উপন্যাস: পদ্মা নদীর মাঝি

উপন্যাস: পদ্মা নদীর মাঝি, গােপী’ কে ?

৩। আমার বিবাহে আমার শ্বশুর পনেরাে হাজার টাকা নগদ এবং পাঁচ হাজার টাকার গহনা দিয়েছিলেন। বাবা তাহার এক দালাল বন্ধুর কাছে খবর পাইয়াছেন ইহার মধ্যে। পনেরাে হাজার টাকাই ধার করিতে হইয়াছে।

ক. ‘গােপী’ কে ?

উত্তর: পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে কুবেরের মেয়ের নাম গোপী।

খ. হােসেন মিয়াকে রহস্যময় লােক বলা হয়েছে কেন?

উত্তর: হোসেন মিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে কেতুপুরবাসী অজ্ঞাত। কিন্তু সে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। আর তাই হোসেন মিয়াকে রহস্যময় লোক বলা হয়েছে।

হোসেন মিয়া নোয়াখালী অঞ্চলের লোক। মাত্র কয়েক বছর ধরে কেতুপুর গ্রামে বাস করছে। প্রথম যখন সে কেতুপুর গ্রামে আসে, তখন তার ছিল একটা ছেঁড়া লুঙ্গি। কিন্তু অল্পদিনে সে জমি-জায়গা কিনে, ঘরবাড়ি তুলে পরম সুখেই দিন কাটাচ্ছে। অথচ কেতুপুরবাসী জানে না তার আয়ের উৎস কোথায়? তাই কেতুপুরবাসীর দৃষ্টিতে হোসেন মিয়া একজন রহস্যময় চরিত্র।

গ. উদ্দীপকের পন প্রথার কাছে পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসের পন প্রথার যে বৈষম্য দেখা যায় তা নিরুপণ কর।

উত্তর: উদ্ধৃতাংশের পণ বলতে বোঝানো হয়েছে মেয়ের পিতা কর্তৃক ছেলেকে দেয় যৌতুক। আর পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে বর্ণিত পণ প্রথা হলো ছেলে বা তার পিতা কর্তৃক বিবাহ উপলক্ষে মেয়েকে দেয় টাকা-পয়সা।

আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থায় যে যৌতুক প্রথা প্রচলিত আছে, তাকেই উদ্ধৃতাংশে টেনে আনা হয়েছে। বর্তমানে মেয়ে বিয়ে দিতে হলে ছেলে কিংবা তার মা-বাবা কর্তৃক উত্থাপিত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হয়—যাকে আমরা যৌতুক প্রথা বলে থাকি। সরকার কর্তৃক যৌতুকবিরোধী আইন পাস করা সত্ত্বেও যৌতুক প্রথা আমাদের সমাজে পাকাপোক্ত হয়ে বসে আছে। যৌতুক ছাড়া বিয়ে হচ্ছে এমন অবস্থা আমাদের পারিপার্শ্বিকতায় একান্তই নগণ্য ব্যাপার। গোটা সমাজব্যবস্থায় এ যেন একটি অভিশাপ। এ অভিশাপ থেকে মুক্তির যেন কোনো পথই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা উল্টালেই এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়।

পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে যে পণ প্রথার উল্লেখ রয়েছে, তা বর্তমান যৌতুক প্রথার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা। সেখানে ছেলে কর্তৃক মেয়ে বা মেয়ের বাবাকে পণ দিয়ে তাকে বউ করে ঘরে নিতে হয়। যা-ই হোক, এটাও একটি যৌতুক প্রথা। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করলে মেয়েকে তার মোহরানার টাকা পরিশোধ করতে হয়। এটা মেয়েদের অধিকার। কিন্তু বিবাহসংক্রান্ত বিষয়ে আর্থিকভাবে ছেলের কোনো অধিকার নেই। পণ প্রথা একটি সামাজিক ব্যাধি। এ ব্যাধি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে সচেষ্ট হব।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পন প্রথার কারণ এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসের আলােকে বিশ্লেষণ কর।

উত্তর: উদ্ধৃতাংশের পণ প্রথার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অপরিমেয় লোভাতুর চাহিদা এবং এ থেকে উত্তরণের পথ হলো সুশিক্ষার ভেতর দিয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

আমাদের সমাজব্যবস্থায় পণ প্রথার যে বিস্তার ঘটেছে তার কারণ বহুমাত্রিক।

শিক্ষার অভাব: সুশিক্ষা অর্জন করতে না পারা, অথবা শিক্ষা অর্জনে ব্যর্থতা।

সচেতনতার অভাব: সচেতনতার অভাবে পণ প্রথা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নৈতিকতার অভাব: নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে পণ প্রথার অভিশাপ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব: ধর্ম মানুষকে পরিশীলিত করে। পর্যাপ্ত ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের অভাব।

সামাজিক অবক্ষয়: সামাজিক অবক্ষয় ব্যাপক হারে বৃদ্ধির ফলে পণ প্রথা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নির্লোভ মনোভাবের ঘাটতি: এক শ্রেণীর মানুষের মনে লোভ জিনিসটি ব্যাপকভাবে কাজ করে বলে পণ প্রথা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বেকারত্ব: বেকারত্ব একটি অভিশাপ। এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পণ প্রথার ব্যাপক প্রসার ঘটছে।

আইনের ব্যবহারের শৈথিল্য: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইনের প্রয়োগের ঘাটতি এ প্রথা বৃদ্ধির কারণ।

আমরা পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে যে পণ প্রথার অস্তিত্ব খুঁজে পাই, তা হলো ছেলের পক্ষ থেকে মেয়েকে দেয় টাকা-পয়সা। অবশ্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মোহরানা হিসেবে ছেলের পক্ষ থেকে মেয়ে নগদ টাকা বা সমমানের অলংকার প্রাপ্য হয়ে থাকে। আর এ টাকা বাসর রাতেই মেয়েকে পরিশোধ করতে হয়। তবে পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের পণ প্রথা আর মোহরানা এক কথা নয়।

পণ প্রথা বা যৌতুক প্রথা থেকে মুক্তি পেতে হলে নিচের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

নৈতিকতা সুদৃঢ় করতে হবে।

ধর্মীয় মূল্যবোধে বলীয়ান হতে হবে।

সুশিক্ষিত সমাজব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

লোভ-লালসা পরিহার করতে হবে।

সরকারি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

শেষে বলা যায় যে পণ প্রথা একটি কুপ্রথা। এ প্রথার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

H.S.C

Leave a Comment