আপেক্ষিকতার সাধারণ বা সার্বিক তত্ত্ব নিয়ে আইনস্টাইনের স্বপ্ন ব্যাখ্যা, আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব E=MC2 – Notes,

আপেক্ষিকতার সাধারণ বা সার্বিক তত্ত্ব নিয়ে আইনস্টাইনের স্বপ্ন ব্যাখ্যা, আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব E=MC2 – Notes

এ থেকেই বোঝা যায়, আইনস্টাইনের স্ত্রীরও অবদান রয়েছে আপেক্ষিক তত্ত্ব উদ্ভাবনের পেছনে।

আপেক্ষিক তত্ত্ব
চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের ধারণা অনুযায়ী স্থান (Space), কাল (Time), ভর (Mass), শক্তি (Energy) ও মহাকর্ষ (Gravitation) ধ্রুব বা পরম। আইনস্টাইন চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের এই ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন স্থান, কাল, ভর, শক্তি ও মহাকর্ষ এগুলাে সবই আপেক্ষিক। আইনস্টাইনের এই তত্ত্বকে আপেক্ষিক তত্ত্ব বলে।

আপেক্ষিক তত্ত্ব মূলত দুভাগে বিভক্ত।

যথা-

(i) আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব (Special theory of Relativity)
(ii) আপেক্ষিকতার সাধারণ বা সার্বিক তত্ত্ব (General theory of Relativity)

আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব
মাত্র ২৬ বছর বয়সে আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব প্রকাশ করেন। আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব দুটি মৌলিক স্বীকার্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

❐ আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বে স্থান ও কালকে একীভূত করা হয়েছে। স্থান, কাল পৃথকভাবে বিচার্য বিষয় নয়। স্থান-কাল সমন্বয়ে যে চারমাত্রিক (x, y, z, t) বিস্তৃতি সেখানেই ঘটনা ঘটছে।

[উত্তর দাতা: (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

❐ আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে আজকের আধুনিক নিউক্লিয়ার যুগের সূচনা, তা হলাে বস্তুর ভর ও শক্তির মধ্যে সম্পর্ক।

আইনস্টাইন বলেন, ভর ও শক্তির মধ্যে কোনাে পার্থক্য নেই। এরা একই সত্তার দ্বৈত প্রকাশ। এই তত্ত্বের বিস্ময়কর অবদান ভরশক্তি সম্পর্ক, E = mc2 এর অর্থ হলাে কোনাে পদার্থে যে শক্তি নিহিত থাকে তা তার ভর এবং আলাের বেগের বর্গের গুণফলের সমান।

❐ আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের মূল বক্তব্য হলাে শুধু অভিকর্ষ ক্ষেত্রের অনুপস্থিতিতে স্থান, কাল ও ভর সকলেই আপেক্ষিক, ধ্রুব বা পরম নয়।

সে সময় আপেক্ষিকতা ধারণা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। এমন অপূর্ব চিত্তহরণকারী ধারণা পেয়ে অনেকে বিস্মিত ও হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ একে আইনস্টাইনের পাগলামি বলে অভিহিত করেছিলেন।

আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের উদাহরণ
(ক) চলন্ত ট্রেনের একজন যাত্রী এবং রেললাইনের পাশে দাড়ানো একজন দর্শক। দর্শকের সাপেক্ষে ট্রেনের যাত্রী গতিশীল আবার ট্রেনের যাত্রীর সাপেক্ষে দর্শক গতিশীল। তাহলে কে স্থির আর কে গতিশীল কোন ক্রমেই এটি প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

(খ) চলমান ট্রেনের দুজন যাত্রী একজনের সাপেক্ষে অন্যজন স্থির কিন্তু রেললাইনের পাশে দন্ডায়মান দর্শকের সাপেক্ষে তা গতিশীল।

(গ) চলন্ত বিমানের একজন যাত্রী এবং এয়ারপাের্টে দন্ডায়মান একজন দর্শক। দর্শকের সাপেক্ষে সময়ের সাথে সাথে বিমানটি আস্তে আস্তে ছােট হয়ে যাচ্ছে। আবার বিমান যাত্রীর সাপেক্ষে দর্শক ও এয়ারপাের্ট সময়ের সাথে সাথে আস্তে আস্তে ছােট হয়ে যাচ্ছে।

(ঘ) কথিত আছে একদিন এক রূপসী স্মার্ট মহিলা এসে আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করল আচ্ছা আপনি এমন কি জিনিস আবিস্কার করলে যে মানুষের মুখে শুধু আপনার নাম। আমাকে বুঝাতেই হবে…

(ঙ) কথিত আছে, আইনস্টাইনের কাজের বুয়া (আয়া) একদিন আইনস্টাইনকে নাছােরবান্দার মত ধরলেন আমাকে বুঝাতেই হবে আপনি এমন কি জিনিস আবিষ্কার করলেন যে লােকজন দিন নাই রাত নাই সারাক্ষণ বাসায় ভিড় করছে।

আপেক্ষিকতার সাধারণ বা সার্বিক তত্ত্ব
আইনস্টাইন ১৯১৬ সালে আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব প্রকাশ করেন।

❐ আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব পরস্পরের তুলনায় উর্ধ্ব বা নিম্নগতিশীল (ত্বরিত বা মন্দিত) বস্তুসমূহ বা সিস্টেম নিয়ে আলােচনা করেছে।

যেমন সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, ধূমকেতু, উল্কাপিন্ড প্রভৃতির গতি, মাধ্যাকর্ষণ এবং সমগ্র বিশ্বের গঠন সম্পর্কে তার বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক মতবাদসমূহ আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের তুলনায় এটি বেশ জটিল।

❐ যেহেতু আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব শর্ত সাপেক্ষে কার্যকর হয় তাই আইনস্টাইন অভিকর্ষ নিয়ে ব্যপক গবেষণায় লিপ্ত হন। অবশেষে আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের জন্য সিদ্ধান্তে পৌছেন যে, অভিকর্ষ কোন বল নয়। স্থান-সময়ের আওতায় এটি একটি বক্র ক্ষেত্র, বলের প্রভাবের একটি স্থানের ক্ষেত্র, যা প্রকৃত পক্ষে ভরের উপস্থিতিতে সৃষ্টি হয়।

❐ দৈনন্দিন জীবনে আমরা নিশ্চয়ই কখনাে বড় দালানকোঠায় লিফটে উঠেছি। লিফটটি যখন উপরের দিকে ত্বরান্বিত হয় তখন নিজেকে ভারী মনে হয়। অন্যদিকে লিফটি যদি নিম্নদিকে ত্বরান্বিত হয় নিজেকে হালকা (প্রায় ওজনহীন) মনে হয়। তাহলে এ লিফট কাঠামাের ত্বরান্বিত গতি থেকেই বলা যায় আমাদের চারদিকের মহাকর্ষ বলের পরিবর্তন ঘটে অন্য কাঠামাের সাপেক্ষে । অর্থাৎ পর্যবেক্ষক কাঠামাে ত্বরান্বিত হলে মাধ্যাকর্ষণ বলকে বিলােপ করে দেয়া যায়। এটাই সমতুল্যতার নীতি। তাহলে আমরা বলতে পারি সার্বিক আপেক্ষিকতার ক্ষেত্রে সনাতনী মহাকর্ষ বল একটি কৃত্রিম বল যা কোনাে কাঠামােকে সুষম ত্বরণে ত্বরান্বিত করলে উপলব্ধি করা যায়।

আইনস্টাইন তার জীবনের শেষ ৩০ বছর একটি একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্ব (Field theory) উদ্ভাবনের প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন যার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল সকল বস্তু এবং শক্তির বৈশিষ্ট্যকে একটি একক সমীকরণের সাহায্যে প্রকাশ করা। যদিও আইনস্টাইন এক্ষেত্রে সফল হননি; তবে তার এ কাজগুলাে পরবর্তী পদার্থবিজ্ঞানীদের কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।

আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের মৌলিক স্বীকার্য
নিচে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের মৌলিক স্বীকার্যগুলো বর্ণনা করা হলোঃ

১. প্রথম স্বীকার্যঃ প্রাকৃতিক নিয়মাবলীর গাণিতিক সূত্রসমূহ অর্থাৎ পদার্থবিজ্ঞানের সকল সূত্রসমূহের গাণিতিক রূপ সকল জড় কাঠামোতে একই থাকে।

উদাহরণঃ সমগতিতে চলমান ট্রেনের কোন যাত্রী কামরার ভিতরের কোন পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করতে পারবেন না যে, ট্রেন চলছে না স্থির রয়েছে। পদার্থবিজ্ঞানের সকল ফলাফল ট্রেন স্থির থাকলে যা হবে ট্রেন সমবেগে চললেও একই হবে।

[ উত্তর দাতা: (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

২. দ্বিতীয় স্বীকার্যঃ শূন্য মাধ্যমে সকল পর্যবেক্ষকের নিকট আলোর বেগ একই হবে। এটা আলোর উৎস বা পর্যবেক্ষকের আপেক্ষিক গতির উপর নির্ভরশীল নয়। এই স্বীকার্য অনুযায়ী আলোর বেগকে সর্বোচ্চ ধরা হয়। কোন বস্তুর বেগ আলোর বেগের চেয়ে বেশি হতে পারে না।

উদাহরণঃ কোন পর্যবেক্ষক যদি পর্যবেক্ষণ করেন যে, আলোর গতিতে গতিশীল কাঠামোতে কোন বস্তু আলোর গতিতে ছুটছে তাহলে পর্যবেক্ষকের নিকটও বস্তুর বেগ আলোর বেগের সমান হবে।

আপেক্ষিকতার সাধারণ বা সার্বিক তত্ত্ব নিয়ে আইনস্টাইনের স্বপ্ন ব্যাখ্যা
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে দুটি নতুন তত্ত্ব এবং বাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের চিন্তাধারা সম্পূর্ণ বদলে দেয়। ৮৫ বছরেরও বেশি হয়ে গেল আজও আমরা সেগুলাের নিহিতার্থ অনুধাবনের জন্য অনুশীলন করে চলেছি আর চেষ্টা করে চলেছি তাদের সমন্বয় করে একটি ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব আবিষ্কার করতে। সে তত্ত্ব এমন হবে যে মহাবিশ্বের সবকিছুরই বিবরণ দান করতে পারবে। তত্ত্ব দুটি হল ব্যাপক অপেক্ষবাদ আর কণাবাদী বলবিদ্যা (General theory of relativity and quantum mechnics)। ব্যাপক অপেক্ষবাদের বিচার্য বিষয় স্থান আর কাল, মহাবিশ্বের পদার্থ এবং শক্তিপ্রভাবে বৃহৎ মানে কি করে তারা বেঁকে যায় কিংবা প্যাঁচ খেয়ে যায়। অন্যদিকে কণাবাদী বলবিদ্যা বিচার করে অতি ক্ষুদ্র মান, যাকে অনিশ্চয়তার নীতি বলা হয় সেটা এরঅন্তর্ভূক্ত।

আইনস্টাইন প্রায় একাই ব্যাপক অপেক্ষবাদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন এবং কণাবাদী বলবিদ্যার বিকাশে তিনি একটি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। শেষােক্ত তত্ত্ব সম্পর্কে তার মনের ভাব প্রকাশ প্রায় এই কথায়-‘ঈশ্বর জুয়া খেলেন না’ কিন্তু সমস্ত সাক্ষ্য থেকে নির্দেশ পাওয়া যায়-ঈশ্বর সংশােধনের অতীত একজন জুয়াড়ি এবং তিনি জুয়ার দান ফেলে থাকেন। সুযােগ পেলেই তিনি জুয়া খেলেন।

১৯২৯ সালের আগে কেউই ভাবতে পারেনি যে কালের সঙ্গে মহাবিশ্ব পরিবর্তিত হচ্ছে। সেই সময় এডুইন হাবল আবিষ্কার করলেন : দূরের ছায়াপথগুলি আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মহাবিশ্ব প্রসারমান। পরে আইনস্টাইন বলেছেন-‘মহাবিশ্বতাত্ত্বিক পদ আমার জীবনের সবচাইতে বড় ভুল।

পোষ্টটি লিখেছেনঃ মারিয়া রিবি

এখানে সকল প্রকাশ শিক্ষা বিষয় তথ্য ও সাজেশন পেতে আমাদের সাথে থাকুন ।

Leave a Comment