স্ট্রোক হলে যা জরুরি, যে স্ট্রোকে যে ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন, স্ট্রোক: যেসব পদক্ষেপ রোগীর জীবন বাঁচাতে পারে, স্ট্রোকের রোগীর দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন

স্ট্রোক হলে যা জরুরি, যে স্ট্রোকে যে ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন, স্ট্রোক: যেসব পদক্ষেপ রোগীর জীবন বাঁচাতে পারে

স্বাস্থ্য রোগ প্রতিরোধ

Google Adsense Ads

স্ট্রোক বা ব্রেন অ্যাটাক মস্তিষ্কে হঠাৎ করে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া, যা মাথার ভেতরে রক্তক্ষরণের কারণে হয়ে থাকে।

স্ট্রোকের প্রধান কারণ

♦  উচ্চ রক্তচাপ

♦  রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকা

♦  ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলে বা হৃদরোগ থাকলে

♦  কখনো কখনো অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন)

♦  মানসিক চাপ

♦  অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি

♦  অস্বাস্থ্যকর ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস 

♦  ধূমপান, তামাক-জর্দা বা অন্যান্য মাদক সেবন, মদপান

করণীয়

♦  স্ট্রোকের পর যদি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় তাহলে মৃত্যুমুখ থেকে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। রোগী যত দ্রুত চিকিৎসা পাবে, ক্ষতির আশঙ্কা ততই কমবে।

♦  রোগীকে বাতাস করতে হবে অথবা আলো-বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখতে হবে।

♦  গায়ে থাকা কাপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে, যেমন টাই, বেল্ট, স্কার্ফ, অন্তর্বাসের বাঁধন খুলে দিতে হবে, যেন রোগী শ্বাস নিতে পারে।

♦  রোগী জ্ঞান হারালে মুখ খুলে দেখতে হবে কিছু আটকে আছে কি না। ভেজা কাপড় দিয়ে মুখে জমে থাকা লালা, খাবারের অংশ বা বমি পরিষ্কার করে দিতে হবে।

♦  এ সময় রোগীকে পানি, খাবার বা কোনো ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।কারণ একেক ধরনের স্ট্রোকের ওষুধ একেক রকম।

প্রথম তিন ঘণ্টা খুব জরুরি। স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর থেকে তিন থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা সময় খুবই ক্রিটিক্যাল। এই সময়ের মধ্যে বা তার আগে রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হলে মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব।

চিকিৎসা

♦  সাধারণত স্ট্রোকের রোগীকে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা আইভি থ্রোম্বোলিসিস চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। ইনজেকশনের মাধ্যমে এমন একটা ওষুধ দেওয়া হয়, যা রক্তনালির ব্লক অপসারণ করে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করে।

♦  রোগীকে লক্ষণ দেখা দেওয়ার আট থেকে ১৬ ঘণ্টার মধ্যে আনা হলে সাধারণত মেকানিক্যাল থ্রোম্বোকটমি চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এই প্রক্রিয়ায় একটি বিশেষ যন্ত্র বা ক্যাথেটার দিয়ে রোগীর রক্তনালিতে জমাট বাঁধা রক্ত অপসারণ করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।

♦  রক্তপাত মারাত্মক হলে মাথার হাড় কেটে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটিকে চাপমুক্ত রাখা হয়।যেন মস্তিষ্কের সুস্থ অংশ আক্রান্ত হতে না পারে, একে বলা হয় ডিকম্প্রেস ক্র্যানিয়্যাকটমি।

স্ট্রোক হলে যা জরুরি, যে স্ট্রোকে যে ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন, স্ট্রোক: যেসব পদক্ষেপ রোগীর জীবন বাঁচাতে পারে, স্ট্রোকের রোগীর দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন

স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের অসুখ। এক গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতিবছর আমাদের দেশে এক লাখ মানুষের মধ্যে গড়ে ১৮০ থেকে ৩০০ জন স্ট্রোকজনীত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। স্ট্রোক মূলত তিন ধরনের। এর মধ্যে একটির হলোÑ টিআইএ, দ্বিতীয়টি হলো প্রগ্রেসিভ স্ট্রোক এবং তৃতীয়টি হলো কমপ্লেটেট স্ট্রোক। এর মধ্যে টিআইএ স্ট্রোক হলে আক্রান্ত রোগী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠেন। প্রগ্রেসিভ স্ট্রোকে রোগীর অবস্থা ক্রমে খারাপ হতে থাকে। আর কমপ্লেটেট স্ট্রোকে রোগীর অবস্থার মোটেও কোনো অবনতি হয় না। স্ট্রোককে নানাভাবে বিশেষায়িত করা যায়। একটি হলো রক্তনালি ব্লক হয়ে স্ট্রোক বা ইন্ট্রাসেরিব্রাল ইনফ্রাকশন। অন্যটি ব্রেইনের রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে ব্রেইনে রক্তক্ষরণ হওয়া। শতকরা ৮৫ ভাগ স্ট্রোক হয় রক্তনালি ব্লক হওয়ার কারণে ও শতকরা ১৫ ভাগ স্ট্রোক হয় রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে ব্রেইনে রক্তক্ষরণের কারণে।

স্ট্রোক হওয়ার মূল কারণ : রক্তে কোলেস্টেরল বা খারাপ চর্বি বেশি থাকার কারণে ইসকেমিক স্ট্রোক হয়। ডায়াবেটিকস, সেডেনটারি ওয়ার্কার এবং স্ট্রেসফুল কাজ, হার্টের অসুখ থেকেও স্ট্রোক হতে পারে। হেমোরেজিক স্ট্রোক বা ব্রেইন রক্তক্ষরণ হয় উচ্চ রক্তচাপের কারণে।

চিকিৎসা : ইসকেমিক স্ট্রোক প্রতিরোধে রক্তের চর্বি কমাতে হবে। সেজন্য ভাত কম খেতে হবে। শাকসবজি, সালাদ বেশি খেতে হবে। গরু বা খাসির মাংস বর্জন করতে হবে। দিনে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ঘাম ঝরে এ রকম করে হাঁটতে হবে। ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ বাদ দিতে হবে।

হেমোরেজিক স্ট্রোক প্রতিরোধে প্রয়োজনে নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করতে হবে। এক্ষেত্রে এক বেলাও ওষুধ সেবন বাদ দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ পকেটে, ব্যক্তিগত ব্যাগে বা কর্মস্থলে রাখতে হবে। সাধারণত টিআইএর জন্য জরুরিভিত্তিতে তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। রোগী তাৎক্ষণিক সুস্থ হয়ে না উঠলে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের রক্তনালিতে জমাট বেঁধে যাওয়া রক্তের জমাট ভেঙে আবার রক্তপ্রবাহ চালু করার জন্য কিছু ওষুধ রোগীকে দিতে হবে। মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমি পদ্ধতিতে মস্তিষ্কের একটি বড় রক্তনালিতে ক্যাথেটার প্রবেশের মাধ্যমে বিশেষভাবে জমাট বেঁধে যাওয়া রক্ত বাইরে বের করে আনতে হয়। স্ট্রোক-পরবর্তী ৬ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ পদ্ধতির চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যায়। স্ট্রোকের ফলে মস্তিষ্কের রক্তনালিতে জমাট বেঁধে যাওয়া রক্ত বের করার জন্য সার্জারিরও প্রয়োজন হতে পারে।

Google Adsense Ads

হেমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে চিকিৎসা ভিন্নতর। এক্ষেত্রে রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়ায় রক্তপ্রবাহ বেড়ে গিয়ে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে। তখন চিকিৎসার মাধ্যমে রক্তনালি মেরামত ও রক্তপ্রবাহ কমানোর চেষ্টা করা হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে ও রক্তপ্রবাহ কমায়Ñ এমন ওষুধ রোগীকে দেওয়া হয়। ওষুধ ছাড়াও অন্যান্য চিকিৎসাব্যবস্থা হিসেবে রয়েছে সার্জারিসহ নানা চিকিৎসা পদ্ধতি, যা একজন নিউরোসার্জন রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।

পরিশেষে : স্ট্রোক হলে যা জরুরি, যে স্ট্রোকে যে ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন, স্ট্রোক: যেসব পদক্ষেপ রোগীর জীবন বাঁচাতে পারে, স্ট্রোকের রোগীর দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন

আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট

স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ

Google Adsense Ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *