আজ পহেলা মে, “শ্রমিকদের মূল‍্যায়ন-তোমরা শ্রমিক”

আজ পহেলা মে “শ্রমিকদের মূল‍্যায়ন-তোমরা শ্রমিক”

শনিবার, ০১ মে ২০২১

শ্রমিকদের জীবনের কিছু কথামালা তুলে ধরবো আমার সামান্য লেখা দিয়ে।প্রথমে একটি কবিতার ভাষায় আমার লেখা শুরু করতে চাই।

           "তোমরা শ্রমিক"

কত ভালবাসা কত মমতায়
গড়ে উঠেছে এ জগত যাদের শিল্পছোঁয়ায়
তারাই প্রকৃত মানুষের রূপে বেচেঁ আছে
এই জগতের মাঝে কষ্টকে মেনে নিয়ে খুব সহজে”

শক্ত কটিন ইট ওরা ভাঙ্গে ফুস্কা পড়ে হাতে
ধরে হাল খাটে নিপুন কারিগরে,
দুর্বার স্বপ্ন সাজায় তবুও বেচেঁ থাকার আশায়
ধুকধুক শ্রম কিনাঙ্ক প্রান ভাঙ্গে মনেতে মরিচিকায়।

ওরা তিলে তিলে নিঃশেষ হয় যায় তবুও
গড়ে রাজপথ সৌধ সমাধি আর অট্টালিকা।

রোদ্রে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে
ধরনিরে কভু করে বরণীয়া
তারা মরে বিলাসিদের নিষ্পিষ্ট যাতাকলে
দুবেলা দুমুটুঁ অন্ন তাও জুটেনা তাদের ললাটে।

যদিও অক্লান্ত খাটে ফলাফল তবুও নাহি মিলে
তারাই মানুষ তারাই আমাদের অহংকার
তাদের নিয়ে আমরা করবো গর্ব
আমরা তাদের প্রকৃত দাবি ফিরিয়ে দিবোই।

আজ পহেলা মে ২০২১ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।এই দিনটিকে আমরা মে,দিবস বলেও জানি। আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রম অধিকার আদায়ের এ দিনটি বছরের পর বছর ধরে বিশ্বব্যাপী যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।যা সচরাচর মে দিবস নামে অভিহিত প্রতি বছর ১লা মে তারিখে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়। এই দিনে আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের উদযাপন দিবস হিসেবে পালন করা হয়।।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠন সমূহ রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে। বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে ১লা মে জাতীয় ছুটির দিন।আরো অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হযে থাকে।আনুষ্ঠানিক ভাবে এই মে দিবসের নাম আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবেই প্রায় বিশ্বের , ৮০ টি দেশে পালন করা হয়ে থাকে অন্য নাম মে দিবস যা কর্মজীবী শ্রমিকরা পালনকরে থাকেন।সম্মিলিত ভাবে শ্রমিক শোভা যাত্রা এই মে মাসের ১ লা মে সম্পর্কিত ভাবে পালন করা হয়ে থাকে সবসময়।তবে এই বছরের চিত্র একটু ভিন্ন ধরনের কেননা মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় শোভাযাত্রা বের করা, হয়নি তেমন করে।

বাংলাদেশে প্রথম এই দিবসটি পালিত হয় ১৯৩৮ সালে তখন এটি ব্রিটিশদের দখলে ছিল। এই শ্রমিক দিবসের চেতনা মূলত ছড়িয়ে পরে যখন সোভিয়েতে কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতায় আসে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর বামরা এই দিবসটিতে তাদের আদর্শের প্রচারের কিছু সুযোগ পায়। তারা এই দিবসটিকে শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতির দিন হিসেবে মনে করে। বাংলাদেশের দিকে যদি তাকানো হয় তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশের শ্রমিকেরা এখনো মুক্তি পায়নি যদিও রাজনৈতিক স্বার্থে অনেক ঘটা করে তা পালন করা হয়। যেই কারনে ১৯৮৬ সালে করা হয়েছিল শ্রমিক আন্দোলন তাঁর প্রত্যেকটি কারন এখন বাংলাদেশে বিদ্যমান। বাংলাদেশের বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকেরা দৈনিক ১০/১২ ঘণ্টা কাজ করে, তাদের সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন কাজ করতে হয়, আর সে তুলনায় তাদের বেতনও অনেক কম।একটি নিরিক্ষায় দেখা যায়খ ৫০০০ গার্মেন্টসে কাজ করে প্রায় ২৮ লাখ শ্রমিক। তথ্য মতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ প্রায় বছরে তের হাজার কোটি ডলার আয় হয় এই খাত থেকে(২০১৭ সালের হিসেব মতে)। অথচ মালিকদের বেতন বৃদ্ধির কথা বলা হলে তারা বলে তাতে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী পণ্যের দাম বেড়ে যাবে আর চাহিদা কমে যাবে। ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের তথ্য মতে বাংলাদেশই সবচেয়ে কম পারিশ্রমিক দেয় পোশাক শ্রমিকদের অথচ চীন দেয় ১৩৮ ডলার, কম্বোডিয়া ৭৫ ডলার, ইন্দোনেশিয়া ৭১ ডলার, ভিয়েতনাম ৬৭ ডলার, ভারতে ৬৫ ডলার আর বাংলাদেশে ৩৮ ডলার। আমাদের শ্রমিকদেরকে দাসের মতো ব্যাবহার করা হয় আর এই বিষয়টি দেখা যায় রানা প্লাজা ধবংসের দিকে ফিরে তাকালেই।

২৩ এপ্রিল ২০১৩, শ্রমিকরা যখন দেখলো রানা প্লাজায় ফাটল ধরেছে তখন শ্রমিকরা তাদের কর্মস্থলে যেতে চাইছিলোনা বারং করেছিল শ্রমিকরা। কিন্তু গার্মেন্টস মালিকরা তাদের আসতে বাধ্য করে।তবে এই শ্রমিকদের ভাগ্য ছিলোনা বেচেঁ থাকার কারণ সবকিছুই তো মহান আল্লাহ তাআলা লিখে রেখেছেন তাদের মৃত্যু হবে রানা প্লাজায় যার ফলাফল দেখা গেল ২৪ এপ্রিল যখন তা ধসে প্রায় প্রাথমিক হিসেব মতোন ১১২৭ জন শ্রমিক মারা গেলো,এছাড়াও পঙ্গুত্ব বরণ করলো কয়েকশো শ্রমিক যারা কাজে ফিরতে পারেনাই তাদের সংখ্যা ছিলো অনেকে। বিভিন্ন দেশ হাজার বছরও যদি এই দিনটিকে লালন করে রেলির মাধ্যমে কোন দিনও শ্রমিকদের মুক্তি আসবেনা আর যারা প্রাণ দিয়েছেন তারাও ফিরে আসবেনা। যদি গার্মেন্টস মালিকদের মধ্যে মনুষত্ব জাগ্রত না হয় তাহলে কখনও শ্রমিকদের সুফল হবেনা,তাই রেলি দ্বারা কখনও শ্রমিকদের মুক্তি হবে না। যদি কিছু হয়ে থাকে বড় জোর তা হলো রাজনৈতিক নেতারা বসার জন্য একটি মঞ্চ পাবে এর চেয়ে বেশি কিছু হবেনা, শ্রমিকরা একদিনের রাজনৈতিক প্রোগ্রামে আসবে ২০০ টাকার বিনিময়ে, আর তা থেকে একজন শ্রমিক নেতা তৈরি হবে। যদি বাস্তবে শ্রমিকদের মুক্তি হয় মে দিবসের চেতনা তাহলে মুখে না বলে বাস্তবে পরিনত করা দরকার সবার আগে।তবেই সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে একটু সুখ-শান্তি হয়তোবা ফিরে আসবে ।

আগে কারখানার শ্রমিকদের দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। কিন্তু কাজ অনুপাতে পারশ্রমিক ছিলো খুব কম। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে একদল শ্রমিক মালিকপক্ষকে দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মসময় নির্ধারণের দাবি জানায়। এ দাবি পূরণের সময় হিসেবে ১৮৮৬ সালের ০১ মে-কে নির্ধারণ করেন শ্রমিকরা। কিন্তু কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের এ দাবি কানে তোলেননি। ফলাফলে ১৮৮৬ সালের ০৪ মে শিকাগোর হে মার্কেট নামক স্থানে ফের আন্দোলন গড়ে তোলেন শ্রমিকরা। এসময় হে মার্কেট স্কয়ারে শ্রমিক পক্ষে বক্তব্য রাখেন আমেরিকান লেবার অ্যাক্টিভিস্ট অগাস্ট স্পিস। উদ্বেলিত শ্রমিকদলের কিছু দূরেই ছিলো পুলিশ। এসময় সবার অলক্ষ্যে হঠ‍াৎ পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপ হলে নিহত হন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাৎক্ষণিক এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে, পুলিশের গুলিতে নিহত হন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক। পুলিশের ওপর কে বা কারা বোমা হামলা করেছিলো তা সঠিক জানা না গেলেও, পুলিশ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ও আটক করা হয় অগাস্ট স্পিসসহ আরও আটজনকে।

পরের বছর ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর অগাস্ট স্পিসসহ অভিযুক্ত ছ’জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। অভিযুক্ত বাকি দু’জনের একজন কারাবন্দি অবস্থায় আত্মহত্যা করেন ও অন্য একজনের ১৫ বছরের কারাদণ্ড হয়।

উক্ত ঘটনার দু’বছর পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে ফরাসি বিপ্লবের একশো বছর প‍ূর্তিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেসে, শিকাগো শ্রমিক আন্দোলনের দিনটিকে ১৮৯০ সাল থেকে উদযাপনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। পরের বছর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কংগ্রেসে প্রস্তাবনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষে যুক্তি খুঁজে পাচ্ছিলো ঠিক তখনই উন্মোচিত হয় শ্রমিক আন্দোলন ঘটনার এক মর্মান্তিক সত্য। প্রমাণিত হয় পুলিশের ওপর বোমা হামলার দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত অগাস্ট স্পিস ও বাকি সাতজন মূলত দায়ী ছিলেন না, তারা ছিলেন নির্দোষ। তবে আসল অপরাধীকে শনাক্ত করা যায়নি। য‍াই হোক, ধীরে ধীরে বিশ্বের বিভিন্ন স্থ‍ানে শ্রমিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়তে থাকে। ১৯০৪ সালে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বব্যাপী মে মাসের প্রথম দিন মিছিল ও শোভাযাত্রার আয়োজন করতে সব সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল ও শ্রমিক সংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এ আহ্বানের সাড়া হিসেবে বিশ্বের প্রায় সব শ্রমিক সংগঠন ০১ মে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক দেশের শ্রমিকরা মে মাসের ০১ তারিখকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানায়। বিভিন্ন দেশে মে দিবস সরকারিভাবে ছুটির দিন হিসেবে উদযাপিত হতে থাকে। ধীরে ধীরে রাশিয়া, চীন, বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই দিনটির তাৎপর্য ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার দাবি এক সময় মেনে নিতে হয়।ওরা কাজ করে মনের মাধুরী মিশিয়ে দেশের তরে নগর, শহর ও বন্দর সাজায় ওদের ঘাম জড়িয়ে।ওরা প্রহর গুনে গুনে তবু ওদের রাঙ্গে ধরণী কভু আসেনি ফিরে।শক্ত মুষ্টিতে হাতুড়ি শাবল দিয়ে ওরা যুদ্ধ করে বেচেঁ থাকার জন্য।দিগ্বিজয়ে দেয় পাড়ি বানায় সামুত্রিক জাহাজ,লঞ্চ,স্টিমার আর মহাশূন্যর যাত্রী নানা আবিস্কার,এছাড়াও ওরাই মাটে সোনা ফলায় বিকিয়ে দিয়ে দেহের সমস্ত শক্তি রোদ বৃষ্টিতে ভিজে।তাই এখনও হয়তোবা ওদের সবটুকু সফলতা ফিরে আসেনি আমরা চাইবো ওরা যেন ওদের কষ্টের ফলাফল সঠিকভাবে পেতে পারে।

আমরা একটু পরখ করে দেখলে বুঝতে পারবো
অধিকাংশ শ্রমিকদের নেই একটু মাথা গুজার ঠাই,নাই বিছানা,নেই শিতের কাপড় ,ঠিক ভাবে পায়না ঔষধ পত্র,অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকে বিছানায় দিনের পর দিন আর আমরা বিলাস বহুল ভাবে কাটিয়ে থাকি আমাদের অনেকেরই জীবন।ওরাও মানুষ ওদের ও সঠিকভাবে বেচেঁ থাকতে ইচ্ছে হয়,ওরা মানুষ ওদেরকে দুবেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে বেচেঁ থাকতে স্বাদ যাগে মনে।

তবুও কখনও কখনও জুটেনা অন্ন দানা তাদের কপালে।আমি আমরা সকলেই বলবো ওরাই খাটি সোনার মানুষ তবুও যদি দেখতে পাই ওদেরই মুখে স্নিগ্ধ ভরা হাসি, ললাট আভায় দিপ্ত ক্ষনে সাজে ওরা তাহলে মুখের কোনেতে একটু হাসি ফুটবে আমাদের সকলেরই।তাহলেই ওরা প্রিয়জনের নিকটে ভালবাসা পাবে। ওদের মাঝে যদি আমরা শান্তির স্বর্গ ফিরে দিতে পারি তাহলেই হয়তোবা আমরা ওদের মুখে হাসি দেখতে পাবো।আমরা সবকিছু ভুলে আমাদের উচিৎ ওদেরকে শ্রদ্ধাভরা চোখে দেখে ওদের কাজের প্রতি সবসময় সদয় দৃষ্টি রাখতে।কারণ ওরাও মানুষ ওদের ও আছে বেঁচে থাকার সামান্য অধিকার।আমরা সবসময় শ্রমিকদের ন‍্যায‍্য মজুরি দিতে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।মহামারী করোনা ভাইরাস আমাদের শ্রম জীবনে অনেক বেশি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে যে কারণে দিনমজুর শ্রমিক ভাই বোনদের জনজীবনে জটিলতার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে।আমরা সকলেই মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি যেনো বিশ্ব থেকে মহামারী করোনা ভাইরাস দূর করে দেন।

–লেখক মো:ফিরোজ খান(সাংবাদিক)

সাস্থ্য

2 thoughts on “আজ পহেলা মে, “শ্রমিকদের মূল‍্যায়ন-তোমরা শ্রমিক””

Leave a Comment