাহিত্যের পরিমণ্ডলেই চিহ্নিত করেছেন; দেখিয়েছেন কুসংস্কারের শক্তি আর অন্ধবিশ্বাসের দাপট।

স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ও সমাজ সরল ও ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে কীভাবে বিভ্রান্ত ও ভীতির মধ্যে রেখে শোষণের প্রক্রিয়া চালু রাখে তার অনুপুঙ্খ বিবরণ তিনি দিয়েছেন ‘লালসালু’ উপন্যাসে। ধর্মবিশ্বাস কিন্তু তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য নয়-তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য ধর্ম ব্যবসায় এবং ধর্মের নামে প্রচলিত কুসংস্কার, গোঁড়ামি ও অন্ধত্ব।

তিনি সেই সমাজের চিত্র তুলে ধরেন যেখানে ‘শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি’। তিনি মনে করেন, ধর্ম মানুষকে সত্যের পথে, কল্যাণের, পথে, পারস্পরিক মমতার পথে নিয়ে এসেছে; কিন্তু ধর্মের মূল ভিত্তিটাকেই দুর্বল করে দিয়েছে কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাস। এ কারণে মানুষের মন আলোড়িত, জাগ্রত ও বিকশিত তো হয়ইনি বরং দিন দিন হয়েছে দুর্বল, সংকীর্ণ এবং ভীত।

স্বার্থ ও লোভের বশবর্তী হয়ে এক শ্রেণির লোক যে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখার জন্য নানান ভণ্ডামি ও প্রতারণার আশ্রয় নেয় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর আঘাত তার বিরুদ্ধে। লেখক সামাজিক এই বাস্তবতার চিত্রটিই এঁকেছেন ‘লালসালু’ উপন্যাসে; উন্মোচন করেছেন প্রতারণার মুখোশ।

স্বয়ং মাতব্বর খালেকও তাকে সমীহ করতে শুরু করলে মজিদের আধিপত্যের সীমা আরও বড় হয়, প্রভাব খাটাতে শুরু করে পারিবারিক জীবনেও। বৃদ্ধ বাপ-মায়ের মধ্যকার একান্ত পারিবারিক ঝগড়া-কলহে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে প্রশ্ন তোলে বাপের কর্তৃত্ব নিয়ে; জনসমক্ষে নিয়ে গিয়ে মাফ চাইয়ে লজ্জিত-অপমানিত বাপকে করে গ্রামছাড়া। আবার আত্মদম্ভে আঁচড় লাগায় মিথ্যে কলঙ্ক আরোপ করে মাতব্বর খালেককে বাধ্য করে তার নিঃসন্তান অসহায় স্ত্রীকে তালাক দিতে। মজিদের প্রতি গ্রামবাসীর ভক্তি-ভীতি আর আনুগত্য এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, এত শত কাণ্ডের পরেও তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয় না টুঁ শব্দটি। এভাবে গ্রামবাসীর সারল্য ও ধর্মবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ী মজিদ প্রতারণার জাল বিস্তারের মাধ্যমে কীভাবে নিজের শাসন ও শোষণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তারই বিবরণে সমৃদ্ধ ‘লালসালু’ উপন্যাস।

(ঘ) লালসালু উপন্যাসের মূলভাব উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে। এ বিষয়ে তােমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

উত্তর: লালসালু’ কু-সংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মবােধের প্রতীক, অন্ধ ধর্মাচ্ছন্নতার প্রতীক। তারপরও অসহায় দুর্বল মানুষের মানসিক সান্ত্বনার শেষ আশ্রয়স্থল হল মাজার। তাই ভন্ড প্রতারক ধর্মব্যবসায়ীরা এ সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রেখেছে। লালসালুর দৌরাত্ম্যে শােষিত ও নিঃস্ব হচ্ছে সরল অন্ধবিশ্বাসী সাধারণ মানুষ। কেননা তাদের সচেতনতার উৎস ঢাকা পড়ে আছে লালসালুর অলৌকিক শক্তির কাছে।


লালসালু হচ্ছে লাল রঙের কাপড়। এমনিতে লাল কাপড়ের তেমন কোনো মহিমা নেই। তবে এটি খুব উজ্জ্বল রং হওয়ায় একে বিশেষ উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো যায়। বাংলাদেশের একশ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী যুগ-যুগ ধরে লাল রং টিকে সফলভাবে কাজে লাগিয়ে আসছে। কবরের উপর লাল কাপড় বিছিয়ে দিলে কবরের গুরুত্ব অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায়। তখন তা আর সাধারণ কবরে সীমাবদ্ধ থাকে নামাজারে পরিণত হয়। কবরটি তখন মানুষের ভক্তি প্রীতির আকর্ষণ হয়ে দাড়ায়। এ ধরনের কবরে মানুষ প্রতিনিয়ত ভিড় জমায়, জেয়ারত করে, দোয়া দরুদ পড়ে এবং শিরনি দেয়। টাকা পয়সা দেয়।

এভাবে মাজারটি হয়ে দাড়ায় পরলোক চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। এই মাজার বাংলাদেশের লোকজীবনে অসামান্য প্রভাব ফেলে। এখানেই ‌লালসালু নামকরণের তৎপর্য ইঙ্গিতময় হয়ে ওঠে। এরসাথে পীর-ফকিরদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। উপন্যাস যখন লেখা হয়- তখন চলছে দেশভাগের প্রস্তুতি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশভাগোত্তর উদ্বাস্তু সমস্যা আর সঙ্গে নতুন রাষ্ট্র গঠনের উদ্দীপনা। এমনি একটা সময়ে ঔপন্যাসিক পটভূমি থেকে শুরু করে চরিত্র নির্বাচন; সবই নিলেন গ্রামীণ জীবন থেকে। কাহিনীর বিষয়বস্তু সমাজ-চরিত্র : একদিকে কুসংস্কারগ্রস্ত ধর্মভীরুশোষিত গ্রামবাসী, অন্যদিকে শঠ, ধর্ম-ব্যবসায়ী ও শোষক ভূস্বামী। কিন্তু লালসালু ঘটনাবহুল উপন্যাস নয়। ঘটনার চেয়ে ঘটনা বিশ্লেষণের বিস্তারটাই চোখে পড়ে আগাগোড়া। মূল চরিত্র মজিদ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাকে ঘিরেই উপন্যাসের কাহিনী আবর্তিত। তারপর মহব্বতনগর গ্রামের অধিবাসীদের মাজার কেন্দ্রিক ভয়-ভক্তি-শ্রদ্ধা ওআকাঙ্ক্ষাসব নিয়ন্ত্রণ করে মজিদ।

তার চক্রান্তেই নিরুদ্দেশ হয় তাহের ওকাদেরের বাপ। আওয়ালপুরের পীরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার শেষে সে পীরকেও করে পরাভূত। খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ানো, যুবক আব্বাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার আয়োজনকে বিদ্রূপ করা ও তাকে অধার্মিক হিসেবে চিহ্নিত করে গ্রামছাড়া করা_এসবের মধ্য দিয়েই নিজের প্রভাব ও প্রতিষ্ঠা নিরঙ্কুশ বিস্তার করে, সে দ্বিতীয় বিয়ের পিড়িতে বসে। নতুন বউয়ের নাম জমিলা। চঞ্চল, সহজ-সরল মেয়ে।

কিন্তু প্রথম থেকেই মজিদকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারে না সে।
একইসঙ্গে মজিদ নামক চরিত্রের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি মানুষের যে ব্যক্তিগত লড়াই এবং তার অস্তিত্বের জন্য বা টিকে থাকার জন্য তার যে নিরন্তর সংগ্রাম; সেটিকেও সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ তার উপন্যাসে অত্যন্ত জোরালোভাবে নিয়ে এসেছেন। পীরের বাড়িতে একটা মেয়ের স্বাভাবিকভাবে পর্দানশিন থাকার কথা। যেমনটা দেখা গেছে, প্রথম বউ রহিমার ক্ষেত্রে। স্বামী মজিদের প্রতিটি কথাতার কাছে অবশ্য পালনীয়। কোথাও কোনো নড়চড় নেই। মজিদের কোনো ধূর্ততা, শঠতা, ভণ্ডামি কোনোটাই তার চোখে পড়ে না। অন্যদিকে জমিলা একেবারেই উল্টো পথে চলে।

সেখানে আগরবাতি, মোমবাতি জ্বলে; ভক্ত আর কৃপাপ্রার্থীরা টাকা-পয়সা দিতে থাকেন দেদার।মাজারটি পরিণত হয় গ্রামজুড়ে মজিদের একচ্ছত্র আধিপত্যের প্রধান কেন্দ্রে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মজিদ ঘরবাড়ি, জমি-জিরাত এবং মনোভূমির অনিবার্য আকাঙ্ক্ষায় শক্ত-সমর্থ এবং ঠাণ্ডা-ভীতু স্বভাবের এক জরুর মালিক হয়ে বসে। তার নানাবিধ ভেল্কিবাজি নিরক্ষর গ্রামবাসীর কাছে তাকে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন করে তোলে। এর বলেই ধর্মকর্মের পাশাপাশি সে হয়ে ওঠে গ্রামের প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তি- উপদেশ দেয় গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে, বিচার-সালিশে সে-ই হয় প্রধান সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ব্যক্তি।

স্বয়ং মাতব্বর খালেকও তাকে সমীহ করতে শুরু করলে মজিদের আধিপত্যের সীমা আরও বড় হয়, প্রভাব খাটাতে শুরু করে পারিবারিক জীবনেও। বৃদ্ধ বাপ-মায়ের মধ্যকার একান্ত পারিবারিক ঝগড়া-কলহে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে প্রশ্ন তোলে বাপের কর্তৃত্ব নিয়ে; জনসমক্ষে নিয়ে গিয়ে মাফ চাইয়ে লজ্জিত-অপমানিত বাপকে করে গ্রামছাড়া। আবার আত্মদম্ভে আঁচড় লাগায় মিথ্যে কলঙ্ক আরোপ করে মাতব্বর খালেককে বাধ্য করে তার নিঃসন্তান অসহায় স্ত্রীকে তালাক দিতে। মজিদের প্রতি গ্রামবাসীর ভক্তি-ভীতি আর আনুগত্য এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, এত শত কাণ্ডের পরেও তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয় না টুঁ শব্দটি। এভাবে গ্রামবাসীর সারল্য ও ধর্মবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ী মজিদ প্রতারণার জাল বিস্তারের মাধ্যমে কীভাবে নিজের শাসন ও শোষণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তারই বিবরণে সমৃদ্ধ ‘লালসালু’ উপন্যাস।

H.S.C

Leave a Comment