অধর রায় বারান্দায় গােবরজল দিতে বলেছেন কেন?,স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পরেও কেন অভাগী পুনরায় বিয়ে করেনি?

অধর রায় বারান্দায় গােবরজল দিতে বলেছেন কেন?,স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পরেও কেন অভাগী পুনরায় বিয়ে করেনি?

প্রশ্ন ১। অধর রায় বারান্দায় গােবরজল দিতে বলেছেন কেন?। 

উত্তর : অধর রায় বারান্দায় গােবরজল ছড়িয়ে দিতে বলার কারণ হলাে- নিচু জাতের সন্তান কাঙালী তার মায়ের মড়া ছুঁয়ে এসে অধর।  রায়ের বারান্দায় দাড়িয়েছিল।

কাঙালী মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য মায়ের মৃত্যুর পর কাঠের ব্যবস্থা করতে জমিদারের কাছারি বাড়ি যায়। কাছারি বাড়ির কর্তা অধর রায়। কাঙালী তার কাছে তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় লাগানাে বেলগাছটি|  কাটার অনুমতি চায় মাকে পােড়ানাের জন্য। এতে অধর রায় বিরক্ত  হয়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা কাঙালীকে নিচে নেমে দাঁড়াতে বলে এবং  জাত জিজ্ঞাসা করে। অধর রায় ওর দাঁড়ানাের জায়গাটাতে গােবর জল  ছড়িয়ে দিতে আদেশ দেন। মূলত কাঙালী নিচু জাতের হওয়ায় এবং  মড়া ছুঁয়ে আসায় অধর রায় এ কথা বলেছেন।

প্রশ্ন ২। স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পরেও কেন অভাগী পুনরায় বিয়ে  করেনি? 

উত্তর : স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পরও কাঙালীর মা দ্বিতীয় বিয়ে করেনি  একমাত্র সন্তান কাঙালীর জন্য ।

কাঙালীর বাবা ছেড়ে যাওয়ার পর অভাগীকে অনেকেই বিয়ে  করতে বলেছে। কিন্তু তাতে অভাগীর মন গলেনি, সে বিয়েতে  রাজি হয়নি। কারণ সে জানে কাঙালীর সে ছাড়া এ জগতে আর  কেউ নেই। তাই নিজের কথা ভেবে স্বার্থপরের মতাে সে বিয়ে  করেনি, কাঙালীর জন্য কারও প্ররােচনায় সে কান দেয়নি।

প্রশ্ন ৩।  মড়া-পােড়ানাে বলতে নেই, পাপ হয়’- কথাটি কে, কাকে বলে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : মড়া-পােড়ানাে বলতে নেই, পাপ হয়’— কথাটি কাঙালীকে বলেছে তার মা।

কাঙালী মায়ের কোল ছেড়ে বাইরে খেলা করতে যেত না বললেই চলে। এতটাই সে মায়ের কাছাকাছি থাকত। মুখুয্যে গিন্নির সৎকার দেখে ফিরলে কাঙালী মায়ের গলা জড়িয়ে ধরতে গিয়ে দেখে তার শরীর গরম । তখন সে বলে, “মা তাের গা যে গরম, কেন তুই ।  অমন রােদে দাঁড়িয়ে মড়া-পােড়ানাে দেখতে গেলি?’ তখন অনেক প্রত্যুত্তরে অভাগী ছেলেকে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলে।

প্রশ্ন ৪। বৃদ্ধ মুখােপাধ্যায় মহাশয়কে ধানের কারবারে অতিশয় সংগতিপন্ন মনে হয় কেন?

উত্তর : বৃদ্ধ মুখােপাধ্যায় মহাশয়ের স্ত্রীর মৃত্যুতে শবযাত্রার আয়ােজন করতে দেখে তাকে ধানের কারবারে অতিশয় সংগতিপন্ন মনে হয়।

বৃদ্ধ মুখখাপাধ্যায় মহাশয় ধানের কারবারের মাধ্যমে অতিশয় সংগতিপন্ন হয়েছেন। তার স্ত্রীর শব্যাত্রার আয়ােজনে শাশানে পূর্বাহেই কাঠের ভার, চন্দনের টুকরা, ঘৃত, মধু, ধূপ, ধুনা প্রভৃতি উপকরণ সতি হয়েছিল। শবযাত্রা দেখে মনে হয়েছিল, এ কোনাে শশাকের ব্যাপার নয়, গৃহিণী যেন নতুন করে আরেকবার স্বামিগৃহে যাত্রা করছেন। আড়ম্বরপূর্ণ এ শেষ কৃত্যানুষ্ঠান দেখে তাই মনে হয় বৃন্দ মুখােপাধ্যায় মহাশয় ধানের কারবারে অতিশয় সংগতিপন্ন।

প্রশ্ন ৫। অভাগীর অন্তিম ইচ্ছা পূরণ হলাে না কেন?

উত্তর : জাত-ধর্মের বিভেদ ও জমিদারি প্রথার নিষ্ঠুরতার জন্য অভাগীর অন্তিম ইচ্ছা পূরণ হলাে না।

স্বামী পরিত্যক্তা অভাগী একমাত্র সন্তান কাঙালীকে নিয়ে কোনােমতে জীবন পার করছিল। তার আশা ছিল ছেলে একদিন বড় হয়ে তার দুঃখ ঘুচাবে। মৃত্যুর পর ছেলের হাতের আগুন পেয়ে সে স্বর্গে যাবে। কিন্তু এ সমাজ তার অন্তিম ইচ্ছা পূরণ করতে দেয়নি। ছােট জাতের বলে তার নিজের হাতে লাগানাে বেলগাছটিও জমিদার কাটতে দেয়নি। যার জন্য কাঙালী মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পারেনি।

প্রশ্ন ৬। “ছেলের হাতের আগুন! সে তাে সােজা কথা নয়।” ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : “ছেলের হাতের আগুন, সে তাে সােজা কথা নয়”- এ কথা কাঙালীর মা বলেছিল ছেলের হাতে আগুন লাভ করে স্বর্গে যাওয়ার ভাবনা থেকে।

‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পটি অভাগীর সৎকারের বাসনাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। ধর্মভীরু কুসংস্কারাচ্ছন্ন নিচু জাতের মেয়ে অভাগী। সে ঠাকুরদাস মুখােপাধ্যায়ের স্ত্রীর শবযাত্রায় বহু কষ্ঠে হরিধ্বনির সঙ্গে সেও তার সত্ত্বারে ছেলের হাতের আগুন প্রত্যাশা করল। তার ধারণা, ছেলের হাতে আগুন পেলেই সে স্বর্গে যাবে। সেজন্য সে ভেবেছে, ছেলের হাতের আগুন পাওয়া সােজা কথা না, ভাগ্যের ব্যাপার।

প্রশ্ন ৭। হিন্দুস্থানি দারােয়ান অশ্রাব্য গালি দিলেও গায়ে হাত দিল না কেন? 

উত্তর : হিন্দুস্থানি দারােয়ান অশ্রাব্য গালি দিলেও গায়ে হাত দিল না অশৌচের ভয়ে।

তৎকালীন হিন্দুসমাজে জাত-পাত ও বর্ণপ্রথা প্রচলিত ছিল। উঁচু বর্ণের বা জাতের মানুষরা জাত-ধর্মের ভয়ে নিচু জাতের মানুষদের ছায়াও মাড়াত না। কাঙালী নিচু জাতের ছেলে। সে তার মায়ের মৃতদেহ স্পর্শ করেছে। তাই হিন্দুস্থানি দারােয়ান দূর থেকে কাঙালীকে অশ্রাব্য গালি দিলেও অশৌচের ভয়ে তার গায়ে হাত দিল না।

প্রশ্ন ৮। “এই ছলনায় বহুদিন কাঙালীর মা তাকে ফাকি দিয়া আসিয়াছে।” উক্তিটি বুঝিয়ে লেখ।

উত্তর : না খেয়ে থেকে ‘খিদে নেই বলে কাঙালীর মা অনেকদিন তাকে ফাকি দিয়েছে।

কাঙালী ও তার মায়ের অভাবের সংসার। ঠিকমতাে খাবার জোটে। তাই অনেক সময় ছেলেকে খাইয়ে মা না খেয়ে থাকে। কিন্তু কাঙালী জিজ্ঞাসা করলে বলেছে যে তার খিদে নেই। আসলে তাে খাবার নেই বলে সে খাচ্ছে না। এভাবে খিদে না থাকার ছলনায় অনেক দিন সে কাঙালীকে ফাকি দিয়েছে।

প্রশ্ন ৯। ‘ভাগ্যিমানী মা, তুমি সগ্যে যাচ্ছ” অভাগীর মায়ের  কিসে মনে হচ্ছিল ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রী স্বর্গে যাচ্ছে?

উত্তর : কাঙালীর মা দেখল যে, ঠাকুরদাস মুখােপাধ্যায়ের স্ত্রীর শবে যখন বহুকষ্ঠের হরিধ্বনির সঙ্গে পুত্রহস্তের আগুন লাভ করছে তখন প্রশ্নোক্ত কথাটি সে মনে মনে বলেছিল।

কাঙালীর মায়ের মতে মৃত্যুর পর ছেলের হাতের আগুন অত্যন্ত পবিত্র। যে মা তা পায় সে অত্যন্ত ভাগ্যবতী। কারণ ছেলের হাতে আগুন পেলে সে  স্বর্গে যায়। তাই যখন ঠাকুরদাস মুখােপাধ্যায়ের স্ত্রীর চিতায় তার ছেলে আগুন দিচ্ছিল তখন কাঙালীর মায়ের অনুরূপ ভাবনাটি হয়েছিল।

প্রশ্ন ১০। রাখালের মা কাঙালীর মাকে সতী-লক্ষ্মী বলেছিল কেন?

উত্তর : ছেড়ে যাওয়া স্বামীর প্রতি ভক্তি এবং সন্তানকে আগলে রাখার দিক বিবেচনা করে রাখালের মা কাঙালীর মাকে সতী-লক্ষ্মী বলেছিল।

কাঙালীর মা অভাগী পৃথিবীতে বড় অসহায়। মাতৃহারা অভাগীর বিয়ে হয় রসিক দুলের সঙ্গে কিন্তু অভাগীর কপালে বেশিদিন সেই সুখ সয়নি। রসিক দুলে আরেকটি বিয়ে করে অন্য গ্রামে চলে যায়। তখন অনেকেই অভাগীকে বিয়ে করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু অভাগী স্বামী এবং একমাত্র সন্তানের কথা ভেবে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেনি। দুঃখ-দৈন্যে সে কাঙালীকে বুকে আগলে বড় করতে লাগল। এ কারণেই রাখালের মা কাঙালীর মাকে সতী-লক্ষ্মী বলেছিল।

প্রশ্ন ১১। অভাগী কেন শশানের কাছে যেতে সাহস পেল না?

উত্তর : দুলে বংশের মেয়ে বলে অভাগী শ্মশানের কাছে যেতে সাহস পেল না।

ঠাকুরদাস মুখােপাধ্যায়ের স্ত্রী মারা যাওয়ায় তাকে মহাসমারােহে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সকারের জন্য। হিন্দু রীতিতে দুলে বংশ অনেক ছােট। বড় বংশের মড়া পােড়ানাের সময় ছােট জাতের কেউ শশানে গেলে সেটা দৃষ্টিকটু হয়। অভাগী সবার পিছু পিছু শ্মশানের কাছাকাছি গেলেও ভেতরে যাওয়ার সাহস পেল না। কারণ সে দুলে অর্থাৎ নীচু বংশের মেয়ে।

প্রশ্ন ১২। অভাগীর বাবা কেন মেয়ের নাম অভাগী রাখল?

উত্তর : অভাগীর যখন জন্ম হয়, তখনই তার মা মারা যায়। এ কারণেই রাগ করে বাবা তার মেয়ের নাম রাখল অভাগী।

অভাগীর বাবার কাজ মাছ ধরা। দিন-রাত সে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। যেদিন অভাগীর জন্ম হলাে- সেদিন আঁতুড়েই অভাগীর মা মারা গেল। সদ্যোজাত শিশুর মা মারা যাওয়া দারুণ দুর্ভাগ্যের নামান্তর। কারণ মাতৃস্নেহ ও মাতৃস্তন্য থেকে সে বঞ্চিত। তাছাড়া অভাগীর বাবা জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পন্থা মাছ ধরার কাজে সারাদিন বাইরে থাকে। ফলে অভাগীর কপালে পিতৃস্নেহও বিশেষ জুটবে না। এ কারণেই বাবা রাগ করে তার নাম রাখে অভাগী।

প্রশ্ন ১৩। ‘ তোর হাতের আগুন যদি পাই, তবে আমিও সগ্যে যাবো’ – উক্তিটি ব্যাখ্যা কর?

উত্তরঃ উক্তিটিতে অভাগীর সংস্কার ও বিশ্বাসের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।

‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অভাগী সংস্কারে বিশ্বাসী মানুষ। ঠাকুরদাস মুখুয্যের বর্ষীয়সী স্ত্রীকে শ্মশানে পুড়তে দেখে অভাগী, যেখানে মুখুয্যের স্ত্রী ছেলের হাতে আগুন পায়। হিন্দুধর্মের সংস্কার অনুসারে অভাগীর বিশ্বাস মুখুয্যের স্ত্রী স্বর্গে যাবে। তাই অভাগী মৃত্যুর পর ছেলের হাতে আগুন প্রত্যাশা করে; যেন সে নিজেও মুখুয্যের স্ত্রীর মতাে স্বর্গে যেতে পারে।

প্রশ্ন ১৪। ‘মা মরেচে তা যা নীচে নেমে দাঁড়া ’ – অধর রায়ের এরূপ উক্তির কারণ কি?

উত্তরঃ “মা মরেচে ত নীচে নেবে দাঁড়া” অধর রায়ের এমন উক্তির কারণ অশৌচের ভয়।

কাঙালী মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য মায়ের মৃত্যুর পর কাঠের ব্যবস্থা করতে জমিদারের কাছারি বাড়ি যায়। কাছারি বাড়ির কর্মী গােমস্তা অধর রায় সেই সময় সন্ধ্যাহ্নিক শেষ করে বাইরে আসেন। কাঙালী তাকে দেখে কান্নাকাটি করে এবং মায়ের মৃত্যুর কথা বলে। অধর রায়ের মনে হয় কাঙালী মড়া ছুঁয়ে এসেছে, সে এখানকার কিছু ছুঁয়ে ফেলতে পারে। এ কথা ভেবে অশৌচের ভয়ে অধর রায় কাঙালীকে উদ্দেশ করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেন।

একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।

আর্টিকেলের শেষ কথাঃ মড়া-পােড়ানাে বলতে নেই,পাপ হয়’ কথাটি কাঙালীকে বলেছে তার মা,বৃদ্ধ মুখােপাধ্যায় মহাশয়কে ধানের কারবারে অতিশয় সংগতিপন্ন মনে হয় কেন?

Leave a Comment