আমেরিকা কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বলা হয় কেন?, যুক্তরাষ্ট্রকে মার্কিন বলার কারণ কী?,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্তরাষ্ট্র কেন বলা হয়?,আমরা আমেরিকানদের মার্কিন বলে সম্বোধন করি কেন

আজকের বিষয়: আমেরিকা কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বলা হয় কেন?, যুক্তরাষ্ট্রকে মার্কিন বলার কারণ কী?,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্তরাষ্ট্র কেন বলা হয়?,আমরা আমেরিকানদের মার্কিন বলে সম্বোধন করি কেন

শুরুতেই আমেরিকা নামের উৎপত্তির উপর দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে। বর্তমানে ৫০ টি রাষ্ট্র সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন ডিসি এবং পুর্টোরিকো যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত হলেও তাদের রাষ্ট্র হিসেবে ধরা হয় না।

আমেরিকা মহাদেশের নাম হয়েছে আমেরিগো ভেসপুচির নামানুসারে। তিনি সর্বপ্রথম আমেরিকার ভূখণ্ডের প্রকৃত অবস্থান নির্ণয় করেন। কলম্বাসকে আমেরিকা আবিষ্কারক বলা হলেও তিনি একবারও উত্তর আমেরিকার মাটিতে পা রাখেননি। সোনা-রুপার খোঁজে ঘোরাফেরা করেছেন ক্যারিবিয়ান হিস্পানিওয়ালায় এলাকায় কয়েকটি দ্বীপে এখন যার নাম হাইতি ও ডোমিনিকান রিপাবলিক ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃটিশ কলোনিয়াল যুগে নাম ছিল ‘ইউনাইটেড কলোনিজ অব আমেরিকা’, ব্রিটিশদের পরাজিত করে ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা লাভ করলে নাম রাখা হয় ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা। এককালের ব্রিটিশ কলোনি এখন ব্রিটিশদের মুরব্বির ভূমিকা পালন করছে; একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে একমাত্র সুপার পাওয়ার।

শুধুমাত্র আমেরিকা নামটা লিখলে বা উচ্চারণ করলে সাধারণত একমেবাদ্বিতীয়ম যুক্তরাষ্ট্রকেই বুঝায়। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় অন্যান্য যে ৩৪ টি দেশ রয়েছে তাদের কেউ তেমন আমলে নিতে চায় না।

আমেরিকার বিশেষণ ‘আমেরিকান’, যেমন আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান টিভি সিরিজ, আমেরিকান ইংলিশ। ‌ কালক্রমে সে আমেরিকান শব্দটিই বিকৃত হয়ে এদেশে ‘মেরিকান’ এবং পরিশেষে ‘মার্কিন’ হিসেবে জনগণের ভাষায় ঢুকে পড়ে। নতুন শব্দটির জন্মের দিনক্ষণ কেউ লিখে রাখেনি। লিখবে কেমন করে? পরিবর্তন এসেছে ধীর লয়ে।

বাংলা মুলুকে মার্কিন নামটি চালু হয় ব্রিটিশ আমলে। এক সময়ে আমেরিকা থেকে আমদানি করা সস্তায় কাপড়ে এদেশ সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। মার্কিন কাপড় শত ভাগ তুলার ধূসর রঙের কাপড়। রংটং করে দরিদ্র মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ, মশারির লাইনিং, ব্যাগ, বাস্কেট, প্যাকিং ইত্যাদি কাজে ব্যবহার হত;

এখনো হয়। এখনো কাপড়ের দোকানে সস্তায় দেশে তৈরি মার্কিন কাপড় পাওয়া যায়।

main qimg a8cf17deb52c78eea119fa806f753711 lq

মার্কিন কাপড়

মার্কিন কাপড়ের বেশির ভাগ ক্রেতা গ্রামে গঞ্জের সাধারণ মানুষ। তাদের ‌অনভ্যস্ত কানে আমেরিকান‌ শব্দটি শোনাতো মেরিকান। আমেরিকান কাপড় ক্রমান্বয়ে পরিণত হয় মেরিকান কাপড়ে এবং পরিশেষে ‘মার্কিন কাপড়’ নাম নেয়। কাপড়ের নাম থেকে দেশটার নামও মার্কিন নামে পরিচিত হয়ে আলাপ-আলোচনায় ও বই পত্রে ঢুকে পড়ে। একই ভাবে ইংল্যান্ডের অধিবাসীরা ইংরেজ কখনো‌ বা ফিরিঙ্গি, ফ্রান্সের লোকজন ফরাসি এবং হল্যান্ডের অধিবাসীরা ওলন্দাজ নামে বাংলা ভাষায় স্থান করে নেয়।

খোদ আমেরিকাতেই আমেরিকানরা শব্দটি পুরোপুরি বলতে চায় না। অনেককেই বলতে শুনেছি ‘mrika. আরব মুলুকেও একই নামে দেশটি পরিচিত ‘Mrika’ (أمريكا)। বাংলাদেশের মতো পশ্চিম বাংলায় এবং ভারতের কয়েকটি এলাকায় মার্কিন শব্দটি প্রচলিত আছে।‌হিন্দি ভাষায় একটু ভিন্ন উচ্চারণে Amerika (अमेरिका), উত্তর ভারতে কোন কোন অঞ্চলে আমরিকা Umrika. তামিল ভাষায় আমেরিক্কা (Amerikka)। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশেই বলে আমেরিকানা (Americana), কোথাও আমেরিকানো। কোরিয়ায় আমেলিকানা (amelikana)। আফ্রিকার সোহালি ভাষায় মারেকানি (Marekani) আমাদের মার্কিন শব্দের কাছাকাছি।

এক দেশ অনেক নাম।

আলোচনার উপসংহার টেনে বলা যায়, মার্কিন কাপড়ে নামের উপর ভিত্তি করেই মার্কিন শব্দটি বাংলা ভাষায় আমদানি হয়েছে।

নামের সাথে কাপড়ের পরিচিতির আরো নজির রয়েছে। প্রাচীন যুগ থেকেই ইরাকের টাইগ্রিস নদীর তীরে মসুল বন্দর ছিল প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের প্রখ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্র। বাণিজ্যিক রাজধানী। মসুল বন্দর ছিল বিখ্যাত ঢাকার মসলিন কাপড় আন্তর্জাতিক মার্কেটে ক্রয়-বিক্রয়ের বড় কেন্দ্র। ‌মসুল বন্দরের নাম থেকে ঢাকার কাপড়ের নাম বিশ্বব্যাপী মসলিন নামে পরিচিতি পায়।

মার্কিন কাপড় থেকে ভিন্ন হলেও এ সুযোগে ইতিহাস-ঐতিহ্যের খাতিরে ঢাকার বিখ্যাত মসলিন কাপড়ের সাথে নতুনদের পরিচয় করে দেয়া যায় বৈকি।

main qimg 37a51bffd49d4e072a1cbd871cc884cb lq

এক কালের পৃথিবী বিখ্যাত ঢাকার মসলিন

মসলিন কাপড় মিশরের ফারাও বা ফেরাউন, মোঘল ও অটোম্যান সম্রাটদের হেরেমের নারী, বিলেতের রানী, দেশ-বিদেশের রাজা বাদশা সম্রাট, সবার অঙ্গে শোভা পেত। মিশরের বিখ্যাত ক্লিওপেট্রা‌ মসলিন কাপড়ের সমঝদার ছিলেন।‌ বাংলার বস্ত্রশিল্পের ঐতিহ্য বেশ প্রাচীন। এক সময় বাংলার সূতিবস্ত্র রোম ও চীন সাম্রাজ্যে রপ্তানি করা হতো। এর উল্লেখ রয়েছে টলেমির ভূগোলে, Periplus of the Erythraean Sea গ্রন্থে এবং প্রাচীন চীনা পরিব্রাজকদের বর্ণনায়।

মসলিনের স্বচ্ছতা সম্পর্কে বহু ঘটনা লোকমুখে প্রচলিত আছে। একবার মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মেয়ে জেবুন্নেসা মসলিন পড়েছিলেন বলে তার বাবা তাকে ভীষণ বকুনি দিলেন। অত স্বচ্ছ কাপড় সম্রাটের কাছে অশালীন লাগছিলো। জেবুন্নেছা তখন পিতাকে বললেন, “জাঁহাপনা আমি সাত স্তরের মসলিন জামা পরেছি।”

main qimg 0cd05ae4757c6488832376851d218767 pjlq

লস এঞ্জেলেস কাউন্টি মিউজিয়াম অব আর্টে প্রদর্শিত আনুমানিক ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপীয় রমণীর জন্যে মসলিনের তৈরী পোষাক

main qimg 6c3be5220169329500204ab08e1400f6 pjlq

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

সম্রাট নেপোলিয়নের স্ত্রী মসলিন পরিহিতা জোসেফাইন

মসলিন নামটাও ইউরোপিয়ানরা এদেশে আমদানি করে। ব্রিটিশদের কারসাজির কারনে বিখ্যাত মসলিন এখন ইতিহাসের পাতায় স্থান নিয়েছে। তবে ২৮ ধরনের মসলিন কাপড়ের মধ্যে কয়েক ধরনের মসলিন কাপড় জামদানি কাপড় নামে এখনো বাংলাদেশ ও ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয় কাপড়।

main qimg ad2537ae1b898efb49c21018882220c3 lq

ইউরোপে রাজা-রাণীদের মসলিন পোশাক

main qimg 7a51958aa81d908c758328bf3fa04191 lq

হারিয়ে যাওয়া ঢাকার মসলিন

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment