অতিমারি করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের সামাজিক পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মহামারি করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের সামাজিক পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, করোনা পরবর্তী আমাদের সামাজিক পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন

Google Adsense Ads

বিষয়: অতিমারি করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের সামাজিক পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন

করোনাভাইরাস -২০১৯ (কোভিড-১৯) মহামারী সরকার, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে এক অভূতপূর্ব সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আজ পর্যন্ত, এই ভাইরাস মোকাবেলায় কোন কার্যকর টীকা বা চিকিৎসা আবিস্কৃত হয়নি, আর নিকট ভবিষ্যতে এটি যে পাওয়া যাবে এমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না । তাই এই রোগ  বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব (যেমন, হোম কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন) মেনে চলাকেই মূল কৌশল হিসাবে গ্রহন করা হচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে, বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষকে এখন বাড়িতে থাকতে হচ্ছে।

দেখা গেছে এই ভাইরাস বিস্তারের গতি হ্রাস করতে ’লকডাউন’ কার্যকরী একটি পন্থা। যেমন চীন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে  লকডাউনের মাধ্যমে মহামারীর গতিকে কমিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে। এর ফলে এই দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর চাপ কমে এসেছে  এবং মৃত্যুর হারও কমে গেছে।

কিন্তু সমস্যা হলো লকডাউন পরিস্থিতি দীর্ঘকাল অব্যাহত থাকলে কর্মসংস্থান, অর্থনীতি, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক শৃঙ্খলার ওপর এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে (বিশেষত যেখানে সামাজিক সুরক্ষা বলয় সীমিত)। তাই লকডাউনের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠার ক্ষমতা ধনী রাষ্ট্রগুলোর থাকলেও নিম্ন ও মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রগুলি এ বাস্তবতায় কতদূর টিকে থাকতে পারবে, সেটি একটি কঠিন প্রশ্ন।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে  দীর্ঘমেয়াদী  লকডাউন বজায় থাকলে কর্মহীনতা ও দারিদ্রতা লাগামহীন হারে বাড়তে পারে, এর সাথে বাড়তে পারে অনাহারজনিত মৃত্যুর সংখ্যাও । এতে এমন এক পরিস্থিতি সামনে আসতে পারে যেখানে অর্থনীতিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা করোনা মহামারীতে প্রাণ হারানো সংখ্যার সমানুপাতিক হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে বিআইজিডি-পিপিআরসির যৌথ উদ্যোগে গ্রামে ও শহরের বস্তিতে থাকা ৫,৪৭১টি পরিবারের উপর পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় ভিত্তিতে দেখা যায়, তাদের গড় আয় কমেছে প্রায় ৭০% আর খাবারের ব্যয় কমেছে ২৬%, পাশাপাশি এও উঠে এসেছে যে, এই পরিবারগুলি বাহ্যিক কোন সহায়তা ছাড়া আর সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ চলতে পারবে।

সঙ্কটের আরো গভীরতর রূপ সামনে আসে যখন দেখা যায় যে, এই করোনা দুর্যোগের আগে যে পরিবারগুলোর আয় জাতীয় দারিদ্র্যসীমার বেশ উপরে ছিল, তাদের ৮০% এর বেশি বর্তমানে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছে। এই স্বল্পমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায় যে,পূর্বের অর্থনৈতিক সামর্থ্যে ফিরে আসা নির্ভর করছে  এই সঙ্কটে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো কতটা  দ্রুত, নির্ভরযোগ্য ও যুৎসই তার উপর।

সুতরাং অত্যন্ত জরুরী বিষয় হলো – মহামারীকালীন মৃত্যু এবং অর্থনৈতিক পতন – এ দুইয়ের মধ্যে কিভাবে ভারসাম্য তৈরি করা যায়? আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, মহামারীকালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দেশগুলি কিভাবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পারে? এসময়ে সামাজিক পর্যায়ে করনীয়গুলি কী? করোনা মোকাবিলা ও একইসাথে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কি ধরণের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাই বা গ্রহণ করা উচিত?

এই প্রশ্নগুলোর সহজ কোন উত্তর নেই,  তবে এমন পরিস্থিতিতে সকলের সুসমন্বিত উদ্যোগ ও একত্রে তাল মিলিয়ে কাজ করা জরুরি। আর এ বিষয়ে সমন্বয় ও কর্মপন্থা কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনা হওয়া এখন খুব প্রয়োজন।

এই আলোচনাকে সাহায্য করার জন্য, বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে, আমরা ২০ দফা উত্তরণ কৌশল প্রস্তাব করছি। এই প্রস্তাবনা আমরা তিনটি মূল বিষয়কে মাথায় রেখে সাজিয়েছি: কর্মক্ষেত্র, সমাজ এবং স্বাস্থ্যখাত।

কর্মক্ষেত্রঃ

১) শারীরিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণের ভিত্তিতে সব কর্মীদের আরো সচেতন করে তোলা ।  কাজের সময়ে যে সকল স্বাস্থ্যবিধি এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরী, সকল কর্মীর জন্য সে বিষয়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ  নিশ্চিত করা নিয়োগকর্তার একটি প্রধান দায়িত্ব।

২) মাস্ক ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা

সর্বক্ষেত্রে সকল শ্রমিকদের জন্য যথাসম্ভব মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস সহজলভ্য করতে হবে। এই জিনিসগুলো একটি স্বল্প আয়ের দেশের জন্য খুব একটা ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ার কথা না তাই সহজেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তবে এর জন্য সঠিক পরিকল্পনা, প্রস্তুতি এবং একই সঙ্গে এগুলোর সঠিক ব্যবহারের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

৩) কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন

-যেখানে যেখানে প্রয়োজন, সুস্পষ্ট এবং সহজবোধ্য নির্দেশিকা দিতে হবে, যেমনঃ দেয়াল ও মেঝেতে ছবি এঁকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

– শিফটের শুরুতে বা শেষে কর্মীদের চলাচল এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে কর্মীরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে পারে।

-কর্মীদের সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে, যাতে তাদের চলাফেরা শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকে

– সম্ভব হলে ব্যারিকেড ব্যবহার করে কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের আলাদা রাখার চেষ্টা করতে হবে।

-পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রবেশ ও প্রস্থানের ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে খুব বেশি ভিড় না হয়।

– দোকানপাটে একমুখী চলাচলের নিয়ম এবং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। দোকান (যেমন সুপারশপ) এবং রেস্তোঁরাতে একসাথে নির্দিষ্টসংখ্যক গ্রাহকের বেশী প্রবেশের অনুমতি দেয়া যাবে না। কাউন্টারে কাঁচ, থাই অ্যালুমিনিয়ামের (নূন্যতম পলিথিনের) প্রতিবন্ধক স্থাপন করা যেতে পারে।

৪) শ্রমিকদের সীমিতভাবে কাজ করার সুবিধা প্রদান

বিশাল কর্মীবহর কিন্তু সীমিত জায়গা – এরকম কারখানায় এই পদ্ধতিটি সংক্রামণের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। তবে এর ফলে কারখানার সামগ্রিক উৎপাদন কিছুটা কমে যাবে, শ্রমিকদের আয়ও কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। তবে এই ব্যবস্থা অন্তত মন্দের ভালো।  দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন যেমন খারাপ তেমনি শারীরিক দূরত্ব বজায় না রাখায় হঠাৎ প্রচুর সংখ্যক কর্মী একই সময়ে অসুস্থ হয়ে পুরো কারখানাটি বন্ধ হওয়াও কাম্য নয়। এরকম অবস্থায় এই পদ্ধতিটি ভারসাম্য নিয়ে আসতে পারে।

৫) সকল শ্রমিকের জন্য পর্যাপ্ত পানি, সাবান ও সাধারণ স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করা এবং জীবাণুনাশক সরবরাহ করা ।

কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা সব সময় মেনে চলতে হবে।

৬)  “স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা” বিষয়গুলো নিশ্চিতকরণে কর্মকর্তা নিয়োগ ।

উপরের সমস্ত পদক্ষেপগুলি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা ও নিয়মিতভাবে তা মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য একটি পদ তৈরি করা যেতে পারে।

৭) একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে, এবং লকডাউন তুলে নেওয়ার আগে এই নীতিমালা কঠোরভাবে মানার ব্যাপারে সব ব্যবসায়ীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

ওপরের কৌশলগুলোসহ অন্যান্য উপযুক্ত কৌশল বিবেচনা করে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে পরিষ্কারভাবে বলা থাকবে যে কি কি করতে হবে। খাতভেদে এই নীতিমালা ভিন্ন হতে পারে।

সমাজ পর্যায়ে:

৮) প্রবীণ এবং শারীরিক ভাবে দুর্বলদের রক্ষা করা।

প্রবীণ (৬০ ঊর্ধ্ব) এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা মানুষ, যেমন – যাদের হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস আছে তাদের কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী। তাই এই শ্রেণীর মানুষদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তবে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রায়ই তিন প্রজন্ম একই ছাদের নিচে বাস করে। তাই সেখানে বয়স্কদের এবং ঝুঁকিতে থাকা সদস্যদের আলাদা করা কঠিন। বিশেষত প্রবীণ সদস্যদের অন্যের সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং, তাঁদের সাথে বাড়ির নির্দিষ্ট একজন সদস্যকেও আলাদা করে দেওয়া যেতে পারে। যারা বাইরে কাজ করেন বা পড়াশোনা করেন, তাদের অবশ্যই বাড়ির বেশী  ঝুঁকিতে থাকা সদস্যদের কাছ থেকে সবসময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

৯) মাস্ক ব্যবহার  করা ।

বাইরে থাকা অবস্থায় মাস্ক ব্যবহার করা উচিত, বিশেষত গণপরিবহণ, সুপারশপ / বাজার, হাসপাতাল / ক্লিনিক এবং জনাকীর্ণ অফিস (যেমন ব্যাংক বা ডাকঘর) এর মতো সম্ভাব্য “উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ” পরিবেশে মাস্ক পরতেই হবে। পরিবারের সদস্যদের কারো যদি কোভিডের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে পারিবারিক পরিসরেও অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা জরুরী।

১০) গণজমায়েত সীমিত রাখা

মহামারীর পরবর্তী সময়ের ঝুঁকি মোকাবিলায় অপ্রয়োজনীয় জমায়েত অবশ্যই সীমিত রাখতে হবে, যেমন, ধর্মীয় (মসজিদ / মন্দিরভিত্তিক বা সম্প্রদায়ভিত্তিক), সামাজিক (যেমন, বিবাহ, খেলাধুলা, সিনেমা-থিয়েটার) এবং রাজনৈতিক সমাবেশ। যেখানেই  ৫০ এর বেশি লোক উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেখানেই এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য। গণপরিবহনের জন্যও উপযুক্ত সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা রাখা উচিত (যেমন মাঝখানে আসন ফাঁকা ছেড়ে দেওয়া)।

১১)  সম্ভব হলে ঘরে বসে কাজ করাকে উৎসাহিত করা।

যেসব ক্ষেত্রে অফিসের কাজ ঘরে বসেই করা সম্ভব এবং কর্মীদের বাড়িতে কাজ করার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা আছে, সেসব ক্ষেত্রে ঘরে বসে কাজ করাকে উৎসাহিত করতে হবে।

১২)  সামাজিক পর্যায়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা ।

জাতীয় এবং স্থানীয় উভয়স্তরে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে

– মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটেশন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে,

– করোনা নিয়ে বিদ্যমান সামাজিক কুসংস্কার ও ভুল ধারণাসমূহ দূর করতে হবে, এবং

– করোনার ঝুঁকিগুলো সম্বন্ধে মানুষকে শেখাতে হবে

১৩)  স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নয়ন ।

সংক্রমণের সাথে লড়াই করতে সুস্থ থাকা খুব জরুরী। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা সুস্থতার প্রতীক। একটি সবল ফুসফুস এবং উচ্চমাত্রার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে ভাইরাস সহজে কাবু করতে পারবে না। যেমন ধূমপান বন্ধ রাখা, নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের ঔষধ খাওয়া, ব্যায়াম করা এবং পর্যাপ্ত ঘুমানো – এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

স্বাস্থ্যসেবা খাত:

১৪)  প্রচুর পরিমাণে কোভিড-১৯ পরীক্ষার পাশাপাশি শনাক্ত ও বিচ্ছিন্নকরণ (test-trace-isolate) ।

এটি নিশ্চিত করতে গেলে সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য ডায়গনস্টিক টেষ্ট বাড়াতে হবে এবং কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের শনাক্তকরণে সংযুক্ত করতে হবে নিয়োগ করতে হবে । এছাড়া বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যেমন Apps অথবা ক্ষুদেবার্তার ব্যবহার শনাক্তকরণে কাজে লাগানো যেতে পারে।

১৫)  এলাকাভিত্তিক লক-ডাউন (যা “Cordon Sanitaire”  নামেও পরিচিত) প্রয়োগ করা।

হঠাৎ একটি অঞ্চলে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বা পুনসংক্রমন হলে, সেই নির্দিষ্ট ”হটস্পটে” লকডাউন প্রয়োগ করতে হবে।

১৬) একটি বড় জনসংখ্যা নিয়ে ”এমিডেমিওলজিক্যাল স্যারো-সার্ভিলেন্স” (Sero-surveillance) প্রতিষ্ঠিত করা।

এটি নিচের জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো জানতে সাহায্য করবে-

ক) ভাইরাসটির গতি নতুন কোন দিকে মোড় নিচ্ছে কি না ।

খ) কতজন মানুষের ভেতরে কোভিড-১৯ এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে

এছাড়া কত শতাংশ মানুষে টীকার প্রয়োজন হবে তাও জানা যাবে।

১৭) ”রোলিং” লকডাউন পদ্ধতি ।

এটি একটি আকর্ষণীয় মিশ্র পদ্ধতি, যেখানে কিছুদিন সারা দেশে লকডাইন করা হয় আবার কিছু দিনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এটি চক্রাকারে চলতে থাকে যতদিন টীকা আমাদের হাতে না পৌছাচ্ছে। এই “স্যুইচ-অন, স্যুইচ-অফ” লকডাউন পদ্ধতিটি রোগের হার যেমন কমাতে সহায়তা করে তেমনি মানুষের অর্থনৈতিক অসুবিধা কমিয়ে একটি সঠিক ভারসাম্য দিতে পারে। আমরা বর্তমানে এমনই একটি আন্তর্জাতিক মডেল নিয়ে কাজ করছি যেটি নিম্ন আয়ের দেশে কতদিন এধরণের “রোলিং লকডাউন” করতে হবে তা  নির্ধারণ করবে।

১৮) অতিজরুরী স্বাস্থ্যসেবাকাঠামো উন্নতকরন।

অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার সাথে সাথে আইসিইউ, ভেন্টিলেটর, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের পাশাপাশি মানুষের দক্ষতা ও সক্ষমতা (যেমন, ডাক্তার / নার্সদের পুনঃপ্রশিক্ষণ দেওয়া) বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালু রাখতে হবে।

১৯) করোনাভাইরাসের জন্য প্রাথমিক (অন্তঃবর্তীকালীন) হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সুবিধা তৈরী।

এগুলো উপজেলা থেকে জেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এটি করার জন্য বর্তমানে যেসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো আছে সেগুলোকে বিশেষায়িত করা যেতে পারে এবং সরকারী বেসরকারী অংশীদারিত্বে নতুন কেন্দ্রও স্থাপন করা যেতে পারে।

২০) উপরোক্ত পন্থাগুলো বাস্তবায়নের  জন্য সরকারী-বেসরকারী-ব্যক্তিগত অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা।

সরকারী, বেসরকারী ও জনগনের সমন্বিত উদ্ভাবনী প্রচেষ্টায় নানান জনস্বাস্থ্য সমস্যা (যেমন ডায়রিয়ার ঘরোয়া চিকিৎসা, মাতৃ এবং শিশু স্বাস্থ্যের সংক্রমণ হ্রাস এবং সামগ্রিক পুষ্টি উন্নতকরণ) সমাধানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে,যা কিনা আমাদেরকে অনেকগুলো মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জন করতে সাহায্য করেছে। জনস্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় এই ঐতিহাসিক সাফল্যগুলো সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র সরকারী বেসরকারী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে- যা আমাদের বর্তমান করোনা সংকটেও কাজে লাগাতে হবে।

বর্তমানে আমরা অজানা হুমকির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি, যেখান থেকে উত্তরণের সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা ও  দিকনির্দেশিকা এই মুহুর্তে আমাদের কাছে নেই । তাই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলির পক্ষে  দেশব্যাপী সামাজিক দূরত্বের বাধ্যবাধকতা  শিথিল করার কথা চিন্তা করার আগে নিজস্ব  ”সুনির্দিষ্ট উত্তরণ কৌশল” প্রণয়ন করতে হবে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে সারা বিশ্ব। করোনার কারণে দেশে দেশে এই সংকট তীব্র হচ্ছে। ধনী-গরিব সব দেশেই এর প্রভাব পড়েছে। বেশির ভাগ দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) সংকোচন হবে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছে। কর্মহীন হয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। এমন দুর্গতির মধ্যেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশার কথাই শুনিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আভাসও পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে, বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৯-২০) ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে সরকার। এমন অবস্থায় সব দাতা সংস্থাই বলছে, এত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়।

গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে মহামন্দায় বড় বড় অর্থনৈতিক পরাশক্তিগুলো বিপাকে পড়েছিল। দশকজুড়ে চলে মহামন্দা। নব্বইয়ের দশকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতিতে আসে দুর্যোগ। আর ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন খাত থেকে শুরু হওয়া মন্দা উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু করোনার মতো এমন সর্বজনীন মন্দা আর দেখা যায়নি। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই প্রভাব পড়েছে। কিন্তু এই মহামন্দায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ কোথায়, কোন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে—এ নিয়ে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ দেশি গবেষণা সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস ও মূল্যায়ন নিয়ে এবারের আয়োজন।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি

করোনায় বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেশ কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে, বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৯-২০) ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে সরকার। এমন অবস্থায় সব দাতা সংস্থাই বলছে, এত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। অর্থনীতি আগের জায়গায় ফিরে যেতে সময় লাগবে। এ ছাড়া করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কতটা গভীর হয়, এর ওপর নির্ভর করছে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কতটা ত্বরান্বিত হবে। তাই ওই সব সংস্থা চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন

আইএমএফ বলছে, চলতি ২০২০ সালে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে। ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশ গায়ানা ও দক্ষিণ সুদানের পর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে। তবে আইএমএফ এ–ও বলছে, করোনার আগের মতো ৭-৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে বাংলাদেশকে আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হবে।

Google Adsense Ads

৮ অক্টোবর প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক ফোকাস প্রতিবেদনের আগাম পূর্বাভাস, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে। বিশ্বব্যাংক কারণ হিসেবে দেখিয়েছে, অর্থনীতিতে শ্লথগতি। অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবীদের আয় কমে যাওয়ায় সার্বিকভাবে ভোগ করার প্রবণতা কমে গেছে। এ ছাড়া রপ্তানি ও প্রবাসি আয় কম হবে। আর বেসরকারি বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা আছে। তবে আগামী অর্থবছরে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হবে। ওই বছর ৩ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে মনে করছে এই দাতা সংস্থাটি।

আরেক দাতা সংস্থা আইএমএফ জিডিপি পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে সব সময় একটু রক্ষণশীল থাকে। অবশ্য এই দাতা সংস্থাটি পঞ্জিকাবর্ষ ধরে জিডিপির হিসাব করে থাকে। আইএমএফ বলছে, চলতি ২০২০ সালে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে। ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশ গায়ানা ও দক্ষিণ সুদানের পর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে। তবে আইএমএফ এ–ও বলছে, করোনার আগের মতো ৭-৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে বাংলাদেশকে আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হবে।

২০২৫ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। আইএমএফের এবারের পূর্বাভাস হলো, ২০২০ সালে মাত্র ২২টি দেশে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জার্মানি, জাপানের মতো দেশে জিডিপি সংকোচন হবে। এর মানে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বেশ ভালো পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থাটি মনে করে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। তাই চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে এই দাতা সংস্থাটি। চীন, ভারত ও মালদ্বীপের পরই সবচেয়ে প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশে।

এডিবি বলছে, বাংলাদেশ ৩০ দেশের মধ্যে ২৬তম। বাংলাদেশের পেছনে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও আফগানিস্তান। এই তালিকায় শীর্ষে আছে তাইপে। এর পরেই সিঙ্গাপুরের অবস্থান।

প্রবৃদ্ধিতে চতুর্থ শীর্ষ দেশ বাংলাদেশ। আগামী বছরের শুরুতে অর্থনীতি আরও বেগবান হবে বলে মনে করে এডিবি। করোনা সংকট বেশি দিন ধরে বিরাজমান থাকলে তা কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে এডিবি। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ওই ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে এডিবি প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সুখ সূচকও দেখিয়েছে। সেখানে আমাদের জন্য ভালো খবর নেই।

এডিবি বলছে, বাংলাদেশ ৩০ দেশের মধ্যে ২৬তম। বাংলাদেশের পেছনে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও আফগানিস্তান। এই তালিকায় শীর্ষে আছে তাইপে। এর পরেই সিঙ্গাপুরের অবস্থান। বাংলাদেশের নাগরিকেরা কতটা ভালো আছেন, তা দেখা যাক। এডিবি বলছে, বাংলাদেশ ১০০–এর মধ্যে ৪৩ পয়েন্ট পেয়েছে। এর মানে ভালো থাকার মানে মাঝামাঝি অবস্থানেও নেই বাংলাদেশ।

দারিদ্র্য পরিস্থিতি

করোনার কারণে দেশে–বিদেশে দরিদ্র লোকের সংখ্যা বেড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের পভার্টি অ্যান্ড শেয়ারড প্রসপারিটি ২০২০ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে বিশ্বের অতি দারিদ্র্যের হার ৮ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশের বেশি হয়েছে। করোনায় বিপুলসংখ্যক কোটি কোটি মানুষ কাজ হারিয়ে অতি দরিদ্র্যের খাতায় নাম লিখিয়েছেন।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২০ ও ২০২১, এই দুই বছরে সারা বিশ্বের ১১ কোটি থেকে ১৫ কোটি লোক নতুন করে গরিব হয়ে যেতে পারেন। এর মধ্যে শুধু ২০২০ সালেই ৮ কোটি ৮০ লাখ থেকে সাড়ে ১১ কোটি লোক এমন বিপাকে পড়বেন। চলতি অক্টোবরে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের আরেক সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাকালে বাংলাদেশে গরিব লোকের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। দারিদ্র্য হার সাড়ে ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২২ শতাংশ হয়েছে। যাঁরা দৈনিক ১ দশমিক ৯০ ডলার আয় করতে পারেন না, তাঁদের দরিদ্র হিসেবে ধরে বিশ্বব্যাংক।

করোনাকালে বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি কতটা খারাপ হয়েছে, তা নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর একাধিক গবেষণা আছে। সব প্রতিষ্ঠানই বলেছে, দারিদ্র্য বেড়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) বলেছে, গত এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে দারিদ্র্য হার ১৯ থেকে বেড়ে ২৯ শতাংশ হয়েছে। কমবেশি ১ কোটি ৬৪ লাখ নতুন করে গরিব হয়েছেন। এ ছাড়া আগে থেকেই সাড়ে তিন কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করত। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, করোনায় দারিদ্র্য হার ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। গত জুন মাসে পিপিআরসি ও বিআইজিডির যৌথ গবেষণায় এসেছে, দারিদ্র্য হার দ্বিগুণের বেশি হয়ে ৪৩ শতাংশে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) করোনায় মানুষের আয়-ব্যয়ে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে, তা জানতে গত সেপ্টেম্বরে একটি জরিপ করেছে। সেই জরিপে দেখা গেছে, করোনায় আয় কমেছে ২০ শতাংশ। করোনার আগে গত মার্চে প্রতি পরিবারে মাসিক গড় আয় ছিল ১৯ হাজার ৪২৫ টাকা।

আয় ও কর্মসংস্থান

দারিদ্র্য বেড়েছে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর—করোনায় শ্রমজীবী মানুষের আয় কমেছে। লাখ লাখ কর্মজীবী বেকার হয়ে গেছেন। সরকারি তথ্য-উপাত্ত সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) করোনায় মানুষের আয়-ব্যয়ে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে, তা জানতে গত সেপ্টেম্বরে একটি জরিপ করেছে। সেই জরিপে দেখা গেছে, করোনায় আয় কমেছে ২০ শতাংশ। করোনার আগে গত মার্চে প্রতি পরিবারে মাসিক গড় আয় ছিল ১৯ হাজার ৪২৫ টাকা। আগস্টে তা কমে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৪৯২ টাকা। পাঁচ মাসের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি আয় কমেছে প্রায় চার হাজার টাকা।

পরিবারগুলোর আয় কমে যাওয়ায় বেকারত্ব ওই সময়ে দশ গুণ বেড়ে যায়। আড়াই শতাংশ বেকারত্ব হার পৌঁছে দাঁড়ায় ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থনীতি খুলতে শুরু করায় জুলাই থেকে বেকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়। সেপ্টেম্বরে এসে বেকারত্বের হার আবার ৪ শতাংশে নেমে আসে। এত দ্রুত বেকার পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ করোনার প্রথম তিন-চার মাস যত বেকার হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই এখনো কাজ পাননি। চাকরির বাজার এখনো আগের পর্যায়ে ফিরে আসেনি।

পিপিআরসি ও বিআইজিডি গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনার প্রথম দিকে অর্থাৎ এপ্রিল-জুন মাসে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দীর্ঘ মেয়াদে ছুটি ও লকডাউনের প্রভাবে গত এপ্রিল মাসে গরিব মানুষের আয় ৭৫ শতাংশ কমেছে। আর গরিব হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের আয় ৬৫ শতাংশ কমেছে।

গত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত তিন মাসে সেই তৈরি পোশাকের উৎপাদন অর্ধেকের বেশি কমেছে। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, গত এপ্রিল-জুন সময়ে ৩২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকার পোশাক উৎপাদন হয়েছে।

শিল্পোৎপাদন

গত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশের উৎপাদন খাত সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিল। সাবান, ডিটারজেন্টসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী, ওষুধসহ হাতে গোনা কয়েকটি পণ্যের উৎপাদন বাড়লেও অন্য সব শিল্পপণ্যের উৎপাদনে ব্যাপক ধস নামে। বেশির ভাগ কলকারখানা বন্ধ ছিল কিংবা উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্পপণ্য হিসেবে তৈরি পোশাককে ধরা হয়। এটি আমাদের প্রধান রপ্তানিপণ্য এবং অর্থনীতির চালিকা শক্তি।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হওয়ার পূর্বাভাস আরো বোঝা যায় কর সংগ্রহ পরিস্থিতি থেকে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কর সংগ্রহ ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল মূলত শেষ তিন মাস অর্থাৎ এপ্রিল-জুন ২০২০-এ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শ্লথ হওয়ার কারণে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা সম্পূর্ণ ঘুরে দাঁড়িয়ে ১৯ শতাংশ বেড়েছে।

 বাংলাদেশের অর্থনীতি গত এক দশকে এমন শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে যে করোনাকালে যা আঘাত পেয়েছে তা ধারণ করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে হয়তোবা তা ততটা সত্যি না-ও হতে পারে। সুতরাং সে প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য হার বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার যে হিসাব দিয়ে দেশের কতিপয় অর্থনীতিবিদ হতাশা ব্যক্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছেন, তা পুরোপুরি বাস্তব বলে প্রতীয়মান হয় না।

 উন্নত সড়ক যোগাযোগ, জন ও পণ্য চলাচলে সারা দেশের এক সমন্বিত বাজার ব্যবস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত তৈরি করেছে, পরিসংখ্যান ও অর্থনীতির সূচকগুলো সে কথাই বলে। বাংলাদেশ যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও অর্থনীতিতে যথেষ্ট দুর্যোগ সহনশীল, তা কভিড-১৯ মহামারী আবারো প্রমাণ করল। তার পরও কভিড প্রতিরোধে সর্বাধিক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবেই। বাজার ব্যবস্থা সংহত ও চালু রাখতে হবে।

Paragraph & Composition/Application/Emali উত্তর লিংক ভাবসম্প্রসারণ উত্তর লিংক
আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল উত্তর লিংক প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ রচনা উত্তর লিংক

এখানে সকল প্রকাশ শিক্ষা বিষয় তথ্য ও সাজেশন পেতে আমাদের সাথে থাকুন ।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ও

Google Adsense Ads

Leave a Comment