প্রশ্ন সমাধান: আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলের কারণ ও শাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর, সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর, সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য
ভূমিকা : ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করলে ও দীর্ঘ নয় বছর পর ১৯৫৬ সালের ২৩ শে মার্চ প্রথম সংবিধান প্রণয়ন করে। সাংবিধানিক শূন্যতার কারণে সারা পাকিস্তান জুড়ে রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। আর এই রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযােগে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মীর্জা ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর সারাদেশে সামরিক শাসন জারি করেন।
মাত্র ২০ দিন পর ক্ষমতার উচ্চাভিলাষী জেনারেল আইয়ুব খান তাকে সরিয়ে নিজেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘােষণা দেন। সুদীর্ঘ ১১ বছর তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন।
তার শাসনকাল স্বৈরশাসন হিসেবে পরিচিত ছিল। স্বেচ্ছাচারী শাসক হিসেবে তিনি লৌহমানব উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি তাঁর শাসনকাল দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য অর্থনীতি, ভূমি, আইন, প্রশাসন, স্থানীয় সরকার ইত্যাদির সংস্কার সাধন করেন। তিনি ক্ষমতা পাকাপােক্ত করার জন্য বিশেষভাবে মৌলিক গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেন।
আরো ও সাজেশন:-
আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলের কারণ
নিম্নে আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলের কারণ উল্লেখ করা হল :
- রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা
- ইস্কান্দার মীর্জার ক্ষমতার লােভ
- গণতান্ত্রিক সরকারের ব্যর্থতা
- দলীয় শৃঙ্খলার অভাব
- ঘনঘন সরকার পরিবর্তন
- আমলাদের দৌরাত্ম
- শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি
- সংবিধান অকার্যকর হওয়া
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
আইয়ুব শাসনের বৈশিষ্ট্য
উচ্চাভিলাষী সামরিক শাসক হিসেবে আইয়ুব খান সুদীর্ঘ ১১ বছর পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। নিম্নে আইয়ুব শাসনের বৈশিষ্ট্য গুলাে আলােচনা করা হলাে :
১. সংবিধান বাতিল
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে স্বাধীনতা লাভের নয় বছরে পাকিস্তান সরকার একটি সংবিধান প্রণয়ন করে। কিন্তু গণতন্ত্র ব্যাহত হওয়ার অজুহাতে প্রথমে ইস্কান্দার মীর্জা ও পরে আইয়ুব খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন সামরিক শাসন জারি করে আইয়ুব খান এক আদেশবলে ১৯৫৬ সালের সংবিধান বাতিল না করে স্থগিত করেন।
২. সামরিক শাসন জারি
বেসামরিক কর্তৃত্বের বিলােপ সাধনের জন্য অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসা জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে নিজেকে সামরিক শাসক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। পাকিস্তানে সর্বপ্রথম সামরিক শাসন জারি করেন জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা ও জেনারেল মােহাম্মদ আইয়ুব খান ।
৩. উৎপীড়নমূলক শাসন
১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত আইয়ুবের কুখ্যাত দশকে পাকিস্তানবাসী বহুবিধ পীড়নের যাতাকলে নিষ্পেষিত হয়েছিল। তাই আইয়ুব খানের শাসন আমল উৎপীড়নের জন্য কুখ্যাত ছিল।
৪. রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ
আইয়ুব খান নিজের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ক্ষমতায় এসেই পাকিস্তানে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন। ফলে রাজনৈতিক দলের সকল অধিকার খর্ব হয়। তিনি মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তনের মাধ্যমে জনগণের ভােটাধিকার হরণ করেন।
৫. বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সেনা শাসন বহাল থাকবে
আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসেই সামরিক শাসন জারি করেন। এক আদেশবলে তিনি ঘােষণা করেন যতদিন বিকল্প ব্যবস্থা না হবে ততদিন পর্যন্ত সামরিক শাসন বহাল থাকবে । “আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আইয়ুব খান ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যপ্ত ক্ষমতায় টিকে ছিলেন ।
৬. রাজনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনা
আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসে সংসদীয় সরকার পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেন। নিজের ক্ষমতাকে আরও সুসংহত করার জন্য এবং আমলাদের নিজের অনুগত করার জন্য তিনি মৌলিক গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেন। তাই ১৯৬২ সালের সংবিধান মােতাবেক রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করেন, যা আইয়ুব শাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
৭. একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা
আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসে ১৯৫৬ সালের সংবিধান স্থগিত করেন। ১৯৬২ সালের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন। আর এ পন্থায় তিনি সকল রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব বিলীন করে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। তাকে কেন্দ্র করেই সকল শাসনকার্য পরিচালিত হতাে।
৮. সরকার বিরােধী আন্দোলন দমন
আইয়ুব খান এক পর্যায়ে বেসামরিকীকরণ প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে চাইলে জনসমর্থন পান নি। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সবসময় তার বিরােধিতা করে। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি পেশ করলে আইয়ুব খান তা প্রত্যাখ্যান করে তার ব্রুিদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠান। শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতার মুক্তির দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন শুরু হলে আইয়ুব সরকার দমনপীড়ন করে বিরােধী দল নিশ্চিহ্ন করে দিতে চান।
৯. সামরিক হস্তক্ষেপের সূচনা
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হলেও বিভিন্ন কারণে পাকিস্তানে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে নি। তাই ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ পরাজিত হলেও জয়লাভকারী দল।যুক্তফ্রন্টের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায় নি। এজন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করলে সামরিক হস্তক্ষেপের সূত্রপাত হয়।
১০. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব
আইয়ুব খানের শাসনামলে সংবিধানের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করার ফলে কোনাে আইন বা বিধিবিধানকে অসাংবিধানিক ঘােষণার ক্ষমতা বিচার বিভাগের ছিল না। অর্থাৎ আইয়ুব খানের নির্দেশিত পন্থাই ছিল আইন।
১১. মৌলিক গণতন্ত্রের পরিবর্তন
আইয়ুব খান তার শাসন ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য মৌলিক গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেন। এ মৌলিক গণতন্ত্র ৫ স্তরবিশিষ্ট পিরামিড আকৃতির একটি শাসন কাঠামাে তৈরি করা হয়। স্তরগুলাে হলাে-
- ইউনিয়ন কাউন্সিল
- থানা কাউন্সিল
- জেলা কাউন্সিল
- বিভাগীয় কাউন্সিল
- প্রাদেশিক কাউন্সিল
আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র “বুনিয়াদী গণতন্ত্র” নামেও সমধিক পরিচিত ছিল।
১২. গণতন্ত্রের মূলে কুঠারাঘাত
আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন যাতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিনষ্ট হয়। মৌলিক গণতন্ত্রের প্রবর্তনের মাধ্যমে তিনি গণতন্ত্রকে প্রহসন জানান। মূলত তার শাসন আমলে গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আইয়ুব খানের শাসনব্যবস্থা ছিল সামরিক শাসন। অবশ্য এজন্য ১৯৪৭-৫৭ সাল পর্যন্ত স্থায়ী সরকারও দায়ী ছিল। তাই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা যেখানে ব্যর্থ হয় সেখানেই সামরিক শাসনের সূত্রপাতের সম্ভাবনা থাকে। আইয়ুব শাসনের বেলায়ও তাই ঘটেছিল। সামরিক শাসক আইয়ুব খানের শাসনামলে ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যের চেয়ে নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যই ছিল বেশি।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- আই এ এস (IAS) অনুযায়ী ইজারা গ্রহীতার হিসাববিজ্ঞানের নীতিসমূহ লেখ
- এসি কারেন্ট ও ডিসি কারেন্ট
- ইজারা সম্পদ বিক্রয়ের উপর করের প্রভাব বিস্তারিত আলোচনা কর
- বিক্রয়ের উপরে করের প্রভাব বিস্তারিত আলোচনা কর
- ইজারার চলতি ও ইজারার অচলতি পার্থক্য । ইজারার চলতি vs ইজারার অচলতি পার্থক্য
- ইজারাদাতার অবশিষ্ট মূল্য সম্পর্কে আলোচনা কর