আত্মকর্মসংস্থানে অর্জিত জীবন দক্ষতা কিভাবে সহায়তা করে

আত্মকর্মসংস্থানে অর্জিত জীবন দক্ষতা কিভাবে সহায়তা করে

সূচনা: সাধারণ অর্থে নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিজেই করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। আত্মসংস্থান এর মাধ্যমে একজন মানুষ নিজের পাশাপাশি অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি করতে পারে। 

এর ফলে অধিক চাহিদাকৃত চাকরির উপর চাপ কম পড়ে এবং বেকারত্ব হ্রাস পায়। আর আমাদের জীবনের সকল প্রকাশ কাজের অজিত দক্ষতা দিয়ে আমরা আমাদের জীবনের চাকা পরিবতন করতে পারি ।

আত্মকর্মসংস্থান কী : সহজ অর্থে, নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। আরও একটু স্পষ্ট করে বলা যায় যে, নিজস্ব অথবা ঋণ করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্মপ্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থাকে আত্মকর্মসংস্থান বলা হয়। আত্মকর্মসংস্থান হচ্ছে মজুরি বেতনভিত্তিক চাকরির বিকল্প পেশার অন্যতম উপায়। আত্মকর্মসংস্থান পেশা বলতে বুঝায় যখন কোনাে ব্যক্তি স্বীয় দক্ষতা বা গুণাবলির বলে সেবা দানের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে জীবিকা চালায়।

উদাহারণস্বরূপ বলা যায় যে, আত্মকর্মসংস্থান হচ্ছে যখন একজন কাঠ মিস্ত্রি একটি কাঠের ফার্মে বেতনের বিনিময়ে উপার্জন না করে নিজেই কাঠের আসবাবপত্র তৈরি করে এবং এ থেকে যে আয় হয় তা দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করে। বলতে গেলে একটি দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার বেশিরভাগই আত্মকর্মসংস্থানে নিয়ােজিত।

আত্মকর্মসংস্থান ও উদ্যোগের মধ্যে সম্পর্ক: আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাপক। কেউ যখন নিজস্ব পুঁজি অথবা ঋণ করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কারজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্ম প্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা করে তখন তাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। আত্মকর্মসংস্থানে বিনিয়ােগ থাকে একইসাথে থাকে ঝুঁকি। অন্যদিকে লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে অর্থ ও শ্রম বিনিয়ােগ করাই হলাে ব্যবসায় উদ্যোগ। সেখানও ঝুঁকি থাকে একইসাথে থাকে বিনিয়ােগ। 

এছাড়াও ব্যবসায় উদ্যোগের সাথে আত্মকর্মসংস্থানের সম্পর্ক খুব নিবিড়।আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি নিজের কর্মসংস্থানের চিন্তা করে কাজে হাত দেন। একজন আত্মকর্মসংস্থানকারী ব্যক্তি তখনই একজন উদ্যোক্তায় পরিণত হবেন, যখন তিনি নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সমাজের আরও কয়েকজনের কর্মসংস্থানের চিন্তা নিয়ে কাজ শুরু করেন, ঝুঁকি আছে জেনেও এগিয়ে যান এবং একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলেন। সে ক্ষেত্রে সকল ব্যবসায় উদ্যোক্তাকে আত্মকর্মসংস্থানকারী বলা গেলেও সকল আত্মকর্মসংস্থানকারীকে ব্যবসায় উদ্যোক্তা বলা যায় না। 

দক্ষতা কি: আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে, দক্ষতা হচ্ছে কিছু গুণের সমষ্টি; কোনো কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে যা প্রয়োজন হয়। এটাকে স্কিল সেটস নামেও অভিহিত করা হয়।

উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে-

A skill is the ability to perform an action with determined results often within a given amount of time, energy, or both.

অর্থাৎ দক্ষতা হলো সময়, শক্তি বা উভয়ই ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত ফলাফলসহ কাজ সম্পাদন করার সক্ষমতা।

Merriam-Webster ডিকশোনারিতে দক্ষতার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে-

the ability to use one’s knowledge effectively and readily in execution or performance.

কারো জ্ঞান কার্যকরভাবে ব্যবহার এবং সহজে কার্যসম্পাদন করার ক্ষমতা।

ডিকশোনারিটিতে আরো বলা হয়েছে- a learned power of doing something competently: a developed aptitude or ability.

লার্নার্স ডিকশোনারিতে স্কিল বা দক্ষতার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে-

the ability to do something that comes from training, experience, or practice.

ডিকশোনারি ডটকমে স্কিল সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে-

the ability, coming from one’s knowledge, practice, aptitude, etc., to do something well.

ব্রিটিশ ডিকশোরিতে বলা হয়েছে-

special ability in a task, sport, etc, esp. ability acquired by training

something, esp. a trade or technique, requiring special training or manual proficiency

obsolete understanding

এসব সংজ্ঞার আলোকে আমরা বলতে পারি- সময়, শক্তি ও জ্ঞান ব্যবহার করে কোনো কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করার অর্জিত শক্তিকে স্কিল, স্কিল সেটস বা দক্ষতা বলে।

আমাদের জীবন ও কাজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই মূলত দক্ষতাগুলো তৈরি হয়। আবার পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণের মাধ্যমেও কিছু দক্ষতা অর্জিত হয়। স্কিলটেস্টের মাধ্যমে দক্ষতা নিরূপন ও স্তর নির্ধারণ করা যায়।

দক্ষতা বৃদ্ধির উপায় কী:  আপনার দক্ষতা বাড়ালে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে তার সুফল পাবেন। নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সুযোগের নতুন নতুন দরজা আপনার সামনে উন্মোচিত হবে।

দক্ষ ব্যক্তি সব সময়ই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকেন। পরিবেশ পরিস্থিতি তার অনুকূলে থাকে।

যা-ই হোক দক্ষতা বা স্কিল বৃদ্ধির কিছু উপায় এখানে আলোচনা করা হলো-

১. আপনি যে দক্ষতাগুলো বাড়াতে চান তার একটি তালিকা করুন।

২. দক্ষতার উন্নয়নে সময় ও অর্থ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিন।

৩. বাস্তব লক্ষ্য ও মাইলস্টোন নির্ধারণ করুন।

৪. একজন কোচ বা মেন্টর খুঁজে নিন।

৫. লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটি সুন্দর পরিকল্পনা করুন।

৬. সহযোগিতা নিন

৭. অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করুন।

৮. আনন্দের সাথে শিখুন।

এবার আসুন দক্ষতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

আত্নকর্মসংস্থান ও দক্ষতা : আত্মকর্মসংস্থান ও জীবন দক্ষতা একে অপরের সাথে সংযুক্ত আত্মকর্মসংস্থানের সাথে উদ্যোগের একটা সম্পর্ক আছে এবং আত্মকর্মসংস্থান উদ্যোগের এবং এ সবগুলো বিষয়ে দক্ষতা একটি যোগ করা হয়। প্রথমত আত্নকর্মসংস্থান বলতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বোঝানো হয় দ্বিতীয়ত আত্মকর্মসংস্থান যখন সফল ভাবে আমরা প্রমাণীত করতে পারি

 তখন তা আমাদের উদ্যোগ হিসেবে কাজ করে।  সফল আত্মকর্মসংস্থান হিসেবে আমাদের সামনে ফলাফল হিসেবে আমাদের জীবনে দেখা যায় আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগ এর সকল বিষয়ে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে দক্ষতার উপর নির্ভর করে ।যেমন ব্যক্তিগত জীবনে একজন মানুষ সফল হতে গেলে তার দরকার সুষ্ঠু শিক্ষার সুষ্ঠু প্রশিক্ষণ শেষে দরকার মানসিক শক্তি আমরা যেকোন কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারি। সেইসাথে দরকার আমাদের সুষ্ঠুভাবে নিজস্ব ব্যক্তিগত দক্ষতা এই সকল বিষয়গুলো যখন একটি সুষ্ঠু ভাবে আমরা কাজে লাগাতে পারি তখনই আমরা একটি বিষয় হয়ে উঠেছে আমাদের কাজে লাগিয়ে আমরা যেকোন বিষয়ে আমাদের কার্য করতে পারি।

জীবন দক্ষতা : জীবন দক্ষতা হলো এমন কিছু দক্ষতা পদ্ধতি বা কৌশল যা কাজে লাগিয়ে মানুষ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে যেমন; সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবেলা এবং এর মধ্য দিয়ে নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা।

আমাদের প্রত্যেকের জীবনে উগ্রবাদ ও সহিংসতার বিভিন্ন ঝুঁকি রয়েছে। জীবন দক্ষতা শিক্ষার উপাদানগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে নানা ঝুঁকির পাশাপাশি উগ্রবাদ ও সহিংসতা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারা যায় এবং জীবনে এসব কৌশল কাজে লাগিয়ে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ জীবন গড়ে তোলা সহজ হয়।

জীবন দক্ষতার উপাদানসমূহ

  • সমস্যার সমাধান
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণ
  • নিয়ন্ত্রণ
  • আত্মবিশ্বাস
  • বিশ্লেষণাত্মক চিন্তা
  • সৃজনশীল বা সৃষ্টিশীল চিন্তা
  • সঠিক বা কার্যকরি যোগাযোগ
  • অন্যের সাথে সম্পর্ক বা আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক
  • সহানুভূতি
  • মানসিক চাপে টিকে থাকা
  • সমঝোতা

জীবন দক্ষতা থেকে আমরা যে শিক্ষা গুলো পাই

সফল উদ্যোক্তারা ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত থাকে

আপনি যদি অবিবেচক হন তাহলে, আপনি কখনো সাফল্য পাবেন না। আপনাকে ঝুঁকি নিতে হবে। সবসময় মেনে নিতে হবে যে সেখানে ব্যর্থতা থাকবে, পাশাপাশি সাফল্যও থাকবে। প্রায় প্রত্যেক সফল উদ্যোক্তার জীবনের কিছু ব্যর্থতার গল্প থাকে।

স্টিভ জবস কে এক পর্যায়ে অ্যাপল বোর্ড সিইও হিসেবে বহিষ্কার করেছিলেন। বহিষ্কার পরবর্তী সময় তিনি নেক্সট এবং পিক্সার উন্নয়নে ব্যয় করেছিলেন। তারপর তিনি অ্যাপেলের মন জয় করেছিলেন এর মাধ্যমে।

স্টিভ জবস তার নির্মিত সফল কোম্পানি থেকে ব্যর্থ হয়ে মন হারায়নি। এটা শুধুমাত্র তাকে ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করতে এবং আরও সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

লক্ষ্যে দিকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ

অনেক মানুষ আসলে জানেই না, তারা আসলে কিসে আগ্রহী বা কি করতে ভাল লাগে। সফল উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে এটা ভিন্ন। তারা জানে তাদের আগ্রহ এবং লক্ষ্য। আর তাই তারা লক্ষ্য পূরণে দৃঢ়

প্রত্যয়ী হ গ্রাহাম ইয়ং, প্যাশনে ১০১ এ বলেন,

′′লক্ষ্য এমন একটি জিনিস যা আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং আপনি যেকোনো মূল্যে অর্জন করার সক্ষমতা অর্জন করবেন। ′′

শুধুমাত্র সফল উদ্যোক্তারা তাদের লক্ষ্য কি তা নির্ধারণ করে না, তারা তা সফল করার জন্য মনে প্রাণে পরিশ্রম করে যায়।

অত্যন্ত কৌতূহলী

থমাস এডিসন থেকে আমরা কখনই ফোনোগ্রাফ, মোশন পিকচার ক্যামেরা কিংবা দীর্ঘস্থায়ী বৈদ্যুতিক বাল্ব পেতাম না, যদি সে কৌতূহলী না হত ।

একজন সফল উদ্যোক্তার গুণাবলী

ইনোমের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও নবীন জৈন, তার পোস্টে এই বৈশিষ্ট্যের সারমর্ম তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল যারা বড় স্বপ্ন দেখে। তিনি বলেন,

′′ তোমার সবসময় নিজেকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে পাগলাটে আইডিয়া থেকে সফলতার শুরু হয়। ′′

কৌতূহল যেকোনো সফল উদ্যোক্তার একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। সফল উদ্যোক্তারা তাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া কর্মকাণ্ডের প্রতি উদাসীন হয়ে থাকে না। তারা, নতুন বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে থাকে। নতুন কিছুতে বিনিয়োগ করে কৌতূহলের অবসান ঘটায়।

শেখার মধ্যে থাকে

সফল উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে একটি সাধারণ ভুল ধারণা হল, “তারা প্রায়ই অহংকারী হয় এবং বিশ্বাস করে যে তারা সবকিছু জানে।” আপনার মধ্যে যদি এই ধারণা থাকে তাহলে, আজই তা পরিহার করুন। এটা সত্য, অধিকাংশ সফল উদ্যোক্তারা প্রথম স্বীকার করেন যে তারা এটা জানেন না। কিন্তু, তারা সেই অজানা বিষয়টিকে খুব দ্রুত আয়ত্তে নিয়ে আসে।

সত্যিকার অর্থে সফল হতে হলে জীবনে অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে হয়। নতুন কিছু শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। রিচার্ড ব্র্যানসন বলেন,

′′ শেখা এবং নেতৃত্ব একসাথে যায়। সাফল্যগুলো ঘটে কাজ করা এবং শেখার মাধ্যমে।”

সফল উদ্যোক্তার জীবনী যারা ধাপে ধাপে শূন্য থেকে শীর্ষে পৌঁছেছেন:

 শেখ আকিজউদ্দিনঃ ফেরিওয়ালা থেকে শিল্পপতি

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প পরিবারেরমালিক হচ্ছেন শেখ আকিজ উদ্দিন। যিনি তার জীবন শুরু করেছিলেন একজন সামান্য রাস্তার ফেরিওয়ালা হিসেবে। তার ভাষ্যমতে ১৯৪২ সালে তিনি তার বাবার কাছ থেকে মাত্র ১৬ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন, গন্তব্য হচ্ছে কলকাতা। তিনি কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে গিয়ে আশ্রয় নেন । সারাদিন কাজের সন্ধান করতেন আর রাত হলে স্টেশনে কাগজ বিছিয়ে শুয়ে পড়তেন। তার সারাদিনের খাবার ছিল ছয় পয়সার ছাতু অবশ্য এর বেশি খরচ করার মত পয়সাও তার হাতে ছিল না।

কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন কারণ টাকা দ্রুত ফুরিয়ে আসছে কিন্তু উপযুক্ত কাজ এখনো খুঁজে পাননি এর মধ্যে রেলস্টেশনের কাছে স্থানীয় একজন হোটেল মালিকের সাথে তার পরিচয় হয়, ভদ্রলোক তাকে তার হোটেলের এক পাশে আশ্রয় দেন। তিনি চাকরির আশা ছেড়ে ব্যবসার চিন্তা শুরু করেন কিন্তু তাঁর হাতে ব্যবসা শুরু করার মতো পর্যাপ্ত পুঁজিও নাই। অনেক ভেবে-চিন্তে তিনি কমলালেবু বিক্রির ব্যবসা শুরু করলেন। অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ পাইকারি দরে কমলা লেবু কিনে হাওড়া ব্রিজের আশেপাশে ফেরি করে বিক্রি করেন অবশ্য এজন্য পুলিশকে দুই টাকা ঘুষ দিতে হতো।

এর মধ্যে তিনি আরো একটি ব্যবসার সন্ধান পান সেটি হচ্ছে ভ্রাম্যমান মুদির দোকান এ ব্যবসার জন্য তাকে হিন্দি শিখতে হয় এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যে তিনি হিন্দি ভাষা রপ্ত করে ফেলেন ফলে তার ব্যবসা জমে উঠল কিন্তু ঘটলো আরেক বিপদ হঠাৎ একদিন পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেল। তিন দিনের জেল ও জরিমানা হলো ।

জেল থেকে ফিরে এলেন বাড়িতে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার বাবা-মা দুজনেই মারা গেলেন তখন তার বয়স মাত্র ১৯ বছর ।তিনি ঠিক করলেন এবারে যাই করবেন নিজ এলাকায় করবেন কিন্তু কি করব ভেবে পাচ্ছিলেন না। সে সময় বিখ্যাত বিধুভূষণ এর ছেলে সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। সেই সুবাদে তার বিক্রি ধারণাটি মাথায় আসে।  ১৯৫২ সালে প্রথম তিনি বিড়ির ব্যবসা শুরু করেন। তিনি ছাড়াও আরো দুইজন কর্মী নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যে বেশ লাভের সন্ধান পান । তিনি বেজেরডাঙ্গা এলাকায় রেলস্টেশনের পাশে একটি মুদি দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। তার ভাষ্যমতে .১৯৫৪দিকে তার মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০০০০ টাকা হঠাৎ এক রাতে আগুন লেগে পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় সারা জীবনের সঞ্চয়।  তিনি আবার পথের ফকির হয়ে যান কিন্তু তিনি মনোবল হারাননি বিশ্বাস নিয়ে আবার শুরু করেন।

পরিচিত আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় তিনি আবার নতুন দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। কিছুদিনের মধ্যেই আবার লাখখানেক টাকার মালিক হয়ে যান । এরপর শুরু করেন ধান-পাট চাল-ডাল ইত্যাদির, ব্যবসার মূলধন ছিল তার বিশ্বস্ততায় নির্দ্বিধায় তাকে বিশ্বাস করত। সত্তর দশকের দিকে তিনি যশোরের সীমান্তবর্তী নাভারন বাজারে চলে আসেন, এ সময় স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিশ্বাস তাকে সহযোগিতা করেন এবং তিনি বিড়ির ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন। গড়ে তোলেন আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টর ।এরপর একে একে প্রতিষ্ঠিত হয় আকিজ তামাক ফ্যাক্টরি, আকিজ নেভিগেশ্‌ আকিজ জুট মিল, আকিজ ম্যাচ ফ্যাক্টর্‌ আকিজ সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ইত্যাদি। পাশাপাশি কিছু সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে তোলেন আর বর্তমানে প্রায়,৪০ হাজার কর্মী তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন।

তিনি ছোটবেলায় দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অসহায় অবস্থা খুব কাছ থেকে দেখেছেন । তাই তিনি সবসময়ই এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেন। সত্যি কথা বলতে তার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা ছিল না কিন্তু অক্লান্ত পরিশ্রম, সততা আজকের অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।

মূলভাব: জীবন দক্ষতা সাথে আত্মকর্মসংস্থানে একটি গভীর সম্পর্ক আছে । জীবনের দক্ষতা কে আমরা যদি আমাদের কর্মক্ষেত্র ব্যবহার করতে পারি । তাহলে আমাদের জীবনের সফলতা আসবে সেই সাথে আমরা সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পাবো। আত্মকর্মসংস্থানে জীবন দক্ষতা আত্মকর্মসংস্থান দক্ষতার মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের উন্নয়ন ঘটাতে পারে ।

Leave a Comment