ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

ইলিশ (বৈজ্ঞানিক নাম:Tenualosa ilisha) বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। এটি একটি সামুদ্রিক মাছ, যা ডিম পাড়ার জন্য বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের নদীতে আগমন করে। বাঙালিদের কাছে ইলিশ খুব জনপ্রিয়। এ ছাড়াও ইলিশ ভারতের বিভিন্ন এলাকা যেমন পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা ও আসামে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাছ।

ইলিশ মাছ বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই একটি জনপ্রিয় মাছ। সমুদ্রে ও নদীতে থাকা এই মাছ যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। মাছ হিসেবে অনেকেই ইলিশকে পছন্দ করেন। যাঁরা মাছ খেতে অপছন্দ করেন, তাঁরাও কোনও কোনও ক্ষেত্রে শুধু ইলিশ মাছ খান। আমরা মাছেভাতে বাঙালি হিসেবে পরিচিত। মাছের মধ্যে ইলিশ সব সময় জনপ্রিয়তায় এগিয়ে। ১০০ গ্রাম ইলিশে ২১.৮ গ্রাম প্রোটিনের সাথে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। ইলিশে খনিজ লবণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড।

পুষ্টিগুণের রাজা ইলিশ

হৃৎপিন্ডের জন্য

ইলিশ মাছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম। অন্য দিকে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে। ফলে হৃৎপিন্ড থাকে সুস্থ।

খনিজ উপাদান

আয়োডিন, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, পটাশিয়ামে ভরপর ইলিশ। থায়রয়েড গ্ল্যান্ড সুস্থ রাখে আয়োডিন, সেলেনিয়াম উৎসেচক ক্ষরণে সাহায্য করে যা ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করতে পারে।ইলিশে থাকা খনিজ, বিশেষ করে ফসফরাস দাঁত এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয়। সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও লৌহ স্বাভাবিক শরীর বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশের জন্য জরুরি উপাদান।

রক্ত সঞ্চালন সুবিধা

সামুদ্রিক মাছে থাকা ইপিএ ও ডিএইচএ ওমেগা-৩ তেল শরীরে ইকসিনয়েড হরমোন তৈরি রুখতে পারে। এই হরমোনের প্রভাবে রক্ত জমাট বেঁধে শিরা ফুলে যায়। ইলিশ মাছ খেলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। থ্রম্বসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।

ইলিশ মাছের উপকারিতা

মস্তিষ্কের জন্য ভাল

অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার(ADHD) রোধ করতে পারে ইলিশ মাছ। সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তি, পড়াশোনায় মনযোগ ইত্যাদিও বাড়ায়। মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশই তৈরি ফ্যাট দিয়ে। যার অধিকাংশই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনে সাহায্য করে ডিএইচএ।

বাতব্যথার উপশম

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের সঙ্গে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। প্রতিদিনের ডায়েটে সামুদ্রিক মাছ থাকলে বাতের ব্যথা, গাঁট ফুলে গিয়ে যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

চোখের স্বাস্থ্যে উপকারী

তেলযুক্ত মাছ খেলে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। চোখ উজ্জ্বল হয়। বয়সকালে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসা মোকাবিলা করতে পারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। ইলিশ মাছের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ রাতকানা রোগের মোকাবিলা করতেও সাহায্য করে।

ইলিশ মাছের উপকারিতা অনেক

ফুসফুসের জন্য

বহু গবেষণায় দেখা গেছে, সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকর। শিশুদের ক্ষেত্রে হাঁপানি রোধ করতে পারে ইলিশ মাছ। যাঁরা নিয়মিত মাছ খান, তাঁদের ফুসফুস অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।

অবসাদ কাটাতে

ওমেগা-ত ফ্যাটি অ্যাসিড অবসাদের মোকাবিলা করতে পারে। সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার (এসএডি), পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন কাটাতে পারে ইলিশ মাছ।

ত্বকের যত্নে

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে ইলিশ খাওয়ার অভ্যাস। নিয়মিত মাছ খেলে অ্যাকজিমা, সিরোসিসের হাত থেকে রক্ষা পায় ত্বক। ইলিশ মাছে থাকা প্রোটিন কোলাজেনের অন্যতম উপাদান। এই কোলাজেন ত্বক টাইট ও নমনীয় রাখতে সাহায্য করে।

ইলিশ মাছের অপকারিতা কী

পেটের যত্নে

ডায়েটে তেলযুক্ত মাছ থাকলে পেটের সমস্যা অনেক কম হয়। আলসার, কোলাইটিসের হাত থেকে রক্ষা করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।

ব্রেন

মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশই তৈরি ফ্যাট দিয়ে, যার অধিকাংশই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যাঁরা নিয়মিত মাছ খান, তাঁদের মধ্যে বয়স বাড়ার পর ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক কম দেখা যায়। শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনেও সাহায্য করে ডিএইচএ। অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি) রোধ করতে পারে ইলিশ মাছ। স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, পড়াশোনায় মনোযোগী করে।

ইলিশ মাছের অপকারিতা

ইলিশ মাছের বিভিন্ন উপকারিতার সাথে দু-একটা অপকারিতাও রয়েছে। ইলিশের কারণে কারও কারও অ্যালার্জির প্রবলেম হতে পারে। যাঁদের অ্যালার্জির সম্ভাবনা থাকে, তাঁরা ইলিশ মাছ এড়িয়ে চলবেন। তবে যাঁদের অ্যালার্জির প্রবলেম নেই, গ্যাস হয় না, তাঁরা ইলিশ মাছ খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। এতে আপনার স্বাস্থ্য উন্নত হবে। তাই চেষ্টা করবেন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ইলিশ মাছ রাখতে।

পরিশেষে : ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট

স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ

Leave a Comment