প্রশ্ন সমাধান: অর্থনৈতিক ভূগোল কাকে বলে এবং অর্থনৈতিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি, অর্থনৈতিক ভূগোল কাকে বলে? অর্থনৈতিক ভূগোলের পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা কর
অর্থনৈতিক ভূগোল (Economic Geography) হলো ভূগোলের এমন একটি শাখা যেখানে পরিবেশ ও কালের প্রেক্ষিতে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, ভূগোলের যে অংশে প্রাকৃতিক এবং অপ্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি বা অবনতির পারষ্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে তাকে অর্থনৈতিক ভূগোল বলে। অর্থনৈতিক ভূগোলের জনক জর্জ চিশল্ম (George Chisholm)।
অর্থনৈতিক ভূগোলের কয়েকটি প্রামাণ্য সংজ্ঞা
অধ্যাপক হেবার্টসন বলেন, “অর্থনৈতিক ভূগোল অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন পণ্যদ্রব্যের বণ্টন নিয়ে আলোচনা করে।”
অধ্যাপক আর. এন. ব্রাউন-এর মতে, “অর্থনৈতিক ভূগোল হলো এমন একটি বিষয়, যা মানুষের কার্যাবলীর উপর জৈব ও অজৈব পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করে।”
অধ্যাপক আর. ই. মারফি অর্থনৈতিক ভূগোল সম্পর্কে বলেছে, “পৃথিবীর বিভন্ন স্থানে বসবাসরত অধিবাসীদের জীবন যাপন প্রণালীর সামঞ্চসত্যা ও পার্থক্য নিয়ে যে শাস্ত্রে আলোচনা হয়, তাকে অর্থনৈতিক ভূগোল বলে।”
সুতরাং, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের বিকাশ বিস্তার ও ক্রমবিবর্তন এবং প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে এর কার্যকারণ সম্পর্কের বিচার বিশ্লেষণ এবং পর্যালোচনাকেই অর্থনৈতিক ভূগোল বলে।
অর্থনৈতিক ভূগোলের পরিধি বা আওতা
মানুষ ও তার পরিবেশ কীভাবে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপর সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে তার বিশ্লেষণ ও ফলাফল নির্ণয় করাই হলো অর্থনৈতিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি।
অর্থনৈতিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি নিচে বর্ণনা কর হলো—
মানুষ
মানুষ হলো সৃষ্টির সেরা জীব। আর এই মানুষ তার কর্মকাণ্ডকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। অর্থনৈতিক ভূগোল বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত মানুষের অতীত ও বর্তমান যুগের জীবনধারা বা কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করে। তাই মানুষের জন্ম-মৃত্যু, আচার-আচরণ, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, জীবিকা, নিরাপত্তা, ধর্ম, বর্ণ শিক্ষা ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা অর্থনৈতিক ভূগোলের আওতাভুক্ত বা পরিধিভুক্ত।
পরিবেশ
সে সকল পারিপার্শি¦ক অবস্থান ও অবস্থা মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর প্রভাব বিস্তার করে তাই হলো পরিবেশ। আর এই পরিবেশ কিভাবে মানুষের মানুষের অর্থনৈতিক কমকাণ্ডের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে তার বিশদ আলোচনা করাও অর্থনৈতিক ভূগোলের আওতাভুক্ত।
পরিবেশ দুই প্রকার, যথা— ১. প্রাকৃতিক পরিবেশ, ২. অপ্রাকৃতিক পরিবেশ।
প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অপ্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলো কীভাবে অর্থনৈতিক ভূগোলোর পরিধিভুক্ত তা আলোচনা করা হলো—
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
১. প্রাকৃতিক পরিবেশ
ভূপ্রকৃতি
অঞ্চলভেদে পৃথিবীর ভূপ্রকৃতির ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। ভূপ্রকৃতির বিভিন্নতার কারণ মানুষের ক্রিয়াকলাপের মধ্যে যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় তার সার্বিক আলোচনা করা অর্থনৈতিক ভূগোলের পরিধিভুক্ত বা আওতাভুক্ত।
জলবায়ু
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ু ও এর বৈশিষ্ট্য এবং মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়া কলাপের ওপর জলবায়ুর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনাও অর্থনৈতিক ভূগোলের আওতাভুক্ত/পরিধিভুক্ত।
মৃত্তিকা
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মৃত্তিকার প্রকারভেদ, ব্যবহার, উৎপাদন ক্ষমতা, গঠন প্রকৃতি ইত্যাদির বর্ণনা ও তথ্য প্রদান এবং মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের উপর মাটির প্রভাবের আলোচনা করাও অর্থনৈতিক ভূগোলের পরিধিভুক্ত/ আওতাভুক্ত।
উদ্ভিদ
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদের ব্যবহার শ্রেণী বিভাগ বন্টন, উপকারিতা বনভূমির আয়তন ও বিস্তার ইত্যাদির বর্ণনা ও তথ্য প্রদান করা অর্থনৈতিক ভূগোলোর পরিধিভুক্ত।
খনিজ সম্পদ
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন প্রকার খনিজ সম্পদের বিশদ বিবরণ প্রদান করাও অর্থনৈতিক ভূগোলের আলোচনার বিষয়।
২. অপ্রাকৃতিক পরিবেশ
অপ্রাকৃতি পরিবেশ বলতে সাধারনত জাতি,ধর্ম শিক্ষা আচার- ব্যবহার রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রভূতিকে বুঝায়ে। এসব উপদান মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর কী রূপ প্রভাব বিস্তার করে সে সম্পর্কে আলোচনাও অর্থনৈতিক ভূগোলের আওতাভুক্ত।
৩. মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড
জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষ যে সব কার্যাবলি সম্পাদন করে তাদের সমষ্টিকে মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলে। মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তিন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন—
- প্রাথমিক পর্যায়: কৃষিকাজ, মৎসশিকার, বনজ ও খনিজ সম্পদ আহরণ ইত্যাদি।
- দ্বিতীয় পর্যায়: প্রাথমিক পর্যায় থেকে প্রাপ্ত দ্রব্যসামগ্রি যান্ত্রিক প্রকৃয়ায় পরিবর্তন করে অধিকর্তর ব্যবহার উপযোগী করে তোলা। যেমন— ধান হতে চাল, দুধ হতে দই- পণির-ছানা, লৌহ আকরিক হতে ইস্পাত ইত্যাদি।
- তৃতীয় পর্যায়: ব্যবসা-বানিজ্য, শিক্ষকতা, চাকুরী ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড এ পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্তর্গত।
৪. সম্পদের বিস্তৃতি
সম্পদ বিভিন্ন ধরণের হতে পারে; যেমন— কৃষিসম্পদ, মৎসসম্পদ, খনিজসম্পদ ইত্যাদি। সম্পদ মূলত প্রাকৃতিক। মানুষ নিজের প্রয়োজনমত তার পরিবর্তন করে নেয়। বিস্তৃতি হলো কোন সম্পদ কোথায় এবং কেন অবস্থান করে তার আলোচনা করা। সুতারাং সম্পদের বিস্তৃতি সম্পর্কে আলোচনাও অর্থনৈতিক ভূগোলোর আওতাভুক্ত।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
৫. অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
সম্পদ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পারষ্পরিক সম্পর্কে নিয়ে গড়ে ওঠে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হলো একটি দেশের জনগণ কতৃক কতগুলো নিয়ম বা প্রণালীর সমষ্টি যার মাধমে মানুষের অভাব মেটানোর জন্য সম্পদ ব্যবহত হয়। দেশের সম্পদ ব্যবহার করে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর জন্য উৎপাদন, ভোগ এবং বিতরণের যে সংগঠিত ব্যবস্থা থাকে তাই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। যেমন— সমাজ তান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা, ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা এবং মিশ্র অর্থব্যবস্থা। অর্থনৈতিক ভূগোল এসব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করে।
৬. অর্থনৈতিক উন্নয়ন
অর্থনৈতিক ভূগোল বিশ্বের করে। মানুষও তার অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারাও তারতম্যের কারণ বিশ্লেষণ করে। মানুষ ও তার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশ্বের, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সম্পদের বিস্তৃতি প্রভৃতির সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশের মিথস্ক্রিয়া হলো অর্থনৈতিক ভূগোলোর অন্তভুক্ত।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization
- সমাজদর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের সম্পর্ক, সমাজদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শনের সম্পর্ক, Relation between Social Philosophy & Political Philosophy
- দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?, দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে অধিবিদ্যা আলোচনা করুন।
- দর্শনের প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা কর