প্রশ্ন সমাধান: ইবনে সিনার পরিচয় দাও,মনোবিদ্যায় ইবনে সিনার অবদান কী?,ইবনে সিনা কিভাবে দেহ ও আত্মার ধারণা ব্যাখ্যা করেছেন?,ইবনে সিনার জীবনী সংক্ষেপে লেখ,ইবনে সিনা কে ছিলেন?,ইবনে সিনা সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লেখ
ইবনে সিনা সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লেখ।
মুসলিম দর্শনে যে কয়েকজন শ্রেষ্ঠ ও মৌলিক চিন্তাবিদ রয়েছেন ইবনে সিনা তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি জ্ঞানের গভীরতা, চিন্তাশক্তি ও বিশ্বজনীন উদার দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বিশ্বের সকল দেশেই সমভাবে সমাদৃত।nতিনি এরিস্টটলের একজন সফল ভাষ্যকার। তিনি অত্যন্ত সমৃদ্ধ দর্শন রচনা করেন। লেখক হিসেবে তিনি ছিলেন অধিক সুসংবদ্ধ ও প্রাঞ্জলতার অধিকারী।
ইবনে সিনার পরিচয় : ইবনে সিনার পুরো নাম আবু আলী আল হুসাইন ইবনে সিনা। প্রাচ্যে তিনি ইবনে সিনা (Ibn Sina) এবং পাশ্চাত্যে আভিসেন (Avicena) নামে সমধিক পরিচিত। ইবনে সিনা ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বুখারার নিকটবর্তী উত্তর পারস্যের আফসানা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে সপরিবারে বুখারায় চলে আসেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ। তিনি সামানীয় সুলতানের অধীনে বোখারার শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ইবনে সিনা বুখারায় লেখাপড়া করেন। তিনি পৈতৃক আদর্শে ইসমাইলিয়া ধর্ম প্রকারকের নিকট এরিস্টটলের দর্শন শিক্ষা লাভের সুযোগ পান।
আরো ও সাজেশন:-
পারিবারিক পরিবেশেই তিনি দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্ম, রাজনীতি, গণিত প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। মাত্র দশ বছর বয়সেই তিনি কুরআন পাঠ সম্পন্ন করেন। তিনি মূলত বুখারায় আবু আব্দুল্লাহ আন নাতালী নামক দার্শনিকের কাছে যুক্তিবিদ্যা এবং এরিস্টটলের দর্শন শিখেন। ইবনে সিনার মানসিক বৃত্তির এত দ্রুত স্ফূরণ ঘটতে থাকে যে তিনি অতি অল্প সময়ে জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যে শিক্ষা গুরুকে ছাড়িয়ে যান। ১৬-১৮ বছর বয়সের মধ্যে চিকিৎসাবিদ্যা, যুক্তিবিদ্যা, অধিবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা এবং গণিতে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। হিপোক্রিটাস কর্তৃক সৃষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞান গ্যালন পুনরুজ্জীন করেন, আল রাজি একেnসুসংঘবদ্ধ করেন এবং ইবনে সিনা একে পূর্ণতা দান করেন। তিনি অসংখ্য গ্রন্থের প্রণেতা।
তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের মধ্যে কিতাব আল-শিফা, কিতাব আল-নাজাত, কানুন ফিতিব্ব, দানেশনামা উল্লেখযোগ্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর রচিত “কানুন ফিতিব্ব” গ্রন্থটি তার অমর কীর্তি। এটি চিকিৎসাশাস্ত্রের বাইবেল বা বিশ্বকোষ খ্যাত। তিনি শেষ জীবনে এসে অতিমাত্রায় ভোগবাদী হয়ে উঠেন এবং রাজনৈতিক পালাবদলে তিনি বিপর্যস্ত হন। ভোগাসক্তি এবং স্বাস্থ্যগত অনিয়মের কারণে বিভিন্ন রোগে ভোগে ৫৭ বছর বয়সে ১০৩৭ খ্রিস্টাব্দে হামদানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কোওরটয়িসের উক্তির আলোকে বলতে হয়, ইবনে সিনা মুসলিম বিশ্বের একজন সুবিখ্যাত বিজ্ঞানী, প্রাচ্য জগতে তিনি আল শায়খ আল রাইস বা প্রধান শায়খ নামে পরিচিত। তাঁর রচনাবলি পরবর্তী সময়ে পাঠক ও বিদগ্ধ সমাজে সমর্থিত হয়েছিল বর্ণনার স্বতঃস্ফূর্ততা ও গুণগতমানের উৎকৃষ্টতার জন্য মুসলিম সমাজ তথা সমগ্র বিশ্ব তাঁর কাছে ঋণী।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
ইবনে সিনার মনোবিদ্যা কিরূপ?
ইবনে সিনা অন্যতম একজন মুসলিম দার্শনিক। দর্শনের পাশাপাশি তিনি চিকিৎপাশাস্ত্র ও জ্ঞানের অন্যান্য শাখায় অসাধারণ পাণ্ডিত্যের পরিচয় দেন। তিনি তার জ্ঞানের গভীরতা, চিন্তাশক্তির প্রখরতা ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সুপরিচিত। তিনি দেহ ও মনের সম্পর্ক নির্ধারণ করতে গিয়ে মনোবিদ্যাকে আলোচনা করেন। তাঁর মতামত চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়। মনোবিদ্যায় ইবনে সিনার অবদান : ইবনে সিনা একজন প্রভাবশালী চিকিৎসাবিজ্ঞানী। তিনি বিভিন্ন গ্রন্থে দৈহিক গঠন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন দৈহিক দিক দিয়ে মানুষকে সার্বিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। কারণ দেহের বাইরে মানুষের আলাদা একটি বৃত্তি রয়েছে। এ বৃত্তিকেই বলা হয় আত্মা। তিনি মানুষের মাঝে এ দুটি বৃত্তি রয়েছে বলে মনে করেন এবং দ্বৈতবাদী ব্যাখ্যা দাঁড় করেন। এ দিক থেকে তিনি ডেকার্টের পূর্ববর্তী। আধুনিক দার্শনিক ডেকার্ট তাঁর এ ধারণাই পুনরাবৃত্তি করেছেন। ইবনে সিনা মনে করেন আত্মা হলো দেহ থেকে পৃথক ও স্বতন্ত্র সত্তা। মানবদেহ আকস্মিকভাবে আত্মা সংযুক্ত হয়েছে, আর তাই তা দেহ হতে বিচ্ছেদ্য। প্রতিটি আত্মার মূল উৎস হলে বিশ্ব আত্মা। বিশ্ব আত্মা থেকেই সকল আত্মা এসেছে। আত্মা একটি বিশেষ দ্রব্য। দৈহিক শৃঙ্খলে অবস্থানকালে আত্মার ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। ইবনে সিনা আত্মাকে তিন ভাগে ভাগ করেন। যথা :
১. উদ্ভিদ আত্মা : উদ্ভিদ আত্মার ৩টি বৃত্তি রয়েছে বর্ধন শক্তি, বিকাশ শক্তি ও পুনরুৎপাদন শক্তি।
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
২. জীব আত্মা বা জীবাত্মা : জীবাত্মার দুটি বৃত্তি রয়েছে প্রথমত, সঞ্চালন শক্তি, ক্ষুন্নিবৃত্তি ক্ষুন্নিবৃত্তি ও ক্রিয়াকর্ম দ্বিতীয়ত, প্রত্যক্ষণ শক্তি। প্রত্যক্ষণ শক্তির দুটি দিক রয়েছে বহিঃইন্দ্রিয় ও আত্মঃইন্দ্রিয়। বহিঃইন্দ্রিয়সমূহ হলো দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শ, স্বাদ, ঘ্রাণ এবং আন্তঃইন্দ্রিয়সমূহ হলো বুদ্ধি, কল্পনা, চিন্তাশক্তি, স্মৃতি প্রভৃতি।
৩. মানবাত্মা : ইবনে সিনার মতে মানবাত্মার দুটি দিক রয়েছে প্রথমত, বিশুদ্ধ বুদ্ধি, দ্বিতীয়ত, ব্যবহারিক বুদ্ধি। প্রথমটি মূর্ত চিন্তা করে আর পরেরটি দৈহিক মানদণ্ড সম্পর্কে আলোচনা করে। ইবনে সিনার মতে, একমাত্র মানবাত্মাই উচ্চতর বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার অধিকারী। এদিক থেকে কান্টের মতের সাথে তার সাদৃশ্য রয়েছে। তাছাড়া মানবাত্মার রয়েছে উন্নত অনুধ্যান ক্ষমতা ও বিচারবিশ্লেষণ ক্ষমতা। এজন্যই সে অবধারণ গঠন করতে পারে, আর তাই মানবাত্মাকে প্রাজ্ঞিক আত্মা বলা হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি যে, ইবনে সিনা তার মনোবিদ্যায় দ্বৈতবাদী ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন যেখানে আত্মা ও দেহের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিক থেকে তিনি ডেকার্ট ও কান্টের বহু পূর্বে আত্মা ও বুদ্ধির ধারণা সম্পর্কে মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করেন। তাঁর মনোবিদ্যক আলোচনা মুসলিম দর্শনকে সমৃদ্ধি দান করেছে।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization
- সমাজদর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের সম্পর্ক, সমাজদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শনের সম্পর্ক, Relation between Social Philosophy & Political Philosophy
- দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?, দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে অধিবিদ্যা আলোচনা করুন।
- দর্শনের প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা কর