অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের নবম অধ্যায়ে ‘জনসংখ্যানীতি

আর্থ-সামাজিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের জনসংখ্যা বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়,

তাকেই বলা হয় দেশটির জনসংখ্যানীতি। এই নীতির লক্ষ্য হলো, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নতি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫৫ লাখ। দেশের বাইরে প্রবাসী হিসেবে আছে প্রায় এক কোটি। এ দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে এক হাজার ২৬৫ মানুষ বাস করে (ভারতে ৪৫০ জন)।

প্রতিবছর মোট জনসংখ্যার সঙ্গে নতুন করে প্রায় ৩২ লাখ মানুষ যোগ হচ্ছে। জনসংখ্যার এই চাপ পড়ছে জমির ওপর, খাদ্যের ওপর, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর। একসময় বলা হতো,

জনসংখ্যা বাংলাদেশের এক নম্বর সমস্যা। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের ফলে এখন সেই সমস্যা অনেকটা লাঘব হয়েছে। বাংলাদেশে ১৯৭৬ সালে প্রথম জাতীয় জনসংখ্যানীতি প্রণয়ন করা হয়।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে। যেমন—স্বাধীনতার সময় ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারী গড়ে ছয়টির বেশি সন্তান জন্ম দিতেন। অর্থাৎ তখন মোট প্রজনন হার (টিএফআর) ছিল ৬.৪। বিবিএসের হিসেবে এখন টিএফআর ২.০৫। স্বাধীনতার সময় আধুনিক জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করতেন ৮ শতাংশ দম্পতি। এখন সেই হার ৬৩ শতাংশ।

জনসংখ্যা সব সময় অভিশাপ নয়, আশীর্বাদও হতে পারে। তবে সীমিত সম্পদের দেশে বিশাল জনসংখ্যা বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে সেই বিপুল জনসংখ্যাও জনসম্পদে পরিণত হতে পারে।

এরই মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ তাদের বিশাল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করেছে। চীন তাদের বিপুল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। এশিয়ার শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ভারত ও শ্রীলঙ্কা জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে ভারত তাদের জনশক্তিকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করেছে।

এমনকি আমেরিকার মতো উন্নত দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের শতকরা ২৩ ভাগ ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির ওপর নির্ভরশীল। আমরাও পারি আমাদের বিশাল জনশক্তিকে যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের দুর্বল অর্থনীতির চাকা সচল করে উন্নতির মূল ধারায় নিজেদের সম্পৃক্ত করাতে। সেই লক্ষ্যেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

J.S.C

Leave a Comment