অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের দশম অধ্যায় ‘ইভটিজিং’

ইভ টিজিং প্রকাশ্যে যৌন হয়রানি, পথেঘাটে উত্ত্যক্ত করা বা পুরুষ দ্বারা নারী নিগ্রহনির্দেশক একটি শব্দ, যা মূলত ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নেপালে ব্যবহৃত হয়। ‘ইভ’ শব্দটি বাইবেলের আদি নারী ইভ (Eve) বা পবিত্র কোরআনের ‘হাওয়া’কে বোঝায়। অন্যদিকে টিজিং শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘পরিহাস বা জ্বালাতন’। সুতরাং ইভ টিজিং বলতে নারীদের উত্ত্যক্ত বা বিরক্ত করাকে বোঝায়। একসময় সমাজের বখে যাওয়া একটি ক্ষুদ্র অংশ ইভ টিজিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকলেও এখন উঠতি বয়সী তরুণ, কিশোর-যুবকসহ অনেক মধ্য বয়সীরাও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।

আধুনিক সমাজে ‘ইভ টিজিং’ শব্দটি ‘যৌন হয়রানি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। Oxford Dictionary অনুযায়ী ইভ টিজিং হচ্ছে সেই ধরনের কর্মকাণ্ড ও আচরণ, যা মানুষের যৌনতাকে উদ্দেশ্য করে মানসিক ও শারীরিকভাবে করা হয়। ইভ টিজিং শব্দটি ৬০-এর দশকের শোনা গেলেও বেশি গুরুত্ব পায় পরবর্তী দশকে, যখন অধিকসংখ্যক মেয়েরা ঘরের গণ্ডি পেরিয়ে পুরুষদের পাশাপাশি বিদ্যালয় ও কর্মক্ষেত্রে যেতে শুরু করে।

আইন অনুযায়ী, ইভ টিজিংয়ের সংজ্ঞা বেশ বিস্তৃত। কোনো নারী বা কিশোরীকে তার স্বাভাবিক চলাফেরা বা কাজকর্ম করা অবস্থায় অশালীন মন্তব্য করা, ভয় দেখানো, অযথাই নাম ধরে ডাকা ও চিৎকার করা, বিকৃত নামে ডাকা, কোনো কিছু ছুড়ে দেওয়া, ব্যক্তিত্বে লাগে এমন মন্তব্য করা, ধিক্কার দেওয়া, তার যোগ্যতা নিয়ে টিটকারী করা, তাকে নিয়ে অহেতুক হাসাহাসি করা, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ধাক্কা দেওয়া, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা, ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা দেওয়া, সিগারেটের ধোঁয়া গায়ে ছাড়া, উদ্দেশ্যমূলকভাবে পিছু নেওয়া এবং গান, ছড়া বা কবিতা আবৃত্তি করা, চিঠি লেখা, পথরোধ করে দাঁড়ানো, প্রেমে সাড়া না দিলে হুমকি প্রদানের মতো বিষয়গুলো ইভ টিজিংয়ের মধ্যে পড়ে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার এই যুগে মুঠোফোন ও ই-মেইলের মাধ্যমেও ইভ টিজিং হয়ে থাকে।

আইনে ইভ টিজিং করলে এর ধরন ও মাত্রা অনুযায়ী বিভিন্ন শাস্তি রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ৭৫ ধারা অনুযায়ী সমাজে অশালীন বা উচ্ছৃঙ্খল আচরণের শাস্তি হিসেবে তিন মাস মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। আবার যৌন পীড়ন করলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আছে কঠিন শাস্তি। হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ইভ টিজিংকে একটি গুরুতর যৌন নির্যাতন হিসেবেও গণ্য করা হয়।

কেউ ইভ টিজিংয়ের শিকার হয় বা হচ্ছে, এমন কোনো ঘটনা দেখলে, আশপাশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সঙ্গে সঙ্গে অবগত করা উচিত। তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত যদি হাতেনাতে প্রমাণ পান, তাহলে ঘটনাস্থলেই শাস্তি আরোপ করতে পারবেন। এই আইনে শাস্তি হচ্ছে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নিরীহ কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা করলে ফল উল্টোও হতে পারে।

চকুরি

7 thoughts on “অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের দশম অধ্যায় ‘ইভটিজিং’”

Leave a Comment